বুধবার, ডিসেম্বর ২৫, ২০১৩

একদিন সম্রাট/ মনোবর (৩য় পর্ব)

এক্ষনে সম্রাট ভোজনান্তে অতিথিগনের নিকট হইতে সাময়িক বিদায় লইয়া নিভৃতে বিশ্রামরত ছিলেন। এই সময় গুপ্তচর বিভাগের প্রধান অমাত্য মহারাজের দর্শন অভিলাষী হইলে মহারাজ বিস্মিত হইলেন। ‘ওঃ! কি নিদারুণ এই রাজকার্য! ’ এই বলিয়া বিস্ময় প্রকাশ করিলেন।

‘মহারাজ আপনার বিরুদ্ধে ভয়ানক ষড়যন্ত্র রচিত হইয়াছে। আপনাকে হত্যার এই ষড়যন্ত্রে স্বয়ং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মূল নায়কের ভূমিকা পালন করিতেছেন।’

মহারাজ কিছুমাত্র বিচলিত না হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘আর প্রধান সেনাপতি? তিনি কোনদিকে?’

‘না মহারাজ তার বিশ্বস্ততা প্রশ্নাতীত। তার ভুমিকা যথাযথ।’

অন্যদিকে সভাপ্রাঙ্গনে আনন্দোৎসব চারিদিক মুখরিত করিয়া তুলিয়াছে। অতিথিগণের মধ্যে কবিত্বের প্রতিযোগিতা শুরু হইয়াছে। ঝুম্পা নভঃমন্ডলের সহিত পানশালার কবির তাৎক্ষনিক কবিতা রচনার প্রতিযোগিতা খুবই উপভোগ্য রূপ ধারণ করিয়াছে। আমি আঙুরলতা তাহার পুরাতন সঙ্গী লইয়া কুঞ্জবনের নিভৃতে গেলে প্রধান সেনাপতির কাছে সে খবর পৌঁছাইয়াছে। তিনি ভৎসনাপূর্বক রক্ষীকে ঐদিকে নজর দিতে নিষেধ করিয়াছেন। অতিথিগণের মধ্যে যারা প্রগতিশীল তাহারা একদিকে গোল হইয়া বসিয়া বর্তমান দূর্নীতিযুক্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার তুলনায় এই অতিথিপরায়ন রাজতন্ত্র যে কতদূর উন্নত তাহার প্রশংসার প্রতিযোগিতায় নামিয়াছেন। কোন রাজকর্মচারীকে দেখামাত্রই প্রশংসার ত্বরণ বৃদ্ধি হইতেছে। বহুরঙ্গ দে বাপ্পাদিত্যের নিকট তাহার স্বরচিত কবিতাগুলি একের পর এক আবৃত্তি করিতেছেন। বাপ্পাদিত্য উহা শ্রবণ করিয়া হাসিবে না কাঁদিবে তাহা স্থির করিতে না পারিয়া বড় অস্বস্তি অনুভব করিতেছে। তাহার ইচ্ছা ছিল কর্শিকা দেবীকে একান্তে লইয়া অশ্রুজল পুর্ণ অপরূপ কিছু নূতন কবিতা তাহাকে শ্রবণ করাইয়া মুগ্ধ করিয়া তুলিবে কিন্তু নিয়তি তাহাতে বড় বাদ সাধিয়াছে। কর্শিকা দেবী আবার রাজকবিকে খুঁজিতে ব্যস্ত হইয়াছেন। তিনি অসুস্থ থাকায় এই সভায় যোগ দিতে পারেন নাই।

              পাঠক, মানুষের অনুমান সর্বদা যথাযথ হয়না। সম্রাটের অনুপস্থিতির সুযোগে বৃদ্ধমন্ত্রী তাহার অনুগত অনুচরের সাহায্যে নবাগত আহিতি এবং মলি নামক রমণীদ্বয়কে এক নিভৃত কক্ষে স্থানান্তরিত করতঃ তাহাদিগকে ষড়যন্ত্রে সামিল করিবার প্রচেষ্টায় রত হইয়াছেন। অবশ্য সেনাপতিকে বলা হইয়াছে উহারা প্রাসাদের অভ্যন্তরের সৌধগুলি ঘুরিয়া দেখিবেন। কথোপথন এইরূপ হইতেছেঃ

মন্ত্রীঃ আপনি নৃত্যরত অবস্থায় এই অঙ্গূরীয়তে সামান্য চাপ প্রদান করিলেই মহারাজের পানপাত্রে প্রাণঘাতী বিষ মিশ্রিত হইয়া যাইবে
আহিতিঃ এই রূপ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ আমাকেই কেন করিতে হইবে? কি বলিস সখী মলি!

মন্ত্রীঃ আমি আপনাকে সাবধান করিতেছি মহাশয়া। কিয়ৎপরে যে গোলযোগ শুরু হইবে তাহাতে আমার সহায়তা ভিন্ন আপনাদিগের বাঁচিয়া ফিরিবার আশা প্রায় নাই বলিলেই চলে।

মলিঃ কিন্তু দাদুমনি,কাউকে অপছন্দ করিলেই যে তাহাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করিতে হইবে ইহা তো ভূগোল বেদে লিখিত নাই।

আহিতিঃ আঃ! এখানেও ভূগোল! তোকে লইয়া যে কি করিব বুঝিয়া উঠিতে পারিনা।

মলিঃ থাক তোমার আর বুঝিয়া কাজ নাই! কতই না তুমি বুঝিলে! এখন আবার বিষ প্রয়োগ বুঝিতে চলিয়াছ!

আহিতিঃ মলি তোমাকে না আমি প্রাণ দিয়া ভালোবাসি। তুমি আমাকে এইরূপ বলিতে পারিলে! হে উদয়শংকর, হে অমলাশংকর, হে বিরজুদাদু!

মন্ত্রীঃ আপনারা কি উন্মাদ! কাহাদের স্মরণ করিতেছেন? উহারা কি আপনাদিগকে রক্ষা করিতে সমর্থ হইবে? হাঃ হাঃ হাঃ কখনই নহে।


প্রাসাদ হইতে কিছুদূরে এক বিশাল দীঘীর অবস্থান। উহার নাম অর্পণ দীঘী। এইরূপ একটি বিপদসংকুল দিনে যখন সূর্য্য অস্ত যাইতেছে, দূর হইতে ভাসিয়া আসা কলরবে ঝুমা বসুর কিছুমাত্র মন নাই। দীঘীর বাঁধান ঘাটে একাকী বসিয়া তিনি কেন যে উদাস হইয়া দূর গগনের দিকে চাহিয়া কালক্ষেপ করিতেছেন তাহা তো আর আমরা বলিতে পারিবনা।   (ক্রমশঃ)

কোন মন্তব্য নেই: