রবিবার, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৩

পৃথিবী নাকি বনবন করে ঘোরে ?



                      লিখেছেন : সিরাজাম মুনির শ্রাবণ
সিফাত পড়ে ইশকুলে। আমি তার মামা। তার ইশকুলের বইতে নাকি লেখা আছে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে লাটিমের মত ঘুরছে।
'
ও মামা পৃথিবী নাকি সূর্যের চারদিকে ঘুরে?'
'
ঘুরে বলেই তো মনে হয়।'
কে বলল তোমায়, আমি তো খালি চোখেই দেখছি সূর্যটা পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে আর তুমি চশমা পরেও দেখতে পাও না? !
আসলেই তো! খালি চোখেই তো দেখা যায়! আসলে পৃথিবীটা সত্যিই সূর্যের চারদিকে ঘুরে। তো এত যে কষ্ট করে আমরা পৃথিবীটাকে সূর্যের চারদিকে ঘুরাচ্ছি তাতে আমাদের লাভ কি?

না, এটা লাভ লোকসানের ব্যাপার না, এটা বিজ্ঞানের ব্যাপার এটা সত্যের ব্যাপার। সাধারণ একটা চোখে দেখা যায় না এমন কণার খোজে বিজ্ঞান কোটি কোটি বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা খরচ করে। পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরে এটাই সত্য কথা। আর এই সত্য কথাটা মানুষকে জানাতে গিয়ে অনেক মানুষ জীবনও পর্যন্ত দিয়েছে।  
কিন্তু মামা আমরা বুঝি না কেন?'
কে বলল বুঝি না? শুধু বুঝার মাঝে একটু হেরফের হয় আরকি! আমরা যখন ট্রেনে করে প্রচণ্ড বেগে সামনের দিকে এগিয়ে যাই তখন আমাদের কি মনে হয়? স্বাভাবিকই তো মনে হয় আমরা সিটে বসে আছি, হাঁটছিও না দৌড়াচ্ছিও না। কিন্তু বাইরে? বাইরে মনে হয় গাছপালা ঘরবাড়ি গরু-ছাগল সব কেমন করে সরসর করে পেছনে চলে যাচ্ছে! কই আমরা তো দেখছি দিব্বি বসেই রয়েছি। তবে কি গাছপালা ঘরবাড়িগুলো সত্যিই পেছনে যায়? না।একধরণের জড়তার কারনে আমাদের কাছে মনে হয় গাছপালাগুলোই চলছে।

ঠিক তেমনি পৃথিবীর বেলায়ও ঘটে এমনটাই। পৃথিবীটা লাটিমের মত বনবন করে সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। আর আমাদের কাছে মনে হয় তার উলটো টা-সূর্যটাই যেন ঘুরছে পৃথিবীর চারপাশে!

ট্রেনে চড়ার সময় তো জানলা দিয়ে প্রচুর বাতাস হুহু করে শরীরে লাগে, কিন্তু কই পৃথিবীতো চলছে, একদম থামছে না। তো গায়ে যে বাতাস লাগছে না! আসলে ট্রেনের কাহিনীটা পৃথিবীর মতোই। ট্রেনের জানলা বন্ধ করে দাও আর বাতাস লাগবে না! ট্রেন চলছে তুমিও চলছ বাতাস কিন্তু লাগছে না।

'
হা হা হা মামা পৃথিবীর কি জানলা আছে? সবসময় বুঝি লাগানো থাকে?'
হু হু করা বাতাস থেকে বাচতে হলে জানলা লাগবে কে বলল? বাতাসই যদি না থাকে তবে জানলার কি দরকার? আসলে আমরা পৃথিবীর বুকে যে বাতাসের সমুদ্রে চলাফেরা করছি সে বাতাস বিস্তৃত আছে পৃথিবী থেকে মাত্র কয়েক মাইল ওপর পর্যন্ত।
তার ওপরের জায়গা গুলো সব ফাকা! মানে কিছুই নেই। এই ফাকা জায়গাগুলোকে বলে শূন্যস্থান, ইংরেজীতে ভ্যাকিওম। ওখানে গিয়ে তুমি এক মাস বসে থাকলেও একটা বাতাস তো দুরের কথা বাতাসের কণার ছোয়াও পাবে না। তো সেই জায়গাগুলো যদি ফাকা না হয়ে বাতাস বা অন্য কিছু দিয়ে ভরাট থাকতো তবে পৃথিবী চলার সময় সেগুলোর সাথে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের লাগত ঘষা। সা সা করে এমন বাতাস বইত যে আমাদের ঘরবাড়ির অস্তিত্বও থাকত না। মহাশুন্যের বায়ুর সাথে পৃথিবীর বায়ুর ঘষায় দাউদাউ করে জ্বলে যেত আগুন। গাছপালা ঘর সব যেত পুড়ে। আমাদের ভাগ্য কতই না ভাল, উপরের জায়গাগুলো ফাকা। ফাকা তাই লাগে না ঘষা। হয়না এলোমেলো বাতাস, হয়না আগুন ধরানো হাওয়া।
আমরা বাতাসের সমুদ্রে ডুবে থেকেও আছি মহা আরামে! পৃথিবীর গতির কারনে বাতাস খুব একটা জ্বালায় না। কেন ট্রেনে আবার ব্যতিক্রম দেখলে কই? ট্রেনের সবগুলো দরজা জানলা লাগিয়ে দিলে তো মোটামোটি পৃথিবীর একটা 'ক্ষুদ্র সংস্করণ' দাঁড়িয়ে যায়! ট্রেনের কামড়ার ভিতরেও তো বাতাস আছে, শ্বাস নিতে পারি। আবার ট্রেনটা চলছেও শা শা করে। কই ওলটাপালটা বাতাস তো গায়ে লাগে না! শুধু এই যা একটু পার্থক্য ট্রেনটা চলছে শা শা করে আর পৃথিবীটা ঘুরছে বনবন করে!(লাটিমের মত)!
এই আশীর্বাদের কারণেই পৃথিবীতে অনাকাঙ্ক্ষিত এলোমেলো বাতাস বয় না।

'
কে বলল মামা? কতো ঝড় তুফান হয়, কতো জলোচ্ছাস, টর্নেডো কতো কী...'

সে তো আর সূর্যের চারদিকে ঘুরার জন্য হয় না! সমুদ্র, সমুদ্রের পানি, সমুদ্রের তাপমাত্রা; আমাদের স্থলভূমি, স্থলের তাপমাত্রা ইত্যাদির জন্য হয়। তবে মূল কথা হল তাপমাত্রার হেরফের। তার সঙ্গে আছে হালকা বাতাস ঘন বাতাস, ঘণত্বের পার্থক্য। সে গল্প না হয় আরেক দিন শুনো।

আরেকটা জিনিস কি তোমার চোখে পড়ে নি? 'মাস পরপর যে গরম আসে, আবার ছ'মাস পরপরই যে ঠাণ্ডা! এক নিয়মে সবসময় এরকম ঋতুর পরিবর্তন কেন হয়? সূর্যই যদি পৃথিবীর চারিদিকে ঘুরত আর পৃথিবী থাকত স্থির, তখন তো শীত গরমের পরিবর্তন হতো না। পৃথিবী বসে থাকত পৃথিবীর জায়গায়, সূর্য চলত সূর্যের পথে- শীত গরম আসতো কোথা থেকে? পৃথিবীটা সুন্দর নিয়মে ঘুরছে বলেই আমরা এত বৈচিত্র্যময় শীত গ্রীষ্ম পাই।

'
তো মামা পৃথিবী তো ঘুরছে চরকির মত। এক সময় যদি গাছ থেকে আম যেভাবে পড়ে ওভাবে পড়ে যায়?'
পৃথিবীকে আমের ডাঁটের মত ধরে রেখেছে সেই কথা বলল কে?
পৃথিবীর পড়তেও বাধা নেই, ঝুলতেও বাধা নেই। যতদিন পর্যন্ত তার ঘূর্ণন আছে ততদিন পর্যন্ত ঝুলেই থাকবে। ঘূর্ণন থাকবে আজীবন, তাই ঝুলেও থাকবে আজীবন! কেন ঝুলে থাকবে সে কারনটাও বের করে ফেলেছেন অনেক অনেক বছর আগে একজন বিজ্ঞানী। নাম তার আইজ্যাক নিউটন। শুধু তাই নয় এই সবের নিয়ম কানুনও বের করে ফেলেছেন তিনি।


এতসব শুনার পর সিফাত বলে ওঠে --এগুলোতো আমি জানিই, আগে থেকেই জানতাম!
'
তাই নাকি? কি করে জানতে?'
'
কেন ওইদিন ইশকুলে আপামনি যে পড়াল।'
'
হায়! হায়! তাহলে এতক্ষণ আমি বকবক করলাম কার বাড়ি?'!

পুনশ্চ-১
বেশ কদিন হল চশমা নিয়েছি। ওটা মনেহয় ছেড়েই দিতে হবে। চশমা লাগিয়েও যখন সূর্যের কার্যকলাপ দেখতে পাই না তখন আর লাগিয়ে কি লাভ?! খবরের কাগজে পড়েছি বড় শহরে নাকি লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে চোখের সমস্যা সমাধান করা হয়। পড়তে হয় না চশমা। উন্নত প্রযুক্তির সেবাটা নিয়েই ফেলি। কি বল তোমরা?

কোন মন্তব্য নেই: