বুধবার, জানুয়ারী ০৮, ২০১৪

একদিন সম্রাট (পর্ব ৬)

                    লিখেছেন : মনোবর
সম্রাট দক্ষিণ হস্ত উত্তোলন পুর্বক অতিথিসহ সকলকেই শান্ত থাকিতে আদেশ করিলেন। প্রধান সেনাপতি আসন হইতে উত্থিত হওয়ামাত্রই উপেন্দ্রর নির্দেশে তাহাকে নিরস্ত্র এবং বন্দী করা হইল।  এ সকল দেখিয়া পানশালার কবি মন্তব্য করিয়া বসিলেন, ‘ বিশেষ ধরণের কোন কৌতুক হইতেছে আর কি! সব তো দেখিতেছি পুরুষ চরিত্র। নারীরা কি মরিয়াছে! অমনি আমি আঙুরলতা মন্তব্য করিলেন, ‘চোখের মাথা খাইয়াছো নাকি! নর্তকী দুইজন কি নারী নয়! পালা চলাকালীন কোন গোল করিও না। ভাল না লাগিলে এ স্থল হইতে কাটিয়া পড়।’ পানশালা এরূপ বচন শুনিয়া রোষকশায়িত দৃষ্টিতে আমি আঙ্গুরলতা কে ভস্ম করিবার উপক্রম করিলে ঝুমা বসু কহিলেন, আমরা বাঙ্গালীরা কি পরস্পরের সহিত ঝগড়া ব্যতীত আর কিছুই জানিনা ? ইহা কোন পালা
হইতেছে না।  ঝুম্পা নভঃ ক্রুদ্ধ ভাবে কহিলেন, পালা হউক আর যাহাই হউক ঐ দুইজন কেই সবাই চিনিতেছে।  উহাদের লইয়াই সম্রাটের দিবস রাত্রি উদযাপিত হইতেছে।  কেন নৃত্য কি এমন কহিনূর ! আমরা নৃত্য শিখিনাই বলিয়া কি আমাদিগের কোন মূল্য নাই? বহুরঙ্গ দে অমনি ফোড়ন দিলেন, যাহা হইতেছে তাহার মধ্যে অসংখ্য ভুল রহিয়াছে। সম্রাটের উচিত ছিল অভ্যাগতদের মধ্য হইতে একটি উপদেষ্টা কমিটি খোদাই করিয়া তাহার সম্পাদকের নির্দেশমত মঞ্চ পরিচালনা করা।  অমনি একজন প্রশ্ন করিলেন একটি অতিরিক্ত কমিটির সুপারিশ ভিন্ন এরূপ গুরুত্বপূর্ণ কমিটির সম্পাদক কিরূপে স্থির করা সম্ভব? বহুরঙ্গ গম্ভীর হইয়া বলিলেন, আমি নিজেই না হয় হইতাম। আমা অপেক্ষা বড় সমঝদার তো কাহাকেও এইস্থলে দেখিতেছি না।
মঞ্চে তখন অদ্ভূত নীরবতা। আহিতি বিন্দুমাত্র বিচলিত না হইয়া স্থির দৃষ্টিতে সম্রাটের দিকে চাহিয়াছিল। এতক্ষনে বিষক্রিয়ায় তার ঢলিয়া পড়িবার কথা। কেননা পূর্বালোচনা ও নির্দেশমত সে মদ্যপাত্রে বিষ ঢালিবার ভঙ্গীতেই হস্তচালনা করিয়াছে ইহা সম্রাটও লক্ষ্য করিয়াছিলেন।  নিশ্চিত হইতে সম্রাট তাহার দক্ষিণহস্ত ধারন পুর্বক যাচাই করিতে চাহিলেন যে আংটিটি যথাস্থানে রহিয়াছে কিনা।  অবাক হইয়া তিনি দেখিলেন সে স্থলে অন্য একটি আংটি রহিয়াছে।

মলিকে বাস্তবিক মিশরের রানী বলিয়াই মনে হইতেছিল। তাহার চাপা বর্ণ ও বেশভূষা বড়ই মানানসই হইয়াছিল।  ইতিপূর্বে সে মহা উদবেগ প্রতিহত করিয়া মঞ্চোপরি দন্ডায়মান ছিল। কারণ সম্রাটের মৃত্যু তাহার কাম্য ছিলনা।  তাহার মন পনীরের মত কোমল ছিল কিন্তু যেইমাত্র সম্রাটের নির্দেশে আহিতি পাত্র হইতে মদিরা পান করিতে বাধ্য হইল অমনি তাহার পনিরকোমল মন চকোলেটের মত জমিয়া কাঁই হইয়া গেল। আহিতি মরিলে সে হস্তের কংকন দ্বারা সবেগে সম্রাটের ললাটে এক ঘা বসাইয়া দিবে এইরূপ চিন্তা করিয়া সে স্বভাব বহির্ভূত এক চীৎকার করিয়া বসিয়াছিল।  ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে সে সম্রাটকে লক্ষ্য করিতেছিল আর দক্ষিণ হস্ত আন্দোলিত করিয়া কংকনটিকে প্রস্তুত রাখিতেছিল। প্রিয় পাঠকবৃন্দ আপনারা যাহারা রমণীমন সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল তাহারা বিলক্ষণ অবগত আছেন যে উহারা পরিণামের চিন্তা করিয়া কর্ম সম্পাদন না করিয়া আবেগতাড়িত হইয়া উহা করিয়া থাকে এবং সারাজীবন ‘কেন উহা করিলাম’ রাগিনী অবলম্বন পূর্বক ঘ্যান ঘ্যান করিয়া প্বার্শবর্তী পুরুষ নারী গণের চিত্ত বিকল করিতে থাকে। ইহার প্রকৃত কারণ আপনারা বিধাতার কাছে খোঁজ করিবেন আমি এ বিষয়ে সাহায্যকরণে অক্ষম হইলাম।
যাহা হউক সম্রাট জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বৃদ্ধ প্রধানমন্ত্রী উপেন্দ্রর কাছে ইহার উত্তর চাহিলে তিনি সম্রাটের নিকটবর্তী হইয়া কহিলেন সম্ভবতঃ কোন এক সময়ে আপনার বান্ধবী আংটি পরিবর্তন করিয়া লইয়াছেন।
সম্রাটঃ  আহিতি, তুমি দুঃসাহসিক কাজ করিয়াছ। তুমি কি জান, আংটি পরিবর্তন করিবার জন্য তোমার প্রাণদন্ড হইতে পারে?
অমনি মলি নিজেকে সংযত না রাখিতে পারিয়া উত্তর করিল, আমাকে ঐ আসনে বসাইলে আমিও কথায় কথায় প্রাণদন্ড দান করিতে পারি। আপনি কি প্রাণ সৃষ্টি করিতে সমর্থ যে কথায় কথায় মানুষকে প্রাণদন্ড দান করেন?
সম্রাটঃ   সৃষ্টি? না, আমি একা উহাতে সমর্থ নই। তবে শুনিয়াছি পুরুষ নারী উভয়ে মিলিয়া এক বৎসরকাল সাধনা করিলে সৃষ্টি হইলেও হইতে পারে।
আহিতিঃ  এই যে, শুনুন, যাহা দিবার দিয়া মামলা খতম করুন। আপনার প্রিয় বন্ধু বান্ধবীদের সন্মুখে আমাদিগকে উপহাসের পাত্র করিবেন না।    
মলিঃ      আমাদের জীবন যখন অতই অল্পমূল্য তখন তাহা লইয়া বহুমূল্য নাট্যানুষ্ঠানের কোন প্রয়োজন আছে কি?
অতঃপর  সম্রাট মনোবর সেই মধ্যযামিনীতে এই  ভাষনটি দিয়াছিলেন।
প্রিয় বন্ধুগন, আপনাদের শুভেচ্ছায় এবং আমার বিশ্বস্ত কর্মচারীবৃন্দের সংখ্যাগরিষ্ঠের সহায়তায় এবং আমার সন্মুখে দন্ডায়মান দুইজন পৃথিবীশ্রেষ্ঠ নারীর উদারতায় আমি আমার বিরুদ্ধে এক প্রাণঘাতী চক্রান্ত আজ ব্যর্থ করিয়া দিতে সফল হইয়াছি।  আমার অতি বিশ্বস্ত বৃদ্ধ প্রধানমন্ত্রী নিজের জীবন বিপন্ন করিয়া উদ্যোগ গ্রহণ না করিলে এই সাফল্য সম্ভব হইত না। আমি বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করিয়াছি নারী চরিত্র সম্মন্ধে আমার পুর্বানুমান ভ্রান্ত প্রমাণ হইয়াছে। ইহা শুধু আমার জন্য নহে সমগ্র মানব্জাতির জন্য আশার কথা। যুদ্ধ, হত্যা পুরুষজাতির কাছে অতি পরিচিত হইলেও মৃত্যু নারীজাতি পছন্দ করেনা। বস্তুতঃ উপাদান নিরপেক্ষ না হইলেও তাহারাই জীবন সৃষ্টির প্রকৃত কারিগর।  ইহারা এমন কি শত্রুকেও নিধন করিবার পরিবর্তে বাঁচাইয়া রাখিতেই অধিক আগ্রহী হইয়া থাকেন। আপনারা কি আমার সঙ্গে সহমত?
অমনি সমস্বরে রব উঠিল, সহমত। কেবল ঝুম্পা নভঃ টিপ্পনী দিল, কি! আমি যাহা বলিয়াছিলাম তাহাই হইতেছে তো! পানশালা বলিয়া উঠিল, তুমিও তো সম্মানের দাবীদার হইতেছ।  তোমার প্রকৃত ব্যাথা কোথায় তাহা তো বুঝিতে পারিলাম না।

পাঠক, জগতের সকল বিষয় যে আমাদের বুঝিতেই হইবে তাহা নহে।  আমরা প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি যত্ন সহকারে অনুধাবন করিয়া কাজ চালাইয়া যাইব।

কোন মন্তব্য নেই: