মঙ্গলবার, অক্টোবর ১৫, ২০১৩

প্রত্যাখানের অধিকার: স্বাগত, যদিও…



                      লিখেছেন :রাজেশ কালরা
ফের গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ সুপ্রিম কোর্ট৷ যুগান্তকারী নির্দেশিকায় নির্বাচন কমিশনকে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, ভোটারদের হাতে তুলে দিতে হবে প্রার্থীকে প্রত্যাখানের অধিকার৷ ইভিএমে এবার থেকেউপরের কেউ ননমার্কা বোতাম রাখতে হবে৷ শীর্ষ আদালত মনে করে, ‘এতে নির্বাচন প্রক্রিয়ায় আমূল বদল আসবে এবং রাজনৈতিক দলগুলি স্বচ্ছ ভাবমূর্তির প্রার্থীদের দাঁড় করাতে বাধ্য হবে৷একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আশাবাদী, ‘মানুষ এর ফলে ভালো প্রশাসনও পাবে৷

এই নির্দেশ থেকে স্পষ্ট, দেশবাসী কী চান, তা শীর্ষ আদালতও বুঝতে পেরেছে৷ আম জনতার দাবিতে এ যেন আইনের সিলমোহর৷ তাত্‍পর্যপূর্ণ ভাবে এই নির্দেশ এমন একটা সময়ে এল যখন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায় সাংসদ, বিধায়কদের নিয়ে বিতর্কিত অর্ডিন্যান্স নিয়ে চিন্তাভাবনা করছেন৷ তাতে কী বলা রয়েছে আমরা জানি৷ দুবছর বা তার বেশি কারাবাস হয়েছে বা হয়, এমন অপরাধে অভিযুক্ত সাংসদ বা বিধায়ককে সরিয়ে দেওয়া হবে৷


সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশে রাজনৈতিক দলগুলি স্বাভাবিক ভাবেই বিরক্ত হবে৷ তবে এখনই আনন্দে শ্যাম্পেনের বোতল খোলার সময় এসেছে বলে আমি মনে করি না৷ আগে জানতে হবে, এই নির্দেশ আক্ষরিক অর্থেই আলাদা কি না, বা কন্ডাক্ট অফ ইলেকশন রুলস, ১৯৬১-র ৪৯ (ও) ধারায় যা বলা আছে, তা পালন করা যাবে কি না৷ ওই ধারায় প্রার্থীদের প্রত্যাখানের কথা বলা রয়েছে৷ঠিক যা যা বলা রয়েছে ওই ধারায়, সেটা ইংরেজিতেই হুবহু তুলে দিলাম-- If an elector, after his electoral roll number has been duly entered in the register of voters in Form 17A and has put his signature or thumb impression thereon as required under sub-rule (1) of rule 49L, decided not to record his vote, a remark to this effect shall be made against the said entry in Form 17A by the presiding officer and the signature or thumb impression of the elector shall be obtained against such remark.
সোজা কথায়, যদি কেউ কোনও প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার উপযুক্ত বলে মনে না করেন, তা হলে তিনি তাঁকে প্রত্যাখান করতে পারেন, যাতে তাঁর ভোটটি পরে ভুয়ো ভোটারদের হাতে না পড়ে৷তবে এই ধারাটি একজন খারাপমানুষকে নির্বাচিত হওয়া থেকে ঠেকাতে পারে না৷ উল্টে, খুব কম ভোটে সেই লোকটির জয়ের রাস্তা সুগত হয়৷ ধরা যাক একটি কেন্দ্রে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতা, যেখানে ভোটারের সংখ্যা ১০০৷ এবার ৬০ জন কাউকে পছন্দ করলেন না আর ২৫ জন ভোট দিতে এলেন না৷ বাকি অবস্থায় একজন ১০, দ্বিতীয় জন ৮ এবং তৃতীয় জন ৭টি ভোট পেলেন৷ তা হলে অতি সহজেই প্রথম প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা যায়৷

২০০৮ সালে এ নিয়ে বেশ তর্ক হয়েছিল৷ যদি বিজয়ী প্রার্থীর জয়ের মার্জিনের থেকে প্রত্যাখান করা ভোটের সংখ্যা বেশি হয়, তা হলে সামগ্রিক ভাবে ভোটটাই বাতিল হয়ে যায় এবং ফের ভোট নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়৷ এর পরই নির্বাচন কমিশন যে নির্দেশিকাটি দিয়েছিল, তা ছিল এ রকম-- It has been brought to the notice of the Commission that various misleading reports are being circulated though the Press, the electronic media, emails and through SMS to the effect that if the umber of voters who choose to exercise their option not to vote for any contesting candidate as provided in Rule 49-O of Conduct of Elections Rules, 1961, exceeds the margin of votes secured by the winning candidate over the runner up, this will invalidate the election and a repoll will be held. It is clarified that under Rule 49-O, the voter has an opotion not to vote at the election after he has been identified at the polling station and his name has been registered in Registers of voters (Form-17A). The Presiding Officer shall thereupon make a note to that effect against the name of that voter and obtain his signature (thumb impression in the case of an illiterate ). In such case, the voters who exercise the option of not voting at the election under Rule 49-O would only be deemed to have abstained themselves from voting and under the law, the candidate who secures highest number of valid votes polled, irrespective of his winning margin, is declared elected.

এটা বদলেছে কি না, সেটাই হল প্রশ্ন৷ এমন না হয়, এই ধারাটিই বজায় রইল আর যেমন যা চলছিল, তেমনই সব চলতে থাকল৷ তবে রাজনৈতিক দলগুলি এত সহজে ছেড়ে দেবে বলে মনে হয় না৷ কোনও না কোনও উপায়ে তারা নিজেদের স্বার্থরক্ষায় সক্রিয় হবেই৷ এর আগে পিজে টমাসকে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনার করা নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল৷ এবং রাজনীতি কী ভাবে সক্রিয় হয়েছিল, তা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে৷

যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে যদি আমাদের হাতে অন্তত একটা অস্ত্র আসে, ক্ষতি কী? নেতাদের তো অস্ত্রের অভাব নেই, আমাদের অন্তত একটা হোক! 
কৃতজ্ঞতা : এই সময়

কোন মন্তব্য নেই: