লিখেছেন : গুরুদেবজী
গণেশের জন্মের কথা মহাভরতের কোনো জায়গায় উল্লেখ নাই। গণেশ কি করে পার্বতীর (উমা, দুর্গা) সন্তান হল সে বিষয়েও মহাভারতে কিছু বলা নাই। তবে পুরাণে গণেশের জন্মের নানাবিধ বৃত্তান্ত পাওয়া যায়। শিব পুরাণে বলা হয়েছে,
মহামায়া দুর্গা (পার্বতী) মহাদেব শিবের কাছে সন্তান কামনা করলে শিব পুত্র উৎপাদনে অস্বীকৃতি জানান। কারণ মহাদেব শিব যেমন তেজস্বী ছিলেন, মহামায়া পার্বতীও তেমনি তেজস্বিনী ছিলেন। তাই তাদের মিলনে উৎপন্ন সন্তান হবে অধিক তেস্বজী আর সে তেজে ত্রিভুবন ভস্ম হয়ে যাবে।
তাই অন্যান্য দেবতারা মহাদেবকে পার্বতীর সাথে মিলিত হতে বারণ করেন। ত্রিজগতের কল্যানের কথা ভেবে মহাদেবও সন্তান উৎপাদন থেকে বিরত থাকলেন। কিন্তু মহামায়া পার্বতী আপন সন্তানলাভে বঞ্চিত হয়ে ঐসব দেবতাদেরকে অভিশাপ দিলেন। এরপর মহামায়া দূর্গা নিজেই জলের পাক থেকে গণেশকে সৃষ্টি করেছিলেন। আবার কিছু কিছু গ্রন্থ বর্ণনা করেছে, মহামায়া দূর্গা নিজ দেহের ঘর্মাক্ত থেকে গণেশকে সৃষ্টি করলেন। গণেশের মাথা কী করে হাতির মাথা হল। এ নিয়ে অনেক গল্প-কথা আছে ধর্মীয় গ্রন্থগুলোতে। কথিত আছে : মা দুর্গা বালক গণেশকে সৃষ্টি করলেন এবং তাকে দায়িত্ব দিলেন যে, যখন তিনি স্নান করবেন তখন কেউ যেন বাড়িতে মহামায়া দুর্গা (পার্বতী) মহাদেব শিবের কাছে সন্তান কামনা করলে শিব পুত্র উৎপাদনে অস্বীকৃতি জানান। কারণ মহাদেব শিব যেমন তেজস্বী ছিলেন, মহামায়া পার্বতীও তেমনি তেজস্বিনী ছিলেন। তাই তাদের মিলনে উৎপন্ন সন্তান হবে অধিক তেস্বজী আর সে তেজে ত্রিভুবন ভস্ম হয়ে যাবে।
প্রবেশ করতে না পারে। গণেষ তার দায়িত্ব পালনে ব্রত হলেন। এমতাবস্থায় ভগবান শিব বাড়ি ফিরলেন এবং গণেশ কর্তৃক বাধা প্রাপ্ত হলেন। ভগবান বাধাপ্রাপ্ত হয়ে রাগে বিহ্বল হয়ে পড়লেন। এক কোপে গণেশের ধড় থেকে মাথাটা বিচ্ছিন্ন করে
দিলেন। কিন্তু পরক্ষণে ভাবলেন, একজন ভগবান হিসেবে এমন ব্যবহার অপ্রত্যাশিত। সকল জীবের মধ্যে সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই ভগবানের কাজ। তাই তিনি গণেশের মৃতদেহে আবার প্রাণের সঞ্চার করলেন হাতির মাথা জুড়ে দিয়ে।"
(সূত্রঃ সনাতন সোসাইটি ডটকম এবং মহাভরতের চরিতাবলী,সূর্যদাস গুপ্ত)
- যে ভগবান ছিন্নমুণ্ড গণেশের গর্দানে হাতির মাথা জুড়িয়ে দিয়ে প্রাণের সঞ্চার করতে পারেন,সে ভগবানকে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের মডেল বলা যেতে পারে। কিন্তু আমার ভাবনা একটাই, এমন কাজ ভগবান কি করে করলেন? মানুষের গর্দানের তারগুলোর সাথে হাতির তারগুলো কিভাবে জোড়া দিয়েছিলেন? তাছাড়া, হাতির লম্বানাসিকাসহ মাথাটার দৈর্ঘ্য-ব্যাস-ব্যাসার্ধ শিশুর মাথার চাইতে নিশ্চয় কিঞ্চিত ছোট্ট নয়, আবার সমানও নয়! সেই যদি সম্ভব হত তবে আজ বিজ্ঞান মুন্ডুছিন্ন ব্যক্তিদের অনুরোধে ভগবান শিবের নিকট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতেন। এর চাইতে ছিন্নকৃত মুন্ডুটাই জুড়ে দেওয়া ভগবানের জন্য সহজ ছিল নাকি?- যে শিব নিজের স্ত্রীকে সন্তান দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করে, স্বয়ং পতি থাকতে পার্বতীকে নিজ দেহের ঘর্মাক্ত থেকে সন্তান সৃষ্টি করতে হয়; সেই অক্ষম দেবতার লিঙ্গ পুজা করে আদৌ কি সন্তান লাভ করা যায়? ধরে নিলাম ভগবান সৃষ্টির প্রতি করুণা করে সন্তান জন্ম দেবার জন্য মহামায়া দেবীর সাথে মিলিত হননি; কিন্তু এতগুলো ভগবান মিলে কেন পারলেন না তাদের সৃষ্ট ত্রিজগতকে রক্ষা করতে ? একজন ভগবান তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হওয়া থেকে বিরত থাকলেই যে ত্রিভুবন নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে বেঁচে যায়;সেখানে ৩৬০ জন ভগবান মিলে কেন সেই কাজটি করতে পারলেন না ? কেন অপর ভগবানের এবং ভগবান পত্নীর মৌলিক অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে হল ? আমি ভেবে পাই না,এরপরও কেন শিবলিঙ্গের পুজো করা হয়। হয়তো শিব সম্পর্কে পদ্মপুরাণের এইসব অলৌকিক কাহিনির জন্যেই...। রাধানাথ রায়চৌধুরীর পদ্মপুরাণের ভূমিকায় বলা আছেঃ "একদিন পুষ্পবনে গিয়ে শিব শ্রীফল দেখে মুগ্ধ হলেন। সেই ফল ভক্ষণ করার পর শিবের অঙ্গ কামানলে দগ্ধ হতে লাগল। তিনি বাহ্য জ্ঞানশুন্য হয়ে পড়লেন। সেই সময়ে তার বীর্যপাত হল। বজ্রমুষ্টিতে ধরে সেই বীর্য তিনি পদ্মবনে নিক্ষেপ করলেন।
"সেই বীর্য হতে জন্মগ্রহণ করলেন এক অপরুপ সুন্দরী কন্যা। তার নাম হল পদ্মবতী।"
"সহসা শিবের বীর্য মাটিতে পড়ে এক কন্যার জন্ম হল যার নাম নেতা।"
(পদ্মপুরাণঃ রাধানাথ রায়চৌধুরী, প্রকাশক- শ্রীঅরুণচন্দ্র মজুমদার, দেব সাহিত্য কুটীর প্রাইভেট
লিমিটেড, ২১ ঝামাপুকুর লেন, কলিকাতা-৯, পৃষ্ঠা নং-১১)
- পদ্মবতী, শিব ও পার্বতীর কাছে সন্তানের পরিচয় দিলে তারা অস্বীকার করেন। কিন্তু কেন? ভগবান কি জগতের সকল বিষয় সম্পর্কে পরিজ্ঞাত ছিলেন না। তিনি কি জানতেন না তার সহসা স্খলিত বীর্য থেকে পদ্মবতীর ও নেতার জন্ম হবে ? তাহলে পদ্মাবতীকে সন্তান হিসেবে অস্বীকার করার কারণ কি হতে পারে? - স্ত্রীলিঙ্গ ছাড়া কেবলমাত্র পুরুষের বীর্যেই জন্ম লাভ করল পদ্মবতী ও নেতা। এ পর্যায়ে নিশ্চয় বলবেন না মহাদেব শিব- নারী ছিলেন। অথবা তিনি নারী-পুরুষ উভয়ের বীর্য ধারণ করেছিলেন। সেই যাই হোক, জিন তত্ত্বের জনক গ্রেগর জোহান ম্যান্ডেলা শিবের সমসাময়িক সময়ে আসলে নিশ্চয় মহাদেব শিবের উপর বিশেষ গবেষণা চালানোর পর জেনেটিক্সের সূত্রগুলো প্রকাশ করতেন। আর বেঁচে থাকলে হয়ত মহাদেব শিবকে মন্ত্র বলে তুষ্ট করে তার নিকট প্রকট, প্রচ্ছন্ন জিনের পাশাপাশি শিব আবিষ্কৃত নতুন 'শিবজিনের' শিক্ষা গ্রহণ করতেন। - গ্রেগর জোহান ম্যান্ডেলা দুইটি ভিন্ন ভিন্ন জীনের (শুক্রাণু + ডিম্বাণু) কথা বলেছিলেন। একটি পুং লিঙ্গ এবং অপরটি স্ত্রী লিঙ্গ থেকে বেরিয়ে আসবে। কিন্তু শিব যিনি সৃষ্টিকর্তা নন, যাকে বলা হয় জগতের সংহারকর্তা। জগতের সমুদয় বস্তুর (জড়-জীব, প্রাণী-অপ্রাণী) সৃষ্টিকর্তা হলেন ব্রহ্মা। জগতের তাবৎ বস্তুর পালনকর্তা হলেন বিষ্ণু। তাহলে শিব কিভাবে নিজ দেহ হতে সহসা স্খলিত বীর্য থেকে মানুষ সৃষ্টি করলেন ? এ পর্যায়ে মহাদেব শিবকে আধুনিক জেনেটিক্সের জনকও বলা যেতে পারে। যে দেবতার বীর্যে সহসা পদ্মবতী ও নেতার জন্ম হয়, সেই মহান দেবতার লিঙ্গ পুজো করলে সন্তান পাওয়ার সম্ভাবনা তো থাকবেই? আর এ জন্যেই হয়ত নিঃসন্তান নারীরা শিবলিঙ্গের পুজো করে, শিব মহারাত্রি যাপন করে। তা ছাড়া ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণের বিধান মতে যে ভগবান বিষ্ণু ও মহাদেব শিবের লিঙ্গ পুজো করবে না সে নির্দ্বিধায় ব্রহ্মহত্যা পাপে পাপিষ্ঠ হয়। আর ধর্মে পাপের মধ্যে সবচাইতে গুরুতর পাপ হল ব্রহ্মহত্যা পাপ। এ সম্পর্কে ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণের প্রকৃতি খন্ডের অষ্টাবিংশ অধ্যায়ের ২০৩ নং পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে --
বিষ্ণু আর শিবলিঙ্গে পূজা নাহি করে।
ব্রহ্মহত্যা-পাপী হয় পৃথিবী-ভিতরে \\
(ব্রহ্ম বৈবর্ত্ত পুরাণ, প্রকৃতিখন্ড, পৃষ্ঠা -২০৩, অনুবাাদক - সুবোধচন্দ্র মজুমদার, প্রকাশক-
শ্রীঅরুণচন্দ্র মজুমদার, দেব সাহিত্য কুটীর প্রাইভেট লিমিটেড, ২১ ঝামাপুকুর লেন, কলিকাতা-৯)
ব্রহ্ম বৈবর্ত্ত পুরাণ মতে কেবল মহাদেব শিবের লিঙ্গ নয় বরং ভগবান বিষ্ণুর লিঙ্গ পূজাও ধর্মের বিধান।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন