লিখেছেন : অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়
পৃথিবীর সবখানেই সাপের বসবাস। জলে-স্থলে কোথায় নেই !
বিশেষ করে দ্বীপগুলো হল এদের অভয়ারণ্য। সাপ বা সর্প হাতপাবিহীন এক প্রকার সরীসৃপ। বৈজ্ঞানিক
শ্রেণীবিন্যাস অনুযায়ী, Animalia (প্রাণী)
জগতের, কর্ডাটা (কর্ডটা) পর্বের,
Vertebrata (মেরুদণ্ডী) উপপর্বের, Sauropsida (সরোপ্সিডা) শ্রেণীর (শল্ক বা আঁশযুক্ত), Squamata (স্কোয়ামান্টা) বর্গের, Serpentes (সার্পেন্টেস)
উপবর্গের সদস্যদের সাপ বলে অভিহিত করা হয়।
অ্যান্টার্কটিকা ছাড়া সকল মহাদেশেই সাপের উপস্থিতি দেখা
যায়। এখন পর্যন্ত যতদূর জানা যায়, সাপের সর্বমোট ১৫টি পরিবার, ৪৫৬টি গণ, এবং ২,৯০০টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে। এদের আকার
খুব ছোটো, ১০ সে.মি. (থ্রেড সাপ) থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ২৫
ফুট বা ৭.৬ মিটার (অজগর ও অ্যানাকোন্ডা) পর্যন্ত হতে পারে। সম্প্রতি আবিষ্কৃত
টাইটানওবোয়া (Titanoboa) সাপের জীবাশ্ম প্রায় ১৩ মিটার
বা ৪৩ ফুট লম্বা।
বিষধরদের জন্য বিখ্যাত হলেও বেশীরভাগ প্রজাতির সাপ
বিষহীন এবং যেগুলো বিষধর সেগুলোও আত্মরক্ষার চেয়ে শিকার করার সময় বিভিন্ন প্রাণীকে
ঘায়েল করতেই বিষের ব্যবহার বেশি হয়। কিছু মারাত্মক বিষধর সাপের বিষ মানুষের
মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বা মৃত্যুর কারণ ঘটায়।
ইংরেজি snake শব্দটি এসেছে প্রাচীন ইংরেজি sanca থেকে,
যা এসেছে প্রোটো জার্মানিক sank-an-Schnake
"ring snake", এবং সুইডিশ snok
"grass snake" থেকে । এছাড়া প্রোটো-ইন্দো-ইউরোপিয়ান
শাখা (s)nēg-o- "to crawl, creep" (বুকে হাঁটা); এখান থেকে এসেছে এর সংস্কৃত নাম nāgá বা সাপ। সাপের অন্য
একটি নাম serpent, একটি ফরাসি শব্দ, এটি এসেছে ইন্দো-ইউরোপিয়ান serp-
to creep এবং এখান থেকেই এসেছে সাপের গ্রিক নাম érpein (ερπω) ও স্ংস্কৃত নাম সর্প।
সাপের জীবাশ্ম (fossil) খুব পাওয়া দুরূহ, কারণ সাপের কঙ্কাল ছোটো এবং
ভঙ্গুর, যার ফলে অশ্মীভবন (fossilization) খুব একটা হয় না। যদিও দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকায় পাওয়া ১৫ কোটি
বছরের পুরোনো নমুনা থেকে সাপের অস্তিত্ত্ব বোঝা যায়, যেটার
গঠন বর্তমানকালের গিরগিটির মতো। তুলনামূলক শারীরস্থানবিদ্যার উপর ভিত্তি করে এই
ঐকমত্যে পৌঁছোনো গেছে যে গিরগিটি থেকেই সাপের উৎপত্তি।
লিলিয়ান শ্রেণীবিন্যাসে আধুনিক কালের সকল সাপ
স্কোয়ামান্টা বর্গের সার্পেন্টেস উপশ্রেণীভুক্ত, যদিও স্কোয়ামান্টার ভিতর তাদের রাখার বিষয়টি বিতর্কিত। সার্পেন্টেস
বর্গের দুটি অধিবর্গ রয়েছে: Alethinophidia (অ্যালিথিনোফিডিয়া)
ও Scolecophidia (স্কোলেকোফিডিয়া)। শারীস্থানিক বৈশিষ্ট্য
ও মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিএনএ-এর সদৃশ্যতার ওপর ভিত্তি করে এই পৃথকীকরণ করা হয়েছে।
সাম্প্রতিককালে কলুব্রইডে (কলুব্রয়েড সাপ) ও অ্যাক্রোকরডিডস অন্তর্ভুক্ত হওয়ার
কারণে, অ্যালিথিনোফিডিয়াকে মাঝে-মধ্যে হেনোফিডিয়া ও
সেনোফিডিয়া-এই দুভাগে ভাগ করা হয়। এছাড়া অন্যান্য অ্যালিথিনোফিডিয়ান পরিবার
হেনোফিডিয়ার অন্তর্ভুক্ত। যদিও এখন অস্তিত্ত্ব নেই, কিন্তু
Madtsoiidae (ম্যাডসোইডে) নামক পরিবারের বৃহৎ, আদিম, এবং অনেকটা অজগরের মতো দেখতে সাপের
অস্তিত্ব প্রায় ৫০,০০০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়াতে ছিল বলে
জানা যায়, যার অনেকগুলো গণের মধ্যে একটা হচ্ছে ওনাম্বি।
স্থান দেওয়া-না দেওয়া নিয়ে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে
যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন সূত্রে Boidae (বোইডে) ও Pythonidae
(পাইথনিডে)-কে একই পরিবারভুক্ত হিসেবে শ্রেণীবিন্যাসে উল্লেখ
করেছে।
বিষধর সাপ হচ্ছে এক প্রকার সাপ যারা শিকার ও আত্মরক্ষার
জন্য তাদের শরীরে উৎপন্ন প্রক্রিয়াকৃত লালা বা সর্পবিষ ব্যবহার করে। এই বিষপ্রয়োগের
জন্য তাদের বিশেষভাবে তৈরি এক জোড়া দাঁতও থাকে যা বিষদাঁত নামে পরিচিত। এছাড়া
কিছু কিছু সাপ তাদের চোয়ালের মাধ্যমে বিষ ছুড়েও মারতে পারে।
সাপের বিভিন্ন পরিবারের মধ্যেই বিষধর সাপের অস্তিত্ব
আছে। শ্রেণীবিন্যাসের কোনো নির্দিষ্ট ধাপ বিষধর সাপদের জন্য নির্দিষ্ট নয়। এটার
অর্থ এই যে বিবর্তনের ধারায় বিভিন্ন রকম সাপের মাঝে বিষ উৎপন্ন হয়েছে। কয়েকটি
জাতের গিরগিটির মাঝেও বিষের উপস্থিতি দেখা যায়, যা মূলত লালা।
অনেক ধরনের সাপ, যেমন: বোয়া এবং অজগর গোত্রীয় সাপগুলো বিষধর নাও হতে পারে, কিন্তু তাদের দংশন বা কামড়ের ফলে চিকিৎসীয় সেবার প্রয়োজন হতে পারে।
কারণ তাদের দাঁত তীক্ষ্ম ও ধারালো, এবং মুখের
ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে আক্রান্ত ক্ষতে সংক্রমণ হবার সম্ভাবনা থাকে।
১. উপকূলীয় তাইপেন (Coastal
Taipan): (বৈজ্ঞানিক নাম Oxyuranus scutellatus) ।এই সাপ লম্বায় ২ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। এদের শরীরের
রঙ কখনো ক্রিম-হলুদ, কখনোবা কমলা-বাদামি রঙের মিশেল হয়। অস্ট্রেলিয়ার
কুইনল্যান্ডে এদের বেশি দেখা যায়। এদের দাঁত বেশ লম্বা ও তীক্ষ্ণ। এর বিষ সোজা
গিয়ে মস্তিষ্কে আঘাত করে এবং মাংস পেশীর টিস্যুসমূহকে ধ্বংস করে দেয়। এর বিষ থেকে
অনেক সময় বেঁচে গেলেও, রোগী কোমায় চলে যেতে পারে, কিডনিও নষ্ট হতে পারে।
২. স্থল তাইপেন (Inland
Taipan): (বৈজ্ঞানিক নাম Oxyuranus
microlepidotus)।পৃথিবীর বেশিরভাগ বিষধর সাপের আবাসভূমি অস্ট্রেলিয়া।
স্থল তাইপেনের নিবাসও এই দেশে। বিষধর হিসাবে স্থল তাইপেন শীর্ষস্থানীয়। এ সাপ
ক্ষুদ্র আঁশযুক্ত এবং হিংস্র সাপ হিসাবেও বেশ পরিচিত। তাইপেন প্রজাতির এই সাপের এক ছোবলে সর্বোচ্চ ১১০ মিলিগ্রাম বিষ নির্গত হয়।
গোখরা সাপের বিষের চেয়েও এর বিষ ৫০ গুণ বেশি বিষাক্ত। এই সাপের কাটা একজন প্রাপ্ত
বয়ষ্ক ব্যক্তি ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের মধ্যে মারা যায়। এর গায়ের রঙ মৌসুমের ওপর অনেকটা
নির্ভর করে। সাধারণত হলুদাভ-বাদামি কিংবা বাদামির সাথে জলপাই রঙের মিশেল থাকে।
৩. টাইগার সাপ (Tiger Snake): (বৈজ্ঞানিক নাম Notechis scutatus) । অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চল এই সাপের অভয়ারণ্য। এদের গায়ের রঙ একাধিক, কিন্তু গায়ে বাঘের মতো ডোরাকাটা দাগ অবশ্যই থাকে। এরা লম্বায় ৭ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এই সাপ হিংস নয়, হঠাৎ করেই ছোবল দিয়ে বসে না, প্রথমে মুখ হাঁ করে সাবধান করে। এদের বিষ রক্ত ও মস্তিষ্ককে অকার্যকর করে এবং শরীর প্যারালাইজ্ড করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। নদী বা সমুদ্র উপকূলীয় বাসস্থান এদের পছন্দ।
৪. কালো টাইগার সাপ (Black Tiger Snake): (বৈজ্ঞানিক নাম Notechis ater)। এরা দেড় মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে এদের বেশি পাওয়া যায়। নামে কালো হলেও এই সাপের গায়ের রঙ গাঢ় বাদামি, পেটের দিকটা উজ্জ্বল ধূসর থেকে কালচে বর্ণের। পাথুরে, শুষ্ক ও ঘাসে ছাওয়া জায়গা এদের পছন্দ। মাদি সাপ ২০ থেকে ৩০টি ডিম দেয়।
৫. চঞ্চু বিশিষ্ট সামুদ্রিক সাপ (Beaked sea snake): (বৈজ্ঞানিক নাম Enhydrina schistosa)। সামুদ্রিক সাপের অন্যতম বিষধর প্রজাতির নাম চঞ্চু বিশিষ্ট সমুদ্রিক সাপ। এই নাকের কারণেই তাদের এমন নাম। প্রাপ্ত বয়ষ্ক চঞ্চু বিশিষ্ট সমুদ্রিক সাপের গায়ের রঙ হয় গাঢ় ধূসর। আরব সাগর, পারস্য উপসাগর, সিচেল, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্র, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনি নিয়ে এই সাপের এলাকা। সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ ফুট পর্যন্ত লম্বা এই সাপ পানির ১০০ মিটার নিচে যেতে সক্ষম এবং ৫ ঘণ্টা ডুব দিয়ে থাকতে পারে। এক কামড়ে একটি সাপ দেড় মিলিগ্রাম বিষ নির্গত করতে সক্ষম।
৬. চাপুল আইল্যান্ডের কালো টাইগার সাপ (Chappell Island Black tiger snake): (বৈজ্ঞানিক নাম Notechis serventyi )। টাইগার সাপের অন্যতম প্রজাতি। অন্যান্য কালো টাইগার সাপের মতোই এদের দেহের গঠন। শুধু এদের মাথাটা দেখতে থেতলানো মনে হয়। পুরো শরীর ৬ ফুটেরও বেশি লম্বা হয়। জলপাই-বাদামি বর্ণের মিশেল, অনেকটা কালো বলে ভ্রম হয়। পেটের দিকটা উজ্জ্বল রঙের। এই উপকূলীয় সাপ বেশ শান্তশিষ্ট ও সহজে বশে আসে না।
৭. ডেথ অ্যাডার (Death Adder): (বৈজ্ঞানিক নাম Acanthophis antarcticus) এই সাপের শরীর ছোট ও চিকন, ১ মিটারের বেশি বড় হয় না । মাথাটা তীর আকৃতির। এরা গাছের আড়ালে শিকারের আশায় লুকিয়ে থাকে। বিরক্ত হলে কিংবা ভয় পেলে এরা পথচলতি মানুষদের আক্রমণ করে থাকে। দ্রুত গতির এই সাপ একটি শিকারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে। উষ্ণ আবহাওয়া ও পরিবেশ এদের বেশি পছন্দ। গ্রীষ্মে ১০ থেকে ৩০টি ডিম দেয় মাদি ডেথ অ্যাডার।
৩. টাইগার সাপ (Tiger Snake): (বৈজ্ঞানিক নাম Notechis scutatus) । অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণাঞ্চল এই সাপের অভয়ারণ্য। এদের গায়ের রঙ একাধিক, কিন্তু গায়ে বাঘের মতো ডোরাকাটা দাগ অবশ্যই থাকে। এরা লম্বায় ৭ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এই সাপ হিংস নয়, হঠাৎ করেই ছোবল দিয়ে বসে না, প্রথমে মুখ হাঁ করে সাবধান করে। এদের বিষ রক্ত ও মস্তিষ্ককে অকার্যকর করে এবং শরীর প্যারালাইজ্ড করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে। নদী বা সমুদ্র উপকূলীয় বাসস্থান এদের পছন্দ।
৪. কালো টাইগার সাপ (Black Tiger Snake): (বৈজ্ঞানিক নাম Notechis ater)। এরা দেড় মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলে এদের বেশি পাওয়া যায়। নামে কালো হলেও এই সাপের গায়ের রঙ গাঢ় বাদামি, পেটের দিকটা উজ্জ্বল ধূসর থেকে কালচে বর্ণের। পাথুরে, শুষ্ক ও ঘাসে ছাওয়া জায়গা এদের পছন্দ। মাদি সাপ ২০ থেকে ৩০টি ডিম দেয়।
৫. চঞ্চু বিশিষ্ট সামুদ্রিক সাপ (Beaked sea snake): (বৈজ্ঞানিক নাম Enhydrina schistosa)। সামুদ্রিক সাপের অন্যতম বিষধর প্রজাতির নাম চঞ্চু বিশিষ্ট সমুদ্রিক সাপ। এই নাকের কারণেই তাদের এমন নাম। প্রাপ্ত বয়ষ্ক চঞ্চু বিশিষ্ট সমুদ্রিক সাপের গায়ের রঙ হয় গাঢ় ধূসর। আরব সাগর, পারস্য উপসাগর, সিচেল, মাদাগাস্কার, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সমুদ্র, অস্ট্রেলিয়া ও নিউ গিনি নিয়ে এই সাপের এলাকা। সর্বোচ্চ সাড়ে ৪ ফুট পর্যন্ত লম্বা এই সাপ পানির ১০০ মিটার নিচে যেতে সক্ষম এবং ৫ ঘণ্টা ডুব দিয়ে থাকতে পারে। এক কামড়ে একটি সাপ দেড় মিলিগ্রাম বিষ নির্গত করতে সক্ষম।
৬. চাপুল আইল্যান্ডের কালো টাইগার সাপ (Chappell Island Black tiger snake): (বৈজ্ঞানিক নাম Notechis serventyi )। টাইগার সাপের অন্যতম প্রজাতি। অন্যান্য কালো টাইগার সাপের মতোই এদের দেহের গঠন। শুধু এদের মাথাটা দেখতে থেতলানো মনে হয়। পুরো শরীর ৬ ফুটেরও বেশি লম্বা হয়। জলপাই-বাদামি বর্ণের মিশেল, অনেকটা কালো বলে ভ্রম হয়। পেটের দিকটা উজ্জ্বল রঙের। এই উপকূলীয় সাপ বেশ শান্তশিষ্ট ও সহজে বশে আসে না।
৭. ডেথ অ্যাডার (Death Adder): (বৈজ্ঞানিক নাম Acanthophis antarcticus) এই সাপের শরীর ছোট ও চিকন, ১ মিটারের বেশি বড় হয় না । মাথাটা তীর আকৃতির। এরা গাছের আড়ালে শিকারের আশায় লুকিয়ে থাকে। বিরক্ত হলে কিংবা ভয় পেলে এরা পথচলতি মানুষদের আক্রমণ করে থাকে। দ্রুত গতির এই সাপ একটি শিকারের জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে। উষ্ণ আবহাওয়া ও পরিবেশ এদের বেশি পছন্দ। গ্রীষ্মে ১০ থেকে ৩০টি ডিম দেয় মাদি ডেথ অ্যাডার।
৮. পূর্বাঞ্চলীয় বাদামি রঙের সাপ (Eastern Brown Snake): (বৈজ্ঞানিক নাম Pseudonaja
textilis) অস্ট্রেলিয়ার পূর্বাঞ্চলের আদি নিবাস। এর আরেক উপ-প্রজাতির বসবাস আবার নিউ
গিনিতে। পূর্বাঞ্চলীয় বাদামি রঙের সাপের গায়ের রঙের ভিন্নতাও আছে। সাধারণত এর
শরীর বাদামি বর্ণের হয়। তাছাড়া কালো, কমলা, হলুদ, ধূসর
রঙেরও হয়। কম বয়সীদের মাথা কালো থাকে। এর বিষ মস্তিষ্কের স্নায়ুতন্ত্র ধ্বংস এবং
শরীরের রক্ত জমাট করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
৯. দাগি বাদামি রঙের সাপ (Spotted Brown Snake): অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের
অধিবাসী এই সাপের বৈজ্ঞানিক নাম Pseudonaja affinis। স্থানীয়
ভাবে দিউজাইৎ নামে পরিচিত এরা লম্বায় ২ মিটার পর্যন্ত হয়। গায়ের রঙ সাধারণত বাদামি
রঙের, ধূসর ও সুবজও হতে পারে। গায়ে কালো
কালো দাগ বা ছোপ থাকে বলেই এদের দাগি বাদামি রঙের সাপ বলা হয়। অক্টোবর ও নভেম্বর
মাস এদের মিলনের মৌসুম, ফলে এই সময়টিতেই এরা হিংস্র থাকে,
অন্যান্য সময় এরা সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করে না। এদের বিষও
মস্তিষ্ক ও রক্তকে নিশানা বানায়।
১০. গোয়ার্ডার (Gwardar): (বৈজ্ঞানিক নাম Pseudonaja nuchalis)।গোয়ার্ডারের আরেক নাম পশ্চিমা বাদামি রঙের সাপ। খুবই দুধর্ষ। সাধারণত একটি প্রাপ্ত বয়ষ্ক গোয়ার্ডারের গায়ের বর্ণ হয় বাদামি। জলপাই বর্ণও সাধারণ। পুরো অস্ট্রেলিয়া জুড়েই এদের বসবাস। একটি গোয়ার্ডার এক ছোবলে প্রায় ৩ মিলিগ্রাম বিষ ছাড়তে পারে। এদের বিষও একই সাথে রক্ত ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
১০. গোয়ার্ডার (Gwardar): (বৈজ্ঞানিক নাম Pseudonaja nuchalis)।গোয়ার্ডারের আরেক নাম পশ্চিমা বাদামি রঙের সাপ। খুবই দুধর্ষ। সাধারণত একটি প্রাপ্ত বয়ষ্ক গোয়ার্ডারের গায়ের বর্ণ হয় বাদামি। জলপাই বর্ণও সাধারণ। পুরো অস্ট্রেলিয়া জুড়েই এদের বসবাস। একটি গোয়ার্ডার এক ছোবলে প্রায় ৩ মিলিগ্রাম বিষ ছাড়তে পারে। এদের বিষও একই সাথে রক্ত ও মস্তিষ্কের কার্যকারিতা নষ্ট করে দেয়ার ক্ষমতা রাখে।
১১. ব্ল্যাক মাম্বা (ইংরেজি Black Mamba) (Dendroaspis polylepis), এলাপিড
পরিবারভুক্ত এক প্রজাতির বিষধর সাপ। এটি আফ্রিকার সবচেয়ে বিপজ্জনক ও ভয়ংকর সাপ।
আফ্রিকার ত্রাস ব্ল্যাক মাম্বা পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগামী সাপ হিসেবে
পরিচিত। আফ্রিকার একটি বড় অঞ্চলজুড়ে এই সাপের বিস্তৃতি লক্ষ করা যায়। ব্ল্যাক
মাম্বা দেখা যায় ইথিওপিয়া, কেনিয়া, বতসোয়ানা, উগান্ডা, জাম্বিয়া,
জিম্বাবুয়ে, অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া, মালাউই, মোজাম্বিক,
সোয়াজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা,
এবং কঙ্গোতে। সাভানা অঞ্চল, কাষ্ঠল
বণাঞ্চল, এবং শিলাময় অঞ্চলে এদের দেখা যায়। এরা নিজেরা
হুমকির সম্মুখীন হলে আক্রমণাত্মক হয়ে যায়, এবং মরণঘাতী
দংশন করতে দ্বিধা করে না।
আকৃতি দিক থেকে ব্ল্যাক মাম্বা আফ্রিকার সর্ব বৃহৎ, এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিষধর সাপ হিসেবে চিহ্নিত।
একটি পূর্ণ বয়স্ক ব্ল্যাক মাম্বার দৈর্ঘ গড়ে প্রায় ২.৫ মিটার এবং সর্বোচ্চ
ধৈর্ঘ ৪.৩ মিটার। ব্ল্যাক মাম্বা থেকে বড় পৃথিবীর একমাত্র প্রজাতির বিষধর সাপটির
নাম শঙ্খচূড় বা কিং কোবরা, যা দক্ষিণ এশীয় অঞ্চলের সাপ।
আর বনাঞ্চলে দেখতে পাওয়া এই সাপটির অন্যতম একটি এন্ডেমিক বাসস্থান হচ্ছে
সুন্দরবন। অন্যান্য সরীসৃপের মতোই ব্ল্যাক মাম্বা শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের
জন্য বাহ্যিক তাপের ওপর নির্ভরশীল। ব্ল্যাক মাম্বা নামটি একটি ভুল পথ
নির্দেশনামূলক কারণ, সাপটির ত্বকের সত্যিকারের রং কালো
নয়, বরং গাঢ় ধূসর জলপাই রংয়ের। যদিও জীবনের প্রথমভাগে
এটিও থাকে না। তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই সাপের ত্বকের রং গাঢ় হতে থাকে। এদের
নামের সাথে ব্ল্যাক বা কালো যুক্ত হওয়ার কারণ হিসেবে ধারণা করা হয় এদের কুচকুচে
কালো মুখকে। এদের মুখের ভেতরটা পুরোটা গাঢ় কালো রংয়ের। ব্ল্যাক মাম্বা পৃথিবীর
সবচেয়ে দ্রুতগামী সাপ হিসেবে চিহ্নিত। দাবী করা হয় এদের কিছু প্রজাতি ঘন্টায়
১৯.৫ কিলোমিটার বেগে চলাচল করতে পারে।
১২. কেউটে সাপ বা কেউটে (ইংরেজি: Monocled Cobra) হচ্ছে
এলাপিডি পরিবারভুক্ত এক ধরনের ফণাধর বিষধর সাপ যা গোখরোর খুবই নিকট আত্মীয়।
ইংরেজি "monocled" নামের অর্থ "এক চশমা ওয়ালা",
যা কেউটের মাথার পেছনভাগের আংটি বা চক্র চিহ্নকে নির্দেশ করে। গোখরোর
ফণায় যেমন গরুর ক্ষুরের মত বা দুই চক্ষু চশমার মত ছাপ থাকে তেমন কেউটের ফণার
পিছনে গোল চক্র আকৃতির ছাপকে এক চক্ষু চশমা বলে বর্ণণা করা হয়ে থাকে। কেউটে
শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ কালকূট থেকে।
স্ত্রী কেউটের একসাথে ২৫-৪৫টি পর্যন্ত ডিম পাড়ে। ডিম
ফুটে বাচ্চা বের হওয়ার সাথে সাথেই কেউটের বাচ্চারা সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে চলাফেরা
করতে ও শিকার করতে পারে। বাচ্চা কেউটের বিষ পূর্ণবয়স্ক কেউটের মতোই ভয়ঙ্কর।
কেউটের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী নিউরোটক্সিন ও সাইটোটক্সিন সমৃদ্ধ। দংশনের পর
প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে প্রায় সময়ই আক্রান্ত স্থানে ফুলে ওঠে ও তীব্র ব্যাথার সৃষ্টি
করে। যেসকল স্থানে কেউটের বিস্তৃতি দেখা যায়, সেসব স্থানে এই সাপ অনেক মৃত্যুর কারণ।
১৩. শঙ্খচূড় (ইংরেজি: King
Cobra): শঙ্খচূড় (বৈজ্ঞানিক নাম Ophiophagus hannah)
হচ্ছে পৃথিবীর সর্ববৃহৎ বিষধর সাপ। যার দৈর্ঘ্য সর্বোচ্চ ৫.৬
মিটার (১৮.৫ ফুট) পর্যন্ত হতে পারে। এটি মূলত সম্পূর্ণ দক্ষিণ এশিয়ার বনাঞ্চল
জুড়ে দেখা যায়। ইংরেজি নামে কোবরা শব্দটি থাকলেও এটি কোবরা বা গোখরা নয়। এটি সম্পূর্ণ
আলাদা গণের একটি সাপ। এই সাপের আকার পর্যবেক্ষণ এবং ফণার পেছনের অংশ পর্যবেক্ষণের
মাধ্যমে গোখরার সাথে এটির পার্থক্য খুব সহজেই নির্ণয় করা সম্ভব। গোখরার তুলনায়
শঙ্খচূড় আকৃতিতে যথেষ্ট পরিমাণ বড়। এর ফণার পেছনে প্রচলিত গোখরা বা খড়মপায়া
গোখরার মতো চশমা বা গোক্ষুর আকৃতি চিহ্ন থাকে না। শঙ্খচূড়ের গণের নাম হচ্ছে Ophiophagus,
যার আক্ষরিক অর্থ "সাপ খাদক", এবং প্রাথমিকভাবে এটি অন্যান্য সাপ ভক্ষণ করেই তার খাদ্য চাহিদা
মেটায়। যেসকল সাপ এটি ভক্ষণ করে তার মধ্যে আছে র্যাট সাপ, এবং ছোট আকৃতির অজগর। এছাড়াও অন্যান্য বিষধর সাপও এটি ভক্ষণ করে,
যেমন: ক্রেইট, গোখরা, এবং নিজ প্রজাতিভুক্ত অন্যান্য ছোট সাপ। এই সাপের বিষ মূলত নিউরোটক্সিক,
অর্থাৎ এটির বিষ আক্রান্ত প্রাণীর স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে।
শঙ্খচূড়ের একটি সাধারণ দংশন-ই যেকোনো মানুষকে মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এর কামড়ের
ফলে সৃষ্ট মৃত্যু হার প্রায় ৭৫%। বাংলাদেশের সুন্দরবনের গভীরে এই সাপ দেখতে
পাওয়া যায়।
ডিম পাড়ার আগে স্ত্রী শঙ্খচূড় তা শরীর পাকিয়ে
কুণ্ডুলী তৈরি করে, এবং তা মৃত
পাতা ব্যবহার করে উঁচু ঢিপির মতো তৈরি করেন। পরবর্তীকালে সেখানে ২০ থেকে ৪০টির মতো
ডিম পাড়া হয়। কুন্ডুলী পাকানো দেহটি ইউকিউবেটরের মতো কাজ করে। বাচ্চা ফোটার আগ
পর্যন্ত শঙ্খচূড় তাঁর ঢিপিটিকে বিরামহীনভাবে পাহার দিতে থাকে, এবং কোনো প্রাণী যেন কাছে আসতে না পারে, সেদিকে
লক্ষ্য রাখে।
ঢিপির মধ্যে প্রায় ২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়
ডিমগুলোকে তা দেওয়া হয়। বাচ্চা ফোটার পর তা নিজে নিজেই ডিমের খোলস ভেঙে বেরিয়ে
যায় এবং নিজেই নিজের শিকার খুঁজতে থাকে, এজন্য মাকে তাঁর নিজের বাচ্চা ভক্ষণ করতে হয় না। শিশু শঙ্খচূড়ের
দৈর্ঘ হয় প্রায় ৫৫ সেন্টিমিটার এবং এদের বিষ প্রাপ্তবয়স্কদের মতোই মৃত্যুঘাতী।
শঙ্খচূড় এলাপিডি পরিবারভুক্ত একটি সাপ। ইউরোপ ও
অ্যান্টার্কটিকা ব্যতীত এই পরিবারে সারা পৃথিবীতে প্রায় ২০০-এর বেশি প্রজাতি দেখা
যায়। এদের সবগুলোই বিষধর, এবং এদের
সবারই ছোট, স্থায়ী বিষদাঁত রয়েছে। কিন্তু অঞ্চলভেদে
এদের মধ্যে বাসস্থান, আচরণ, এবং বর্ণ
ও গঠনগত অনেক পার্থক্য দেখা যায়। এলাপিডি পরিবারভুক্ত চারটি খুবই প্রচলিত সাপ
হচ্ছে কোরাল সাপ, ডেথ অ্যাডার, ব্ল্যাক
মাম্বা, এবং শঙ্খচূড়।
১৪. চন্দ্রবোড়া (Daboia) : চন্দ্রবোড়া ভাইপারিডি পরিবারভুক্ত একটি অন্যতম বিষধর সাপ। এই সাপ
সবচেয়ে বিষাক্ত না হলেও এর অসহিষ্ণু ব্যবহার ও লম্বা বহর্গামী (Solenoglyphous)
বিষদাঁতের জন্য অনেক বেশি লোক দংশিত হন। বিষক্রিয়ায় রক্ত জমা
বন্ধ হয়ে যায়। ফলে অত্যধিক রক্তক্ষরণে অনেক দীর্ঘ যন্ত্রণার পর মৃত্য হতে পারে।
তবে অধিকাংশ ক্ষেত্র ভয়ে হার্ট অ্যাটাক মৃত্যুর কারণ। লুপাস
অ্যান্টিকোয়াগুল্যান্ট নামে গর্ভপাতকারী এক রোগ নির্ধারণের পরীক্ষায় (ডাইলিউট
রাসেল ভাইপার ভেনম টাইম টেস্ট) চন্দ্রবোড়ার বিষ ব্যবহৃত হয়।
মনে রাখতে হবে, সাপ প্রকৃতপক্ষে মানুষ শিকার করে না এবং সাপকে কোনো কারণে উত্তেজিত করা
না হলে বা সাপ আঘাতগ্রস্থ না হলে তারা মানুষের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলে। ব্যাতিক্রম
ছাড়া কনস্ট্রিক্টর ও বিষহীন সাপগুলো মানুষের জন্য কোনো হুমকি নয়। বিষহীন সাপের
কামড় মানুষের জন্য ক্ষতিকর নয়, কারণ তাদের দাঁত মূলত কোনো
কিছু আঁকড়ে ধরা ও ধরে রাখার মতো। বর্ষার জল মাটির গর্তে ঢুকলে বেঁচে থাকার জন্য
সাপ বের হয়ে আসে এবং মানুষকে দংশন করতে পারে। বিষধর সাপ দংশনের লক্ষণগুলো হচ্ছে বমি, মাথাঘোরা, কামড়ানোর স্খানে ফোলা,
রক্তচাপ কমে যাওয়া, চোখে ডাবল দেখা,
ঘাড়ের মাংসপেশি অবশ হয়ে ঘাড় পেছনের দিকে হেলে পড়া। এমন হলে
রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে। হাসপাতালে নেয়ার আগে আক্রান্ত জায়গা
নাড়াচাড়া করা যাবে না। হাত বা পায়ে কামড় দিলে হাতের পেছনের দিকে কাঠ বা বাঁশের
চটা বা শক্ত জাতীয় কিছু জিনিস রেখে শাড়ির পাড় বা পরিষ্কার কাপড় দিয়ে
স্প্লিন্ট তৈরি করে বেঁধে দিতে হবে। আক্রান্ত জায়গা কাপড় দিয়ে মুড়িয়ে দিতে
হবে। লক্ষ রাখবেন বেশি টাইট করে বাঁধা যাবে না। বাঁধলে রক্ত সরবরাহ ব্যাহত হয়ে
গ্যাংগ্রিন হতে পারে। বিষ শিরা দিয়ে নয়, লসিকাগ্রন্থি দিয়ে
শরীরে ছড়ায়। সাপে কাটা রোগীকে ওঝা-বৈদ্য বা কবিরাজ না দেখিয়ে বিজ্ঞানসম্মত আধুনিক
চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান। আক্রান্ত জায়গায় কাঁচা ডিম, চুন, গোবর কিছুই লাগাবেন না।
এতে সেল্যুলাইটিস বা ইনফেকশন হয়ে রোগীর জীবনহানি ঘটতে পারে।
কৃতজ্ঞতা : উইকিপিডিয়া এবং কিছু সাইট
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন