বুধবার, অক্টোবর ০২, ২০১৩

৩জি, ৪জি প্রযুক্তিকে জানব, জানব ১জি, ২জি প্রযুক্তিও। না-জানলে চরম মিস !!



লিখছেন : টেকনোমাস্টার
৩জি (3G) হল থার্ড জেনারেশন বা তৃতীয় প্রজন্ম-এর সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি হল তৃতীয় প্রজন্মের তারবিহীন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিতে প্রতি সেকেন্ডে কমপক্ষে ২০০ কিলোবিট হারে তথ্য আদান প্রদান করা সম্ভব। অবশ্য বর্তমানে থ্রিজি প্রযুক্তিতে এর চেয়েও অধিক গতি পাওয়া সম্ভব। এটি আগের সকল তারবিহীন নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিগুলোর চেয়ে অধিক গতিসম্পন্ন এবং উন্নত। থ্রিজি নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিতে 2G নেটওয়ার্কের সুবিধাসমূহের পাশাপাশি আরও কিছু সুবিধা উপভোগ করা যায়। যার মধ্যে রয়েছে দ্রুত গতির ইন্টারনেট,ভিডিয়ো কল, ভিডিয়ো চ্যাট, অনলাইন টিভি উইথাউট বাফারিং, অনলাইন মুভি দেখা ইত্যাদি।

১৯৮০-এর দশকের প্রথম দিকে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের গবেষণার মাধ্যমে থ্রিজি প্রযুক্তির উদ্ভাবন ঘটে। প্রায় ১৫ বছরের গবেষণার মাধ্যমে এর মানোন্নয়ন ঘটেছে। এটি জনসাধারণের জন্য অবমুক্ত করা হয় আইএমটি-২০০০ নামে। তরঙ্গ বর্ণালির ৪০০ মেগাহার্জ থেকে ৩ গিগাহার্জ পর্যন্ত থ্রিজি-এর জন্য বরাদ্দ ছিল। বর্তমানে সরকার এবং যোগাযোগ কোম্পানি উভয়েই থ্রিজি অনুমোদন করেছে। ১৯৯৮ সালে প্রথম প্রাক-বাণিজ্যিক
থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু করে জাপানের কোম্পানি এনটিটি ডোকোমো এবং এর বাণিজ্যিকীকরণ করা হয় ফোমা নামে। ২০০১ সালের মে মাসে ডাব্লু-সিডিএমএ-এর জন্য পরীক্ষামূলকভাবে এটি চালু করা হয়। বাণিজ্যিকভাবেও প্রথম এনটিটি ডোকোমো থ্রিজি চালু করে। এটি চালু করা হয় ২০১১ সালের ১ অক্টোবর। প্রথম ইউরোপীয় প্রাক-বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক ছিল ইউএমটিএস নেটওয়ার্ক। আইল অফ ম্যানে এটি চালু করে মাংক্স টেলিকম এবং প্রথম ২০০১ সালের ডিসেম্বরে প্রথম বাণিজ্যিক নেটওয়ার্ক চালু করে টেলিনর
২০০২ সালের জানুয়ারিতে দক্ষিণ কোরিয়ায় এসকে টেলিকম প্রথম বাণিজ্যিকভাবে সিডিএমএ ভিত্তিক xইভি-ডিও প্রযুক্তি চালু করে। মে মাসের মধ্যে টেলিযোগাযোগ কোম্পানি কেটি দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্বিতীয় থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু করে। ফলে কোরিয়াতেই প্রথম থ্রিজি অপারেটরদের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়।
যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম সিডিএমএ২০০০ x ইভি-ডিও ভিত্তিক থ্রিজি নেটওয়ার্ক চালু করে মোনেট মোবাইল নেটওয়ার্ক, কিন্তু তারা পরবর্তীতে তাদের সেবা বন্ধ করে দেয়। ২০০২ সালের জুলাইয়ে, যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় থ্রিজিনেটওয়ার্ক চালু করে ভেরিজন ওয়্যারলেস
থ্রিজি প্রযুক্তিসমূহ
থ্রিজি সাধারণত তিনটি প্রযুক্তিতে গঠিত: সিডিএমএ২০০০, টিডি-এসসিডিএমএ, ডাব্লু-সিডিএমএ (ইউএমটিএস)
  • সিডিএমএ২০০০: সিডিএমএ২০০০ এর পূর্ণরূপ হল কোড ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাকসেসএটি আইএমটি মাল্টি-ক্যারিয়ার নামেও পরিচিত। মোবাইল ফোন এবং সেল সাইটগুলোর মধ্যে ভয়েস তথ্য, সাংকেতিক তথ্য এবং অন্যান্য তথ্য আদান-প্রদানে এটি সিডিএমএ চ্যানেল অ্যাকসেস ব্যবহার করে।
  • টিডি-এসসিডিএমএ: টিডি-এসসিডিএমএ এর পূর্ণরূপ হল টাইম ডিভিশন সিঙ্ক্রোনাস কোড ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাকসেসএটি ইউএমটিএস-টিডিডি নামেও পরিচিত।
  • ডাব্লু-সিডিএমএ (ইউএমটিএস): ডব্লিউ-সিডিএমএ এর পূর্ণরূপ হল ওয়াইডব্যান্ড কোড ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাকসেসএটি জাপানের এনটিটি ডোকোমোর ফোমা নেটওয়ার্কের ভিত্তি। এটিকে কখনও কখনও ইউএমটিএস-এর প্রতিশব্দ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। শুধু 3G  নয়, আসছে  4Gও।
৪জি প্রযুক্তি
৪জি (4G) হল ফোর্থ জেনারেশন বা চতুর্থ প্রজন্ম শব্দটির সংক্ষিপ্ত রূপ। এটি ব্যবহৃত হয় চতুর্থ প্রজন্মের তারবিহীন টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তিকে বুঝাতে। এটি তৃতীয় প্রজন্মের (থ্রিজি) টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তির উত্তরসূরি। ফোরজি প্রযুক্তি ল্যাপটপ, স্মার্টফোন বা অন্যান্য মোবাইল যন্ত্রে মোবাইল আল্ট্রা ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদান করে থাকে। ফোরজি নেটওয়ার্কে যেসব সুবিধা পাওয়া যায় সেগুলোর মধ্যে সংশোধিত মোবাইল ওয়েব সেবা, আইপি টেলিফোনি, গেমিং সেবা, হাই-ডেফিনিশন মোবাইল টিভি, ভিডিও কনফারেন্স, ত্রিমাত্রিক টেলিভিশন এবং ক্লাউড কম্পিউটিং উল্লেখযোগ্য।
বাণিজ্যিকভাবে দুই ধরণের ফোরজি প্রযুক্তি স্থাপিত হয়েছে: মোবাইল ওয়াইম্যাক্স (২০০৬ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম) এবং লং টার্ম ইভোলিউশন বা এলটিই (২০০৯ সালে নরওয়ের ওসলো এবং সুইডেনের স্টকহোমে প্রথম)
যুক্তরাষ্ট্রে স্প্রিন্ট নেক্সটেল ২০০৮ সালে মোবাইল ওয়াইম্যাক্স নেটওয়ার্ক স্থাপন করে এবং মেট্রোপিসিএস ২০১০ সালে প্রথম এলটিই সেবা চালু করে। তারবিহীন ইউএসবি মডেম প্রথম থেকেই লভ্য ছিল, কিন্তু ওয়াইম্যাক্স স্মার্টফোন লভ্য হয় ২০১০ সাল থেকে এবং এলটিই স্মার্টফোন ২০১১ সাল থেকে। তবে ইউরোপীয় বাজারে বর্তমানে ওয়াইম্যাক্স স্মার্টফোন বিক্রয় বন্ধ রয়েছে।
4G-র প্রযুক্তিসমূহ
২০০৮ সালের মার্চে আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের বেতার যোগাযোগ সেক্টর ফোরজি এর প্রয়োজনীয় বিষয়বস্তুসমূহের একটি রূপরেখা প্রবর্তন করে। তারা উচ্চ মোবিলিটি যোগাযোগের জন্য প্রতি সেকেন্ডে ১০০ মেগাবিট এবং নিম্ন মোবিলিটি যোগাযোগের জন্য প্রতি সেকেন্ডে ১ গিগাবিট গতি প্রণয়ন করে
মোবাইল ওয়াইম্যাক্স এবং এলটিই-এর প্রথম অবমুক্তির পর থেকে যেসব সেবা প্রতি সেকেন্ডে এক গিগাবিটের কম গতি প্রদান করে, আইইউটি-আর এর নীতি অনুযায়ী সেগুলোকে ফোরজি সেবা বলা যাবে না, যদিও সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সেগুলোকে ফোরজি সেবা বলেই বাজারজাত করে।
মোবাইল ওয়াইম্যাক্স রিলিজ ২ এবং এলটিই-অ্যাডভান্সড আইএমটি-অ্যাডভান্সডের বিষয়বস্তু সমর্থন করে এবং এর সাহায্যে প্রতি সেকেন্ডে এক গিগাবিট গতি সম্পন্ন সেবা প্রদান করাও সম্ভব। এই সেবাগুলো ২০১৩ সালে অবমুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আগের প্রজন্মগুলো সার্কিট-সুইচড টেলিফোনি সমর্থন করলেও, ফোরজি তা করেনা। তবে এটি ইন্টারনেট প্রটোকল ভিত্তিক সকল সেবা যেমন: আইপি টেলিফোনি সমর্থন করে। আশা করা হয় যে পরবর্তী প্রজন্মের নেটওয়ার্ক প্রযুক্তিগুলো পূর্ববর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তিগুলোর তুলনায় অধিক সস্তা এবং উন্নততর হবে। অনেক দেশে এখনও জিএসএম, ইউএমটিএস এবং এলটিই নেটওয়ার্ক একই সাথে চালু আছে। ৩জি,৪জি নিয়ে তো অনেক কথা হল – তাহলে এই প্রসঙ্গে জেনে নিই ১জি, ২জি কী ছিল।
১জি প্রযুক্তি
১জি (1G) বেতার টেলিফোন প্রযুক্তি, মোবাইল টেলিযোগাযোগের প্রথম বা প্রারম্ভিক পর্যায় কে বুঝিয়ে থাকে। এটা হল এনালগ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা যা ১৯৮০ সালে প্রবর্তন করা হয় এবং ২জি দ্বারা প্রতিস্থাপিত হওয়ার আগ পর্যন্ত ব্যবহার করা হয়েছিল। ২জি হল ডিজিটাল টেলিযোগাযোগ পদ্ধতি ১জি এবং ২জি মধ্যে প্রধান পার্থক্য হল, যে রেডিও সংকেত ১জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয় তা এনালগ, যখন ২জি নেটওয়ার্কে ব্যবহার করা হয় তার ডিজিটাল রুপ। যদিও উভয় সিস্টেমের জন্য রেডিও টাওয়ার (যা হ্যান্ডসেট শুনা যায়) সংযোগ করতে ডিজিটাল সংকেত ব্যবহার করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, এই ধরনের পদ্ধতি হল এনএমটি (নর্ডিক মোবাইল টেলিফোন), নর্ডিক দেশসমূহে ব্যবহৃত, যেমন সুইজারল্যান্ড, হল্যান্ড, পূর্ব ইউরোপ এবং রাশিয়াএছাড়া এএমপিএস (উন্নত মোবাইল ফোন পদ্ধতি) উত্তর আমেরিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় ব্যবহার করা হয়।
২জি  প্রযুক্তি
২জি (2G) দ্বিতীয় প্রজন্ম তার বিহীন নেটওয়ার্ক এই ব্যবস্থাতে ডিজিটাল তারবিহীন মোবাইল যোগাযোগের ক্ষেত্রে প্রতি সেকেন্ডে ২৮'৮ কিলোবিট হারে তথ্য আদানপ্রদান সঙ্ক্রান্ত সেবা দেয়া সম্ভব হয়। ১৯৯১ সালে ফিনল্যান্ডের রেডিওলিনজা নামক একটি জিএসএম অপারেটর সর্বপ্রথম ব্যাবসায়িকভাবে এবং জিএসএম স্টেন্ডার্ডে ২ জি তারবিহীন নেটওয়ার্ক চালু করেছিল। তখনকার এধরনের অন্যান্য বিদ্যমান প্রযুক্তি অপেক্ষা ২জি তিনটি দিক দিয়ে এগিয়ে ছি। এ বাড়তি সুবিধাগুলো হল –১. ২জি প্রযুক্তিতে ফোনে নিরাপদভাবে কথাবার্তা বলার জন্য সম্পূর্ণরূপে এনক্রিপশনের ব্যাবস্থা ছিল। ২.তরঙ্গ বর্ণালি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ২জি অন্যান্য প্রযুক্তি অপেক্ষা অনেক বেশি কর্মদক্ষ ছিল। ৩.এবং ২জি এর মাধ্যমে এসএমএস এর মত বিভিন্ন রকম তথ্যও প্রেরণ করা যেত।
২জি চালু হওয়ার পূর্বের বিদ্যমান মোবাইল টেলিফোন সিস্টেমকে ইতিহাস হিসেবে ১জি হিসেবে উপাদি দিয়ে দেয়া হয়। ১জি নেটওয়ার্কে রেডিও সিগনাল ছিল অ্যানালগ অন্যদিকে ২জি নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত হয়েছিল ডিজিটাল পদ্ধতি। তবে তখন উভয় নেটওয়ার্কই তখন রেডিও টাওয়ারের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে ডিজিটাল সিগনাল ব্যবহার করতো।
২জি প্রযুক্তি সমূহ
বহুবিদ এবং জটিল ব্যবহাররের ধরনের উপর নির্ভর করে ২জি প্রযুক্তি সমূহকে দুটি ভাগ করা যায়। যেমন –১.টিডিএমএ ভিত্তিক। ২.সিডিএমএ ভিত্তিক।
নিম্নে প্রধান ২জি প্রযুক্তিগুলো তুলে ধরা হল: ১.জিএসএম (টিডিএমএ ভিত্তিক): এ প্রযুক্তির উৎপত্তিস্থান ইউরোপ হলেও মানুষ্য বসবাসযোগ্য ৬টি মহাদেশের প্রায় সকল দেশেই এ প্রযুক্তিটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। টিডিএমএ এর পূর্ণরুপ হল টাইম ডিভিশন মাল্টিপল অ্যাক্সেস। সারা বিশ্বের প্রায় ৮০% মোবাইল ব্যাবহারকারীই এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ২.সিডিএমএ ভিত্তিক: এ প্রযুক্তি আমেরিকাএশিয়ার অংশবিশেষে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সারা বিশ্বের প্রায় ১৭% মোবাইল ব্যবহারকারী এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে। মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, ইন্ডিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া সহ অনেক দেশের প্রায় এক ডজনেরও বেশি সংখ্যক সিডিএমএ অপারেটর জিএসএম এ রূপান্তরিত হয়ে গেছে। ৩.পিডিসি (টিডিএমএ ভিত্তিক): এ প্রযুক্তি শুধুমাত্র জাপানেই ব্যবহৃত হয়। ৪.আইডেন (টিডিএমএ ভিত্তিক): এ প্রযুক্তি শুধু যুক্তরাষ্ট্যের নেক্সটেল এবং কানাডার টেলাস মোবিলিটি কোম্পানি ব্যবহার করে থাকে। ৫. আইএস-১৩৬, ডি-এএমপিএস নামে পরিচিত এবং টিডিএমএ ভিত্তিক): একসময় এ প্রযুক্তি অ্যামেরিকাতে বিদ্যমান ছিল। কিন্তু অধিকাংশই এখন জিএসএম এ রূপান্তরিত হয়ে গেছে।

কোন মন্তব্য নেই: