[ আমার আজকের এই পোস্টটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর। যারা এ বিষয়ে যে-কোনোরকম পোস্ট দেখতে এবং পড়তে অস্বস্তি বোধ করেন এবং অস্থির হয়ে ওঠেন তারা আমাকে মাফ করবেন, এ পোস্ট তাদের জন্য নয়। পোস্টটির বিষয় অনেকের পছন্দ না-ই হতে পারে। তবুও আমি লিখতে বাধ্য, বাধ্য আমার দায়বদ্ধতা থেকে। ৩৭৭ নম্বর ধারার কবলে পড়ে আমার যে সমস্ত ভাই-বোন-বন্ধুরা বন্দিদশায় দিন কাটাচ্ছেন আমি তাদের পাশে থাকার ইচ্ছা প্রকাশ করি। তাদের যন্ত্রণা আমি উপলব্ধি করি। আমি তাদের যৌনভাবনা সন্মান করি, সমর্থন করি। কারণ আমি মনে করি ওদের যৌনচেতনা প্রাকৃতিকই। যৌন-প্যাশানে আমাদের মতো তো নিশ্চয় নয়, ওদের মতো তো বটেই ! ]
বৃহত্তম গণতন্ত্রের শীর্ষ আদালত জানাল , সমকামিতা অপরাধ৷ বদলে গেল ২০০৯ -এ দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের পর তৈরি হওয়া ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বিলোপের আশা৷ কোনও ব্যক্তির নিজের পছন্দমতো যৌন সঙ্গী বেছে নেওয়ার একান্ত মৌলিক অধিকারে সুপ্রিম কোর্টের রায় বড়সড় এক আঘাত বলেই মনে করছে বিভিন্ন মহল৷ কারও কারও মত , শীর্ষ আদালতের রায় কার্যত ধর্মীয় মৌলবাদীদের কাছেই আত্মসমর্পণ৷ কারণ , হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে মৌলবাদী সংগঠনগুলি দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের বিরোধিতায় কোমর বেঁধেছিল৷ তারাই সুপ্রিম কোর্টে দিল্লি হাইকোর্টের রায়
বাতিলের আর্জি পেশ করেছিল৷ ২০০০ সালে প্রকাশিত ল কমিশনের ১৭২ নম্বর রিপোর্টেও ৩৭৭ ধারা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছিল৷ কিন্ত্ত সরকার এক দশকেরও বেশি সময়ে এ বিষয়ে কোনও পদক্ষেপই করেনি৷ ব্রিটিশরা ৬৬ বছর আগে ভারত ছেড়ে চলে গেলেও তাদের তৈরি আইন আঁকড়েই পড়ে রয়েছে এই দেশ৷ ভিক্টোরীয় ‘নৈতিকতা ’ বজায় রাখতে লর্ড ম্যাকলে ১৮৬০ সালে এই আইন প্রণয়ন করেছিলেন৷ দণ্ডবিধির এই ৩৭৭ ধারায় বলা হয়েছে , ‘প্রাকৃতিক নিয়ম -বিরোধী যে কোনও ধরনের যৌন সংসর্গই অপরাধ বলে গণ্য হবে৷ প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধে গিয়ে কেউ যদি পুরুষ , নারী বা পশুর সঙ্গে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করে , তবে তাঁর যাবজ্জীবনন কারাদণ্ড বা দশ বছর পর্যন্ত কারাবাস ও জরিমানা হতে পারে৷ ’ প্রাকৃতিক নিয়ম কোনটা ? সেটা আদালতের তরফ থেকে জানতে পারিনি। তবে মনে হয় সৃষ্টির আদি সময় থেকেই সমকামী এবং অসমকামী পাশাপাশি বিরাজ করেছে। সমাজবিদ এবং ইতিহাসবিদরা এ ব্যাপারে ভালো বলতে পারবে।একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে কেন বুধবার সুপ্রিম কোর্টের রায় ? কেন পুরুষের সঙ্গে পুরুষ বা মহিলার সঙ্গে মহিলার সম্পর্ককে এখনও ‘প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধাচারণ ’ ভাবা হচ্ছে ? ‘প্রাকৃতিক নিয়ম ’ আমরা কাকে বলব ? প্রচলিত রীতি না - মানলেই কি তা প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধাচারণ , তা - ও আবার শাস্তিযোগ্য অপরাধ ? তা হলে তো যাঁরাই চেনা ছকের বাইরে হাঁটতে চান , তাঁরাই অপরাধী ! প্রাকৃতিক আচরণ কোনটা তার বিচারই বা করছে কে ? বিচার করছে তো সেই সমাজই , যে সমাজ একাধারে লিভ -ইন সন্তানদের ও সঙ্গিনীকে আইনি স্বীকৃতি দিচ্ছে , তারাই বলছে এই ব্যবহার ঠিক নয়৷ বাত্স্যায়নের ‘কামসূত্র’-এও সমকামিতাকে ‘শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের তৃতীয় প্রকৃতি ’ বলে বর্ণনা করা হয়েছে৷ খাজুরাহোয় যে শিল্পকীর্তি রয়েছে , তার মধ্যে গোষ্ঠী কাম (গ্রুপ সেক্স) ও সমকামিতার নিদর্শন রয়েছে৷ কাজেই , বহু আগে থেকেই ভারতে এর কথা অজ্ঞাত নয়।
আমরা বরং এখন জেনে নিতে পারি সমকাম, সমকামী এবং সমকামিতা বিষয়টা কী। সমকামিতা (Homosexuality) একটি যৌন প্রবৃত্তি, যার দ্বারা সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি যৌন আকর্ষণ বোঝায়। এইরূপ আকর্ষণের কারণে সমলিঙ্গীয় মানুষের মধ্যে প্রেম বা যৌনসম্পর্ক ঘটতে পারে। প্রবৃত্তি হিসেবে সমকামিতা বলতে বোঝায় মূলত সমলিঙ্গের ব্যক্তির প্রতি "এক যৌন, স্নেহ বা প্রণয়ঘটিত এক ধরনের স্থায়ী ও প্রাকৃত প্রবণতা"। এই ধরনের সম্পর্কের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা ব্যক্তিগত বা সামাজিক পরিচিতি, এই ধরনের আচরণ এবং সমজাতীয় ব্যক্তিদের নিয়ে গঠিত এক সম্প্রদায়ের সদস্যতাও নির্দেশিত হয়।"
সমকামিতার ইংরেজি প্রতিশব্দ হোমোসেক্সুয়ালিটি তৈরি হয়েছে গ্রিক ‘হোমো’ এবং ল্যাটিন ‘সেক্সাস’ শব্দের সমন্বয়ে। গ্রিক ভাষায় ‘হোমো’ বলতে বোঝায় ‘সমধর্মী’ বা ‘একই ধরণের’। আর সেক্সাস শব্দটির অর্থ হচ্ছে যৌনতা। কাজেই একই ধরনের অর্থাৎ, সমলিঙ্গের প্রতি আকর্ষণ বোধ করার (যৌন)প্রবৃত্তিকে বলে হোমোসেক্সুয়ালিটি । বাংলায় ‘সমকামিতা’ শব্দটি এসেছে বিশেষণ পদ –‘সমকামী’ থেকে। আবার সমকামী শব্দের উৎস নিহিত রয়েছে সংস্কৃত ‘সমকামিন’ শব্দটির মধ্যে। যে ব্যক্তি সমলৈঙ্গিক ব্যক্তির প্রতি যৌন আকর্ষণ বোধ করে তাকে ‘সমকামিন’ বলা হত। সম এবং কাম শব্দের সাথে ইন প্রত্যয় যোগ করে ‘সমকামিন’ (সম + কাম + ইন্) শব্দটি সৃষ্টি করা হয়েছে ।
‘হোমোসেক্সুয়াল’ শব্দটি ইংরেজিতে প্রথম ব্যবহার করেন কার্ল মারিয়া কার্টবেরি ১৮৬৯ সালে। পরে জীববিজ্ঞানী গুস্তভ জেগার এবং রিচার্ড ফ্রেইহার ভন ক্রাফট ইবিং ১৮৮০’র দশকে শব্দটিকে ব্যবহার করার মাধ্যমে শিক্ষায়তন এবং সাধারণদের মধ্যে জনপ্রিয় করেন।
বর্তমানে হোমোসেক্সুয়াল শব্দটি একাডেমিয়ায় কিংবা চিকিৎসাবিজ্ঞানে ব্যবহৃত হলেও সাড়া বিশ্ব জুড়ে সমকামীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘গে’ এবং লেসবিয়ান’ শব্দদুটি অধিক হারে প্রচারমাধ্যমে ব্যবহৃত হয়। পশ্চিমে ‘গে’ শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় ১৯২০ সালে। তবে সে সময় এটির ব্যবহার একেবারেই সমকামীদের নিজস্ব গোত্রভুক্ত ছিলো। মুদ্রিত প্রকাশনায় শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হতে দেখা যায় ১৯৪৭ সালে। লিসা বেন নামে এক হলিউড সেক্রেটারী ‘Vice Versa: America’s Gayest Magazine’ নামের একটি পত্রিকা প্রকাশের সময় সমকামিতার প্রতিশব্দ হিসেবে ‘গে’ শব্দটি ব্যবহার করেন, যদিও সে সময় ‘গে’ শব্দটি ‘হাসি খুশি’ অর্থেই ব্যবহৃত হত। আর ‘লেসবিয়ান’ শব্দটি এসেছে গ্রিস দেশের ‘লেসবো’ নামের দ্বীপমালা থেকে। কথিত আছে, খ্রীষ্টপূর্ব ছয় শতকে স্যাপো নামে সেখানকার এক শিক্ষিকা মেয়েদের মধ্যকার প্রেমময় জীবন নিয়ে কাব্য রচনা করে ‘কবিতা উৎসব’ পালন করেছিলেন। প্রথম দিকে লেসবিয়ান বলতে ‘লেসবো দ্বীপের অধিবাসী’ বোঝালেও, পরবর্তীতে নারীর সমপ্রেমের সাথে এটি যুক্ত হয়ে যায়।
প্রাণীজগতেও সমকামিতা লক্ষ করা যায়। সমকামিতার ব্যাপারটি আধুনিক জীববিজ্ঞানীরা একটি নিখাঁদ বাস্তবতা বলেই মনে করেন। জীববিজ্ঞানী ব্রুস ব্যাগমিল তার ‘বায়োলজিকাল এক্সুবারেন্স : এনিমেল হোমোসেক্সুয়ালিটি এন্ড ন্যাচারাল ডাইভার্সিটি’ বইয়ে প্রায় পাঁচশ প্রজাতিতে সমকামিতার অস্তিত্বের উদাহরণ লিপিবদ্ধ করেছেন । সামগ্রিকভাবে জীবজগতে ১৫০০ রও বেশী প্রজাতিতে সমকামিতার অস্তিত্ব প্রমাণিত। তালিকায় স্তন্যপায়ী প্রাণী থেকে শুরু করে পাখি, মাছ, সরীসৃপ, উওভচর, কীটপতঙ্গ সবই আছে। বিজ্ঞানীরা এখন মনে করেন, পৃথিবীতে আসলে এমন কোন প্রজাতি নেই যেখানে সমকামিতা দেখা যায় না । সমকামিতা ছাড়াও প্রাণিজগতে উভকামিতা এবং রূপান্তরকামিতারও বহু প্রমাণ পাওয়া গেছে ।
বিষমকামী-সমকামী অনবচ্ছেদ অনুসারে যৌন প্রবৃত্তির প্রধান তিনটি বর্গের অন্যতম হল সমকামিতা (অপর বর্গদুটি হল উভকামিতা ও বিষমকামিতা)। বিভিন্ন কারণে গবেষকেরা সমকামীরূপে চিহ্নিত ব্যক্তির সংখ্যা বা সমলৈঙ্গিক যৌন সম্পর্কে অভিজ্ঞতাসম্পন্নদের অনুপাত নির্ধারণ করতে সক্ষম হন নি।।
আধুনিক পাশ্চাত্য জগতে বিভিন্ন প্রধান গবেষণার ফলে অনুমিত হয় সমকামী বা সমলৈঙ্গিক অভিজ্ঞতাসম্পন্নরা মোট জনসংখ্যার ২% থেকে ১৩%। ২০০৬ সালের একটি গবেষণায় দেখা যায়, জনসংখ্যার ২০% নাম প্রকাশ না করে নিজেদের মধ্যে সমকামী অনুভূতির কথা স্বীকার করেছেন; যদিও এই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে খুব অল্পজনই নিজেদের সরাসরি সমকামীরূপে চিহ্নিত করেন।
মানবজাতির সামগ্রিক ইতিহাসে সবসময়ই সমকামিতার অস্তিত্ব ছিলো। সমকামীদের সন্ধান মিলবে পৃথিবীর সর্বত্র, প্রতিটি যুগে প্রতিটি সময়ে কিংবা প্রতিটি স্থানেই। কোন কোন জায়গায় সমকামিতা রীতিমত উদযাপন করা হত সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই। প্রাচীন গ্রীসে পাইদেরাস্ত্রিয়া, কিংবা এরাস্তেস এবং এরোমেনোস-এর সম্পর্কগুলো উল্লেখযোগ্য। সমকামিতার প্রছন্ন উল্লেখ আছে প্রাচীন বহু সাহিত্যে। হোমারে বর্ণিত আকিলিস এবং পেট্রোক্লুসের সম্পর্ক, প্লেটোর দার্শনিক গ্রন্থ সিম্পোজিয়ামে ফায়াডেরাস, পসানিয়াস, এগাথন, অ্যারিস্টোফেনেস, এরিক্সিমাচুসের নানা বক্তব্য এবং সক্রেটিসের সাথে আলকিবিয়াডসের প্লেটোনিক সম্পর্ককে বহু বিশেষজ্ঞ সমকামিতার দৃষ্টান্ত হিসেবে হাজির করেন। খ্রীস্টপূর্ব ছয় শতকের গ্রিসের লেসবো দ্বীপের উল্লেখযোগ্য বাসিন্দা স্যাপো নারীদের নিয়ে, তাদের সৌন্দর্য নিয়ে কাব্য রচনা করেছেন । এই লেসবো থেকেই লেসবিয়ান (নারী সমকামিতা) শব্দটি এসেছে। বহু রোমান সম্রাট - যেমন জুলিয়াস সিজার, হাড্রিয়ান, কমোডাস, এলাগাবালাস, ফিলিপ দ্য এরাবিয়ান সহ অনেক সম্রাটেরই সমকামের প্রতি আসক্তি ছিলো বলে ইতিহাসে উল্লিখিত আছে। রেনেসাঁর সময় বহু খ্যাতনামা ইউরোপীয় শিল্পী যেমন, দোনাতেল্লো, বত্তিচেল্লী, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি এবং মাইকেলেঞ্জেলোর সমকাম প্রবণতার উল্লেখ আছে । চৈনিক সভ্যতা এবং ভারতীয় সংস্কৃতিতেও সমকামিতার উল্লেখ পাওয়া যায়। যেমন বিষ্ণুর মোহিনী অবতাররূপে ধরাধামে এসে শিবকে আকর্ষিত করার কাহিনী এর একটি দৃষ্টান্ত। বিষ্ণু (হরি) এবং শিবের (হর) মিলনের ফসল অয়াপ্পানকে হরিহরপুত্র নামেও সম্বোধন করা হয়। এ ছাড়া অষ্টাবক্র, শিখন্ডী এবং বৃহন্নলার উদাহরণগুলো সমকামিতা এবং রূপান্তরকামিতার দৃষ্টান্ত হিসেবে প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে উঠে এসেছে ।
মানবজাতির লিখিত ইতিহাসের সমগ্র সময়কাল জুড়ে সমকামী সম্পর্ক ও আচরণ নিন্দিত হয়ে এসেছে। তবে কখনো-কখনো সামাজিক ঔদার্য ও আনুকূল্যও পরিলক্ষিত হয়েছে। বলা হয়, এই প্রশংসা ও নিন্দা নির্ভর করেছে সমকামিতার বহি:প্রকাশের রূপ বা সমকালীন সাংস্কৃতিক মানসিকতার উপর। তবে অধিকাংশ সমাজেই সমকামী আচরণকে দণ্ডণীয় অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। এমনকি বহু দেশে সমকামী আচরণের অপরাধে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধানও রাষ্ট্রিয়ভাবে চালু আছে।
সমকামিতা আবহমানকাল ধরে অসামাজিক বিবেচিত হয়েছ এর যৌক্তিক কারণ হলো এই যে, এটি এমন একটি যৌনাচরণ যার মাধ্যমে সন্তান জন্ম দান সম্ভব নয়, ফলে মানুষের বংশরক্ষা সম্ভব নয়। এছাড়া সকল প্রধান ধর্ম সমকামী যৌনাচরণ নিষিদ্ধ করেছে। আধুনিক সমাজেও সমকামী যৌনাচরণ একপ্রকার যৌন বিকৃতি হিসাবেই সাধারণভাবে পরিগণিত। তবে ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে মন:স্তাত্ত্বিকরা 'সমকাম প্রবণতাকে' মনোবিকলনের তালিকা থেকে বাদ দেয়। ১৯৭৫ সালে ঘোষণা করা হয় 'সমকাম প্রবণতা' কোন মানসিক বিকৃতি নয়। তথাপি সমকামী যৌনাচারণের প্রতি সাধারণ মানুষের বৈরীভাব অটুট আছে। অধিকাংশ সমাজে সমকামী যৌনাচারণ লজ্জার ব্যাপার এবং ধিক্কারযোগ্য। ধর্ম এবং আইনের কঠোর বিধান এবং সামাজিক অনুশাসনের কারণে কার্যকলাপ তথা সমকামী যৌনসঙ্গম একটি গুপ্ত আচরণ হিসাবেই প্রবহমান।
বিশ শতাব্দীর দ্বিতীয় পাদে সমকামিতার ব্যাপারে রাষ্ট্রীয় ঔদার্য দেখা যেতে শুরু করে। বহু দেশে সমকামী যৌনাচারণকে বৈধ ঘোষণা করা হয়। কয়েকটি দেশ সমকামী ব্যক্তিদের বিবাহ আইনসিদ্ধ ঘোষণা করে। স্টোনওয়াল দাঙ্গার পর থেকে সমকামী ব্যক্তিরা এলজিবিটি সামাজিক আন্দোলনের সূচনা ঘটান। এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল সমকামী সমস্যার প্রতি সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ, স্বীকৃতি, আইনি অধিকারদান এবং একই সঙ্গে সমকামী বিবাহ, দত্তকগ্রহণ, সন্তানপালন, বৈষম্যবিরোধী আইন প্রয়োগ, সামরিক পরিষেবা ও স্বাস্থপরিষেবায় বৈষম্যের বিরুদ্ধে অধিকার প্রদানের দাবি উত্থাপন।
বস্তুত সুপ্রিম কোর্টের এই রায় আমাদের মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ৷ মানুষের একান্ত ব্যক্তিগত পরিসরে এ ভাবে ঢুকে পড়ার অধিকার বিচারব্যবস্থারও থাকতে পারে না৷ প্রান্তবয়স্ক দু’জন মানুষ তাদের যৌনজীবনে কী কী স্বাধীনতা নেবেন সে ব্যাপারে কেন মন্তব্য করবে আদালত ? আজ সমকামীদের শাস্তি দেওয়া হল , কাল বলা হবে প্রেমেও নিষেধাজ্ঞা৷ এর বিরুদ্ধে শুধু সমকামীরা নয় , প্রতিবাদ করা উচিত সমাজের সবস্তরের মানুষের।আইনি বিশেষজ্ঞেরা স্পষ্টই বলছেন , সংবিধানের ১৪ , ১৫ ও ২১ ধারা ব্যক্তি মানুষের যে সমানাধিকার ও স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দেয় , সুপ্রিম কোর্টের রায় তার পরিপন্থী৷ ’ এটা তো একটা ব্যক্তিগত পছন্দ -অপছন্দের বিষয়৷ সেই পছন্দ তো অন্য কেউ করে দিতে পারে না৷ তবে হ্যাঁ, শুধু সৃষ্টি অর্থাত্ সন্তানধারণই যদি হয় ভালোবাসার সংজ্ঞা , তা হলে তো অনেক কিছুই অস্বাভাবিক৷ ’ শীর্ষ আদালত ভারতীয় দণ্ডবিধির যে ধারাকে সাংবিধানিক বলে বহাল রেখেছে , তা কেবল মাত্র পুরুষ বা নারীর সমকামিতার কথা বলে না৷ সেখানে বিসমকামিতার কথাও বলা আছে৷ সে ক্ষেত্রে ওরাল সেক্স ও অ্যানাল সেক্সও কিন্ত্ত অপরাধযোগ্য৷ কারণ তাতে সৃষ্টির কোনও সম্ভাবনা নেই৷ তাই ভালোবাসা বা প্রেমের একমাত্রিক অভিমুখের বাইরে কিন্ত্ত দণ্ডমুণ্ডের কর্তারা ভাবছেন না৷
১৬৩ বছর আগে ব্রিটিশ ভারত একে অপরাধ বলে গণ্য করেছিল৷ তার আগে পর্যন্ত কিন্ত্ত সমকামিতা নিয়ে ভারতীয় সমাজে সে ভাবে কোনও হেলদোল ছিল না৷ প্রাচীন বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভারত যেখানে চিন্তার দিক থেকে এতটা অগ্রসর ছিল , তা হলে একবিংশ শতকে দাঁড়িয়ে কেন বুধবার সুপ্রিম কোর্টের রায় ? কেন পুরুষের সঙ্গে পুরুষ বা মহিলার সঙ্গে মহিলার সম্পর্ককে এখনও ‘প্রাকৃতিক নিয়মের বিরুদ্ধাচারণ ’ ভাবা হচ্ছে ? সুপ্রিম কোর্টের এ দিনের রায় বলছে , তারা ভরসা করেছে ১৮৬০ সালের মেকলের ব্যাখ্যাকেই৷ তিনি বলেছিলেন , ‘যৌনতা সৃষ্টির জন্য , কোনও বিনোদনের জন্য নয়৷ এ ধরনের সম্পর্ক থেকে কোনও সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই৷ কাজেই এই সম্পর্ক প্রাকৃতিক নয়৷ শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ ’
পাঠক ভালো করে লক্ষ করুন এই লাইনটি – “যৌনতা সৃষ্টির জন্য , কোনও বিনোদনের জন্য নয়৷ এ ধরনের সম্পর্ক থেকে কোনও সৃষ্টির সম্ভাবনা নেই৷ কাজেই এই সম্পর্ক প্রাকৃতিক নয়”৷ যৌনতা সৃষ্টির জন্য ? কবে থেকে ? বাজারে, থুড়ি আমাদের মনুষ্যসমাজে এমন একটা কথা চালু আছে বইকি। আমিও শুনেছি। হিপোক্রাসি, জাস্ট হিপোক্রাসি। ভণ্ডামি। দেখো, আমরা মানবজাতি কী মহান উদ্দেশ্যই-না যৌনক্রীড়া করি, এটা বোঝাতেই বোধহয় এই গপ্পো সমাজে ছড়িয়ে আছে। যখন বা যেদিন যে আদি মানব-মানবীটি প্রথম যৌনক্রীড়া করেছিল সেটাই তো ছিল স্রেফ যৌনতাড়না। ওরা সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া করেছে বলে কোথাও উল্লেখ পাইনি। শিবপুরাণে শিব-পার্বতীর যে দীর্ঘ সময় একটানা যৌনক্রীড়ার বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে কোনো সৃষ্টির কাহিনি বর্ণিত নেই। বরং সৃষ্টি স্তব্ধ হয়ে যাবে এই আতঙ্কে স্বয়ং বিষ্ণু শিব-পার্বতীর বেডরুমে শুকপাখিকে পাঠিয়ে দেয় তাদের যৌনক্রীড়া ঘেটে দেওয়ার জন্য।
সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া, বিনোদনের জন্য নয় – এই বক্তব্যের সমর্থনে কোনো দৃষ্টান্তই আমি উপস্থাপন করতে পারছি না।মানুষ মূলত যৌনাচারকে বৈধতা দেওয়ার জন্যই বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি করেছিল। শুধু বৈধ যৌনতাই নয়, সন্তানের পিতৃত্ব নিশ্চিত করতেও বিবাহের প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল। মানুষ শুধুমাত্র সৃষ্টির জন্যই যৌনতা করে না, করে না বলেই মানুষের জন্য যৌনক্রীড়ার সময় ৩৬৫ দিনই। সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া করে না, তাই মানুষ ঋতুচক্র চলাকালীনও মিলিত হন অনেকেই। সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া করে না বলেই স্ত্রী গর্ভবতী হয়ে পড়লেও যৌনক্রীড়া বন্ধ করে না। সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া করে না বলেই অনেকে বিবাহ বহির্ভূত যৌনতা করে থাকে। সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া করে না বলেই অনেক নারী বা পুরুষ একাধিক পুরুষ বা নারীর সঙ্গলাভের প্রত্যাশা করে। মানুষ সৃষ্টির জন্য যৌনক্রীড়া করে না বলেই সারা পৃথিবী জুড়ে পতিতাপল্লি বা পতিতাবৃত্তির এত রমরমা। পতিতাপল্লিতে কেউ নিশ্চয় সৃষ্টি করতে যায় না ! প্রতিদিন সকালে খবরের কাগজের পাতায় যৌন কেলেঙ্কারীর খবরগুলি আমরা পাই সেগুলি নিশ্চয় সৃষ্টির জন্য বলবেন না। এতো যে ধর্ষণকাণ্ড (জোরপূর্বক যৌনক্রীড়া) ঘটে যায় গোটা পৃথিবী জুড়ে প্রতিদিন কোথাও-না-কোথাও, তা কি সৃষ্টির জন্য ?
একটা মানুষ তার মোট জীবনে (কমবেশি) ১০,০০০ থেকে ১১,০০০ যৌনদিবস (নিশি ?) পান। তার মধ্যে মাত্র ৩০ দিন থেকে ৯০ দিন সৃষ্টির জন্য ব্যয় করেন। বাকি যৌনক্রীড়ার দীর্ঘ দিনগুলি শুধুই যৌনানন্দ বা যৌনসুখের জন্য অতিবাহিত করে থাকে।তাই পাত্র বা পাত্রী যৌনক্রীড়ায় অক্ষম হলে কোনো ক্ষমা নেই। সোজা ডিভোর্সের মামলা। সন্তান উৎপাদনে অক্ষম হলে ডিভোর্স হয় কি না আমার জানা নেই, তবে পাত্র বা পাত্রীর যে কেউ একজন যৌনক্রীড়ায় অক্ষম হলে এক লহমায় সম্পর্ক শেষ। যে যুগে মানুষের যৌনক্রীড়া মানেই অনিবার্য সন্তান উৎপাদন, সে যুগে মানুষ ছিল অসহায়। মানুষের সেই অসহায়তা এখন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত। বাজারে এখন হাজারটা জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা সুলভে পাওয়া যায় যার যার সুবিধামতো। এইসব প্রোডাক্টের বিক্রিবাটাও ব্যাপক। এমন কি স্রেফ যৌনসুখ করতে গিয়ে সন্তান এসেও যায় সমূলে বিনাশ করার তারও ব্যবস্থা পর্যাপ্ত মজুত আছে। সন্তানহীন (পড়ুন সৃষ্টিহীন) যৌনসুখ পেতে মানুষ কি-না করছেন ! এরপরেও কেউ যদি বলে সৃষ্টির জন্যই যৌনতা, তাহলে বলব ওসব হিপোক্রাসি ঝেড়ে ফেলে আসুন প্রান্তিক হয়ে যাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়াই। মানুষের অধিকার রক্ষার লড়াইয়ে সামিল হই। ভারত এখন ক্রমশ পিছন দিকে এগোতে চাইছে৷ একে চূড়ান্ত ‘পশ্চাদগামী মানসিকতা ’ ও ‘লজ্জা ’ ছাড়া অন্য কোনও ভাষায় ব্যাখ্যা করা যায় না। ভুলবেন না নিশ্চয়, চোখ বন্ধ রাখলে প্রলয় থেমে থাকবে না।
না, অনুসন্ধান এখনও শেষ হয়নি। আচ্ছা, “সৃষ্টির জন্য যৌনতা” এই ভাবনার বীজটা কোথায় লুকিয়ে আছে খুঁজবেন না ? আসুন, রামায়ণ, মহাভারতগুলি একটু ঘাটাঘাটি করি। ওরে বাব্বা, রামায়ণ-মহাভারতে তো সৃষ্টির জন্য যৌনতার সমর্থন পাচ্ছি। কীরকম ? রাজা দশরথ, ইনি যৌনক্রীড়ায় যথেষ্ট সক্ষম হলেও সন্তান উৎপাদনে একেবারেই সক্ষম ছিলেন না।সন্তানের (অবশ্যই পুত্রসন্তান) আশায় তিনি তিন-তিনবার বিয়ে করেছিলেন। রানিরা হলেন যথাক্রমে কৌশল্যা, কৈকেয়ী এবং সুমিত্রা। সে যুগে পুত্রহীন রাজার মুখদর্শন ছিল পাপ।প্রজারা সেই রাজাকে ঘৃণার চোখে দেখত। তা ছাড়া উত্তরসুরির অভাব পূরণ করার জন্য তো সন্তান চাই-ই। যাই হোক, তিন-তিনটি বিয়ের পরও যখন রাজা দশরথ যখন দেখল সন্তানের কোনো আশা নেই, তখন সেই সময়কার সমাজব্যবস্থায় নিয়োগ প্রথার (নিয়োগ প্রথা কী, কেন সে বিষয়ে পরে আলোচনা করব) মাধ্যমে তিন রানি সন্তান লাভ করেন। কৌশল্যা পেলেন রাম নামে পুত্র, কৈকেয়ী পেলেন ভরত নামক পুত্র এবং সুমিত্রা লাভ করলেন যমজ পুত্র লক্ষ্মণ ও শত্রুঘ্ন।এই ক্ষেত্রে রানিদের যৌনক্রীড়া শুধুমাত্র সৃষ্টির জন্য, ছিটেফোঁটা যৌনসুখের জন্য নয়। এ তো গেল রামায়ণের কথা। চলুন, এবার মহাভারতের অলিন্দে ঢুঁ মারা যাক। প্রথমেই শান্তনু-সত্যবতীর কনিষ্ঠ সন্তান বিচিত্রবীর্যের কাহিনি শোনাই। বিচিত্রবীর্যের দুই স্ত্রী -- অম্বিকা ও অম্বালিকা। দীর্ঘ সাত বছর দাম্পত্যজীবন কাটালেও যৌনক্রীড়ায় সক্ষম হলেও সন্তান উৎপাদনে অক্ষম ছিলেন। অবশেষে যক্ষারোগে আক্রান্ত হয়ে বিচিত্রবীর্য মৃত্যুবরণ করেন। তারপর সন্তানহীনা অম্বিকা ও অম্বালিকাকে সত্যবতী নিয়োগ প্রথার মাধ্যমে সন্তান লাভ করার নির্দেশ (হুকুমও বলতে পারেন) দিলেন। সব ব্যবস্থা অবশ্য সত্যবতীই করে দিলেন। নিয়োগ করলেন দ্বৈপায়ণ বেদব্যাসকে।অম্বিকা ও অম্বালিকা এই ব্যবস্থাটা মন থেকে মেনে নিতে পারেনি। কিন্তু দাপুটে শাশুড়ি মায়ের আদেশ অমান্য করে কার সাধ্যি। অবশেষে বেদব্যাসের সঙ্গে অম্বিকা-অম্বালিকাদের আত্মসমর্পণ, অনিচ্ছার সহবাস।ফলে বেদব্যাসের ঔরসে অম্বিকার দৃষ্টিহীন ধৃতরাষ্ট্র পুত্র লাভ এবং অম্বালিকার কামলা রোগাক্রান্ত পাণ্ডু পুত্রের জন্মলাভ। উপরি হিসাবে বেদব্যাস একই সঙ্গে শূদ্রী নামের এক দাসীর সঙ্গে যৌনক্রীড়া করার সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। শূদ্রীর পুত্রসন্তান হলেন বিদুর। এখানেও অম্বিকা ও অম্বালিকাদের যৌনক্রীড়া কেবলই সৃষ্টির জন্য, একপ্রকার বাধ্য হয়েই। এরপর আসি কুন্তির কাহিনিতে। ইনি পঞ্চসতীর এক সতী। তা কুন্তি যে পুরুষকে কামনা করবেন সেই পুরুষের সঙ্গেই মিলিত হতে পারবেন এই অধিকার পেলেন বিশেষ কৃতকর্মের কারণে। কুন্তি বড়োই রসিক নারী। হাতেনাতেই পরখ করে নিতে চান তিনি। এবং রাজা সূর্যকে কামনা করে বসেন। হাতেনাতেই ফল মিলল। সূর্যসঙ্গে কুন্তি সন্তান লাভ করলেন। কিন্তু কুন্তি সে সময় কুমারী ছিলেন বলে সন্তান নিজের কাছে রাখতে পারলেন না। কুন্তির হঠকারিতার মূল্য দিলেন নিস্পাপ কর্ণ। কুন্তি তাকে ভাসিয়ে দিলেন জলে। এখানে ছিল ফুল মস্তি, নো সৃষ্টি। এখানেই শেষ নয়, এরপর কুন্তি ও মাদ্রীর বিয়ে হয় পাণ্ডুর সঙ্গে। পাণ্ডু যৌনক্রীড়ায় অক্ষম (যৌনক্রীড়া করলেই পাণ্ডুর মৃত্যু হবে) ছিলেন। ফলে আবার নিয়োগ প্রথা। নিয়োগ প্রথা কুন্তি সানন্দেই গ্রহণ করেছিলেন। তাই মনের মতো পুরুষ পছন্দ করে নিলেন কুন্তি। একজন নয়, তিনজন পুরুষের সঙ্গ লাভ করেছিলেন। পুরুষের সংখ্যা আরও তো বেশি হতে পারত ভাবছেন, তাই তো ? না, বেশি হতে পারত না। কারণ নিয়োগ প্রথার নিয়ম (Niyoga (Sanskrit: नियोग) is an ancient Hindu tradition, in which a woman (whose husband is either incapable of fatherhood or has died without having a child) would request and appoint a person for helping her bear a child. According to this Hindu tradition the man who was appointed must be or would most likely be a revered person. There were various clauses associated with this process, as follows:
1. The woman would agree for this only for the sake of rightfully having a child and not for pleasure.
2. The appointed man would do this for Dharma, considering it as his duty to help the woman bear a child and not for pleasure.
3. The child thus born would be considered the child of the husband-wife and not that of the appointed man.
4. The appointed man would not seek any paternal relationship or attachment to this child in the future.
5. To avoid misuse, a man was allowed a maximum of three times in his lifetime to be appointed in such a way.
6. The act will be seen as that of Dharma and while doing so, the man and the wife will have only Dharma in their mind and not passion nor lust. The man will do it as a help to the woman in the name of God, whereas the woman will accept it only to bear the child for herself and her husband.
In Niyoga, the bodies were to be covered with "ghee" (so that lust may not take root in the minds of participants but actual act may take place for conception).
The epic Mahabharata describes two instances of niyoga. Queen Satyavati compels her illegitimate son and sage Vyasa to perform niyoga with the widows of her son Vichitravirya. The widows Ambika and Ambalika and one of their maids bear Dhritarashtra, Pandu and Vidura respectively. When Pandu is cursed to die on being intimate with any woman, his wives Kunti and Madri perform niyoga with the gods and mother five sons - the Pandavas. Pandu conceives Kunti to have niyoga with the gods and mother children for him, citing the example of Kalmashapada, who was had being cursed to die if he touches any woman with amorous intent and requests his guru - the sage Vashishtha to have niyoga with his queen.
In the Manusmṛti, niyoga is prescribed in IX.59-63, but the practice is also condemned in IX.64-68. This text (IX.167) describes the child born by niyoga as a kshetraja child of the husband-wife) অনুসারে একজন নারী মাত্র তিনবার নিয়োগ চুক্তি করতে পারে। তাই তিন পুরুষেই কুন্তিকে ক্ষান্ত হতে হয়েছে। কুন্তি সর্বোচ্চ সংখ্যার সদ্ব্যবহার করেছিলেন। ধর্মরাজের ঔরসে যুধিষ্ঠির, ইন্দ্রের ঔরসে অর্জুন, পবনের ঔরসে ভীমের জন্ম হয় কুন্তির গর্ভে। অবশ্য মাদ্রী এক পুরুষেই সন্তুষ্ট ছিলেন, অশ্বিনীর ঔরসে গর্ভবতী হয়ে যমজ পুত্র নকুল ও সহদেবের জন্ম দেন। এক্ষেত্রে কুন্তির যৌনক্রীড়া সৃষ্টির জন্য হলেও যৌনসুখ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছেন, কিন্তু মাদ্রী যৌনক্রীড়া করেছিলেন শুধু সৃষ্টির জন্যই, বিনোদনের জন্য নয়।
বিসমকামীরা যদি বলেন তারা শুধুই সৃষ্টির জন্যই যৌনক্রীড়া করেন, তা করুন না। সমকামীদের যৌনতায় যদি কিছু সৃষ্টি না হয় তাতে বিসমকামীদের অসুবিধাটা কোথায় ? ওরা তো কারোর পাকা ধানে মই দিচ্ছে না ! আপনি বা আপনারা বা আদালত বা রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিন বা না-দিন তাতে তো ওদের সৃষ্টিহীন যৌনতা বন্ধ থাকবে না। পৃথিবীও রসাতলে যাবে না – স্বীকৃতি দিলেও না, স্বীকৃতি না-দিলেও না। আপনার পছন্দ নয় বলে তো বিকল্প যৌনতা মিথ্যা হয়ে যাবে না। আপনার পছন্দ নয় বলে আপনি কারোর জীবনই বিপন্ন করে তুলতে পারেন না। মনে রাখবেন, বিসমকামীদেরই সৃষ্টির উদ্দেশ্যে যৌনতার ফলে যে হাজার হাজার সন্তান পিতৃমাতৃপরিচয়হীন হয়ে অনাথ আশ্রমগুলিতে অনাদরে অসহায় হয়ে আছে, প্রয়োজন হলে ওই সমকামী দম্পতি সেইসব সন্তান দত্তক নিয়ে বাবা-মা হওয়ার অহংকারে অহংকারী হবেন।
দেশে দেশে সমকামী ও সমকামীদের আইনি অবস্থান, আসুন দেখে নিই।
@ বৈধ : ইজরায়েল , শ্রীলঙ্কা , চিন , জাপান , উত্তর কোরিয়া , দক্ষিণ কোরিয়া , থাইল্যান্ড , ভিয়েতনাম , ফিলিপিন্স
@ অবৈধ : ভুটান ,নেপাল , মায়ানমার
@ মহিলা সম্পর্ক বৈধ : সিঙ্গাপুর দক্ষিণ আমেরিকাগা য়ানা ছাড়া স্বীকৃতি সর্বত্র অস্ট্রেলিয়া মাইক্রোনেশিয়া ও মেলানেশিয়ার কয়েকটি দেশ ছাড়া অস্ট্রেলিয়া , নিউজিল্যান্ড -সহ সর্বত্রই বৈধ
@ আফ্রিকা বৈধ : মাদাগাস্কার , দক্ষিণ আফ্রিকা ,
@ অবৈধ : কেনিয়া
@ মহিলা সম্পর্ক বৈধ : মরিশাস , সেশেলস , জিম্বাবোয়ে ইউরোপ বৈধতা সব দেশেই উত্তর আমেরিকাকয়েকটি ক্যারিবিয়ান রাষ্ট্র ছাড়া উত্তর আমেরিকার সর্বত্রই সমকামিতা বৈধ ।
@ বৈধ : ইরাক , বাহরিনে (স্বীকৃতি ন্যূনতম ২১ বছরের সমকামী সম্পর্কে, যদি দু’জনেই সহমত হন )
@ যৌনসঙ্গম বেআইনি নয় : আলবানিয়া , তুরস্ক , জর্ডন , ইন্দোনেশিয়া ও মালি
@ সমকাম প্রকৃতি -বিরুদ্ধ , অবৈধ , বেআইনি৷ অতএব অপরাধ৷ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৭৭ ধারা বৈধ৷
@ মুসলিম বিশ্বে নারী সমকামিতাকে স্বীকৃতি : কুয়েত অধিকারের স্বার্থে লড়াই জারি : লেবানন
@ মৃত্যুদণ্ড : সৌদি আরব , লিবিয়া , সুদান , ইরান *, আফগানিস্তান , নাইজেরিয়া , ইয়েমেন
@ জেল ও জরিমানা : পাকিস্তান (ন্যূনতম দু’বছর থেকে যাবজ্জীবন ), বাংলাদেশ (ন্যূনতম দশ বছর থেকে যাবজ্জীবন ), কাতার , আলজিরিয়া , উজবেকিস্তান , মলদ্বীপ , সিরিয়া , মালয়েশিয়া , মিশর।
@ ১৯৭৯ -এর ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরানে সমকামিতার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রান্তের সংখ্যা কমপক্ষে ৪ ,০০০৷

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন