ভারতবাসী নৈরাশ্যবাদী নয়। মাভৈঃ শন্দটি যারা উচ্চারণ
করেছিলেন আমরা তাদের উত্তরসূরী। কিন্তু গড়ান সময়ধারার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের চেতনায়
কিছু মালিন্য এসেছে। কেন এল? কি এর ভৌগলিক কারণ, কি বা ঐতিহাসিক কারণ সেসব বকে
আপনাদের মূল্যবান সময় নষ্ট করতে চাইনা। তবে একথা সত্য বর্তমানে যে ভারত আমরা দেখছি
তা আমাদের চিত্ত কে অস্থির করেছে। আপাতঃদৃষ্টিতে উন্নত ইউরোপিয়ান ও আমিরিকান
ভাবধারাকে আত্মস্থ করতে গিয়ে আমরা এমন এক দশায় উপনীত হয়েছি যে না পারছি তা গিলতে
আর না পারছি তা ওগরাতে।
১৯৬৫ তে আমেরিকা বৃটেন পাকিস্থান কে তোল্লাই দিয়ে ভারতকে
পায়ের তলায় রাখার এক পরিকল্পনা করেছিল। এন্টারপ্রাইজ নামক আমেরিকান বিখ্যাত রণতরী
বঙ্গোপ্সাগরে যাত্রা শুরু করলে সামরিক মৈত্রীচুক্তি অনুসারে রাশিয়াও যখন ২০টি
রণতরী ভারতমহাসাগরে রওনা করে দিল তখন আবার একটা বিশ্বযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি
হয়েছিল। আমেরিকা পরিকল্পনার পরিবর্তন ঘটিয়ে জাহাজ ফেরত নেয়।
ঐ যুদ্ধের পরে পাকিস্থান এবং ভারত উভয় দেশই অস্ত্রসজ্জায়
মন দেয়। তাতে রাশিয়া এবং আমেরিকা ও তাদের মিত্র দেশগুলির ট্যাংক, বিমান ও অন্যান্য
যুদ্ধাস্ত্র বিক্রি পাটার ব্যবসা সুন্দর অগ্রগতি লাভ করে।
বিশাল এশিয়া ভূখন্ড হল শিল্পোন্নত দেশগুলির বৃহত্তম
বাজার। এখানে কোণ রাষ্ট্র অসম্ভব শক্তিধর হয়ে উঠলে ইউরোপ আমেরিকার কপালে ভাঁজ পড়া
স্বাভাবিক। সুতরাং বরাবর যাতে ভারত পাকিস্থান তার আভ্যন্তরীন সমস্যা নিয়ে বিব্রত
থাকতে পারে সেজন্য নিত্য নূতন কৌশল উদ্ভাবনই হল ওইসব দেশের অন্যতম কূটকৌশল। আর সেই
সূত্রেই বর্তমান পাকিস্থান উগ্রপন্থীদের উর্বর পীঠস্থান, আর ভারতের কোন কোনে
বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির বাড়বাড়ন্ত।
কিন্তু কিছু অদ্ভূত প্রাকৃতিক নিয়ম আছে যা তার নিজের
অমোঘ শক্তি দ্বারা চালিত। এরকম একটি নিয়ম হল ফ্রাংকেন্সটাইন তার স্রস্টাকে হত্যা
করবে এবং নিজেও হত হবে। উদাহরণ ওসাম বিন লাদেন। রাশিয়াকে আঘাত করার উদ্দেশ্য নিয়ে
আমেরিকা এই ধ্বংসাত্মক মারণাস্ত্রটি উদ্ভাবন করে অবশেষে স্রষ্টার শরীরে মরণকামড়
বসাবার পর সেও ধ্বংস হয়। যদিও তার অনুসারীরা প্রতিনিয়ত ছোটখাট কামড় বসাচ্ছে এবং
মরছে যা অবশ্যম্ভাবী।
পৃথিবীর সমস্ত উগ্রপন্থী দল যাবতীয় বিস্ফোরক উপাদান সমূহ
এবং মারণাস্ত্রগুলি সংগ্রহ করে যে সব দেশ থেকে তাদের মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে
আমেরিকা, বৃটেন, ফ্রান্স, ইতালি, চীন এমন কি পাকিস্থান। আর এইসব দেশ এবং তাদের
মিত্র দেশগুলিই উগ্রপন্থীদের অন্যতম লক্ষ্য। এই কামড়ের জ্বালা থেকে রেহাই পাচ্ছেনা
এমন কি রাশিয়া এবং চীন ও।পাবার কথাও নয়। ভারত অন্যতম লক্ষ্য কারণ বর্তমান ভারত
আমেরিকা এবং বৃটেনের অন্যতম মিত্রদেশ যদিও প্রকৃত সত্য বললে পদলেহনকারী দেশ বললেই
ভাল হয়।অদুর ভবিষ্যতে আমেরিকা এবং তার মিত্রদেশগুলি চীনের উপর ঝাঁপাবে ফলাফল কি
হবে তা অনুমান করা দুরূহ। হতে পারে অর্ধেক পৃথিবী ধূলো হয়ে যাবে, চীন আত্মসমর্পণ
করতে বাধ্য হবে অথবা দূর্ভাগ্য নেমে আসবে ইউরোপ আর আমেরিকার উপর। এই যুদ্ধে কোন
ভাবেই ভারত, পাকিস্থান,জাপান প্রভৃতি দেশকে চীনের পাশে দাঁড়াতে দেওয়া হবে না।
উত্তর কোরিয়ার মোকাবিলা করা হবে দক্ষিণ কোরিয়া দিয়ে, চীন কে আক্রমণ করা হবে
তাইওয়ান দিয়েও। জাপান এবং ভারত কে বলা হবে চীনের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করতে যার পুরষ্কার
হিসাবে চীনের কিছু অংশ ঐ সব দেশ কে দান করার কথা বলা হবে। চীন দৈত্য কে যদি পেড়ে
ফেলা যায় তবে ভারত পাকিস্থানের ভাগ্যে কি আছে তা সহজেই অনুমান করা যায়।
এই সহজ ব্যাপারটা অবশ্য আমাদের দেশনেতারা কোনদিন ভেবে
পাননা। পেলে তাদের সুইস ব্যাংকে তহবিল জমাবার ক্ষেত্রে, গায়ের জোরে ক্ষমতা ভোগ করে
দেশের ভবিষ্যতের পিন্ডি চটকাবার ক্ষেত্রে বিপর্যয় নেমে আসবে। ভোটে জেতার জন্য অঢেল
টাকার যোগানেও নিদারুণ সমস্যা দেখা দেবে। সুতরাং সেই অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির
রকমফের মেনে নাও অথবা নিকেশ হও এই খাঁড়ার নীচে ভারতের মাথা ঢূকিয়ে দেওয়াই ১৯৪৭
থেকে ২০১৪ পর্যন্ত ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের সারাৎসার। আর এই কৃতিত্বের বৃহত্তম দাবীদার ভারতের প্রধান সেই রাজনৈতিক
দলগুলি যারা পরিবারতন্ত্রের ছটা অথবা ধর্মীয় টোটকা দিয়ে ভোলাভালা ভারতবাসীর ভোট টা
বাগিয়ে নিয়ে তাদের এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে।
আমরা স্বপ্ন দেখছি সুদিনের। এই স্বপ্ন আমাদের দেখানো
হচ্ছে একজন উচ্চাকাঙ্ক্ষী যুবক অথবা একজন মধ্যবয়ষ্ক বিতর্কিত গৈরিক উত্তরীয় চাপানো
মানুষ দিয়ে। ঐ স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নেবার ক্ষমতা সম্পন্ন নয়। কেননা দুর্নীতির
বিরুদ্ধে সকলেই নীরব। সকলেই তাকিয়ে আছেন বহু মামলার আসামী অথচ টিকিট পাবেন এমন সব
মুখোসধারী ভবিষ্যৎ সাংসদদের দিকে। এরা একটি পবিত্র ভারত আপনার আমার জন্য গড়ে দেবে
আপনারা কি তা বিশ্বাস করেন?
তাহলে কোথা থেকে শুরু হবে ভারতের সংস্কার সাধন? শুরু হবে
দুর্নীতি হটাও দেশ বাঁচাও এই স্লোগান দিয়ে। যে এই স্লোগানে গলা মেলাবে না তাকে দূর
করে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হবে অতলান্ত খাদে। যে আজ দুর্নীতির সঙ্গে আপস করছে সেই তো ফ্রাংকেন্সটাইন
তৈরির কারিগর। সে দাসত্বের সঙ্গেও অনিবার্য ভাবে আপস করবে। সে বা তারা স্বাধীনতার
পরিবর্তে আপনার হাতে পায়ে পরাবে শৃংখল ,
জাতিকে করবে ক্রীতদাস তাই সাবধান কোন মহৎ লাভের জন্যই দুর্নীতির সঙ্গে আপোস করা
চলবে না।
আমাদের হারাবার কি আছে যে আমরা একটা জবরদস্ত লড়াই দিতে
পারবো না!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন