মানসিক, সামাজিক,
আর্থিক ইত্যাদি কারণে মানুষ অতিরিক্ত
বিষণ্ণতায় পর্যবসিত হয়ে আত্মহত্যা করে থাকে। আমরা তাই ধারণা করে থাকি মানুষের মতো উচ্চ পর্যায়ের
বুদ্ধিমত্তা যার নেই আত্মহত্যা সেই
প্রাণীর করার কথা না। অথচ রহস্যময় কোনো কারণ হোক আর অদ্ভুত রকমের আত্মত্যাগী আচরণ হোক,
প্রাণীকূলের মাঝে মানুষ
ছাড়াও অন্যদের মাঝে দেখা যায়
আত্মহত্যার নজির। বিশেষজ্ঞরা নিশ্চিত নন যে মানুষের মতো মানসিক সঙ্কটে ভোগার ফলেই তারা আত্মহত্যা
করে কি না। তবে যেসব মানুষ নিজ চোখে এমন ঘটনা পর্যবেক্ষণ করেছেন তাদের মতে এই ব্যাপারটি
নিঃসন্দেহে রহস্যময়।
১) নিঃশ্বাস বন্ধ করে মারা যাওয়া ডলফিনটিঃ
আজ থেকে প্রায় ৪০ বছর আগে ডলফিনের প্রশিক্ষক রিচার্ড ও’
ব্যারি পর্যবেক্ষণ করেন ক্যাথি নামের এক ডলফিনের আত্মহনন। ১৯৬০
এর দশকে বিখ্যাত টিভি শো “ফ্লিপার”
এ ব্যবহার করা হত ক্যাথিকে। এ ব্যাপারটি
তিনি এভাবে বর্ণনা
করেন যে, ক্যাথি ইচ্ছে করেই
নিঃশ্বাস নেওয়া বন্ধ করে দেয়। মানুষ যেভাবে কোনও সচেতন চিন্তা ছাড়াই নিঃশ্বাস নিতে থাকে,
ডলফিনদের ক্ষেত্রে তা
হয় না। প্রতিটি নিঃশ্বাস নেবার জন্য
তাদের চিন্তা করা লাগে এবং ইচ্ছাশক্তির ব্যবহার করতে হয়। ক্যাথি নামের এই ডলফিন তার প্রশিক্ষক
রিচার্ডের কাছে এসে নিঃশ্বাস নেওয়া বন্ধ
করে দেয় এবং সুইমিংপুলের তলায় পড়ে থাকে। এভাবে নিঃশ্বাস না নেবার কারণে তার মৃত্যু হয়।
২) তুরস্কে ভেড়াদের গণআত্মহননঃ
২০০৫ সালের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, তুরস্কের একটি খাদে ঝাঁপ দিয়ে মৃত্যুবরণ করে প্রায় ৪৫০ টি ভেড়া। মেষপালকেরা এগুলোকে
ছেড়ে দিয়ে নাস্তা করতে গেলেই ঘটে এই বিপত্তি। একের পর এক ভেড়া লাফিয়ে পড়ে এবং খাদের নিচে
পড়ে মরে থাকে। যেগুলো পরে লাফ দিয়েছিল
তারা অন্য ভেড়াদের গায়ের ওপর পড়ে বেঁচে যায়।
৩) একাধিক প্রচেষ্টার পর কুকুরের আত্মহত্যাঃ
১৮৪৫ সালে নিউফাউন্ডল্যান্ড জাতের একটি কুকুরের আত্মহত্যার খবর প্রকাশিত
হয় লন্ডন নিউজ পত্রিকায়। এতে বলা হয়,
কুকুরটি বেশ কিছুদিন ধরেই
অস্বাভাবিক আচরণ করছিলো এবং পানিতে
ঝাঁপিয়ে পড়ে এটি নড়াচড়া বন্ধ করে দিত ডুবে মরার উদ্দেশ্যে।
একে উদ্ধার করার পর বেঁধে রাখা হয় কিন্তু বাঁধন খুলে দেবার পরই সে
আবারও একই কাজ করত। শেষ পর্যন্ত সে সফল
হয় এবং উদ্ধার করার আগেই মারা যায়।
৪) বন্দীদশা থেকে পরিত্রাণ পেতে অনাহারে মারা যাওয়া ভালুকঃ
২০১২ সালে দেখা যায় এই ঘটনা। একটি ভালুক প্রায় ১০ দিন না খেয়ে থাকার
পর মারা যায়। চীনে খুব স্বল্প পরিসরে
আটকে রাখা হয় ভালুকদেরকে এবং তাদের পাকস্থলী থেকে পিত্তরস আহরণ করা হয়। তাদের পেটে
স্থায়ীভাবে ফুটো করে ক্যাথেটার টিউব ঢুকিয়ে দিয়ে এই রস নেওয়া হয় সাধারণত দিনে দুই বার। এই
যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতি থেকে রক্ষা
পেতেই ভালুকগুলো আত্মহত্যা করে বলে ধারণা করা হয়।
৫) নিউজিল্যান্ডে ডাঙ্গায় উঠে এসে আত্মহত্যা করা তিমিঃ
২০১১ সালে ৬১ টা তিমি ডাঙ্গায় উঠে আসে। নিউজিল্যান্ডের ফেয়ারওয়েল
স্পিট নামের সৈকতে এই ঘটনা দেখা যায়।
কেন তারা এই কাজটি করে তা জানা না গেলেও ধারণা করা হয়, একটি অসুস্থ তিমি মৃত্যুবরণ করার জন্য ডাঙ্গার দিকে
রওয়ানা দিলে বাকিগুলোও তাকে অনুসরণ করে।
এভাবে ডাঙ্গায় উঠে আসা তিমিদের মাঝে মাত্র ১৮ টিকে বাঁচানো সম্ভব হয়।
৬) খাদ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়া ২৮টি গবাদি পশুঃ
আল্পসের একটি খাদে ঝাঁপিয়ে পড়ে তিন দিনে মৃত্যুবরণ করে ২৮টি গরু এবং
ষাঁড়। এই পাহাড়ি এলাকায় মাঝে মাঝেই
গবাদি পশু পড়ে মারা গেলেও এত কম সময়ে এত পশু একসাথে মারা যাওয়াটা নিছক কাকতালীয় ঘটনা হতে পারে না।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়,
ওই সময়ে এলাকাটিতে প্রচুর বজ্রপাতসহ ঝড়
হচ্ছিল। এ ঘটনার পর পানি দূষণ এড়াতে ঐসব
গবাদি পশুর মরদেহ হেলিকপ্টারে করে সরিয়ে নেওয়া হয়।
৭) আত্মত্যাগী অ্যাফিডঃ
১৯৮৭ সালে “নেচার”
জার্নালে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী,
অ্যাফিড নামের এক ধরণের পোকা আছে যারা আত্মহত্যায় অভ্যস্ত। কোনও
অজানা কারণে নয়, বরং একই প্রজাতির অন্যান্য পোকাকে বাচাতেই তারা আত্মত্যাগ করে থাকে। এদের
প্রাকৃতিক শিকারি হল লেডিবাগ বিটল যাদের
থেকে আক্রমণের আশঙ্কা থাকলে কিছু কিছু অ্যাফিড নিজের শরীরকে বিস্ফোরিত করে ফেলে।
সূত্র : প্রিয় ডট কম
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন