লিখেছেন : ফিরদৌসী বেকন
ভাবছি
আজ
নারীদিবসে
কি
লিখবো? আমার
নারীবাদ
মানেতো
আমি জনম জনম
ধরে নারী হয়েই জন্মাতে চাই। আমার নারীজন্ম স্বার্থকতা পেয়েছে, ঐশ্বর্যময় হয়েছে আমার
দেশের
মহা পুরুষদের
কাব্যে। আমি তাই জীবনভর অর্ধেক মানবী আর অর্ধেক পুরুষের
(রবীন্দ্রনাথের) কল্পনা হয়েই থাকতে চাই।"
আমার কাছে প্রশ্ন
এসেছে, "কাব্যিকতা অার বাস্তবতার মধ্যে কোন সাদৃশ্য নেই। মেয়ে হয়ে জন্মানো কী
অাসলেই স্বার্থক?"
মনে হচ্ছে
প্রশ্নটাতে জীবন সংগ্রামে নারী জন্মের ব্যার্থতার সুর আছে। কারণ নারী এই প্রশ্নে
একক সত্ত্বা, পুরুষ
থেকে
বিচ্ছিন্ন। আমার
মনে
হয়
"আধুনিক নারীবাদ" এই পুরো
কন্সেপ্টটাই
অত্যন্ত
সেনসেটিভ
একটা
ব্যাপার।
এখানে
মোটেও
অস্থিরতা
চলবে
না।
![]() |
লেখিকা : ফিরদৌসী বেকন |
সমাজে
নারীর
মুক্তির
যে
ধারণা
এটাকে
অনেক
ক্ষেত্রে "নারীর
মুক্তি"
না
বলে "নারীর
বিকাশ"
বলা
যেতে
পারে।
কারণ
বর্তমানে
সমাজে
নারীর
অবস্থানের
বিভিন্ন
ধাপ
তৈরি
হয়েছে।
এ
কথা
ঠিক
কিছু
শ্রেণীর
নারী
হয়তো
বন্দী
হয়ে
আছে,
অত্যাচার
এবং
নির্যাতনের
স্বীকার
হচ্ছে
প্রতিনিয়ত।
এরা
নিন্ম
মধ্যবিত্ত
শ্রেণীর
নারী।
এই
নিন্ম
মধ্যবিত্ত
শ্রেনীর
ঠিক
আরেক
ধাপ
উপরে
আরেক
শ্রেনীর
নারী
আছেন।
এরা
উচ্চ
মধ্যবিত্ত
এবং
বিত্তবান
শ্রেনীর
নারী।
বাহ্যিকতার
দিক
থেকে
এদেরকে
প্রায়
মুক্তই
বলা
চলে।
সুতরাং
এদের
মুক্তির
দাবী
অহেতুক,
এদের
বিকাশের
প্রয়োজন।
মানুষের
মুক্তি
আসে
বিকাশের
মধ্যে
দিয়ে।
এদের
পরিপুর্ণ
বিকাশ
হলে
এরাই
নিন্ম
মধ্যবিত্ত
নারীদের
মুক্তির
আবশ্যকতা
অনুভব
করবে।
একজন
পরিপুর্ণ
স্বত্বা
অনাদিকাল
ধরে
অন্যের
মুক্তির
মধ্যেই
নিজের
মুক্তি
খুঁজে
ফিরেছেন।
পরিপূর্ণ
স্বত্বার
বিকাশের
সাথে
সাথে
এরাও
তাই
করবে।
এদের
সঠিক
উদ্দেশ্যের
অনুধাবন
চাই
কেবল।
যে
জায়গাটাতে
আমাদের
স্পষ্টতা
চাই
তা
হোল
আমাদের
লক্ষ্য
কি?
আমরা
কোথায়
পৌঁছুতে
চাই?
সেখানে
পৌঁছাবার
উদ্দেশ্য
কি?
কেন
এতো
হাহাকার
সেখানে
পৌঁছুবার
জন্য?
এসবই
নানাবিধ
প্রশ্নের
উত্তরের
খোঁজ
করা
অত্যন্ত
গুরুত্ববাহী।
এই
খোঁজে
বাঁধা,
বিপত্তি,
তর্ক
হাজারো
আসতে
পারে।
নানা
জনের
নানা
মতামত
থাকবে
সেই
লক্ষ্যকে
ঘিরে।
আবার
অনেকে
সংগে
থাকবেন।
এটাই
স্বাভাবিক।
কিন্তু
তাই
বলে
থেমে
গেলে
চলবে
কেন?
আজকের
দিনের মেয়েরা যেখানে দাঁড়িয়ে সেখানে নারীর জাগরণ যদি আমাদের উদ্দেশ্য হয় এর প্রথম ধাপ হোক পুরুষকে এ আলোচনার বিষয়বস্তু থেকে যতটা সম্ভব দূরে রাখা। নারীকে অনুপ্রানীত করতে
চাইলে কঠোরভাবে নারীর ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরতে হবে। এর কারণ
হোল আমরা সাধারণত যা হাইলাইট করছি সেটাই প্রমোট হচ্ছে। গরীব দেশের
কথা ভাবলেই আফ্রিকা এসে পড়ে ভাবনায়। কারণ তাই প্রমট করছে উন্নত বিশ্ব, আর আফ্রিকার ভাগ্যের ও পরিবর্তন হচ্ছে না। কিন্তু আফ্রিকার কোন
উন্নতি একেবারেই যে ঘতছে না তা কিন্তু নয়। নারীরা দুর্বল বলেই
তাদের উপর কতৃত্ব চলে, শাসন চলে। কিন্তু তাতে যে একেবারেই পরিবর্তন আসেনি তা কিন্তু নয়। আর মেয়েদের দুর্বলতার জন্য
কেবল পুরুষরাই দায়ী নয়।
দীর্ঘপথ অতিক্রম করেও মেয়েরা পুরুষদের অধীনস্থ হয়েছে । যদি বলি
কেন হয়েছে এমন অন্যায়? তাহলে বলতে হবে তাঁর সাথে যুগ-যুগান্তরের ধর্মীয় এবং সামাজিক বিভিন্ন বিষয় জড়িত। মেয়েদের নিজের ভূমিকাও যে এখানে কিছুই নেই তাও নয়। নিম্ন শ্রেণীর মেয়েরা যারা সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত এদের পরিবর্তন এদের একার পক্ষে সম্ভব নয়, এর জন্য দরকার দেশের সরকার এবং আইনের কঠোর ব্যবস্থা। কিন্তু উচ্চবিত্ত শ্রেণীর লেখাপড়া জানা
মেয়েরা, যারা শত সুযোগ সুবিধা থাকা শর্তে ও যখন যুগাবতার গণ্ডি ভেঙ্গে, নিজেদের দায়িত্ত নিতে চায় না, সে গ্লানি কার? এর জন্য ও কি পুরুষরাই দায়ী?
পশ্চিমা
সংস্কৃতি
থেকে
উদ্বুদ্ধ
আধুনিক
নারীবাদের
যে
ধারণা
সেটা
নতুন
প্রজন্মের
বাঙালীর
জন্য
ভয়ংকর।
আমাদের
সংস্কৃতিকে
আধুনিক
নারীবাদী লেখকরা অসমাপ্ত এবং
অবিশ্লেষিত
পশ্চিমা
নারীবাদের
অন্তর্ভুক্ত
করে
মহা
অন্যায়
করেছেন
পুরো
জাতির
উপর।
আমাদের
সংস্কৃতিতে পশ্চিমা নারীবাদকে প্রতিষ্ঠা করার আগেকি একবার ভাবা উচিত নয় আমরা
সভ্যতার দিক থেকে, জাতিগত মননে, রাষ্ট্রীয় নীতিমানে পশ্চিমের সমকক্ষ হয়েছি কিনা?
আর তাছাড়া যদি কোনদিন আমরা পশ্চিমের সমকক্ষ
হইও নিজের
সংস্কৃতিকেকি বিসর্জন দিতে পারবো? অন্তত সেদিক থেকে হলে ও তসলিমা নাসরিন
আর
হুমায়ুন
আজাদ
স্যারের
কথিত। নারীবাদ সুশীল
বাঙালী সমাজে আজীবন মাথা হেট করেই থাকবে।
যুগ
যুগ
ধরে
কতো
পুরুষের
অক্লান্ত
ধৈর্য,
ত্যাগ,
নিষ্ঠা
ছাড়া
আজ
হয়তো
তাদের
নিজের
অস্তিত্বের
ও
কোন
চিনহ
থাকতো
না।
কিন্তু
হঠাত
একদিন
এসে,
পশ্চিমা
গবেষণার
ফলশ্রুতিতে
প্রাপ্ত
পশ্চিমা
জ্ঞানের
দ্বারা
প্রভাবিত
হয়ে
তাঁরা
বলে
দিলেন
পুরুষ
নারীকে
বন্দী
করেছেন?
গবেষণার
সীমাবদ্ধতা
হোল
সেটা
যন্ত্র
আবিষ্কারের
পক্ষে
বিশেষ
উপযোগী।
কিন্তু
মানুষ
আর
মানুষের
অন্তরের
প্রেম
আর
ভালোবাসা
আবিষ্কারের
ক্ষেত্রে
গবেষণার অবস্থান কতটুকু তা
হয়তো
গবেষকরাই
ভালো
বলতে
পারবেন।
এই
রহস্য
যেদিন
আবিষ্কার
করবেন
গবেষণা
আর
গবেষক
দুইয়ের
অস্তিত্বই
বিলিন
হয়ে
যাবে
বইকি।
কিছু
নারীবাদী
লেখক
সীমাবদ্ধ
বিজ্ঞান
আর
প্রযুক্তি
উন্নয়নের
পদ্ধতিকে
মানব
জীবনের
সবচাইতে
জটিল
এবং
সংবেদনশীল
বিষয়
নরনারীর
সম্পর্কের
রহস্যকে
উদঘাটনে
প্রয়োগ
করে
বসলেন।
নরনারীর
প্রেম
আর
ভালোবাসাকে,
সংসারের
সুখ-শান্তি,
বিশ্বাস-অবিশ্বাস
আর
বন্ধনকে
ওনারা
টুকরো
টুকরো
অংশে,
খন্ডে
খন্ডে
বিভক্ত
করে
দেখালেন
কিভাবে
নারীর
মুক্তি
আসে।
অথচ
এই
প্রতিটা
খন্ডকে
এক
করে
জোড়া
দিলেই
হয়
সেই
ছবি,
যাকে
আমরা
বলি
প্রেম,
ভালোবাসা,
জীবন,
বেঁচে
থাকা।
খুব
জানতে
ইচ্ছে
করে
কেমন
ছিলো
আমাদের
বাংলাদেশের
নারীবাদী
লেখক
হুমায়ুন
আজাদ
স্যারের
জীবন?
উনি
নিজের
স্ত্রীকে
কোনদিন
এক
মুহুর্তের
জন্যও
কি
দিতে
পেরেছিলেন
ওনার
বর্ণিত
সেই
মুক্ত
নারীর
জীবনের
আস্বাদ?
ওনার
স্ত্রী
যদি
এতটুকু
ত্যাগ
স্বীকার
না
করতেন,
যদি
ওনার
অভিযুক্ত
নজরুল
আর
রবীন্দ্রনাথের
সেই
মহিমাময়ী,
মমতাময়ী
নারীর
অস্তিত্ব
এতটুকু
ওনার
স্ত্রীর
মধ্যে
না
থাকতো
একজন
বিবাহিত
পুরুষের
পক্ষে
উনিশ
বছরের
বিবাহিত
জীবনে,
তিন
সন্তানের
পিতা
হয়ে
কি
সম্ভব
হোতো
তিনবার
পিএইচডি
করে
আরো
বিবিধ
গ্রন্থসহ
৪০৬
পৃষ্ঠার
বিতর্কিত "নারী" প্রবন্ধটি
রচনা
করা?
জীবনেকে
নিয়ে
একটা
মতবাদ
আছে, "জীবনযুদ্ধ"।
যে
কোন
যুদ্ধেই
এক
পক্ষের
হার
হলে
অন্য
পক্ষের
জিত
হয়।
তবে
সংসারের
এই
যুদ্ধে
হারজিত
বলে
কিছু
নেই।
এখানে
অনেকে
হেরে
গিয়েই
সর্বাপেক্ষা
জয়ী
হন।
নারীকে
পুরুষ
দাসী
করেছে,
কামের
বস্তুতে
পরিণত
করেছে,
তাঁর
সকল
অধিকার
হরণ
করে
তাঁকে
পুরুষের
অধীনস্থ
করেছে, এটা
কোন
যুক্তিসংগত
আলোচনা
হতে
পারেনা।
দুজন
মানুষের
অবস্থান
যে
কোন
সমাজে,
যে
কোন
দেশে,
যেকোন
পরিস্থিতিতে
কতটা
সমকক্ষ
হতে
পারে
সেটা
কি
দাঁড়িপাল্লা
দিয়ে
মেপে
বের
করা
সম্ভব?
নারীকে
যদি
পুরুষ
ভোগ
করেই
থাকে
নারীকি
কোন
অবস্থাতেই
পুরুষকে
এর
কিছুই
ভোগ
করছে
না?
কামের
তৃষ্ণা
কি
পুরুষের
একারই
আছে
কেবল?
নারী
কি
মরা
কাঠ,
কেবল
জড়
বস্তু?
বরং
একজন
সুস্থ্য
নারীর
শারীরিক
চাহিদা
একজন
পুরুষকে
ছাড়িয়ে
যায়।
আবার
ঠিক
একইভাবে
সেই
একই
নারীই
নিজেকে
নিয়ন্ত্রণ
করবার
ক্ষমতা
সেই
পুরুষের
চাইতে
শতগুণ
বেশী
ধারণ
করে।
কেন
নারীর
এই
পার্থক্য?
না
এটা
পুরুষের
সিদ্ধান্ত
নয়।
আমি
আমার
সব
লেখায়
বারবার
বলি, "নারী
তাঁর
মানবিকতাকে
লালন
করে
আপন
গর্ভে"
তাই
এই
পার্থক্য।
অবশ্য
সব
নারী
নয়,
শুধুমাত্র
একজন
রুচিশীল,
ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন
স্বাভাবিক
নারী।
আর
ঠিক
এখানেই,
কেবল
এখানেই
কিছু
সংখ্যক
নারীপুরুষ
একে
অন্যের
সমকক্ষ
হন।
যেখানে
এইসব
নারীদের
মতো
রুচিশীল,
ব্যাক্তিত্বসম্পন্ন
পুরুষরা
তাদের
সমকক্ষ
নারীর
খোঁজে
থাকেন।
কখনোবা
এরা
একে
অন্যের
সান্নিধ্যে
এসে
একে
অপরকে
আবিষ্কার
করেন।
এবার
এদের
দুজনের
মধ্যে
কে
কাকে
ভোগ
করলো,
কে
কার
পা
মালিশ
করলো,
কে
বউয়ের
গোলাম
হোল,
কে
স্বামীর
দাসী
হোল
সেটাকি
তাদের
ব্যাক্তিগত সুখ দুখের অধিকার
নয়?
এই
সুখ
দু:খ
ছাড়া
মানব
সংসারের
প্রেমের,
বন্ধনের,
হৃদ্যতার,
অভিমানের,
ব্যাথার
কি
কোন মুল্য থাকতো? আমরা
যদি
সবাই
সবার
সমকক্ষ
হই
কিসের
প্রয়োজন
হবে
আমাদের
একের
অন্যকে?
কেমন
করে
জানবো
কেন
একজন
অসাধারণ
যোগ্যতাসম্পন্ন
সফল
নারী/পুরুষ
একজন
সাধারণ
নারী/পুরুষের
ক্ষুদ্রতাকে,
সাধারণত্বকেই
অসাধারণ
ভেবে
আজীবন
আঁকড়ে
ধরে
থাকেন?
কেমন
করে
জানবো
জগতে
একমাত্র
প্রেমই
পারে
নারী
পুরুষের
সকল
শ্রেষ্ঠত্ব
আর
ক্ষুদ্রতাকে
এক
করে
বিলীন
করে
দিতে?
কেমন
করে
জানবো
জগতের
এই
মোহনিয়া
সৃষ্টিসুখকে
অবিরত
উপভোগ্য
যে
করে
তুলছে
সে
পুরুষের
চোখে
নারীর
ঐশ্বর্য
আর
নারীর
চোখে
পুরুষের
শ্রেষ্ঠত্বের
ডাক
ছাড়া
আর
কিছুই
নয়?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন