লিখেছেন : মৌসুমি আক্তার
যৌনতা! যৌনতা পুরুষের জন্য দাম্ভিকতার বিষয়, নারীর জন্য লজ্জার। নারীর জন্য তার যৌনতা, কামনা প্রকাশ স্বাভাবিক বিষয় নয়। আমাদের সমাজে এখনও যৌনতায় নারীর অবস্থান নিষ্ক্রিয়। যৌনতার সকল রসটুকু পুরুষের দখলে।পুরুষ যতটুকু যৌনানন্দ নারীকে দেয় শুধু সেটুকুই নারীর। নারী নিজের জন্য চিমটিখানিকও আদায় করেনা। আমাদের পুরুষেরা নিজেদের যৌন চাহিদায় বেশ সচেতন। তারা নিজেদের চাহিদার জন্য কাছে টেনেছে নারীকে, প্রেমিক সেজে, প্রভু সেজে। তার নিজেরটা সে কড়ায় গণ্ডায় আদায় করেছে। কিন্তু, নারীরটা? নারীরটা তো নারী নিজেই ভাবেনি।সে তার চাহিদায় পুরুষের কাছে সাড়া দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু কাঁটাটাই পেয়েছে, মাছটা ঠিকই কাঁমড়ে নিয়েছে পুরুষ।
আমাদের চিরাচরিত বিশ্বাস, নারীর সার্থকতা সমর্পনে।বাংলা সিনেমার সেই প্রচলিত প্রথা, সাবানা, ববিতারা নিজেদেরকে সঁপে দেবে আলমগীর, রাজ্জাকদের কাছে। কি সমর্পন! নারীর সবটুকুই পুরুষের! নিজের জন্য কিছুই না। যে নারী নিজের যৌনতার কথা বলবে না, যে নারী দু একটা যৌনালাপে লজ্জায় লাল নীল হবে, যার আঁচল ধরে টান দিলে সে আঁচল টেনে ধরবে , সে নারী ভালো নারী।কারন, সে নিজের যৌনতা প্রকাশ করেনি, নিজের কামনায় নিয়ন্ত্রণ রেখেছে, নিজের কাপড় নিজে খোলেনি, সে তো পুরুষকে যৌনান্দ দিতে এ কাজ করেছে, তাও আবার নির্দিষ্ট পুরুষকে, নইলে এ কাজ সে করতোই না।
আর যে নারী নিজের চাহিদা মিটিয়ে নিয়েছে, যে নিজের কামনায়, যৌনতায় সক্রিয় হয়েছে, পুংলিঙ্গের উপর উঠে বসেছে সে বেশ্যা মাগী, কারন তার চাহিদা আছে, চাহিদা প্রকাশের সাহস আছে, সে নিজের কাপড় নিজেই খোলে।এই কারনেই মুন্নি, শিলা, বাবলি, পিংকিরা এতো বদনাম হয়েছে। সানি লিওন ও মিয়া খলিফা সবার চোখে বাঁধে। যে নারী নিজের যৌনতা প্রকাশ করে, যে নারী নিজের কামনায় তাড়িত হয় সে মন্দ নারী। মেয়ে মানুষ কেন বিছানায় নিজেরটা বুঝে নিলো? পুরুষের নয়, নিজের চাহিদার কথা চিন্তা করলো?সে কেন পুরুষের দেয়া যৌনান্দটুকুতে সুখি নয়? এখানেই যত দোষ, এখানেই যতো রোশ, ক্ষোভ। আমরা নারীর যৌনতা, কামনাকে মেনে নিতে পারিনা, নারীর নিষ্ক্রিয়তায় প্রচন্ড অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি আমরা।তাই যদি কোনো নারী এর বিপরীতে যায়, নিজের অবস্থানে সক্রিয় হয়ে ওঠে, তবে আমরা তাকে বারবণিতা, কুলটা, অসভ্য, বেশ্যা হিসেবে দেখি।আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই এমন হয়ে যাচ্ছে।
মনে আছে, রবীন্দ্রনাথের বিনোদিনীর কথা? রবীন্দ্রনাথ তাঁর সাহিত্যে বিনোদিনীর মতো এক অপূর্ণ, বেহায়া, ব্যাভিচারিনীকে স্থান দিয়েছিলেন। বিনোদিনী নিজের চাহিদার সম্মান করেছে , কিন্তু আমাদের কাছে পায়নি। আমরা বিনোদিনীকে নিয়ে ভাবিনি, বিনোদিনীরও যৌনতার অধিকার আছে তা মানতে চাইনি। আমরা পুরুষদের দল বেঁধে হস্তমৈথুন করা হয়তো মেনে নিতে পারি, কিন্তু এক নারীর সেল্ফ অর্গাজম, ড্রিলিং প্রীতি মোটেই মানতে পারি না।কারন, নারীর যৌনাঙ্গে পুরুষের অধিকার আছে এটা সুস্পষ্ট, কিন্তু পুরুষের যৌনাঙ্গে নারীর অধিকারই পাকাপোক্ত নয়।তাই পুরুষই নির্ধারণ করে যে, সে নারীকে কতটুকু দেবে, আর নিজে কতটা আদায় করবে।
আমাদের সমাজে এক বিরাট অংশের পর্নোগ্রাফি আসক্তি আছে।পর্নোগ্রাফির নায়িকা ছাড়া রাতে ঘুম হয়না। তাকে পাবার বড় খায়েশ জাগে। পর্নোগ্রাফির নায়িকা উদ্দমী, যৌনতার তাগিদে ঝড় হয়ে ওঠে, তার অনেক সেক্স(যদিও পর্নোগ্রাফী নারী নির্যাতনেরই একটি উদাহরণ।)। তবে সে খারাপ মেয়ে, কারন সে নিজের বেলায় সচেতন, সে পুরুষের কাছ থেকে নিজেরটুকু আদায় করছে, প্রলয়ংকরী ঝড়ের মতো অসভ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে।কিন্তু, ওই পর্নোসুন্দরীকেই আমাদের পুরুষদের পছন্দ। তাকেই চায় মনে প্রানে। কিন্তু, ব্যাক্তিজীবনের নারীটি এমন হোক এটা সে চায় না, কিছুতেই না। কারন, ওটা বেশ্যাপ্রবৃত্তি, নারীর যৌনতা মানেই বেশ্যামী। আমাদের কাছে সেই একই থিওরি থেকে যায়, পুরুষের ক্ষেত্রে "Fuck
you" আর নারীর ক্ষেত্রে "Fuck
me"। বে ইনসাফি নয় কি?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন