লিখেছেন : মনোবর
পঞ্চাশ বছর আগেকার সময় আর এই সময়ের মধ্যে বাঙ্গালীর জীবন যাত্রায় বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। খাদ্য, পোষাক, বাসস্থান, চিন্তা ভাবনার জগতে সর্বত্রই বেশ বড়সড় রদবদল ঘটে গেছে। একটা সময়ে রামমোহন, বিদ্যাসাগরের মত শিক্ষিত সচেতন মানুষেরা বুঝতে পেরেছিলেন যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রয়োজন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টার শুরুতে তাদের প্রবল বাধার সন্মুখীন হতে হয়েছিল। বিধবা বিবাহ প্রচলন করা, স্ত্রী শিক্ষার ব্যবস্থা চালু করা বা সতীদাহ প্রথা রদ করা বড় ধরণের সমাজসংস্কার হিসাবে স্বীকৃত।
পঞ্চাশ বছর আগেকার সময় আর এই সময়ের মধ্যে বাঙ্গালীর জীবন যাত্রায় বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে। খাদ্য, পোষাক, বাসস্থান, চিন্তা ভাবনার জগতে সর্বত্রই বেশ বড়সড় রদবদল ঘটে গেছে। একটা সময়ে রামমোহন, বিদ্যাসাগরের মত শিক্ষিত সচেতন মানুষেরা বুঝতে পেরেছিলেন যে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রয়োজন। কিন্তু সেই প্রচেষ্টার শুরুতে তাদের প্রবল বাধার সন্মুখীন হতে হয়েছিল। বিধবা বিবাহ প্রচলন করা, স্ত্রী শিক্ষার ব্যবস্থা চালু করা বা সতীদাহ প্রথা রদ করা বড় ধরণের সমাজসংস্কার হিসাবে স্বীকৃত।
সংস্কারের
ব্যাপারটা প্রথমে কারো ভাবনায় আসে তারপর সেই ভাবনাকে বাস্তবে রূপ দেবার জন্য
সামাজিক ভাবে সমাজে যারা অগ্রনীশ্রেনী তাদের অন্ততঃ কিছু সংখ্যকের সমর্থন দরকার
হয়ে পড়ে। যে কোন প্রচলিত প্রথার বিরোধিতা বা সমালোচনা করাই যে সমাজ সংস্কারের
প্রথম ধাপ তা কিন্তু নয়। প্রথমে যে পরিবর্তনটা করতে চাওয়া হচ্ছে তার পরিণাম নিয়েও
গুরুত্ব সহকারে চিন্তা করা প্রয়োজন। যদি তা না করা হয় তবে হিতে বিপরীত হতে পারে।
যে ভিত্তিভূমির উপর কোন সমাজ অবস্থান করে তা চূর্ন করার আগে ভাবা দরকার যে পরবর্তী
সময়ে বিকল্পভিত্তি কি হবে। কোন গাছের ডালের উপর বসে সেই ডালটি তো আর কাটা চলেনা।
বর্তমানে নিজেকে সংস্কারমুক্ত উদারমনা প্রমাণ করার তাগিদে বাঙালী শিক্ষিত সমাজের
মধ্যে ধর্মগ্রন্থগুলির অসারতা এবং প্রচলিত নিয়ম কানুন গুলির তুচ্ছতা প্রমাণের এক
প্রবল তাগিদ লক্ষ্যনীয় হয়ে উঠেছে। শ্রাদ্ধ এবং বিবাহাদির সময় উচ্চারিত মন্ত্র ও
পালনীয় লোকাচার গুলির তো কোন বিজ্ঞান্সম্মত তাৎপর্য্য নেই অতএব ওগুলি করে লোক
হাসানোর চেয়ে রেজেস্ট্রী ম্যারেজ করে নিয়ে একটি সুন্দর ভোজসভার বন্দোবস্ত করলেই
যথেষ্ট করা হল। বা একটি পাশ্চাত্ত্য ঢঙ্গের পার্টি দেওয়া হলে আরো উত্তম হল।
মৃত্যুর পর আত্মীয়দের ক্ষেত্রে অঙ্গদান সুনিশ্চিত করে অতঃপর দেহটি বিদ্যুৎ
চুল্লীতে দাহ করে লাইফবয় প্লাস দিয়ে অঙ্গশোধন করে নিলেই তো যথেষ্ট হয়। উপবাস,
মালসা খাওয়া, মাথা নেড়া করা প্রভৃতির আবশ্যকতা কি! এই হল নিউটন ভক্তদের মত।
ব্যবহারিক জীবন বিষয়ে যারা অসাধারণ উন্নত
সেই ইউরোপীয়ান বা আমেরিকানরাও তাদের ধর্মীয় আচার আচরনগুলির ক্ষেত্রে খুবই
স্পর্শকাতর এবং সেইসব অনুষ্ঠানগুলি যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পালন করেই তারা মঙ্গল,
চাঁদে রকেট ইত্যাদি পাঠাচ্ছে। কিন্তু শিক্ষিত বাঙ্গালীর লক্ষ্য বহু উঁচুতে। তারা
মনে মুখে এক থাকতে চান। মনে মনে যখন বুঝেছেন ঐগুলি অসার অতএব বাইরের জীবনেও ঐগুলি
ত্যাগ করলে তবেই তারা যথার্থ শান্তি অনুভব করবেন। তাদের সাফল্য অবশ্য সুদূর পরাহত।
কেননা যুগ যুগ ব্যাপী সঞ্চিত সংস্কার ঝাড়ু বা তাড়ু মেরে হটান সবিশেষ শক্ত ব্যাপার।
তবু ধরা যাক তারা সফল হবেন। একটি জাতি পৃথিবী নয়ন মেলে দেখবে যারা আপাদমস্তক
বিজ্ঞানবাদী। যাদের কোন দর্শন বা ধর্মাচরনের জঞ্জাল নেই। বিজ্ঞাপনদাতাদের আয়োজিত
অনুষ্ঠান দেখে অথবা সারগর্ভ এক অতি উন্নত সংস্কৃতির চর্চা করে তারা অবসর বিনোদন
করবেন, বিপুলভাবে সভা সমিতিতে যোগদান করে তারা মানুষের উচ্চতর চেতনার উন্মেষে জীবন
উৎসর্গ করবেন।
হতেপারে
যে অন্য ধর্মাবলম্বীরা তাদের নাস্তিক বলে নিধনের চেষ্টা করবেন বা উপহাসের পাত্র
বলে মনে করবেন। কিন্তু তারা তো অন্তরে বাইরে খাঁটি থাকবেন। আর ঐসব মুর্খ
সংস্কারাচ্ছন্ন পৃথিবীর যত আপদগুলো টুডে অর টুমরো নিশ্চয় হাড়ে হাড়ে উপলদ্ধি করবেন
যে কি ধরণের মৌলিক বৈশিষ্ট সম্পন্ন একরাশ সন্তান বঙ্গমাতা প্রসব করেছিলেন।
এবার
কি নোবেল কমিটি সংস্কারসাধনের জন্য একটি বাড়তি পুরস্কার ঘোষনার সৌজন্য দেখাবেন
যাতে পৃথিবীব্যাপী সংস্কারসাধনের কাজটি প্রার্থিত গতি লাভ করে সমগ্র মানবসমাজ কে
উদ্ধারপ্রাপ্তির আশু আনন্দ উপভোগ করাতে পারে?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন