লিখেছেন :সুদীপ নাথ
শিশুরা জন্মায় অসহায় হয়ে। তার
মানে এই নয় যে, তারা
বিলাসী, আদুরে, আর স্বার্থপর হয়ে জন্ম গ্রহণ
করে। আসলে অনিয়ন্ত্রিত ভালবাসা আর মাত্রাতিরিক্ত আদরই তাদের এমন স্বভাবের হতে
বাধ্য করে।
তবে প্রথম থেকেই যদি, হাঁ জন্মলগ্ন থেকেই যদি, শিশু নিজের চেষ্টায় খেঁটে-খুঁটে
প্রতিটি পদক্ষেপ শুরু করে এবং বড়রা যদি তার উপর অনাহূত অযাচিত সাহায্য চাপিয়ে
দেয়ার লোভ থেকে নিজেদের মুক্ত রাখতে পারেন, তাহলে শিশুর পক্ষে, অতি মুল্যবান গুণাবলী অর্জনের সুযোগের সম্ভাবনা দানা
বাঁধে।
শিশুতো বটেই, মানুষ মাত্রই ভালবাসার কাঙাল। কিন্তু সেই ভালবাসা হতে
হবে, যুক্তিসঙ্গত
ভালবাসা, যা মানুষকে
মহীয়ান করে তোলে।
নবজাতকের শিক্ষাদীক্ষার প্রশ্নে, একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগত
সমস্যা হচ্ছে, মা ও
শিশুর পারস্পরিক সম্পর্কের চরিত্র বা রূপ। মায়ের প্রতি সন্তানের অনুরাগ শুরুতেই
গড়ে উঠে তার চাহিদা পূরণের জন্য মায়ের সঙ্গে মেলামেশার মধ্য দিয়ে। আমি আবারো বলছি, মায়ের প্রতি সন্তানের অনুরাগ
শুরুতেই গড়ে উঠে তার চাহিদা পূরণের জন্য মায়ের সঙ্গে মেলামেশার মধ্য দিয়েই। শিশুকে খাওয়ানোর কাজ কিভাবে হচ্ছে, তার উপর অনেকাংশে নির্ভর করে, মায়ের প্রতি এবং বাইরের
পরিবেশের প্রতি শিশুর মনোভাব।
আমি যদি কোন মা-বাবাকে প্রশ্ন
করি, জীবনের প্রথম
তিন চার সপ্তাহ শিশুর সঠিক শিক্ষাদীক্ষার কোন তাৎপর্য আছে কি? তখন বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে উত্তর
আসবে- না।
“শিক্ষাদীক্ষার
এখনও সময় হয়নি”- এটা
মা বাবার ভুল ধারণা। তখনই সময় হয়ে গেছে। তখনই শিশু দেখতে ও শুনতে, রং ও রূপ, শব্দ ও সৌরভ চিনতে আর বুঝতে শেখে।
শিশুর যদি ঘুম পুরো না হয়, সে যদি ক্ষুধার্ত থাকে এবং সে
যদি সেবাযত্ন না পায়, তাহলে তার পক্ষে এইসব জ্ঞান এবং সঠিক ধারণা আয়ত্ত করতে তার বেশ কষ্টই হয়।
সেজন্যেই, প্রথম দিনগুলো
থেকেই নিদ্রা, আহার
ও জেগে থাকার সঠিক সময় নির্ধারণ করা প্রয়োজন- এটাই হচ্ছে নবজাতকের শিক্ষাদীক্ষা।
তাই কিছুদিন বাড়িতে, ঘড়িই প্রধান কন্ট্রোল প্যানেলের ভূমিকা পালন করবে।
তাছাড়াও, প্রতিকূল অনুভুতি নিবৃত্তিরও
একটা আনন্দ থাকে, যা সবাই বুঝেও বুঝেন না। সেই আনন্দ থেকে শিশুকে বঞ্চিতও করা হয়, যদি নির্দিষ্ট সময়ের আগে, অর্থাৎ ভালভাবে খিদে পাওয়ার আগে, খেতে দেয়া হয়। খিদে পেলে যে
কষ্ট অনুভুত হয়, আর
খেয়ে সেই কষ্ট থেকে তার যে মুক্তি পাওয়া এবং সেই কারণে মায়ের প্রাতি অনুরাগ
জন্মানোই হচ্ছে শিক্ষাদীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ সোপান।
আমি এটাকে মনস্তাত্ত্বিক দিক
থেকে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণই বলতে চাই, তাই আবার বলছি- খিদে পেলে যে কষ্ট অনুভুত হয়, আর খেয়ে তার থেকে যে মুক্তি পাওয়া এবং সেকারণে মায়ের
প্রাতি অনুরাগ জন্মানোই হচ্ছে নবজাতকের শিক্ষাদীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন