লিখেছেন : মনোবর
সে সময় ক’দিন ধরে একটানা বৃষ্টি হল। ঘোলা আকাশের নীচে মুখগোমড়া প্রকৃতির সামান্যই এই জানালা থেকে দেখা যায়। আমগাছে, উল্টোদিকের বাড়ির কার্নিশে বসে থাকা কাক, শালিকদেরও মন খারাপ। ককুরগুলো সুবিধামত কোন জায়গাই পাচ্ছেনা। মাঝে মাঝেই ওদের অসহায় কেঁউ কেঁউ শোনা যাচ্ছে। জানালা খুলে দিলেও ঘরে আলো ফুটছে না। আকাশ মাঝে মাঝে গম্ভীর শব্দে জানাচ্ছে এখনও অনেক কিছু বলার বাকি আছে তার। এই ঘরটার রহস্যও ক্রমে ভাবিয়ে তুলেছে। এক রাত্রে যেটা হল সেটা ভাবনার ব্যাপার! টেবিলের উপরে একটু আগেই যে লাইটার রাখলাম সেটা কোথাও নেই। উঠে গা ঝাড়া দিলাম, জামার পকেট, প্যান্টের পকেট, টেবিলের নীচ থেকে ঘরের মেঝে কোথাও সে লাইটার নেই। তবে কি আমি লাইটার কাউকে দিয়ে ফেরত নিতে ভুলে গেছি! কিন্তু একটু আগেই যে ধূমপান করলাম! ঘরে তো আর কোন কিছু জ্বালাবার মত নেই। ল্যাপটপের সামনে বসে একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ একটা কিছু পড়বার শব্দ শুনে তন্দ্রা ছুটে গেল। এদিক ওদিক চেয়ে আবিষ্কার করলাম মেঝের উপর ওটা পড়ে আছে। হারান জিনিষ পেয়েও খুশীর চেয়ে অবাকই বেশী হলাম। ওটা ঠিক কোথা থেকে পড়ল অনেক ভেবেও বার করতে পারিনি।
সে সময় ক’দিন ধরে একটানা বৃষ্টি হল। ঘোলা আকাশের নীচে মুখগোমড়া প্রকৃতির সামান্যই এই জানালা থেকে দেখা যায়। আমগাছে, উল্টোদিকের বাড়ির কার্নিশে বসে থাকা কাক, শালিকদেরও মন খারাপ। ককুরগুলো সুবিধামত কোন জায়গাই পাচ্ছেনা। মাঝে মাঝেই ওদের অসহায় কেঁউ কেঁউ শোনা যাচ্ছে। জানালা খুলে দিলেও ঘরে আলো ফুটছে না। আকাশ মাঝে মাঝে গম্ভীর শব্দে জানাচ্ছে এখনও অনেক কিছু বলার বাকি আছে তার। এই ঘরটার রহস্যও ক্রমে ভাবিয়ে তুলেছে। এক রাত্রে যেটা হল সেটা ভাবনার ব্যাপার! টেবিলের উপরে একটু আগেই যে লাইটার রাখলাম সেটা কোথাও নেই। উঠে গা ঝাড়া দিলাম, জামার পকেট, প্যান্টের পকেট, টেবিলের নীচ থেকে ঘরের মেঝে কোথাও সে লাইটার নেই। তবে কি আমি লাইটার কাউকে দিয়ে ফেরত নিতে ভুলে গেছি! কিন্তু একটু আগেই যে ধূমপান করলাম! ঘরে তো আর কোন কিছু জ্বালাবার মত নেই। ল্যাপটপের সামনে বসে একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ একটা কিছু পড়বার শব্দ শুনে তন্দ্রা ছুটে গেল। এদিক ওদিক চেয়ে আবিষ্কার করলাম মেঝের উপর ওটা পড়ে আছে। হারান জিনিষ পেয়েও খুশীর চেয়ে অবাকই বেশী হলাম। ওটা ঠিক কোথা থেকে পড়ল অনেক ভেবেও বার করতে পারিনি।
দ্বিতীয় ঘটনা হল মাথার কাছে জানালা খুলে শোবার
অভ্যাস কোনকালেই ছিলনা। এই ঘরে প্রথমদিন জানালাটা দেখে ঠিক করলাম শোবার সময় এটা
অবশ্যই বন্ধ করব।
আসলে যেটা ঘটল হোটেল থেকে খেয়ে এসে একটু শুয়ে এটা ওটা ভাবছিলাম। তারপর কখন যে
ঘুমোলাম মনে করতে পারছিনা। সকালে কাকের ডাকে ঘুম থেকে উঠে দেখি একটা বড় সড় কাক
আমগাছ থেকে ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমাকেই দেখছে আর মধুর কন্ঠে আলাপ করছে। ওই কাকটা সেই
থেকে আমার চেনা। তার পরের রাত্রেও হুবহু একই ব্যাপার ঘটল। কিন্তু এভাবে জানালা
খুলে শোয়া মোটেই নিরাপদ নয়। তৃতীয় রাত্রে এসেই মশারি খাটালাম। জানালাও বন্ধ করে
দিলাম। শুয়ে দেখি কিছুতেই ঘুম আসছেনা। আমার তো ঘুম নিয়ে কোন সমস্যা ছিলনা। শেষে
যেই জানালাটা খুলে দিলাম অমনি চোখে ঘুম নামল। একবার মনে হল খাটটা একটা ঝাঁকুনি
খেল। কিন্তু ঘুম আর ছাড়াতে পারলাম না। প্রত্যেকদিন রাতে ঐ ব্যাপার হয়। ঘুমের মধ্যে
খাটটা একবার দুলে ওঠে তারপর আর কিছু হয়না বলে ঐ নিয়ে আর মাথা ঘামাই না। আরো দু
একবার জানালা বন্ধ করবার চেষ্টা করে যখন একই ব্যাপার ঘটল তখন থেকে আর বন্ধ করি না।
বৃষ্টি হলেও কিছুটা খুলেই রাখি। শীত পড়েছিল খুব। কিন্তু তবুও জানালার কিছুটা খুলেই
রাখতে হল।
অনেক রাতে ঘরের দেয়ালে আমগাছের ছায়া দুলতে থাকে।
ঘুমের মধ্যে হঠাৎ কারো কথা শুনি। এরকম তো সবারই হয় তাইনা! কিন্তু তৃতীয় যে ঘটনা
ঘটেছে সেটা কাউকে বললে হাসাহাসি শুরু করবে। ল্যাপটপে কিছু ডাউনলোড চাপিয়ে অনেক
রাতে মশারি খাটাই। তারপর বাথরুম থেকে এসে একটা ধূমপান করি। এরপর শুয়ে পড়ি। সেদিন
ঘুমের মধ্যে একেবারে কানের কাছে রিনরিনে মেয়েলী গলায় কেউ বলে উঠল ‘যত সব আজগুবী!’
ঘুম ভেঙ্গে দেখি ল্যাপটপের মনিটরে একটা অ্যানিমেশন ভিডিও চলছে। কি করে এটা হতে
পারে। আপনা আপনি মনিটর অন হলেও ভিডিও তো চলতে পারেনা। আর ঐ ব্যাঙ্গ করে কথাটা কে
বলল! অনেক ভেবেও কোন সুরাহা পেলাম না। এই ভাবনা অন্য সব ভাবনা ভুলিয়ে দিয়েছে।
বিরক্ত হয়ে একদিন জানালা বন্ধ রাখলাম। কিছুক্ষণ
পরেই নেট কেটে গেল। পরদিন প্রোভাইডার এসে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বললেন ল্যান কার্ড
ড্যামেজড। তার কথামত একটা রাউটার কেনা হল। তাতেও কানেকশন হলনা। তার ল্যাপটপে হলেও
আমারটায় হলনা। আর এক বিশেষজ্ঞ এলেন। কিন্তু কারন ধরতে পারলেন না। বিরক্ত হয়ে ঘরে
তালা মেরে দেশের বাড়ী চলে গেলুম। দিন দশেক পরে এসে ব্যাজার মনে ঝাঁট-পাট দিয়ে
হাত-মুখ ধুয়ে বিশ্রাম করতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুমের মধ্যেই শুনতে পেলাম বালিকা
কন্ঠে কেউ দূর থেকে চেঁচিয়ে বলছে, ‘এবার চালাও হবে।’ ঘুম ভেঙ্গে ভাবলাম নীচে কেউ
বন্ধু টন্ধুদের হয়ত বলে থাকবে। কিন্তু ঘটনা পরম্পরা যেই মনে উঠল তখন ভাবলাম দেখি
না একবার স্টার্ট করে। নিজে নিজে সব প্লাগ-ইন করে চালাতেই দিব্যি নেট কানেক্টেড
হয়ে গেল। প্রোভাইডারকে ফোন করতে সেও অবাক।
আর কোন সন্দেহ নেই। এটা জানলা বন্ধ রাখার
ভোগান্তি। লক্ষ্য করছি এই ঘরে ঢুকলেই একটা শান্তি অনুভব করি। প্রথম দিকের ভয়ভাবটা
কেটে গেছে। একদিন আস্তে আস্তে কয়েকবার জিজ্ঞাসা করলাম। ‘ কে তুমি? দাওনা তোমার
পরিচয়।’ কিন্ত কোন সাড়া পাইনি। পরদিন আবার। তবে এবার মনে মনে বললাম। বার বার বলতেই
থাকলাম। সেদিন ঘুমের মধ্যে চমকে উঠলাম খুব কাছ থেকে কেউ বলে উঠল, ‘না, দেবনা।’
(ক্রমশঃ)

কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন