শনিবার, ফেব্রুয়ারী ২৯, ২০২০

যাঁরা এই ব্লগে লিখতে চান
"কথামুখ", বাঙালিদের লেখকদের জন্য বাংলা ব্লগ। লেখকদের কাছ থেকে ভালো লেখা আহবান করা হচ্ছে। গল্প, কবিতা, উপন্যাস, প্রবন্ধ, ধর্মকথা সাহিত্যের সব বিভাগের জন্য লেখা পাঠান। এপার বাংলা ওপার বাংলা সবাই লিখুন। এখনই। তবে কোনো লেখাই স্ক্রিনশর্ট, পিডিএফ কিংবা ইমেজ করে পাঠাবেন না। আপনার লেখা ওয়ার্ড ফাইলে বা মেল বডিতে কম্পোজ করে পাঠাবেন। কীভাবে পাঠাবেন?   আপনার লেখা ইমেল করুন :  anirban2012master@gmail.com

বৃহস্পতিবার, সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯

দুর্গা দুর্গতিনাশিনী নয়



লিখেছেন : অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
দুর্গা শব্দের ব্যুৎপত্তি হল দুর্ (দুঃখ) গম্ (গমন করা, জানা) + অ (র্ম্ম) = দুর্গ + আ (স্ত্রীং)। অর্থাৎ যাঁকে দুঃখে জানা যায়। কিংবা যিনি দুর্গ অর্থাৎ সংকট থেকে মুক্তি দেন। শব্দকল্পদ্রুমে আছে, যিনি দুর্গ বা দুর্গম নামে অসুরকে হত্যা করেছিলেন, তিনিই দুর্গা – “দুর্গং নাশয়তি যা নিত্যং সা দুর্গা বা প্রকীর্তিতা”। হিন্দুশাস্ত্রে ‘দুর্গা’ শব্দটিকে ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে – “দৈত্যনাশার্থবচনো দকারঃ পরিকীর্তিত। উকারো বিঘ্ননাশস্য বাচকো বেদসম্মত।। রেফো রোগঘ্নবচনো গশ্চ পাপঘ্নবাচকঃ। ভয়শত্রুঘ্নবচনশ্চাকারঃ পরিকীর্তিত।।” অর্থাৎ ‘দ’ অক্ষরটি দৈত্য বিনাশ করে, উ-কার বিঘ্ন নাশ করে, রেফ রোগ নাশ করে, ‘গ’ অক্ষরটি পাপ নাশ করে এবং অ-কার শত্রু নাশ করে। পুরোটা সাজিয়ে নিলে যেটা পাওয়া যাচ্ছে, সেটা হল – দৈত্য, বিঘ্ন, রোগ, পাপ ও শত্রুর হাত থেকে যিনি রক্ষা করেন, তিনিই দুর্গা। শ্রীশ্রীচণ্ডী অনুসারে, যে দেবী “নিঃশেষদেবগণশক্তিসমূহমূর্ত্যাঃ”(সমস্ত দেবতা সম্মিলিত শক্তির প্রতিমূর্তি), তিনিই দুর্গা। শব্দের ব্যুৎপত্তি যাই-ই হোক না-কেন, দেবী দুর্গা কখনো কোনোদিনই মানুষের সংকট মোচন সক্ষম হননি। তিনি সংকটমোচনকারী কেবল পুরাণের কাহিনিগুলিতেই। বাস্তবে তাঁর কোনো প্রভাব-প্রতিপত্তি নেই।


যাই হোক, হিন্দুরা তাঁকে মহাশক্তির একটি উগ্র রূপ মনে করে। দুর্গার অন্য নামগুলি হল – চণ্ডিকা, যোগমায়া, অম্বিকা, বৈষ্ণবী, মহিষাসুরসংহারিণী বা মহিষাসুরমর্দিনী, নারায়নী, মহামায়া, কাত্যায়নী ইত্যাদি। প্রত্যেক রূপেই আছে পৃথক পৃথক অসুর হত্যার কাহিনি। এঁদের কারোর আঠারোটা হাত, কারোর ষোলোটা হাত, কারোর দশটা হাত, কারোর আটটা হাত, কারোর-বা চারটি হাত। তবে দশ হাতের দুর্গা বা দশভূজাই বেশি জনপ্রিয়।তাঁর বাহন সিংহ এবং মহিষ নামক এক অসুরকে হত্যারত অবস্থায় দেখা যায়। বাংলার দুর্গাপুজোই অন্যত্র নবরাত্রি উৎসব হিসাবে উদযাপিত হয়।

বাংলায় মূলত বছরে দু-বার দুর্গাপুজো হয়। একটি আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষে শারদীয়া, অপরটি চৈত্র মাসের শুক্লপক্ষে বাসন্তী দুর্গাপুজো। বাংলায় বাঙালিদের কাছে শারদীয়ার দুর্গাপুজোই সবচেয়ে জনপ্রিয়। সারা পৃথিবীর বাঙালিরা এই সময়ের পুজোটিকেই মহাসমারোহে উদযাপন করে। এই পুজোকে অনেকে অকালবোধন বলে। কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্মপুরাণ অনুসারে, রাম ও রাবণের যুদ্ধের সময় শরৎকালে দুর্গাকে পুজো করছিল। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে, শরৎকালে দেবতারা ঘুমিয়ে থাকেন। তাই এই সময়টি তাঁদের পুজো অনুচিত সময়। অকালের পুজো বলে এই পুজোর নাম হয় ‘অকালবোধন’। কালিকা পুরাণ ও বৃহদ্ধর্মপুরাণ অনুসারে, রামকে সাহায্য করার জন্য ব্রহ্মা দুর্গার বোধন ও পুজো করেছিলেন। কৃত্তিবাস ওঝা তাঁর রামায়ণে লিখেছেন, রাম স্বয়ং দুর্গার বোধন ও পুজো করেছেন। এই জন্য স্মৃতিশাস্ত্রগুলিতে শরৎকালে দুর্গাপুজোর বিধান দেওয়া হয়েছে। বাংলার দুর্গাপুজোয় বোধনের মন্ত্রে উচ্চারিত হয় – “ওঁ ঐং রাবণস্য বধার্থায় রামস্যানুগ্রহায় চ। অকালে ব্রহ্মণা বোধো দেব্যস্তয়ি কৃতঃ পুরা।। অহমপাশ্বিনে ষষ্ঠ্যাং সায়াহ্নে বোধয়মি বৈ।” অর্থাৎ “হে দেবী, রাবণবধে রামকে অনুগ্রহ করার জন্য ব্রহ্মা তোমার অকালবোধন করেছিলেন, আমিও সেইভাবে আশ্বিন মাসের ষষ্ঠী তিথিতে সন্ধ্যায় তোমার বোধন করছি”। কৃত্তিবাস ওঝার লেখা রামায়ণে রামচন্দ্রের তত্ত্বাধানে দুর্গাপুজোকেই অকালবোধন বলে। কারণ এই পুজো অকালে করা হয়েছিল লংকেশ্বর রাবণকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে। কাহিনিটি এইরূপ – কৃত্তিবাসি রামায়ণ অনুসারে, রাবণ ছিলেন শিবভক্ত। শিব তাঁকে রক্ষা করতেন। তাই ব্রহ্মা রামকে পরামর্শ দেন, শিবের স্ত্রী দুর্গার পূজা করে তাঁকে তুষ্ট করতে। তাতে রাবণ বধ রামের পক্ষে সহজসাধ্য হবে। ব্রহ্মার পরামর্শে রাম শরৎকালে দুর্গার বোধন, চণ্ডীপাঠ ও মহাপূজার আয়োজন করেন। আশ্বিন মাসের শুক্লা ষষ্ঠীর দিন রাম কল্পারম্ভ করেন। তার পর সন্ধ্যায় বোধন, আমন্ত্রণ ও অধিবাস করেন। মহাসপ্তমী, মহাষ্টমী ও সন্ধিপূজার পরেও দুর্গার আবির্ভাব না ঘটায়, রাম ১০৮টি নীল পদ্ম দিয়ে মহানবমী পূজার পরিকল্পনা করেন। হনুমান তাঁকে ১০৮টি পদ্ম জোগাড় করে এনে দেন। দুর্গা রামকে পরীক্ষা করার জন্য একটি পদ্ম লুকিয়ে রাখেন। একটি পদ্ম না-পেয়ে রাম পদ্মের বদলে নিজের একটি চোখ উপড়ে দুর্গাকে নিবেদন করতে গেলে দুর্গা ‘আবির্ভূত’ হয়ে রামকে কাঙ্ক্ষিত বর দেন। দুর্গাপুজোর অন্যতম অংশ হল সন্ধিপুজো। পুরাণ মতে দেবী দুর্গা যখন মহিষাসুরের সঙ্গে যুদ্ধরত, তখন তাঁর দুই সেনা চণ্ড ও মুণ্ড নামে দুই ব্যক্তি দুর্গাকে আক্রমণ করে। তখন দুর্গার তৃতীয় নয়ন থেকে এক দেবীর আবির্ভাব হয়, যিনি চণ্ড ও মুণ্ডকে হত্যা করেন। এই কারণে দুর্গার অন্য নাম চামুণ্ডা। সন্ধিক্ষণে আসলে চামুণ্ডারই পুজো হয় ১০৮ পদ্ম ও ১০৮ প্রদীপ জ্বালিয়ে।

শনিবার, অক্টোবর ২৭, ২০১৮

নরক-ভাবনা এবং বাস্তবতা

লিখেছেন : অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়


ছোটোবেলায়, মানে আশির দশকের শেষ ভাগে এক ধরনের দেয়াল ক্যালেন্ডার বিক্রি হত দেখতাম। আমাদের বাড়িতেও একটা ছিল। ক্যালেন্ডারটির ঠিক মাঝখান ছিল সিংহাসনে উপবিষ্ট ঘন নীল রঙের যমরাজ এবং সিংহাসনের নীচে চিত্রগুপ্ত, যিনি বিশাল সাইজের একটা খাতা খুলে বসে দেখে নিচ্ছেন কোন্ মানুষ কী পাপ করেছে কী পুণ্য করেছে। সেই ক্যালেন্ডারে উপর, নীচ, ডান ও বামদিকে ছিল প্রায় চোদ্দটি উলঙ্গ নরনারীর ছবি। তাঁদের জহ্লাদরা অপরাধভেদে নিষ্ঠুরভাবে শাস্তি দিচ্ছেন। যেমন পরকীয়া শাস্তি দুদিকে দাঁতবিশিষ্ট দাঁড় করানো করাতে দু-দিকে নর ও নারীর শরীরের মাঝবরাবর চিরে দেওয়া হচ্ছে বা মিথ্যা কথা বলার অপরাধে বিশাল একটা সাঁড়াশি দিয়ে কারোর জিভ টেনে ছিঁড়ে দেওয়া হচ্ছে বা চুরি করার অপরাধে কারোর ডান হাত দেওয়া হচ্ছে ভয়ংকর এক চাপাতি দিয়ে ইত্যাদি। এইসব ক্যালেন্ডার এখন আর চোখে পড়ে না। 
এখন কথা হল, এই শাস্তিটা কোথায় হয় ? নরকে, আরবি ভাষায় ইসলামীদের কাছে যা দোজখ বা জাহান্নম। নরকের ঠিকানা কী ? এই ঠিকানা কেউ জানে না। কোনো ধর্মগ্রন্থেও সেই ভয়াল ভয়ংকর ঠিকানার সন্ধান পাওয়া যায় না। যেহেতু মানুষের মৃত্যুর পর পাপীরা শাস্তি ভোগ করে, সেহেতু কোনো মানুষের পক্ষেই ঠিকানা জানা সম্ভব হয়নি। তবে হিন্দুশাস্ত্র মতে নরক মৃত্যুদেবতা যমরাজেরই বাসস্থান। বলা হয়েছে এটি মহাবিশ্বের দক্ষিণে এবং পৃথিবীর নীচে অবস্থিত।  বিষ্ণু পুরাণে উল্লেখ করা হয়েছে যে, নরক মহাবিশ্বের নীচে অবস্থিত মহাজাগতিক সাগরের নীচে অবস্থিত। দেবীভাগবত পুরাণে বলা হয়েছে যে, নরক মহাবিশ্বের দক্ষিণে, পৃথিবীর নিচে কিন্তু পাতালের উপরে অবস্থিত। ভাগবত পুরাণে বলা হয়েছে নরক পৃথিবীর নীচে। পাতালের সাতটি স্তর এবং মহাবিশ্বের তল গর্ভোদক সাগরের মাঝামাঝি অবস্থিত। এটি মহাবিশ্বের দক্ষিণে অবস্থিত। পিতৃলোক, যেখানে অগ্নিকুভের নেতৃত্বে মৃত পূর্বপুরুষ (পিতৃগণ) বাস করে, এই অঞ্চলে অবস্থিত। নরকরাজ যম তাঁর সহকারীদের সঙ্গে বসবাস করেন। বিভিন্ন হিন্দু মহাকাব্যও একমত যে, নরক দক্ষিণদিকে অবস্থিত। পিতৃলোককে যমের রাজধানী হিসাবে ভাবা হয়েছে।
মানুষের মৃত্যুর পর যমদূত নামক যমরাজের দূতেরা তাঁদেরকে যমরাজের রাজসভায় নিয়ে আসে। যেখানে তাদের পাপ-পুণ্যের হিসাব করা হয় এবং দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। পুণ্যবানদের স্বর্গে এবং পাপীদের যে-কোনো একটি নরকে পাঠানো হয়, যেখানে যম তাঁর ন্যায়বিচার প্রদান করেন।
নরক হল জনৈক অসুরপৌরাণিক কাহিনিতে নরকাসুর নামে অভিহিত হয়ে থাকে। হিন্দুধর্মের একাধিক ধর্মগ্রন্থ। তাই বিভিন্ন গ্রন্থে বিভিন্ন নামের ও সংখ্যার পাশাপাশি কোন্ প্রকারের পাপীকে কোন্ নরকে পাঠানো হবে তার ভিন্নতা লক্ষ করা যায়। অগ্নি পুরাণে মাত্র ৪ টি নরকের উল্লেখ আছে। মনুস্মৃতি ২১ প্রকার নরকের উল্লেখ করে। তবে ভাগবত পুরাণ, দেবী- ভাগবত পুরাণ, বিষ্ণু পুরাণ এবং গরুড় পুরাণ গ্রন্থগুলিতে ২৮ ধরনের ভয়ংকর নরকের কথা বলে। তাই এই ২৮ নরককেই মূল নরক হিসাবে গণ্য করা হয়। অপরাধভেদে নরকগুলোর নাম হল –

সোমবার, মে ০১, ২০১৭

কাঁহা গেলে তোমা পাই

লিখেছেন : ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়

মানুষটার যাবার এত কিসের তাড়া ছিল কে জানে। চলেই যদি যাবে তো আশার কি প্রয়োজন ছিল; আর এলোই যখন, তখন আরও কিছুদিন থাকলে কি খুব ক্ষতি হতো! খুব কি প্রয়োজন ছিল এক উদ্ভিন্নযৌবনা যুবতীকে পরিত্যাগ করে অন্যত্র মন সমর্পণের? উত্তরেরা আজ তিনবছর পরেও ধরা দেয়নি; ধরা পড়েনি সে পুরুষালিতাও। মৃদু চিনচিনানি নিয়ে নাছোড় যন্ত্রণাটা অস্তিত্ব জ্ঞাপন করে চলেছে আজও। বারে বারে জৈষ্ঠ্যের নুনজড়ানো দুপুরে হঠাৎ পাওয়া একঝলক ঠাণ্ডা হাওয়ার মতোই আবেশ-বিহ্বল করে তোলে মধুময় স্মৃতিগুলো। নিজের অজান্তেই একচিলতে হাসি ফুটে ওঠে ঠোঁটের কোণায়। নিজের সবটুকু পুরুষত্ব নিয়ে যেন তাকে জাপটে ধরে সে অশরীরী অস্তিত্ব; মিশে যায় অভ্যন্তরে। নিকোটিন আর ঘাম মিলেমিশে তৈরি হওয়া ঝাঁঝালো গন্ধটার অলীক স্থিতি মোহাচ্ছন্ন করে তোলে। জীবনে-যৌবনে অন্ধের মতো হাঁতড়ে ফিরছে উপলা সে পুরুষকে; তার প্রাক্তন স্বামী সলিলকে।
##

পুরুষের কাছে যা প্রথম শ্রেণির দুর্বলতা, নারীর কাছেই তাই ব্রহ্মাস্ত্র বিশেষ। বড়ো বড়ো রাজা উজিরকেও হেলায় ভূতলশায়ী করে তোলে অস্ত্র প্রয়োগে পারদর্শী রমণীরত্ন। শরীর নিয়ে কোনোদিনই রক্ষণশীল হওয়ার প্রয়োজন বোধ করেনি উপলা। বরং উগ্র এক অহমিকা ছিল। কলেজের দিনগুলোয় প্রেমিকদের সঙ্গে চুম্বন তো ছিল নিত্য নৈমিত্তিকতা। মিলনও হয়েছে অনেকবার। শাস্ত্রই তো বলেছে: ক্ষুধা তৃষ্ণার ন্যায় রতির তৃপ্তিও আবশ্যক প্রয়োজনীয়তা। সলিলের সঙ্গেই তো দুবার মন্দারমণি ঘুরে এসেছে বিয়ের আগে। বিছানায় অনভিজ্ঞ সলিলকে রীতিমতো শিখিয়ে পড়িয়ে নিতে হয়েছে উপলাকে, কাম্য সুখ প্রাপ্তির উপায়গুলো।

বিশেষ করে মনে পড়ে মধুচন্দ্রিমার দিনগুলো। নিদেনপক্ষে তিন চারবার তারা মিলিত হয়েছিল সেই দশটা দিন। উদ্দাম যৌনতার সে উৎসব মনে পড়লে গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে। পেগিং এর বেদনাকাতর পুরুষের অভিব্যক্তির স্মৃতি আজও সিক্ত করে তোলে। সলিলও ততদিনে পাকা খেলোয়াড় হয়ে উঠেছিল। চুলের মুঠি ধরে চারপেয়ে উপলাকে রমণে বাধ্য করেছে পাশবিক নিঠুরতায়। দমবন্ধ হয়ে আসা কষ্টর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তীক্ষ্ণ চিৎকারে - ঘনীভূত হয়েছে উভয়ের যৌন পরিতৃপ্তি।

শুক্রবার, এপ্রিল ১৪, ২০১৭

মুণ্ডচ্ছেদের রাজনীতি আজ তুঙ্গে

লিখেছেন :  পাপ্পন দাস

মুণ্ডচ্ছেদের রাজনীতি প্রসঙ্গে সেদিন ফেসবুকে একটা স্টেটাস আপডেট করি।লিখেছিলাম,'বিজেপির এক যুব নেতা বলেছেন,
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী শয়তান,এবং তাই তাঁর মাথার দাম ১১ লক্ষ টাকা।অবশ্য সংসদের উভয় সদনে যখন এই বিষয়টা তোলে ধরা হয়,তখন সবাই এর নিন্দা করেন।বিজেপির তরফ থেকে তো বলেই দেওয়া হয়েছে,চাইলে অভিযুক্ত সেই নেতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
     এবার নয়া সংযোজন হলেন টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম 'নূর রহমান বরকতি'।যিনি বিজেপির সেই নেতা যোগেশের মাথার দাম ২২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করলেন।তিনি বললেন,যে লোকটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মাথার দাম ধার্য করেছে,তার মাথা কেটে আনলে আমি ২২ লক্ষ টাকা দেবো।ভালো,খুব ভালো,খুব খুব ভালো।হুমকির পাল্টা হুমকি তো একেই বলে।মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তার
(ইমাম) বোনের মতো।তাই তাঁর(মমতা) মাথার দাম যে ধার্য করেছে,তার (যোগেশ) মাথার দাম ধার্য করা যেতেই পারে।
     কোনটা ঠিক,কোনটা বেঠিক, তা আমার জানা নেই।আদতে কী দু'টাই বেঠিক,তাও আমি বলতে পারছি না।জ্ঞানীজনেরা এই ব্যাপারে নিজেদের মত দেবেন।কিন্তু আমার বক্তব্য হল,যোগেশ যা বলেছেন,তা অন্যায়।এর প্রতিবাদ হওয়া উচিত,এবং তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।আর আমি যতটুকু দেখতে পাচ্ছি,সবাই এর প্রতিবাদ করছেন।কেউ কেউ এর প্রতিবাদস্বরূপ কোনো কবিতা লিখেছেন কি না,তা আমার জানা নেই।তবে চাইলে লিখতেই পারেন।কিন্তু ইমামের বক্তব্যের প্রতিবাদ কেন কেউ করছেন না।ইমাম কী সঠিক কথা বলেছেন?তাছাড়া এসব ইসলামের ধ্বজাধারী ইমামরা তো প্রায়ই ফতোয়া টতোয়া জারি করে থাকেন।এদের বিরুদ্ধে কেন কেউ মাঠে নামেন না?কেন কড়া ভাষার এদের নিন্দা করেন না?কেন এদের প্রতিবাদস্বরূপ দু-চারটে কবিতা বেরিয়ে আসে না?'

শুক্রবার, এপ্রিল ০৭, ২০১৭

ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার ঐতিহ্য আজ চরম সংকটে

 লিখেছেন : পাপ্পন দাস


ভারতের সংবিধানে স্পষ্ট বলা আছে যে ভারত একটি ধর্মননিরপেক্ষ রাষ্ট্র।তার মানে ধরে নেওয়া যায় যে দেশের সংবিধানই বলে দিচ্ছে, ভারতে ধর্মান্ধদের কোনও স্থান নেই।কিন্তু বর্তমান ভারতের কিছু রাজনৈতিক গতিবিধির দিকে চোখ রাখলে কোনও কিছুই আর গোপন থাকে না।বোঝা যায় যে আজকাল অনেকে ইচ্ছে করেই দেশের এই সুন্দর মহিমা,যাকে আমরা ধর্মনিরপেক্ষতার নামে আখ্যায়িত করেছি,তাকে আহত করছেন।
    প্রথমেই ধরে নেওয়া যাক গো-মাংস প্রসঙ্গ।আজকাল মনে হচ্ছে এই গো-মাংস জিনিসটি যতটা না মাংস,তার চেয়ে ঢের বেশি বিতর্কিত।এই জিনিসটি যেন হয়ে গেছে আজকাল বিতর্কের অন্য একটি নাম।বস্তুত আজ সারা ভারতে এ ধরণের চরম বিতর্কিত জিনিস আর দু-টি আছে বলে আমার মনে হয় না।আজকাল এই গো-মাংস বিষয়টি এমনভাবে চর্চিত যে মনে হচ্ছে দেশে বুঝি আর কোনো ইস্যুই নেই।
    সেদিন ফেসবুকে পূর্ব বাংলার আমার এক বন্ধু এই ব্যাপারে লিখেছে,' ভারত ক্রমশ একটি "গরুর দেশ" হতে চলেছে। গরু এবং ভারত যেন এখন সমার্থক। ওরা মাকে ধর্ষণ করে গরুকে মা ডাকে। আবার সেই গরু নামক মাকে পূজা করতে মানুষকে হত্যা করে। যেখানে প্রতিদিন ভারতের কোথাও না কোথাও কোনও নারী ধর্ষিত হয় সেখানে গরুকে মা ভেবে পূজা করা ও তাকে বাঁচাতে মানুষকে হত্যা করা প্রমাণ করে ভারত মানুষের দেশ থেকে "গরুর দেশ" দেশ হতে চলছে। হিন্দুত্ব বেঁচে থাক, গরুও বেঁচে থাক, শুধু মানুষ নিপাত যাক।'
    সে কিন্তু ভুল কিছু লিখেনি।দেশের বাইরে বসে একজন লোক যদি এই ব্যাপারটাকে এত সুন্দর করে উপলব্ধি করতে পারেন,তাহলে দেশে বসে কেন আমরা ব্যাপারটাকে তোল দিতে চাইছি না।এই যেমন সেদিন,আমাদের রাজ্যের যোরহাট জেলায় গরুর মাংস রাখার অভিযোগে তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়।তাছাড়া এদের মধ্যে একটি নাবালকও রয়েছে।আর এই গ্রেফতারের ঘটনা জনসম্মুখে আসার পর সারা এলাকা জুড়ে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।কিন্তু যাদের ধরা হয়েছে এরা সবাই মুসলিম সম্প্রদায়ের।আর তাইতো প্রশ্ন উঠছে,আমরা কি আজকাল মানুষের বাড়ির ফ্রিজের দিকেও চোখ রাখতে উদ্যত?

রবিবার, এপ্রিল ০২, ২০১৭

আইএস, জঙ্গি বা কথিত ‘ধর্মযুদ্ধ’ – এসবের পিছনের গল্প কী?



লিখেছেন : মাসদুর রহমান

পৃথিবী জুড়ে কিছু একটা চলছে, বড় অদ্ভুত আর গোপন ! একটা  crisis  দিন দিন develop করছে ধীরেধীরে সেটা বহুমাত্রিক রুপ নিচ্ছে মানুষ নানান দল উপদলে ভাগ হয়ে যাচ্ছে  এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় আসবে যখন মানুষ সব বুঝেও আর এক হতে পারবেনা  কারণ  তারা তখন  বিভিন্ন কারণে শত ভাগে শত দলে বিভক্ত। একে অন্যকে দোষারোপ করবে।হানাহানী করবে  কারা যেন সেটাই চাইছে………… কারা ?!?! ………… Let’s Dig !!!
এখন অনেক ধরনের সমস্যা আমাদের চারপাশে। সব সমস্যার কারণ এক কথায় বোঝানো সম্ভব নয়। কারণ একটা সমস্যা আরও ১০ টা সমস্যার জন্ম দিচ্ছে, পরিস্থিতি জটিল হয়ে যাচ্ছে। আমরা যদি সব কিছুর দিকে না তাকিয়ে ধীরে ধীরে মূল সমস্যার দিকে যাই তাহলে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে যাবে !
এই মুহুর্তে আমাদের দেশে সবার মাথায় একটা সমস্যা ঘুরছে, সেটা হল- “ জঙ্গীসমস্যা। আইসিস, জেএমবি, হিজবুত তাহরীর, জামাত-শিবির ইত্যাদি এর কারণ, “ইসলাম” !  জঙ্গীদের বক্তব্য আমাদের দেশ সহ সারা পৃথিবীতে ইসলাম আজ বিপন্ন। তাই তারা ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য জীবন দিবে, জীবন নিবে ! ইসলাম কি  তবে  প্রতিষ্ঠিত নয় ?!
প্রথমেই আসি বাংলাদেশে; বাংলাদেশে কি ইসলাম বিপন্ন ?!!! নাকি ইসলামকে বিপন্ন করে তোলা হচ্ছে ?! গত কিছু বছরে অনলাইনে ইসলাম নিয়ে যেই পরিমান নাটক হল তা কারা করল ? সবাই বলবে  Blogger রা ! তাই বলে কি সব  Blogger  রা ? না; গুটিকয়েক  Blogger এখন প্রশ্ন হলকেন ? কি তাদের  benefit ?!?!?!  মন গড়া অনেক উত্তর আমরা দিতে পারি, কিন্তু সত্যটাকে  Proof করা কঠিন হবে। তবে সেসব উস্কানীমূলক ছিল নিঃসন্দেহে।
এবার চলুন, জঙ্গীদের বক্তব্য অনুযায়ী দেখি সারা পৃথিবীতে ইসলামের কি অবস্থা ! গত কয়েক বছরে আরব দেশ গুলোর কি হাল হয়েছে সবই আমরা জানি। যুদ্ধ চলছে সিরিয়ায়, ইরাকে, আফগানিস্তানে, ইয়েমেনে ধ্বংস হয়ে গেছে লেবানন, মিশর, আফগানিস্তান সহ বহু আরব দেশ। অবরোধ, নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ইরান।  আর প্যালেস্টাইন সমস্যা তো রয়েছেই !!! অন্য দেশগুলোও খুব একটা ভালো নেই !
তাহলে কি জঙ্গিরাই ঠিক …?!?!?!
ধরে নিলাম জঙ্গিরাই ঠিক !!! তাহলে, এর প্রতিকার প্রয়োজন ! যারা মুসলিম দেশ গুলোতে যুদ্ধে লিপ্ত তাদের প্রতিরোধ করতে হবে !
এবার কথা বলা যাক মুসলিম দেশগুলোর চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে। কাদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে, কারা সেখানে যুদ্ধে লিপ্ত ?!?!?!
সিরিয়ায় যুদ্ধ করছে সিরিয়ান আর্মড ফোর্স, ফ্রী সিরিয়ান আর্মি + আল কায়েদা , সিরিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ফোর্স এবং ISIS  …… আর বড় দল গুলোর সাথে জড়িত আরো বহু দল উপদল !
ইরাকে যুক্তরাষ্ট্র তার সহযোগী দেশগুলোর সাদ্দাম উৎখাত  যুদ্ধ শেষ হয়েছে !!!  এখন যুদ্ধ করছে ইরাকী শীয়া, সুন্নী, কূর্দী বিভিন্ন দল উপদল। সাথে আছে আল-কায়েদা, আনসার আল ইসলাম  latest ISIS  এর মত  জঙ্গি দল গুলো।

সোমবার, মার্চ ২৭, ২০১৭

প্রসঙ্গ যৌনতা : জিশুর প্রকৃত শিক্ষা ও অপপ্রচার (দ্বিতীয় পর্ব)

লিখেছেন : ইন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়
(আজ আলোচনা জিশুর জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে সে মার্গে গমনের পূর্বে দুটি কথা বলে নেওয়া প্রয়োজন প্রথমত, গত দুই পর্বে আপনাদের সামনে কিছু বিশ্লেষণ হাজির করেছি অনেকেরই হয়তো সেসব অজানা ছিল কিন্তু আজ থেকে আমরা প্রবেশ করব এক চূড়ান্ত বিতর্কিত অথচ ঐতিহাসিক জগতে মসীহাকে অপমান করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই যেমন নেই কোনো বিশ্বাসীকে আঘাত করার বাসনা ধর্মের জগদ্দল পাথরে চাপা পড়ে থাকা তথ্য তুলে ধরাই প্রবন্ধের একমাত্র লক্ষ্য)
রোমান চার্চ জন্মক্ষণ থেকেই অস্তিত্ব সংকটে ভুগেছে জিশুর রহস্যাবৃত জন্মকে নিয়ে প্রথমে আমরা দেখে নেব জনের সুসমাচারের একটি প্রসিদ্ধ বচন: Jesus said unto them, ...I proceed forth and came from God; neither came I of myself, but he sent me. (John 8:41-2)
এই রূপ বিভিন্ন বাণী চার্চ বারংবার উদ্ধৃত করেছে জিশুর ঐশ্বরিক জন্মকথার ভিত্তি রূপে কোনও মানব যখনই ভক্তদের অভিলাষে দেবত্বে উপনীত হন, তখনই তাঁর অযৌন জন্মবৃত্তান্তের গপ্প প্রচলনের প্রয়োজন পড়ে প্রয়োজন হয় স্বয়ং ঈশ্বরকে পিতার ভূমিকায় অবতীর্ণ করার বুদ্ধ, মহাবীর, চৈতন্য - সকলের ক্ষেত্রেই এই পথ অনুসৃত হয়েছে ক্যাথলিক চার্চও যে একই রাস্তায় হাঁটবে সেটাই স্বাভাবিক যেন মনে হয়, ঈশ্বর স্বমৈথুন করে তাঁর শুক্রাণু কোথাও জমা রাখতেন, যেমন রাখা হয় আধুনিক স্পার্মব্যাঙ্কে অতঃপর সেই শুক্রাণু এক অদৃশ্য ইথার তরঙ্গের মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করা হয় মেরী প্রভৃতি 'কুমারী মাতা' গর্ভে
যে কোনো শিক্ষিত মানুষই স্বীকার করবেন, মানুষের ক্ষেত্রে অযৌন জনন অসম্ভব আফিমের নেশায় আচ্ছন্নরা মানতেই পারেন যে জিশু শুধুমাত্র Y ক্রোমোজোম নিয়েই কাজ চালাতেন, X ক্রোমোজোমের কোনো প্রয়োজন পড়েনি তাঁর ঈশ্বরের প্রতিভূরা এরকম বিজ্ঞান অসম্মত কাজকর্ম হামেশাই করে থাকেন কিন্তু যুক্তিনিষ্ঠ মন দাবী মানতে অক্ষম তাই খোঁজ জিশু নামক মানবে, প্রথম প্রাণস্পন্দন দানকারী শুক্রাণুর
NTতে আমরা জিশুর পালকপিতা হিসেবে পাই যোসেফের নাম যোসেফের পিতৃত্বের দাবী ঝেঁটিয়ে বিদায় করে ম্যাথিউ জানিয়েছেন: This is how Jesus Christ came to be born. His mother Mary was betrothed to Joseph; but before they came to live together she was found to be with child through Holy Spirit. (Mat 1:18)
ম্যাথিউ এর এই বক্তব্যের অনুরণন জন 8:42 তে কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণভাবে, জন 8:41 ইহুদিরা জিশুকে বলেছিলেন: We be not born of fornication; we have one Father.

রবিবার, মার্চ ২৬, ২০১৭

চাড্ডি, তিনো-সবার ক্ল্যাসিফিকেশন

লিখেছেন : বিপ্লব পাল
চাড্ডি কথাটাই লোকের আপত্তি থাকলে কিছু করার নেই। চাড্ডি, ভামপ্যান্টি, তিনো, হার্মাদ, কঙু , ছাগু-সবকিছুর অস্তিত্ব আছে।  যারা গণেশের হেড সার্জারীতে বিশ্বাস করে উন্নত প্রাচীন ভারতের স্বপ্নদেখে তারাই চাড্ডি। মহাভারতের যুগে এটম বোমা , মিসাইল এসব ছিল-এগুলো যারা বিশ্বাস করে, তাদের শিক্ষার মান মাইনাস ক্লাস টেন। মাইনাস মাধ্যমিক। এই বিশেষ নেগেটিভ এডুকেটেড লোকেদের জন্য একটা নামকরন অবশ্যই দরকার। সেটাই চাড্ডি।

  অনুরূপ ভাবে যারা একাধারে লেনিন এবং লিব্যারালিজমে বিশ্বাস করে, তারা ভামপ্যান্টি। কারন দুটো  সম্পূর্ন বিপরীত ধর্মী আইডিয়াকে যুগপৎ যারা সাপোর্ট করে তারা কমিনিউজম বা লিব্যারালিজমের কোনটাই বোঝে নি। বুঝলে দুটো সম্পূর্ন বিপরীত আদর্শের একই সাথে সাপোর্টার হওয়া যায় না। অর্থাৎ দর্শনশাস্ত্রের প্রাথমিক জ্ঞানটুকু না থাকা সত্ত্বেও যারা  একই সাথে কমিনিউস্ট হিউমানিস্ট লিব্যারাল সবকিছু  একসাথে হওয়ার চেষ্টা করে অজ্ঞানতা বশত-সেই কার্টুন ক্যারেকটরগুলো হচ্ছে ভামপ্যান্টি।

    হার্মাদ ক্লাসটা বরং সোজাসাপ্টা।  এদের কাছে কাস্তে মানে মানুষ কাটো, হাতুড়ি মানে বাস ভাঙো। ভাবে গালাগাল দিলে খুন করলেই কমিউনিজম আসবে!

বৃহস্পতিবার, মার্চ ২৩, ২০১৭

বাকস্বাধীনতা এবং এর বিরুদ্ধ মতবাদ

 লিখেছেন : পাপ্পন দাস
মৌলবাদের বিরুদ্ধে কণ্ঠ তুলতে গিয়ে কবি শ্রীজাত লিখলেন---'আমাকে ধর্ষণ করবে যদ্দিন কবর থেকে তুলে--/কন্ডোম পরানো থাকবে,তোমার ধর্মের ত্রিশূলে।''---এ কি লিখলেন কবি?কন্ডোম পরা থাকলে কি যে কেউ যে কোনো কিছু করতে পারে?তার সব গুনাহ মাফ?কন্ডোম পরে যদি কেউ ধর্ষণ করে,তবে কি সেটা ধর্ষণ নয়?আর কন্ডোম না পরে ধর্ষণ করলেই কি তাকে শুধু ধর্ষণ বলে?কবির এ মানদণ্ড ভুল।কবি আমাদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেছেন।কবিকে সামনে পেলে তাঁর গায়ে আগুন ধরিয়ে দিতাম।
    সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ও তো রামারণ নিয়ে লিখবেন বলেও সেটা লিখেননি।কিভাবে তিনি লেখেন যে,সীতাকে হরণ করে রাবণ যখন নিয়ে যায়,প্রথম রাত্তিরে কিন্তু সীতাকে সে অশোক বনে রাখেনি,রেখেছিল তার নিজের অন্ধকারময় ঘরে।সেখানে কি সে সীতার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করে নি?কিভাবে লিখবেন এই কথাটা?তাছাড়া গর্ভবতী সীতাকে নিয়ে বাল্মীকি যা ইঙ্গিত দিয়েছেন,লব-কুশ নিয়ে তিনি যা যা বলেছেন,কৌশল্যাকে নিয়ে রাজশেখর বসু যা যা বলেছেন,তা কিভাবে লিখবেন?না না,তা লেখা যায় না।তাই লেখা বাদ।রামায়ণ বাদ।কারোর ধর্মানুভূতিতে আঘাত করলেন না।
     এ জায়গায় দাঁড়িয়ে শ্রীজাত কিভাবে আমাদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত করেন?চলো,তাঁর বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দি'।হয় তাঁর স্থান হোক জেলে,নতুবা তসলিমা নাসরিনের মতন রাজ্যের বাইরে।বুঝলে গুরু--এ দেশে ন্যূনতম বাকস্বাধীনতা নেই,তা শ্রীজাত,
তসলিমা এবং তাঁদের মতন বাকী সবারও বুঝতে হবে।তোমাদের বুঝতে হবে আমরা সম্মিলিতভাবে কোন দিকে এগুচ্ছি?
    কবিকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,'এটা আমার কাছে দুর্ভাগ্যজনক।কারণ, আমরা আসলে আস্তে আস্তে গণতান্ত্রিক একটা দেশ হিসেবেও এত বড় অসহিষ্ণুতার একটা আবহাওয়ায় ঢুকে যাচ্ছি,যেখানে মানুষের বাক-স্বাধীনতা খুব সংকীর্ণ একটা জায়গায় আবদ্ধ হয়ে পড়ছে আস্তে আস্তে।একটা কোনো কিছুর বিরোধিতা করলে সঙ্গে সঙ্গে ফতোয়া জারি করা হচ্ছে।যেটা আগে আমাদের দেশে ছিল না।সেটা যে কোনো ধর্মের দিক থেকেই হোক না কেন।সেটা হিন্দুদের দিক থেকে হোক,ইসলামিকদের দিক থেকে হোক,
কিংবা অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীদের দিক থেকে হোক।কিন্তু তাদের অসহিষ্ণুতা দিনকে দিন এত বাড়ছে।কারণ আমি কখনই ভাবি নি যে এই কবিতাটা এরকম একটা জায়গায় যাবে যে, যার জন্যে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হবে।সেটা দেখে আমি খুবই হতাশ।যেমন খুবই হাস্যকর জিনিসটা।কিন্তু হাস্যকরের চেয়েও বড় যে, তার আড়ালে লুকিয়ে আছে একটা হতাশা যে আমরা কোন দিকে যেতে চলেছি।...'