লিখেছেন : মনোবর
একবার ক্যারাটে শিখতে গিয়েছিলাম। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম দয়াল নামের একজন হেভি টীচার নাকি এ-তল্লাটে ক্যারাটে শেখাচ্ছে। স্টেশনের কাছে ইরিগেশন ডিপার্টমেন্টের একটা দেয়াল ঘেরা মাঠ আছে। সেইখানে কয়েকজন ছেলে দেখি হুপ হাপ করছে আর দয়াল তাদের ভুল সংশোধন করছে।
একবার ক্যারাটে শিখতে গিয়েছিলাম। খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলাম দয়াল নামের একজন হেভি টীচার নাকি এ-তল্লাটে ক্যারাটে শেখাচ্ছে। স্টেশনের কাছে ইরিগেশন ডিপার্টমেন্টের একটা দেয়াল ঘেরা মাঠ আছে। সেইখানে কয়েকজন ছেলে দেখি হুপ হাপ করছে আর দয়াল তাদের ভুল সংশোধন করছে।
কুতকুত করে আমায় কিছুক্ষণ ধরে অবলোকন করে দয়াল শেখাতে রাজী হয়ে গেল।
ওর এক সাকরেদ এসে দেড়’শ টাকা নিয়ে খাতায় আমার, নাম, ঠিকানা বয়েস সব টুকে নিয়ে
আবার ঐ হনুমান বাজী শুরু করে দিল।
‘কিট’স এনেছ?’
‘আজ্ঞে না।’
‘তলায় হাফপ্যান্ট আছে?’
‘আজ্ঞে না। তবে জাঙ্গিয়া আছে।’
‘ধুস্! তবে ঐ যা পরে আছো ঐ ভাবে দৌড় শুরু কর। এই মাঠের চারদিকে
তিনপাক দৌড়তে হবে। থামলে চলবে না। যাও শুরু কর।’ এই বলে এক পিলে চমকানো হাঁক মেরে
দয়াল আমায় দৌড় করিয়ে দিল।
এক পাকের পর আমার হাল খারাপ হয়ে গেল। গতি কমিয়ে ম্যানেজ করবার চেষ্টা
করেও লাভ হলনা। দেড় পাকের পর দাঁড়িয়ে পড়ে নিজের এই বোকামীর জন্য নিজেকেই ধিক্কার
দিতে লাগলুম। অমনি জগ করার ভঙ্গীতে দয়াল আমার কাছে এসে বলল, ‘এসো, আমার সঙ্গে
দৌড়ও।’ তখন বাধ্য হয়ে কেতিয়ে পড়া শরীর আবার টানতে লাগলুম। একবার ভাবলুম মাঠের বদলে
বাড়ির দিকে দৌড় লাগাব কিনা। কিন্তু এই ছেলেগুলোর প্রকৃতি ভদ্র নয়। ঘা দুচ্চার দিয়ে
দিলে পরিস্থিতির অধিকতর অবনমন ঘটবে এই আশংকায় সেপথে আর গেলুম না। দু-পাক হয়ে গেলে
ইচ্ছা করে ভুলুন্ঠিত হলুম। অমনি মহাশান্তির পবিত্র স্পর্শে স্বর্গীয় প্রশান্তি
নেমে এল। দয়াল পায়ের পাতা দিয়ে ফুটবলের মত আমায় একটা কিক মারল। পরের কিক এড়ানোর
জন্য আমি তিন পাক গড়াতে গিয়ে বুঝলুম ঘাসের মত সুন্দর পৃথিবীতে আর কিছুই নেই। সেই
ঘাসকে প্রেমিকের মত আলিঙ্গন করতে করতে আমি কেবল গড়াচ্ছি আর দয়াল হপ জাম্প দিতে
দিতে পরবর্তী কিকের মওকা খুঁজছে এই দৃশ্যে হনুমানগুলো সমবেত ভাবে হেসে ওঠায় দয়াল
ক্রুদ্ধ হয়ে সেই দিকে ধাবিত হল। চিত হয়ে ঘাসের বিছানায় শুয়ে আমি তখন উপলদ্ধি করলুম
প্রকৃত দয়াল হল ঘাস আর ঐ হারামজাদার নাম দেওয়া উচিত ভয়াল।
তিনমাস
সাধনার পর আমাকে হলুদ বেল্টে সম্মানিত করা হল। এইরকম অগুন্তি বেল্ট নাকি আছে। আর
আছে প্রতিযোগিতা। সেখানে নিজেকে বাঁচিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে পারলে বেল্টের
ওজনও বাড়তে থাকবে আর গুরুরও ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হবে। প্রথম প্রতিযোগিতার
দিন ধার্য্য হল এক রবিবার। সতীর্থদের মধ্যে থেকে উপযুক্ত প্রতিযোগী বেছে নেবার
জন্য এইবার প্রকৃত লড়াই হবে। মারামারি করতে হবে জেনে মনে মনে খুব উল্লসিত হয়ে
উপযুক্ত মুহূর্তের অপেক্ষা করতে লাগলাম।
যখন
তখন লাথান যায় বলে দয়াল অন্যদের চেয়ে আমায় বেশী পছন্দ করত। আসরে নামবার আগের
মুহূর্তে আমায় একান্তে ডেকে বলল, ‘যার উপর তোমার সবচেয়ে রাগ মনে মনে ভাববে তার
সামনা সামনি হয়েছ। কোন দয়ামায়া দেখাবে না। এ হল ইজ্জত কা সওয়াল।’ সবচেয়ে বেশী রাগ
আমার দয়ালের উপরই জমে ছিল।
প্রতিযোগী
হল একটা নাক থ্যাবড়া গাট্টাগোট্টা ছেলে। খুব আক্রমণাত্মক বলে সবাই ওকে ভয় পেত। আমি
দেখলাম অত্যাচারী দয়াল আবার উদয় হয়েছে আমাকে হেনস্থা করবার জন্য। বাঁশী বাজার
সঙ্গে সঙ্গেই ও পর পর দুবার কিক মারল এবং ফস্কাল। আমার কান ঘেঁষে একটা ভয়ংকর পাঞ্চ
মিস হতেই আমি থুতনিতে কনুই দিয়ে একখানা বজ্রপাত দিলাম। তাতে বেসামাল হয়ে ওর
ব্যালেন্স ভোগে যেতেই ডান, বাম, ডান এইভাবে কম্বিনেশন কিক ঝেড়ে শুইয়ে দিলাম নাক
থ্যাবড়াকে। হাততালির অভিনন্দন উপভোগ করছি এমন সময় আমার গুরু এবং মন্ত্রনাদাতা দয়াল
এসে হ্যান্ডশেক করল। আমিও ওকে জড়িয়ে ধরলাম কৃতজ্ঞতায়। সবগুলো লাথির শোধ আজ তুলে
নিয়েছি এখন আমি ওকে জড়িয়ে ধরতেই পারি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন