মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৫, ২০১৩

ভারত-চিন দ্বন্দ্ব: কী ভাবে নিজভূমেই পিছু হঠে ভারত ?



                         লিখেছেন : রাজেশ কালরা
দেশবাসী আনন্দে ডগমগ কি না, জানা নেই৷ আমাদের নেতারা কিন্তু বেজায় খুশি৷ হবেন না-ই বা কেন? কূটনৈতিক চাপের ফাঁস এমন ভাবে চিনের গলায় জড়িয়ে দেওয়া গিয়েছিল যে, ব্যাটারা ভারতভূমে গজিয়ে তোলা তাঁবু-টাবু গুটিয়ে পগারপার৷ ভারতীয় সেনাও তাদের তাঁবু গুটিয়ে নিয়েছে৷ অর্থাত্‍‌ , ইন্দি-চিনি ভাই-ভাই৷ ওঁ শান্তি! বিদেশমন্ত্রী সলমন খুরশিদ খুশি খুশি গেলেন চিনে৷ চিনের রাষ্ট্রপ্রধানও নাকি এবার তাঁর প্রথম ভারত সফরে আসবেন৷ আহা কী আনন্দ! কূটনীতির জালে এক্কেবারে রাম ফাঁসা ফেঁসেছে বেজিং৷ বন্ধুত্বের হাত বাড়াবে না মানে!
যে সব সূত্র থেকে খবর পেয়েছি, তাতে শুনলাম চিনারা বলেছিল, প্রথমে আমাদের নিরাপত্তা বন্দোবস্ত আংশিক ভাবে হলেও গুটিয়ে ফেলতে হবে৷ তার পর তারা পিছু হঠবে কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করবে৷ তাতেই বিগলিত দিল্লি৷ বলে দেওয়া হল, পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমেই নাকি উত্তেজনা প্রশমিত হয়েছে৷ দুপক্ষই সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে৷

বেশ৷ খু-উ-ব ভালো কথা৷ কিন্তু অসঙ্গতিটা ধরা পড়ছে কি? আগাগোড়া শুনে এলাম, চিনারা নাকি আমাদের ভূখণ্ডে ১৯ কিলোমিটার ঢুকে গিয়েছে৷ লাদাখের মোটামুটি ৭৫০ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে ঘুরঘুর করছে৷ তা-ই যদি হয়, তা হলে মহামান্য সরকার, আমাদের ক্ষুদ্র প্রশ্ন, আমরা কেন পিঠটান দেব? ওরা আমাদের এলাকায় এসেছিল, তাই ওদেরই ফিরে যেতে হবে৷ আমাদের পিছিয়ে আসার প্রশ্নটা উঠছে কী ভাবে? ভারত থেকে ভারত কী ভাবে সরে আসে? দয়া করে উত্তর দেবেন?
অজানা নয়, আমাদের থেকে একাধিক ক্ষেত্রে চিন (একাধিকই বা কেন, প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে) এগিয়ে৷ কেবল একটা ব্যাপার ছাড়া৷ তা হল গণতন্ত্র আজকাল আবার আমাদের অনেকেই এ দেশে গণতন্ত্রর অস্তিত্ব নিয়ে ঘোরতর সংশয়বাদী৷ যাক সে কথা৷ সামরিক শক্তির ক্ষেত্রে ভৌগোলিক, কৌশলগত এবং অস্ত্র-বিচারে যে ওরা বেশ কয়েক কদম এগিয়ে, তার হাতেগরম প্রমাণ তো একাধিকবারই পেয়েছি৷ আমাদের ফৌজ নিয়মানুবর্তিতার পরাকাষ্ঠা, সে কথা জোর গলায় বলি কী করে! একটা সময়ে যেমন সম্ভ্রম জাগাত, তেমনটা হালফিলে আর কোথায়? খানিকটা মান পড়েছে, তা স্বীকার করতে অসুবিধে নেই৷ কিন্তু দিল্লিতে বসে থাকা আধিকারিক ও তাঁদের রাজনৈতিক কর্তাদের চেয়ে এঁরা নিঃসন্দেহে কয়েকশো যোজন এগিয়ে৷ স্মার্ট, ঝকঝকে৷ কিন্তু শাসককুল সে কথা মানলে তো!
এসব সময়ে সেনাবাহিনীকে আরও মজবুত করে তোলা প্রয়োজন৷ এই আত্মবিশ্বাসটা ঢুকিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, হ্যাঁ, তোমরাই আমাদের ক্ষমতার অন্যতম পরিচয়৷ কিন্তু দেরাজ ঠাসা কেলেঙ্কারিতে কুঁকড়ে থাকা একটা সরকারের পক্ষে সে কাজটা করা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে আমি অন্তত রীতিমতো সন্দিহান৷ যাঁরা নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই নাজেহাল, তাঁরা দেশের ভূখণ্ড-রক্ষা বা বাহিনীর মনোবল চাঙ্গা করার মতো বিষয়গুলির একাগ্র ছাত্র হবেন, সেটা মেনে নেওয়াটা একটু কঠিনই৷
অতএব, প্রশ্নটা কিন্তু থেকেই যাচ্ছে৷ কী ভাবে নিজভূমেই পিছু হঠে ভারত?
কৃতজ্ঞতা : এই সময়

কোন মন্তব্য নেই: