--- পাপ্পন দাস
নিমেশ আর অমৃতা
ঘুরতে বেরিয়েছে।কার্তিকের
সন্ধ্যে।ঠাণ্ডা বেশ
ঝেঁকে বসেছে।এবারের
শীতটা বুঝি
একটু তাড়াতাড়িই
চলে এসেছে।গত
বছর আজকের
এই দিনে
লক্ষীপুজো ছিল।সেদিন সবাই
ঘেমে নেয়ে
একশা।অবশ্য গতবছর
গরমটা সেরকম
পড়েনি,যেমন
এবার পড়েছে।আবার এবার
দেখা যাচ্ছে
রাত্রিটা বুঝি
খুব তাড়াতাড়ি
নেমে আসছে,
আকাশের হাসি হাসি মুখে একটা কালো দাগ লাগিয়ে দিয়ে তারা চলে যাচ্ছে।তাঁরা দুজন হাঁটছে,আপন মনেই হাঁটছে,আর তাঁদের সঙ্গে প্রচুর লোকও হাঁটছে।যতদূর মনে হচ্ছে সবাই স্থানীয় লোক।নিমেশ আর অমৃতা এদের মধ্যে কয়েকজনকে চিনতেও পারছে।হাই হ্যালো বাই বলে হাত টাত নাড়িয়ে আবার তাঁরা তাঁদের আপন মনে হাঁটছে।
নিমেশ ভাবছে,এই তো কিছুদিন আগে দুর্গাপুজো নামক একটা জাতীয় উৎসব চলে গেল।হৈ চৈ পুজো দেখা,সারাদিন আনন্দে কাটানো,রঙ বেরঙে সজ্জিত কত লোক এই ক'দিন সবকিছু ভুলে নিজেদেরকে দুর্গোৎসবের কাগজের ঠোঙায় চড়ে ভাসালো।এর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার আরেক পুজো।সত্যিই এই জগতে জন্ম নেওয়া আমাদের সৌভাগ্যই বটে।মাঝে মাঝে আবার নিজেকে তার পুতুলের মতন মনে হয়।জীবন তাকে নাচাচ্ছে,আর সে নেচে নেচে বেড়াচ্ছে,নিজের কোন বক্তব্য নেই,নেই কোন উদ্দেশ্য।জীবন তাকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে, সে সেদিকেই যাচ্ছে,সেই ঢেউয়েই ভাসছে।এই পৃথিবীতে জন্ম না নিলে কি এরকম একটা চমৎকার সময় কাটানো যেত?
প্রথমে তারা চলে গেল পঞ্চপ্রদীপ ক্লাবের পুজো দেখতে।প্রায় সত্তর বছরের পুরনো পঞ্চপ্রদীপ ক্লাবের পুজোর এ বারের থিম 'প্রাচীনকালীন'। খুলে বললে ‘পুরনো সেই দিনের কথা'। মণ্ডপটাকে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের খেলার সরঞ্জাম দিয়ে।বিভিন্ন বয়সের মানুষের মডেল দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে জীবনের শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত থাকা বিভিন্ন পর্যায়গুলো।তারা দুজন হাতে হাত রেখে সারা মণ্ডপ ঘুরে পুজো দেখলো।বেশ কয়েকটা সেলফি উঠলো।এরপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে ফটো তোলার জন্য মোবাইলটা দিয়ে অন্তরঙ্গ হয়ে আরও দু'টো ফটো উঠলো।
তারপর বাঁদিকের পথ ধরে তারা গেল উদয়ন ছাত্র সঙ্ঘের পুজো দেখতে।উত্তরপ্রদেশের গ্রামগুলোর বাড়ির আদলে সেজে উঠেছে এই পুজো মণ্ডপ।প্রায় একশো বছরের পুরনো এই ক্লাবের পুজোর মণ্ডপটি সজ্জিত হয়েছে তন্ত্রসাধনার বিভিন্ন ছবি দিয়ে।বাইরে প্রচুর বেড়া লাগানো।আর বেড়ার উপরে রয়েছে মাটির কিছু অলঙ্করণ।এখানেও তারা পুজো মণ্ডপ ঘুরে পুজো দেখলো।তারপর বাইরে বেরিয়ে এসে কয়েকটা সেলফি,এবং এক মাসি গোছের কাউকে দিয়ে আরও তিনটে ফটো।
এবারের পুজো মণ্ডপটির নাম হলো সপ্তশিখা সঙ্ঘ।কিছু চেনাজানা লোক এখানে আছেন বলে তারা একটা দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিমা দেখতে ঢুকলো।ধ্যানরত অবস্থায় রয়েছেন প্রতিমা। প্যান্ডেলটি আবার চতুর্ভুজাকৃতি। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে থার্মোকল,পেপার, মিরর গ্লাস,কিছু ফোম, ফয়েলের কিছু পেপার, কপারের প্লেট এবং আরও অনেক কিছু।
আকাশের হাসি হাসি মুখে একটা কালো দাগ লাগিয়ে দিয়ে তারা চলে যাচ্ছে।তাঁরা দুজন হাঁটছে,আপন মনেই হাঁটছে,আর তাঁদের সঙ্গে প্রচুর লোকও হাঁটছে।যতদূর মনে হচ্ছে সবাই স্থানীয় লোক।নিমেশ আর অমৃতা এদের মধ্যে কয়েকজনকে চিনতেও পারছে।হাই হ্যালো বাই বলে হাত টাত নাড়িয়ে আবার তাঁরা তাঁদের আপন মনে হাঁটছে।
নিমেশ ভাবছে,এই তো কিছুদিন আগে দুর্গাপুজো নামক একটা জাতীয় উৎসব চলে গেল।হৈ চৈ পুজো দেখা,সারাদিন আনন্দে কাটানো,রঙ বেরঙে সজ্জিত কত লোক এই ক'দিন সবকিছু ভুলে নিজেদেরকে দুর্গোৎসবের কাগজের ঠোঙায় চড়ে ভাসালো।এর কিছুদিন যেতে না যেতেই আবার আরেক পুজো।সত্যিই এই জগতে জন্ম নেওয়া আমাদের সৌভাগ্যই বটে।মাঝে মাঝে আবার নিজেকে তার পুতুলের মতন মনে হয়।জীবন তাকে নাচাচ্ছে,আর সে নেচে নেচে বেড়াচ্ছে,নিজের কোন বক্তব্য নেই,নেই কোন উদ্দেশ্য।জীবন তাকে যেদিকে নিয়ে যাচ্ছে, সে সেদিকেই যাচ্ছে,সেই ঢেউয়েই ভাসছে।এই পৃথিবীতে জন্ম না নিলে কি এরকম একটা চমৎকার সময় কাটানো যেত?
প্রথমে তারা চলে গেল পঞ্চপ্রদীপ ক্লাবের পুজো দেখতে।প্রায় সত্তর বছরের পুরনো পঞ্চপ্রদীপ ক্লাবের পুজোর এ বারের থিম 'প্রাচীনকালীন'। খুলে বললে ‘পুরনো সেই দিনের কথা'। মণ্ডপটাকে সাজানো হয়েছে বিভিন্ন ধরনের খেলার সরঞ্জাম দিয়ে।বিভিন্ন বয়সের মানুষের মডেল দিয়ে তুলে ধরা হয়েছে জীবনের শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত থাকা বিভিন্ন পর্যায়গুলো।তারা দুজন হাতে হাত রেখে সারা মণ্ডপ ঘুরে পুজো দেখলো।বেশ কয়েকটা সেলফি উঠলো।এরপর পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজনকে ফটো তোলার জন্য মোবাইলটা দিয়ে অন্তরঙ্গ হয়ে আরও দু'টো ফটো উঠলো।
তারপর বাঁদিকের পথ ধরে তারা গেল উদয়ন ছাত্র সঙ্ঘের পুজো দেখতে।উত্তরপ্রদেশের গ্রামগুলোর বাড়ির আদলে সেজে উঠেছে এই পুজো মণ্ডপ।প্রায় একশো বছরের পুরনো এই ক্লাবের পুজোর মণ্ডপটি সজ্জিত হয়েছে তন্ত্রসাধনার বিভিন্ন ছবি দিয়ে।বাইরে প্রচুর বেড়া লাগানো।আর বেড়ার উপরে রয়েছে মাটির কিছু অলঙ্করণ।এখানেও তারা পুজো মণ্ডপ ঘুরে পুজো দেখলো।তারপর বাইরে বেরিয়ে এসে কয়েকটা সেলফি,এবং এক মাসি গোছের কাউকে দিয়ে আরও তিনটে ফটো।
এবারের পুজো মণ্ডপটির নাম হলো সপ্তশিখা সঙ্ঘ।কিছু চেনাজানা লোক এখানে আছেন বলে তারা একটা দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিমা দেখতে ঢুকলো।ধ্যানরত অবস্থায় রয়েছেন প্রতিমা। প্যান্ডেলটি আবার চতুর্ভুজাকৃতি। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে থার্মোকল,পেপার, মিরর গ্লাস,কিছু ফোম, ফয়েলের কিছু পেপার, কপারের প্লেট এবং আরও অনেক কিছু।
সেখান থেকে বেরিয়ে তারা বাকি সব পুজো মণ্ডপগুলোও ঘুরলো।কোনও মণ্ডপ সাজানো হয়েছে
পুতুল নাচের বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে,কোনও মণ্ডপের মধ্যে রামায়ণ-মহাভারতের মতন ঐতিহাসিক ছবিগুলো দৃশ্যায়ন হচ্ছে,কোনও মণ্ডপ দেখে বোঝা যাচ্ছে এসব মণ্ডপ সাজাতে অনেক দূর থেকে শিল্পীরা এসেছিলেন।কোনওটায় তারা ব্যবহার করেছেন বড় বড় মোমবাতি,দেশলাইয়ের কাঠি, প্রদীপ-টদীপ এবং আরও কত কি!কোনও মণ্ডপের ভিতরে দেখা যাচ্ছে পুতুল নাচের বিভিন্ন আঙ্গিক দৃশ্যগুলো ।কোনও পুজোর মণ্ডপ সজ্জায় আবার রয়েছে মাদুর থেকে শুরু করে বেড়া, প্লাস্টিকের বল,প্লাস্টিকের বোতল,কাঁচের গেলাস, বেত,বাঁশের কঞ্চি-টঞ্চি।এসব দেখে তাদের খুব ভালো লাগছে।এবারের কালিপুজোর থিমগুলো বেশ সুন্দর।দুর্গাপুজোর তুলনায় অনেক অনেক ভাল।এর মধ্যে একটা পুজোর থিম রয়েছে রাশিচক্র। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহার করা হয়েছে পটচিত্র, মাটির পুতুল, হাঁড়ি,বাসন এবং আরও কত কিছু।সেই রাশিচক্র, এতে বোঝা যাচ্ছে যে তারা বারো মাসে তেরো পার্বণের বিভিন্ন দৃশ্য দেখাতে চাইছে।হিন্দুদের সব পার্বণকে বুঝিয়ে দিচ্ছে।
পুজো দেখা শেষ করে তারা বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হলো।কিন্তু হাঁটতে হাঁটতে নিমেশের মাথায় একটা দুষ্ট ভাব জন্ম নিল।ভাবলো,'আজ আমি অমৃতার সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করবো।সারা জীবনের প্রেম আমি আজ একদিনেই মিটিয়ে দেবো।আজকের এই কালীপুজোর দিন সাক্ষী থাকবে,
আমার প্রেমের।'
সে অমৃতাকে বললো,চলো অমৃতা ওইদিকে যাবো।
-কোনদিকে?
-ডানদিকে।
-ডানদিকে কেন?ওদিকে কি কোন ভালো পুজো রয়েছে?আমার জানা মতে তো ওইদিকে কোন পুজো নেই।
-হ্যাঁ,তুমি ঠিকই বলছ,ওদিকে কোন পুজো নেই।
-তাহলে কেন ওদিকে যাবো?
-এত্ত প্রশ্ন কোরো না তো!চলো।
-কেন যাব,সেটাই তো বলছ না।ঠিক আছে চলো।
ডানদিক ধরে কিছুক্ষণ হাঁটার পর অমৃতা বললো,কেন যে আমরা মিছিমিছি এদিকে হাঁটছি সেটাই তো আমি বুঝতে পারছি না।লোকজনও নেই এখানে।মনে হচ্ছে যেন আমরা দুজন শ্মশানের ডোম।
অমৃতা কথাগুলো বলছে।নিমেশ অমৃতার কোন কথার কোন উত্তরই করলো না।হঠাৎ বাঁ-হাত ধরে একটা হেঁচকা টান দিয়ে তাঁকে ঘুরিয়ে দিলো সে।চুল মুঠিতে ধরে তাঁর ঠোঁটে একটা গভীর চুমু খেল নিমেশ।কিছুক্ষণ পর নিমেশ একটু পেছনে হটলো।বোঝা যাচ্ছে না,অমৃতার রিয়াকশন কি।এখন অন্ধকার,তাই অনেক কিছু দেখা যাচ্ছে না।যদি এখন দিনের বেলা হতো,তাহলে হয়ত স্পষ্ট বোঝা যেত,অমৃতার মুখে রোদ্দুর আর উত্তেজনার একটা লালচে আভা।কিন্তু অন্ধকার বলে এরকম কিছুই দেখা যাচ্ছে না।দিনের বেলা হলে অবশ্যই দেখা যেত অমৃতার চোখের পাতা কাঁপছে।নিশ্চয়ই তাঁর কালো গভীর চোখে একটা বিরাগের ছায়া,আর চোখের গভীরের সেই তারায় বহু পুরনো ইতিহাস, শতাব্দী পুরনো ইতিহাস।সে ভাবতে লাগলো,সে তো নিমেশকে ভালোবাসে।খুব খুব বেশি ভালোবাসে।তাঁর সবকিছুই তো নিমেশের।কিন্তু এভাবে জোর করে?যদি নিমেশ তাঁকে একবার বলতো যে,পুজো দেখা তার আসল মতলব নয়,
আসল মতলব হলো,চুমু খাওয়া,হয়ত সেক্স করা--- তাহলেও কি সে তাকে মানা করে দিত?জানে না,জানে না সে কোন কিছুই।তাঁর মনে হলো,সে বুঝতে পারলো,উপলব্ধি করতে পারলো,সে তো মেয়ে,আর এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সব মেয়েরাই হলো ভোগ্যবস্তু।
অনেকক্ষণ ধরে সে তাকিয়ে রইলো।তাকিয়ে রইলো সে নিমেশের দিকে।সে একজন নারী।একজন পুরুষের ইচ্ছে হলো তাঁকে সে ভোগ করবে।সে(অমৃতা) কি পারবে তাকে আটকে দিতে?একজন পুরুষ বলছে,আমি তোমাকে চাই।সে কি পারবে,তাকে মানা করে দিতে?তাছাড়া এখানে তৃতীয় কোন প্রাণীও তো নেই।আর থাকলেই বা কি হতো!
নিমেশ এবার অমৃতার কোমরে হাত দিলো।কোমরটাকে তার হাতের অদৃশ্য দড়ি দিয়ে বেঁধে দিল।নিমেশের হাতটাই হলো একটা দড়ি।বিশাল একটা দড়ি।অমৃতা তাকে কোন বাঁধা দিচ্ছে না। এই সমাজের পুরুষেরা একজন নারীকে ভোগ করবে,সেটাই তো নিয়ম।এখানে বাঁধা দেবার কি আছে!অমৃতা নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার কোন চেষ্টাই করছে না।আদতে সে সাহসই পাচ্ছে না।তাঁর মন তাঁকে কোন কিছু বলেও দিচ্ছে না।তাঁর মনের মধ্যে একটা তোলপাড় হচ্ছে।এই কার্তিক মাসের রাত্তিরেও একটা ঝড় উঠেছে,যে ঝড় ফড়ফড় আওয়াজে সবকিছু ভেঙে দিচ্ছে।
কোমর থেকে হাতটা সরিয়ে নিমেশ এবার অমৃতার গলায় হাত রাখলো।মুখে কিন্তু অমৃতার কোন শব্দ নেই।সে বুঝি এখন বাক্-হীন।কিন্তু সে বুঝতে পারলো,নিমেশ বলছে,অমৃতা,তুমি বড় সুন্দর,আমি তোমাকে চাই,তোমাকে ভালোবাসি।কিন্তু আমার সব ভালোবাসাই তোমার শরীরে সীমাবদ্ধ।এই পৃথিবী,আজকের এই পুজোর দিনকে সাক্ষী রেখে বলছি,তোমার চেয়ে সুন্দরী আর কেউ এই জগতে নেই,কিচ্ছু নেই।সে এও বুঝতে পারলো,
প্রত্যেক মানুষের মধ্যে একটা পশু আছে,যে পশু শুধুমাত্র নারী- শরীরকে ভালোবাসে।
আর তাঁর চিন্তাধারা সত্য হলো তখন,যখন নিমেশ তাঁর শাড়ির আঁচল ধরে টান দিল।সে এখন দ্রৌপদী।ধীরে ধীরে তাঁর সমস্ত শরীরকে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে নিমেশ।অমৃতা কিন্তু তাতেও কোন বাঁধা দিল না।তাঁর সব পোশাক খুলে ফেললো নিমেশ।এখন রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে শুধুমাত্র একটা শরীর।সে বুঝি এইমাত্র এই জগতে এসেছে।কাপড়-চোপড়ের কোন প্রয়োজন নেই।আস্তে আস্তে নিমেশের হাত অমৃতার গলা, ঘাড় সব অতিক্রম করে অন্য সব জায়গাতেও যেতে লাগলো।অমৃতার চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে।আজ সে সতীত্ব হারালো।এই সতীত্ব হয়ত একদিন তাকে হারাতেই হতো।কিন্তু এভাবে?অন্ধকার রাস্তায়?তাঁর অনিচ্ছায়?পথের মাঝখানে?তাঁর নিজের কি কোন ইচ্ছে অনিচ্ছে নেই?
ধীরে ধীরে সে সব কাপড়-চোপড় গায়ে দিয়ে সোজা পথ ধরে হাঁটতে লাগলো।নিমেশ তাঁকে ডাকলো।
--এই অমৃতা,কোথায় যাচ্ছ তুমি?
কোন উত্তর নেই।কে দেবে উত্তর?অমৃতার মুখ থেকে কি কোন শব্দ বেরোবে?এই পরিস্থিতিতেও কি নিমেশের কথার কোন উত্তর দেওয়া যায়?না,সে কোন উত্তর দেবে না।সে হাঁটতে থাকবে।অনন্তকাল ধরে হাঁটবে।এই জগতের সব নারীর হয়ে সে হাঁটবে।এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজ যদিও এতে থেমে থাকবে না,আরও কত নারীকে এভাবে উদ্দেশ্যহীন করে দেবে।এটাই তো এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পুরুষের নিয়ম।পুরুষরা তো এটাই চায় যে,এই জগতের সব নারী উদ্দেশ্যহীন হয়ে পড়ুক,আর তাদের রাজত্ব কায়েম থাকুক।একটা লোক পাশ কেটে চলে যাচ্ছে,
অন্ধকারের মধ্যেও লোকটার মুখ সে দেখতে পাচ্ছে।লম্বা-ধ্যাড়েঙ্গা একজন লোক,গায়ের রঙ মিশমিশে কালো,মাথায় একটা মস্ত বড় টাক,মুখে মিলিটারির মতন গোঁফ,পরনে ধুতি।অমৃতা সেই লোকটার মুখের দিকে তাকালো।লোকটাকে তাঁর বেশ নিরীহ গোছের মনে হচ্ছে।
একটুক্ষণ সে ওই লোকটার চোখের দিকে তাকালো।
চোখ দুটোতে একটা ফ্যালফ্যাল ভাব---যেন কথা বলছে।কিন্তু সেও কি একজন রেপিস্ট নয়?এই তো বেশ কয়েকবছর আগে ভারতীয় সিনেমার এক অভিনেত্রী বলেছিলেন---এভরি ম্যান ইজ এ পোটেনশিয়াল রেপিস্ট।কথাটা কি সত্যি নয়?হয়ত সেটা ভুল,কিংবা সত্যও হতে পারে।কিন্তু এটা সে জানে,এবং আজ আরও ভালভাবে অনুধাবন করতে পেরেছে যে,প্রত্যেকটা নারী এক-একটা মাংসপিণ্ড,অন্তত এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পুরুষদের চোখে।যে মাংসপিণ্ড নিয়ে পুরুষ খেলা করতে পারে,এবং করেও বটে।এই পুরুষতান্ত্রিক সমাজের পুরুষদের মতে,নারীজাতি শস্যক্ষেত্রের সমান।পুরুষ ভাবে তারা চাইলেই নিজের ইচ্ছেমত সেই শস্যক্ষেত্রে চাষাবাদ করতে পারে।নারী হলো ভোগের বস্তু।একে যেন তেন প্রকারে ভোগ করা যায়।
সে প্রথা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে।নারীকে সবাই ভোগ করছে,এবং মন চাইলে অন্যদের কাছে বিলি করেও দিচ্ছে।নারী হলো দুর্ভাগিনী। তাই তো অনেকেই বলে থাকেন,দুর্ভাগা নারী।নারীর সাথে এই দুর্ভাগ্য নামক শব্দটা জন্মলগ্ন থেকেই লেগে থাকে। চাইলেও সে সেটাকে মুছে ফেলতে পারে না।আর আজ তো সে স্পষ্টত একটা প্রমাণ পেয়েছে যে নারী হলো একটা পণ্যসামগ্রী।আর এই পণ্যসামগ্রীকে সমাজ যৌনসামগ্রী হিসেবে মনে করে। আজ যুগ বদলেছে,মেয়েরা লেখাপড়া শিখছে,
নিজেদের মনের মতো কাজকর্ম করছে,নিজেরা নিজেদের অর্থনৈতিক সচ্ছলতা পেয়ে যাচ্ছে---
তারপরও কি কিছুর বদল হয়েছে?তাঁরা তো সেই আগের মতো ভোগ্যবস্তু হিসেবেই রয়ে গেল।না হলে কি পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কোন পুরুষ নিজেকে এই সমাজব্যবস্থার মূল আসনে বসিয়ে তাঁর ইচ্ছে অনিচ্ছের বিপক্ষে গিয়ে তাঁকে ভোগ করতে পারতো?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন