লিখেছেন : মনোবর
‘মনা এইটা বেঁধে দিই তোর হাতে। বিপদ বালাই দূরে থাকবে।’ এই বলে মা আমার হাতে একটা বিপত্তারিনীর ডোর বাঁধবে। আমি কব্জিতে বাঁধতে বললাম। হাতটা এবার বেশ মস্তান মস্তান লাগছে। আয়নায় নিজেকে দেখে খুব একটা পছন্দ হলনা। চেহারাটা আর একটু বলশালী হওয়া দরকার। রুদ্রর সঙ্গে একবার কমলা ক্লাবে গিয়েছিলাম। ছেলেরা সব ব্যায়াম করছে। তিন বছর ব্যায়াম করে রুদ্রর যা চেহারা হয়েছে! এই ছাতি! হাতের গুলি গুল্লু গুল্লু হয়ে যেন ফেটে যায় আরকি! আমার চেহারা দেখে ব্যায়ামকারীরা ইচ্ছা করে একটু শরীর জাহির করছে। এক টিপ করে খৈনি নেয় আর এক এক রকমের ব্যায়াম শেষ করে। অত কষ্ট কি আর করা যায়! আমি আর যেতে না চাওয়ায় রুদ্র একটু হতাশ হয়েছিল। দুদিন ধরে মা কি একটা বলবে বলবে ভাব দেখাচ্ছে কিন্তু বলছে আর না। দুপুরে খাওয়ার পরে মা আমার ঘরে এসে বসল। ‘তোর এবার একটা কিছু হলে আমি নিশ্চিন্ত হই। কে জানে কবে হবে!’ আমি একটু গম্ভীর হয়ে বলি, ‘ একটা জ্যোতিষী তো আবার অন্য কথা শোনালো।’ ব্যাস! মাকে এবার সব খুলে না বললে আর ঊঠবে না। শেষে বললুম, ‘জ্যোতিষীটা কে জান? খুব বড় তান্ত্রিক। কামাখ্যা মন্দিরে ১০ বছর ধরে তন্ত্রসাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছে। উড়ান জানে, বশীকরণ জানে। আমাবস্যার রাতে একটা গাছে চেপে সেই গাছ উড়িয়ে নিয়ে যেথা ইচ্ছা সেথা চলে যায়।’ মার ছোখ ছানাবড়া করার জন্য আর কি কি বলাযায় তাই ভাবছি এমন সময় মা বলে, ‘তবে আর কি! পড়াশুনা বন্ধ করে এবার তবে গাছ ওড়ানো শেখ।’ তার পর একটু গম্ভীর হয়ে মা বলল, ‘তুই নাকি কার সঙ্গে দেখা করতে যাস? কে মেয়েটা?’ এ তো
দেখছি শক্তিশেল! মেঘের আড়াল থেকে কে আমার সঙ্গে যুদ্ধটা করছে চিন্তায় সেইটা ধরার চেষ্টা করছি সেই সময় মা আবার বলে, ‘ তুমি ঘোর ডালে ডালে আমি ঘুরি পাতায় পাতায়!’ যতদূর গাম্ভীর্য দেখান সম্ভব ততটাই দেখাবার চেষ্টা করি। ‘আমি প্রয়োজন ছাড়া কোন কাজ করিনা। বুঝলে? ওর বাবা হচ্ছে চাকরী দেওয়া মন্ত্রীর আপন ভাগনে। আমি একটা ভাল চাকরীর জন্য চেষ্টা করছি তো! দেখি ওকে ধরে যদি কাজ হয়।’ মা কথাটা শুনেও নির্বিকার রইল। ‘অতশত আমি জানিনা। লোকে কথা শোনাবে এমন কাজ যদি করিস তাহলে ঠাঁই হবেনা এইটা জেনে রাখ।’ না তাকিয়েই বুঝতে পারলুম অস্ত্রটা নিক্ষেপ করে মা আমার হাবভাব লক্ষ্য করে প্রতিক্রিয়াটা বোঝবার চেষ্টা করছে। আমি একটু চুপকরে থকে বললুম, ‘জ্যোতিষী বলেছে আমি যদি জঙ্গলেও যাই আমার খাবার কষ্ট পরার কষ্ট হবেনা, অতএব ওই ভয় তুমি আমাকে দেখাবে না। অসুবিধা হলে আমি কালই বাড়ী ছেড়ে হাঁটা মারব।’ বলে চেয়ে দেখি মায়ের প্রায় কাঁদ কাঁদ অবস্থা। ‘যারা পরের কথায় নেচে বেড়ায় তাদের সঙ্গে আমি থাকতেও চাইনা।’ মা এইবার স্ট্যান্স বদলায়। ‘আমরা পরের কথায় চলি আর তুমি কার কথায় চল?’ বলেই মা হন হন করে ঘর থেকে বেরিয়ে হাঁটা দেয়।
‘মনা এইটা বেঁধে দিই তোর হাতে। বিপদ বালাই দূরে থাকবে।’ এই বলে মা আমার হাতে একটা বিপত্তারিনীর ডোর বাঁধবে। আমি কব্জিতে বাঁধতে বললাম। হাতটা এবার বেশ মস্তান মস্তান লাগছে। আয়নায় নিজেকে দেখে খুব একটা পছন্দ হলনা। চেহারাটা আর একটু বলশালী হওয়া দরকার। রুদ্রর সঙ্গে একবার কমলা ক্লাবে গিয়েছিলাম। ছেলেরা সব ব্যায়াম করছে। তিন বছর ব্যায়াম করে রুদ্রর যা চেহারা হয়েছে! এই ছাতি! হাতের গুলি গুল্লু গুল্লু হয়ে যেন ফেটে যায় আরকি! আমার চেহারা দেখে ব্যায়ামকারীরা ইচ্ছা করে একটু শরীর জাহির করছে। এক টিপ করে খৈনি নেয় আর এক এক রকমের ব্যায়াম শেষ করে। অত কষ্ট কি আর করা যায়! আমি আর যেতে না চাওয়ায় রুদ্র একটু হতাশ হয়েছিল। দুদিন ধরে মা কি একটা বলবে বলবে ভাব দেখাচ্ছে কিন্তু বলছে আর না। দুপুরে খাওয়ার পরে মা আমার ঘরে এসে বসল। ‘তোর এবার একটা কিছু হলে আমি নিশ্চিন্ত হই। কে জানে কবে হবে!’ আমি একটু গম্ভীর হয়ে বলি, ‘ একটা জ্যোতিষী তো আবার অন্য কথা শোনালো।’ ব্যাস! মাকে এবার সব খুলে না বললে আর ঊঠবে না। শেষে বললুম, ‘জ্যোতিষীটা কে জান? খুব বড় তান্ত্রিক। কামাখ্যা মন্দিরে ১০ বছর ধরে তন্ত্রসাধনা করে সিদ্ধিলাভ করেছে। উড়ান জানে, বশীকরণ জানে। আমাবস্যার রাতে একটা গাছে চেপে সেই গাছ উড়িয়ে নিয়ে যেথা ইচ্ছা সেথা চলে যায়।’ মার ছোখ ছানাবড়া করার জন্য আর কি কি বলাযায় তাই ভাবছি এমন সময় মা বলে, ‘তবে আর কি! পড়াশুনা বন্ধ করে এবার তবে গাছ ওড়ানো শেখ।’ তার পর একটু গম্ভীর হয়ে মা বলল, ‘তুই নাকি কার সঙ্গে দেখা করতে যাস? কে মেয়েটা?’ এ তো
দেখছি শক্তিশেল! মেঘের আড়াল থেকে কে আমার সঙ্গে যুদ্ধটা করছে চিন্তায় সেইটা ধরার চেষ্টা করছি সেই সময় মা আবার বলে, ‘ তুমি ঘোর ডালে ডালে আমি ঘুরি পাতায় পাতায়!’ যতদূর গাম্ভীর্য দেখান সম্ভব ততটাই দেখাবার চেষ্টা করি। ‘আমি প্রয়োজন ছাড়া কোন কাজ করিনা। বুঝলে? ওর বাবা হচ্ছে চাকরী দেওয়া মন্ত্রীর আপন ভাগনে। আমি একটা ভাল চাকরীর জন্য চেষ্টা করছি তো! দেখি ওকে ধরে যদি কাজ হয়।’ মা কথাটা শুনেও নির্বিকার রইল। ‘অতশত আমি জানিনা। লোকে কথা শোনাবে এমন কাজ যদি করিস তাহলে ঠাঁই হবেনা এইটা জেনে রাখ।’ না তাকিয়েই বুঝতে পারলুম অস্ত্রটা নিক্ষেপ করে মা আমার হাবভাব লক্ষ্য করে প্রতিক্রিয়াটা বোঝবার চেষ্টা করছে। আমি একটু চুপকরে থকে বললুম, ‘জ্যোতিষী বলেছে আমি যদি জঙ্গলেও যাই আমার খাবার কষ্ট পরার কষ্ট হবেনা, অতএব ওই ভয় তুমি আমাকে দেখাবে না। অসুবিধা হলে আমি কালই বাড়ী ছেড়ে হাঁটা মারব।’ বলে চেয়ে দেখি মায়ের প্রায় কাঁদ কাঁদ অবস্থা। ‘যারা পরের কথায় নেচে বেড়ায় তাদের সঙ্গে আমি থাকতেও চাইনা।’ মা এইবার স্ট্যান্স বদলায়। ‘আমরা পরের কথায় চলি আর তুমি কার কথায় চল?’ বলেই মা হন হন করে ঘর থেকে বেরিয়ে হাঁটা দেয়।
হারুদা ছাড়া এই কাজ আর অন্য কারো নয়।
সেদিন কোথাও ঘাপটি মেরে ছিল। তার পর কোন এক সময় আমাকে খোঁজার অছিলায় বাড়ীতে এসে এই
সব গাবিয়ে গেছে। একদিন ওর বাড়ীতে গিয়ে বৌদির কাছে আমিও একটা টাইমবোমা রেখে আসব।
প্রতিশোধস্পৃহা দূর করতে না পেরে এক রবিবার দেখে হারুদার বাড়ীতে গিয়ে কলিং বেল টিপে
দিলুম। সাইরেনের আওয়াজ হতে লাগল। হারুদা তখন উদয়ন সংঘে ক্যারম খেলছে। একটা ছিটিয়াল
ম্যাক্সি পরে হাতে মোবাইল, কানে হেডফোন এই অবস্থায় বৌদি দরজা খুলে দাঁড়াল। যত না
রূপ তার চেয়ে ঢং বেশী! বারুইপুরের আধুনিকা, স্কুল টীচার। ‘কি ব্যাপার মানব? দাদাকে
দরকার বুঝি?’ আমি ঠান্ডা গলায় বললাম, ‘না, বৌদি, দরকার তোমার সঙ্গে।’ বৌদি খানিক
বিস্ময় নিয়ে আমায় পথ করে দিল। আমি ভেতরে গিয়ে সোফায় বসলাম। ‘একটু বসো, আমি রান্নাঘরটা একটু ম্যানেজ করে আসি। বেশ স্টাইলে হেঁটে
বৌদি কিচেনের দিকে প্রস্থান করল।
এই হারু মালটা খুব সেয়ানা। ইদানিং প্রোমোটারি করে
ভাল কামাচ্ছে। তিনজন মিলে একটা টিম করেছে। একটা করে জায়গা কেনে আর প্লট করে বেচে
দেয়। আমাকেও দলে ঢোকাতে চেয়েছিল। ২লাখ ক্যাশ অন্ততঃ দিতে হবে। মায়ের কিছু টাকা
আছে। দাদুর একটা জায়গা বেচা টাকার ভাগ পেয়েছে মামাদের কাছ থেকে। কিন্তু বড়দি যতদিন
থাকবে মায়ের পয়সার ভাগ কেউ পাবেনা। পাকা অভিনেত্রী হয়েছে। কত যে ওর সমস্যা! টাকার
গন্ধ পাওয়া মাত্রই গল্প ফেঁদেছে। ব্যাঙ্কের চেয়ে বেশী সুদ দেবে যদি মায়ের টাকা ওর
কাছে রাখা হয়। মার বক্তব্য হল তার মেয়েদের মধ্যে যোগ্যতা বলে জিনিষ যদি কারো থাকে
তা হল শিবানীর। বড়দির ওই নাম। ডাকনাম সিনি। ওর যা এলেম শুধু শিব তো ছার! ব্রহ্মা,
বিষ্ণু সব ঘোল খাইয়ে দিতে পারে। মোবাইলে মেসেজ অ্যালার্ট শুনে অন করলাম। ‘কি
করছো?’ নীচে মলির ছবি। ওকে যা সুন্দর দেখায়! দেখামাত্রই মনটা কেমন কবি কবি হয়ে
যায়। জীবনকে তখন ভালোবাসতে ইচ্ছাহয়, সুন্দর করে গোছানো পুকুর, গাছ, আর পাতাবাহারে সাজানো
একটা জীবন যার ছাদটা হল নীল আকাশ যাতে ভেসে বেড়ায় দুধসাদা দলছুট সব মেঘের দল!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন