শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০১৩

ওপার থেকে আলাপ ( ২য় পর্ব)/মনোবর

                          লিখেছেন : মনোবর
অনেক মেঘ তরল হলে তবেই তো কয়েক ফোঁটা বৃষ্টি হয়। কত যে মেঘের স্টক থাকে আকাশে! সকাল থেকে এত বৃষ্টি হবার পরেও বিরামহীন ভাবে ফোঁটা ঝরছিল। জানলা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বাইরের দৃশ্য দেখে বেশ সময় কাটান যায়। রাস্তায় লোক চলাচল খুবই কম। উল্টোদিকের প্রায় জানালাই ভেজানো। ওদের হয়ত বৃষ্টি ভাললাগেনা বা দেখার ফুরসৎ নেই।
কাল মনে মনে অনেক প্রশ্ন করেও কোন উত্তর পাইনি। কোন তাৎপর্য্যপূর্ণ সংলাপও কানে আসেনি। ‘তুমি চুপচাপ ঘরে বসে কি কর? বাইরে তো বিশেষ যাওনা।’ বুড়ীমা জানতে চায়। ‘পড়াশুনো করো বোধহয়!’ আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানাই। ‘ কি এত পড়?’ পরবর্তী প্রশ্ন। ‘খবরের কাগজ পড়ি, বই টই পড়ি।’ বলেই আমি পাশ কাটিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করি। কিন্তু বের হবার পরেও প্রশ্ন চলতে থাকে। এবং হিতকারী উপদেশ। ‘ মাঝে মাঝে বাইরে ঘুরে আসবে, তাতে মনটা ভাল থাকবে।’ দরজাটা বন্ধ করা গেলনা। দরজার পাশেই উনি দাঁড়িয়ে। বন্ধ করলে খারাপ দেখায়। ‘এই ঘরে আমার আগে কে থাকতো?’ দুম করে প্রশ্নটা ছুঁড়ে আমি বুড়ীমার চোখমুখ লক্ষ্য করি। ওকে বেশ অপ্রস্তুত দেখাল। একটু যেন নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, ‘ কে আর থাকবে বাবা! আমার তো একটা ঘর হলেই চলে যায়।’ এর পরেই যেন কি একটা জরুরী কাজ মনে পড়েছে এই ভাব দেখিয়ে উনি চলে যাবার ভঙ্গী করতেই আমি বলে বসি, ‘ প্রতিদিন ঘুমোনর সময় খাটটা হঠাৎ কেমন দুলে ওঠে কেন বলতে পারেন? আপনার ঘরেও কি এমন হয়?’ বুড়িমা থমকে গিয়ে অবাক হয়ে ঘুরে আমার দিকে তাকায়। ‘সে আবার কি কথা! ও তোমার মনের ভুল বাবা, অকারণে খাট দুলতে যাবে কেন?’ আমি গম্ভীর হয়ে বলি, ‘দোলে। মনের ভুল নয়। তাছাড়া আরো কিছু কিছু ব্যাপার ঘটছে। আচ্ছা! আপনি একদিন এই ঘরে থাকুন না আর আমি আপনার ঘরে দেখতে পাবেন দোলে কি না।’ আমার কথায় বুড়িমা যেন আৎকে ওঠে। ‘না, বাবা, আমার নিজের ঘর ছাড়া অন্য কোথাও ঘুম হয়না। তা ছাড়া তুমি কি বলছ আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।’ এই সময় জল দেবার লোকটা ডাকাডাকি শুরু করে ফলে কথাবার্তা আর এগোয় না।
গতরাত থেকেই অঝোর ধারায় বৃষ্টি নেমে চলেছে। অন্ধকারে বৃষ্টির শব্দ শুনতে শুনতে মন একাগ্র করে প্রশ্ন করলাম, ‘তুমি ঘরে না বাইরে?’ কোন প্রতিক্রিয়া পেলাম না। মনে মনে আরও কিছু কথা বললাম কিন্তু প্রত্যুত্তর পেলাম না। ঘুম নামার সময় টের পেলাম খাটটা যথারীতি দোল খেয়ে উঠল। ঐ সময় বুঝতে পারলেও জাগতে পারিনা। ব্যাপারটা কিন্তু স্মৃতিতে ঠিকই থেকে যায়।
                  এমন বৃষ্টির দিনে বরং কিছু লেখার চেষ্টা করা যাক। খাতা আর কলম নিয়ে উপুড় হয়ে শুয়ে পড়লাম। টুকরো কথা, রোজনামচা এ খাতায় অনেক কিছুই লেখা রয়েছে। সময় সময় পড়তে ভালই লাগে। কিন্তু কি লেখা যায়?
                     ওদিকে নীচে মাঝবয়সী এক মহিলা তার বর্ষাতি পরা বালিকা কন্যা নিয়ে অদ্ভূদ ভঙ্গীতে রাস্তা পার হচ্ছে। মেঘলা দিনের বর্ষাভেজা প্রকৃতির দৃশ্যপটে এইসব যাওয়া আসা মনকে বেশ সঞ্জীবিত করে। ওঘর থেকে বুড়ীমা জানতে চাইল আমি সেদিন বেরোব কিনা। শোনামাত্র আমি ‘না’ বলে দিলাম। পরের জিজ্ঞাসা তাহলে আমি চা খাব কিনাআমি জোরে সম্মতি জানালাম। তারপর চিৎ হয়ে শুয়ে মন একাগ্র করে প্রশ্ন রাখলাম, ‘তুমি এখন কোথায়?’ প্রশ্নটা করে নিজেই মনে মনে হাসলাম। অন্য কেউ শুনলেও হাসতো। কাকে প্রশ্ন করছি আমি? একটা আযৌক্তিক বিশ্বাস কে না অবাস্তব সম্ভাবনা কে? আলো আঁধারির জগতে অনেক অসম্ভব সম্ভব হলেও এই দিনের আলোয় তা হাস্যকর বলেই মনে হয়। একটু পরেই বুড়ীমা চা নিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানালেন। অতএব উঠতে হল। ঘড়িতে দেখলাম দশটা পনের বাজে। দরজা খুলে ওঘরে গিয়ে চা নিয়ে এলাম। এবার লেখার চেষ্টা করা যেতে পারে। চা টা সুবিধামত জায়গায় রেখে খাতার দিকে তাকাতেই যেন ঘরের উপর ভীষণ জোরে বজ্রপাত হল! বড় বড় করে খাতার উপর লেখা , ‘আমি এখন এখানে।’

                                       (ক্রমশঃ)

কোন মন্তব্য নেই: