বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১২, ২০১৩

ঈশ্বরের সঙ্গে আলাপ

              লিখেছেনঃ মনোবর

‘লোকে বলে যে আপনি এই বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন। একথা কি সত্য?’
‘সত্য।’
‘দেখুন এটা কিন্তু সম্ভব নয়। কারণ বিজ্ঞানে এর প্রমাণ নেই।’
‘আমি যে করিনি তার কি প্রমাণ বিজ্ঞানে আছে।’
‘দেখুন মহা বিশ্বে শুধু পদার্থ আর শক্তি আছে। এদের আবার বিভিন্ন অবস্থা আছে। কিন্তু এর অতিরিক্ত আর তো কিছু নেই অতএব আপনিও নেই।’
‘তুমিও কি নেই?’
‘আমি তো আছি। না হলে কি আর আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারতাম?’
‘তুমি পদার্থ না শক্তি?’
‘দুটোই।’
‘ও! তা তোমার কি বিনাশ হবে? না তুমি অমর?’
‘ঠিক বিনাশ তো হবেনা তবে রূপান্তর হবে।’
‘কিসে রূপান্তরিত হবে তুমি?’
‘আজ্ঞে হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন।’
‘তাই বল! তা ওরা কি সব বিজ্ঞান চর্চা করে টরে?’
‘আজ্ঞে না। ওরা জড় পদার্থ। ওরা কি করে করবে এসব?’
‘তবে কি শক্তি বিজ্ঞান চর্চা করে?’
‘ আজ্ঞে না। আমরা শক্তি নিয়ে চর্চা করিশক্তিকে প্রায় কন্ট্রোল করে এনেছি। আর একটু বাকি।
‘তোমরা মানে কারা?’
‘কেন? মানুষ নামক প্রাণীরা।’
‘প্রাণ জিনিষটা কি?’
‘একটা ইয়ে মানে এর উপাদান আছে। ইয়ে প্রোটিন না থাকলে প্রাণ তো থাকবে না।’
‘এটা কি আমার প্রশ্নের উত্তর হল?’
‘ঐ আর কি! ধরুন ওটা এক ধরণের শক্তি।’
‘তুমি কি ঠিক জানো প্রাণ কি?’
‘আস্তে আস্তে জানবো। তাড়াহুড়ো করলে সব আবার গুলিয়ে ফেলব!’
‘তাহলে আমাকে জানার বেলাতেও এই ধৈর্য্যের পরিচয় দাও। তার বেলা অত তাড়াহুড়ো করে উড়িয়ে দাও কেন?’
‘আজ্ঞে আপনি বড্ড সেকেলে। পুরান ধারণা না ওড়ালে নতুনের প্রতিষ্ঠা হয় কেমন করে?’
‘তুমি প্রতিষ্ঠা চাও? কি প্রতিষ্ঠা চাও? তোমার তো বিনাশ হবে। তখন আর একজন এসে তোমার প্রতিষ্ঠা কেড়ে নেবে। তুমি কি বিখ্যাত হতে চাও? লোকের কাছে পূজনীয় হতে চাও?’
‘আজ্ঞে আমি সত্যনিষ্ঠ বিজ্ঞানী হতে চাই।’
‘সত্য কথার মানে কি?’
‘আজ্ঞে যা বিকৃত হয়না, যার কোন পরিবর্তন হয়না চিরস্থায়ী তাই হল সত্য।’
‘হুম্‌! এরকম কিছু কি পেলে?’
‘আজ্ঞে না। এখনও পাইনি তবে ঘাঁটতে ঘাঁটতে দুম করে একদিন পেয়ে যাবো।’
‘ও! তারপর কি করবে?’
‘মানুষকে সেটা বুঝিয়ে দেবো। আর রোগ, ব্যাধি, মৃত্যুকে জয় করবার কৌশল আবিষ্কার করব। ওসব আর রাখবো না।’
‘তবে তো আর নূতনের দরকারও হবে না। নূতন জন্ম বন্ধ করে দেবে?’
‘তা দিলেও হয়। বা সামান্য পরিমাণে সুযোগ দেব। সবার তো আবার স্থান সংকুলান করতে হবে।’
‘কিন্তু তখন যদি মতের অমিল থেকে অশান্তি বাঁধে তখন কি হবে?’
‘কন্ট্রোল করা হবে। তখন তো মানুষের বদবুদ্ধি থাকবে না। শুধু শুভ বুদ্ধি থাকবে।’
‘কিন্তু সব যখন সমাধান হয়ে গেছে তখন কি হবে? কি করবে মানুষ তখন?’
‘গান করবে, কবিতা করবে, শিল্প করবে, উন্নত জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চা করবে।’
‘কি উদ্দেশ্যে চর্চা করবে। তখন তো সমস্যা থাকবে না।’
‘যা হোক কিছু করবে। এই ধরুণ ধ্যান করবে।’
‘কার ধ্যান করবে?’
‘কেন শুন্যের ধ্যান, মহাকাশের ধ্যান। ওসব তো আছে। তাই ভাববে। মর্নিং ওয়াক করবে, পাজল সল্‌ভ করবে।’
‘তাতে কি আনন্দ হবে? আনন্দ না হলে ওসব কি কেউ করতে চাইবে?’
‘আজ্ঞে নিরানন্দের স্নায়ুগুলো সব কেটে বাদ দেওয়া হবে। ফলে এমনিই আনন্দ হবে। দেখবেন আমার কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলিয়ে নেবেন। শুধু একটু সময় লাগবে।’
‘কিন্তু মানুষ ভাল না হয়ে তো মন্দও হতে পারে। এইসব জ্ঞান মন্দকাজে ব্যবহার করতে পারে। সেটা কি করে আটকাবে?’
‘আটকানো যাচ্ছেনা তো। এটাই বিজ্ঞানের বিপদ। সব জ্ঞান মন্দদের হাতে গিয়ে হাজির হচ্ছে। আর ধংসকান্ড চলছে। কি করা যাবে এসব কন্ট্রলিং পাওয়ার যাদের হাতে তারা তো বিজ্ঞানী নয়। সত্য তারা খোঁজেও না। বিজ্ঞানীরা তো অসহায়।’
‘সেকি! যারা সব সমাধান করবে এই মরণশীল জগতকে অমরলোক বানাবে তারা অসহায় হলে ওসব হবে কেমন করে?’
‘হবেনা। হবার কোন লক্ষণ নেই। কারণ বিজ্ঞানীদের হাতে তাদের আবিষ্কার নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা নেই আর আসবেও না। আপনি কি একটা কোন উপায় বার করতে পারেন?’
‘আমিও তো নেই। তাহলে কি করে বার করব?’
‘করতে পারেন নি বলেই তো আপনাকে উড়িয়ে দিয়েছি। এখন আমরাও যদি না পারি তবে বড় বিপদ! পাবলিক তখন কি আর আমাদের উপায় রাখবে। পূজা নেই, নামাজ নেই, উপাসনা নেই, মন্দির-মসজিদ-গীর্জা কিচ্ছু নেই। তখন তো পাবলিকের ঢালাও সময়। কিছুদিয়ে যে ভুলিয়ে রাখবো তারও তো উপায় থাকবে না। কি বিপদে পড়লুম যে! একি আপনি কোথায় গেলেন? ও মশাই! যাঃ! যাওবা একটা দোষ ধরার মাল ছিল সেটাও কেটে পড়ল! বড় বিপদে পড়লুম তো!’

কোন মন্তব্য নেই: