একটা মখমলের কারুকার্যখচিত সিংহাসনে অপূর্ব সুন্দরী আইভি বসে আছে। বিউটি
পার্লার থেকে দুজন অভিজ্ঞ বিউটিসিয়ান দু ঘন্টা ধরে ওকে আরো সুন্দরী করবার ভার
নিয়েছিল। কাজ যা করেছে তারিফ করবার মত। সব বয়সের পুরুষরাই প্রেজেন্টেশন হাতে তুলে
দেবার সময় মুগ্ধ হয়ে আইভিকে দেখছে। মেয়েরাও চোখের কোন দিয়ে ধরবার চেষ্টা করছে দু-একটা
খুঁত যদি বার করতে পারে। না পেরে অকারণে গম্ভীর হয়ে যাচ্ছে। কাউন্টার থেকে একটা
চিকেন চপ আর কাগজের গ্লাসে এককাপ কফি নিয়ে যুতসই পজিশনে একটা চেয়ারে বসে আমিও
অপেক্ষা করছি। ভিড় একটু হাল্কা হলেই হ্যান্ডিক্যাম টা বার করে আইভি কে আমিও বন্দী
করব। চেনাশোনা লোককে ইচ্ছা করেই এড়িয়ে যাচ্ছি কারন তাহলে অনেক ভাল মুহূর্ত
হাতফস্কে পালাবে। মনটা আমারও একটু উচাটন হচ্ছে কারণ হল আমি এইদিনে কবে পৌঁছব তা
বড়ই অনিশ্চত। হঠাৎ কার্তিক দা আমায় দেখে আর এক গ্লাস কফি এনে খাবার জন্য পীড়াপীড়ি
শুরু করে দিল। ‘তোমার জন্য আনলাম না খেলে তো ভাই শুনব না।’ হয়ে গেল আমার ছবি তোলা!
কার্তিক-দা’র একটা কেস আছে। ওর ছেলের প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরিটা ঝুলে আছে। মামলার
রায় হয়েছে ছেলেটার ফেভারে কিন্তু সরকার গায়ে মাখছে না। আমায় দিয়ে একটু খোঁজ খবর
করায় কিনা তাই ভ্রাতৃপ্রেম উথলে উঠেছে। এইবার ঢুকল বিধান সাহার দুই মেয়ে আর স্বয়ং
বিধান সাহা। এক মেয়ে আইভির সঙ্গে পাল্লা দেবার ক্ষমতা রাখে। বেশ কিছু দৃষ্টি এবার
তার দিকে ঘুরে গেল। সাহাদের এখানে নামডাক খুব। নানারকম ব্যবসা আবার সুন্দরী সব
তরুণী মেয়ে ওদের নাম হবে না তো হবে কার! ‘যাই বল ননীবাবুর বৌমা দেখবার মত! তবে কি
জান এইসব আলালের ঘরের দুলালী কাজে কর্মে তেমন সুবিধার হয়না। আমার মতে শুধু সুন্দর
মেয়ে না খুঁজে কাজের মেয়ে খোঁজাই হল বুদ্ধিমানের কাজ।’ এই বলে কার্তিক দা আমার
সমর্থন চায়। যেন দাস বাজারে ঝি খুঁজতে বেরিয়েছে! এর মধ্যে আবার দেশলাই বার করে
মুরগীর চোকলা দাঁতের ফাঁক থেকে বার করবার লড়াইও চলছে। আমার ভাগ্যটাই না ফাটা চকলেট
বোমের মত। ‘এইসব ক্যাতকেতে সুন্দরীরা কোন কাজেই লাগেনা। ফালতু শুধু ঝামেলা বাড়ায়।’
বলে আমি নকল বিরক্তি প্রকাশ করি। অমনি কার্তিক দা প্রাণখোলা এক হাসি ছাড়ে। আইভির
ভালোমানুষ বাবা ওর কোন পাকা ধানে মই দিয়েছে ভগবানই জানে। এইবার এল ঘোষ ফ্যামিলি।
দুই কন্যা আর এক নাতি সহ সূর্য্য ঘোষ। দুই বোন সব পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি করে লম্বা,
আবার গৌরবর্ণ। একজন আবার কুটুস করে আমায় একবার দেখে নিল। ওর দিকে ক্যামেরা ধরব না।
ওর গোপন প্রেমের কথা বাজারে ফাঁস করে দিয়েছিলাম বলে দেখা হলেই চোখ দিয়ে আমায় ভস্ম
করে। প্রেমের হালুয়া পাকিয়ে দিয়েছি। কলেজ বন্ধ। তোলা জলে স্নান আর ঘরে বসে টিভি
দেখা এই এখন ওর জীবন।
দূর! যা হয় হবে বলে শখের ক্যামেরাটা বার করলুম। কার্তিক দার খুব ছবি তোলার ইচ্ছা।
তা ছাড়া লোকটার জিভের ধার খুব তাই প্রথমেই ওর ছবি নিলুম। ওসব কি আর রাখব। সব ঝেঁটিয়ে
বিদায় করব। ‘তুমি এগুলো কি কর?’ কার্তিক দা জানতে চায়। ‘সব জমিয়ে রাখি। মানুষ
পালটে যায় কিন্তু ছবি তো পাল্টায় না তাই রেখে দি।’ ‘ও! তোমার শখ আর কি!’
‘তা বলতে পারো।’
‘যাই ভাই। আমার একটু তাড়া আছে। দেখি প্রথম ব্যাচে যদি বসতে পারি। আর আমার
ব্যাপারটা মাথায় রেখো। মনে আছে তো?’
‘তুমি কিচ্ছু ভেবোনা ওর চাকরি না হওয়া পর্যন্ত আমারও শান্তি নেই। আমি ঘন ঘন
খবর নেবো।’
এই শুনে কার্তিক দা বিদায় নিতে আমি দিলখুশ সব মুহূর্ত ক্যাপচার করা শুরু
করলুম। সুন্দর এক পরিবেশ প্রস্তুত। অপূর্ব সুরে সানাই বাজছে। চারিদিকে দৈব সুগন্ধ
ভেসে বেড়াচ্ছে। আর সব রঙ আজ এইখানে এসে জড় হয়েছে। এইবার এল সুবীর নিজে। হাতধরে
টেনে নিয়ে বসিয়ে দিল ওর বন্ধুদের আসরে। যতই বলি খাবোনা। তা কে শোনে কার কথা! তা
যাকগে, মেরে দিলুম দু ঢোক। সবাই যদি পারে আমি কেন পিছিয়ে থাকব! আইভি কে এক একবার
এক একরকম দেখছি। অন্যান্য দৃশ্যও ধরবার চেষ্টা করলুম।
কিন্তু যে ব্যাচেই বসবার চেষ্টা করি আমার আগেই টেবিল দখল হয়ে যায়। প্রচুর
লোক নিমন্ত্রিত হয়েছে কিনা। আজ হল আমার আত্মত্যাগের দিন। এদিকে ফক্কা ওদিকেও
ফক্কা। আজ সুবীরের ছক্কা মারার দিন মারুক। সব লোকের খাওয়া হয়ে যাবে শুধু আমি কোলে
ক্যামেরা নিয়ে হেঁসেল থেকে খানিক দূরে আমগাছে পিঠ ঠেকিয়ে বাটনা বাটা দেখব। ছ্যাক
ছ্যোক শুনব আর রন্ধন সুরভিযুক্ত বাতাসে বুক ভরাব। ওদিকে বাসর ঘর খালি হলে সুবীর
অবনত চোখ সুন্দরী আইভিকে বলবে, ‘আমার দিকে একবার তাকাও না। নাকি প্রতিজ্ঞা করেছ যে
তাকাবে না।’ আইভি তখন ইতস্ততঃ করে থেমে আস্তে আস্তে চোখ তুলে তাকাবে। সুবীর কি আর
থাকতে পারবে এগিয়ে যাবে আইভির আরও কাছে। বুড়ো বিসমিল্লার জয়জয়ন্তী তখন গলে গলে
পড়বে চোখ থেকে মনে, মন থেকে হৃদয়ে আর এই শালার অন্ধকারেই যত মশা! ওদের জন্মই হয়েছে
আমার রক্ত খাবার জন্য। খা তবে, খালি পেটের রক্ত খেয়ে ধন্য হ রক্তচোষার বাচ্চারা!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন