শনিবার, ফেব্রুয়ারি ০৮, ২০১৪

বাংলার ভবিষ্যৎ/ মনোবর

                  লিখেছেন : মনোবর
অনেকেই ভাবছেন, বাংলার ভবিষ্যৎ কি? বাংলা কি তলিয়ে যাবে না ভেসে উঠবে তার পুরাতন গৌরব নিয়ে ? অনেকেই ভাবছেন অতীত কখনও ফিরে আসে না আর বাংলার বেলাও এর ব্যতিক্রম হবে না। তাদের বলছি বাংলার আকাশ থেকে ভুতুড়ে কালো মেঘের বান্ডিলটা হটিয়ে দেওয়া হয়েছে। মেঘটা অবশ্য এখনও খোয়াব দেখছে শক্তি সঞ্চয় করে আবার সে বাংলার সর্বনাশ সাধন করবে। ওটা একটা পচা বিদেশি ভাবধারার মেঘ। পৃথিবীর সব দেশ থেকে তাড়া খেয়ে বাংলায় পাক খাচ্ছিল। ছিন্ন-বিছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে সে মেঘ কে। কে করেছে? বাংলার দুর্জয় মা, বোনেরা করেছে; ভাই ভগিনী সকলে মিলে কাজটা সম্পন্ন করেছে। তাই গোটা বাংলার খেটে খাওয়া নিপীড়িত জনগণ যখন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে তখন একশ্রেণীর প্রচার মাধ্যম আর চিরকালের ষড়যন্ত্রকারী ঐ বাতিল হেজে যাওয়া পোকামাকড়গুলো নতুন করে মানুষের মন বিষিয়ে দেবার চেষ্টা করছেওদের এবার পাতালে পাঠিয়ে দিন কেন-না ওরা আলো হাওয়ায় থাকার উপযুক্তই নয়। এই পর্যন্ত বলে নেতানিধি চারদিকটা ভাল করে অবলোকন করে চক আউট করতে চাইলেন যে বক্তৃতাটা পাবলিকের মনে ধরছে কি না।
পরের বক্তা উসখুস করছেন তাও বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু এখনও হাততালির ঝড়টা ওঠেনি। ওদিকে সভাপতি আগেই কানে কানে বলে দিয়েছেন বেশী জ্বালাময়ী করতে গিয়ে আল ফাল বলে দেবেন না। নির্বাচনের লোকজন রেকর্ড করতে পারে। নিয়মের ঠ্যালায় রাজনীতি করাই দায় হয়ে উঠেছে!অত মেপে হিসেব করে বললে কি আর পাবলিক খায়!

দেখুন, আমাদের সামনে রয়েছে কাজের জোয়ার। কথার চেয়ে কাজ সবসময় দামী। সুতরাং বেশী আমি বলতে চাইনা। আপনারা দুর্নীতিমুক্ত সোনার বাংলা চান? জনতা সমস্বরে বলে, চাই। আপনারা কি বাংলাকে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে নিতে চান। এবার সামান্য কিছু লোক গলা না দেওয়ায় আওয়াজ একটু কম হলেও যা হল তা পিলে চমকাবার পক্ষে যথেষ্ট।

বেশ তবে আমাদের উপর আস্থা রাখুন। লোক সভার প্রত্যেকটা আসনে আমাদের প্রার্থীদের জেতান, বাংলার ভার আমরা নিলাম। নমষ্কার!

হাততালি চলল বেশ খানিকক্ষন। সন্তুষ্ট মনে, সাবধানে তিনি কাঠের মঞ্চ থেকে নীচে নেমে এলেন। ভক্তরা অনেকেই হাতে হাত মিলিয়ে তার বক্তব্যের ভূয়সী প্রসংসা করলেন। এরপর উঠলেন পরিসংখ্যান বিদ জেলার নেতা। দশমিকে দশমিকে দর্শককে ঘুম পাড়ানোই ওর কাজ। এসব গ্রাম্য এলাকায় ওসব চলে! কিন্তু জেলার নেতা কে সন্তুষ্ট না করে অঞ্চল নেতা উপরে উঠতে পারে না। উনি আবার একগুচ্ছ নির্দেশিকা জারী করেছেন। নেতারা কেউ প্রকাশ্যে মদ্যপান বা মাতলামি করতে পারবে না। কন্ট্রাকটরদের সঙ্গে মাখামাখি নিষিদ্ধ। কোন কাজ করে দেওয়ার অছিলায় কারো কাছ থেকে কোন অর্থ নেওয়া যাবে না। দলীয় কর্মসূচীতে সর্বদা হাজির থাকতে হবে। মানুষের পাশে থাকতে হবে।

এতদিন ব্যাচেলর ছিল। মাস তিনেক আগে বিয়ে করেছে। ওসব আদর্শ পেছনে ঢুকে যাবে আর কিছুদিন যাক। আপন মনে শাপ শাপান্ত করতে করতে অরবিন্দ একটা বিড়ি ধরায়। যদিও গোটা এক প্যাকেট গোল্ড ফ্লেক তার পকেটে ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে সাবির হাসান। অঞ্চল সমিতির তিনটে বড় কাজ করছে সাবীর। আর তাছাড়া এটা প্রতিষ্ঠিত নিয়ম যে অঞ্চল সমিতির সভাপতি কখনও পকেটের পয়সায় ধূমপান করবেন না। তা চামার নয় অরবিন্দ। আগের সভাপতির মত পাওয়া সিগারেট দোকানে বিক্রি করে না সে। নিজে খায় অন্যকে খাওয়ায়। জনসভার সময় বিড়ি খেতে হয় এবং সবচেয়ে ভাল সেটা তুমি সমর্থকদের থেকে চেয়ে খাবে। এতে কি হবে- সে তোমাকে কাছের মানুষ ভাববে।

তা দলের কর্মসূচী সারা বছর লেগেই আছে। হাওয়া খেয়ে তো আর কর্মসূচী করা যায় না। কিছু রোজগার পাতি দরকার। মাসল পাওয়ার না থাকলে সে নেতাকে কেউ গ্রাহ্য করে না। মাসল পাওয়ার মানে থানার উপর প্রভাব থাকা চাই। সেটা রাখতে গেলে বাবুদের পকেটে কিছু পড়া চাই। অতএব কিছু না খেয়ে জনসেবার কথা শুনতে ভাল কিন্তু বাস্তবে অচল। ভ্যান রিক্সা, অটো, ক্লাব, বেকার বাউন্ডুলেদের মধ্যে যারা ডাকা বুকো, কলেজস্টুডেন্টদের মধ্যে যারা বলিয়ে কইয়ে এরা হল তোমার আসল সৈনিক। এদের পেতে হবে মিটিং এ মিছিলেকান টানলে মাথা আসবে। ওরা এল মানে ওদের পরিবারের বেশীর ভাগই তোমার দিকে ঢলে পড়ল। এবার বাকি রইল সমাজবিরোধীর দল। খুব সাবধানে এদের হ্যান্ডেল করার মধ্যেই তোমার রজনৈতিক ভবিষৎ লুকিয়ে থাকে।

এসব ঘাঁট ঘোঁট বুঝতে কম করে দশ বছর সময় লাগে। নীতির স্থান পুস্তকে। বাস্তবে রয়েছে অভিজ্ঞতালদ্ধ কর্মপন্থা। সেটা অগ্রাহ্য করে সব জায়গায় পুস্তক বোলালে বুঝতে হবে তোমার টাইম ওভার। থাকবে পড়ে মোড়ের মাথায় শহীদ বেদী হয়ে। ওছাড়া আর পাবার কিছু নেই। গান্ধী, চিত্তরঞ্জন স্টাইল এযুগে অচল বাবু। সবাই নগদে কিছু চায়।

কিন্তু এ হল অরবিন্দ মন্ডলের ব্যাখ্যা। পাবলিক কি বলছে সেটাও শোনা দরকার। তারা বহুমতে বিভক্ত। অরবিন্দ যাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঝুলিয়ে রেখেছে তাদের মতে বেঁচে থাকার তাগিদে কিছু কিছু কাজ ইচ্ছা না থাকলেও করতে হয়। অরবিন্দ যা করছে তা অন্যরাও করে বা করত। লালুবাবু যেমন বলত, ঠাকুররা করলে রাজনীতি আর আমি করলে দুর্নীতি কেননা আমি যাদব!

আর যাদের কিউবার চিন্তায় ঘুম হয়না তারা কি বলে? তারা বলেনা, আর্তনাদ করে ওঠে, ঊঃ! সব শেষ করে দিল। তেলেভাজার দোকান তুলে দিয়ে পঞ্চায়েতের সভাপতি হয়ে অ্যাসবেসটস ফেলে ছাদ করল। তিনটে ঘর নতুন বানাল। বাইক চেপে ঘুরছে। আর পাঁচ বছর যদি থাকতে পারে তাহলে মুকেশ আম্বানির সঙ্গে টক্কর নেবে।

থাকা অত সহজ নয়। বিশ্বাসী লোক অবিশ্বাসী হয়ে যাচ্ছে। কন্ট্রাকচুয়্যাল হোমগার্ড হলে ২৫ হাজার, প্রাইমারী টিচার হতে গেলে প্রথমে দেড় লাখ পরে একলাখ। রাস্তা বা নির্মাণের কন্ট্রাক্ট ধরতে গেলে ৫% মোট বরাদ্দের অংশ এসব কি নতুন? এসব যা হয় তার সামান্যই অরবিন্দ পায়। কিন্তু অন্যরা খাবার সময় খাবে আবার জল ঘোলাও করবে। ইতিমধ্যেই উপর মহলে রিপোর্ট হয়েছে। তাকে সমঝে চলতে বলা হয়েছে। বয়ে গেল। নীতিবাজ রা এসে ভোট টা জেতাক না কেমন পারে!

বাড়ী ফিরে শোবার আগে মা কালীর সামনে জোড় হাত করে দাঁড়ায় অরবিন্দ। বৌ একবার ঊঁকি মেরে চলে যায়। যা পারে করুক উন্নতি তো হচ্ছে। সে এবার ছেলের দিকে নজর দিয়েছে। তাকে দশ জনের একজন করবে। রাজনীতি বাপ করছে করুক এসব ছ্যাঁচড়ামো ছেলেকে করতে দেবেনা।অরবিন্দ এখন দস্যু রতনাকর। যা করছ তুমি কর আমরা ওর ভাগ নেবোনা।

আর একটু করে নিতে দাও মা! চন্ডী, অসুরনাশিনী! ঐ চিন, কিউবার ভক্তদের দিকে রোষদৃষ্টি দিয়ে জিভ বার করে থাকো আর নীতিবাগিশদের চৈতন্য করে দাও। একটু গুছিয়ে নিয়ে নিজেকে উইয়ের ঢিবি করে নেব। তারপর যদি বাঁচিয়ে রাখো হে জগৎজননী, আমরা তো ওদের মত নাস্তিক নয়,তোমার খাঁড়াকে ভয় করি। আমরা যা করলুম করলুম ছেলেপুলেদের কথা ভেবে বাংলাকে সোনার করে দিও যেন গর্বকরে ওদের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারি। তোমায় রূপোর হাঁড়িকাঠে বলি দেওয়া পাঁঠা খাওয়াব। সোনার জিভ করে দেব তো্মায় আনন্দ করে খাবে আর বিপদে এই ছেলের পাশে দাঁড়াবে।

প্রার্থনা এত জমে যায় যে অরবিন্দের চোখ ভিজে ওঠে। উপুড় হয়ে মেঝেতে মাথা দিয়ে পড়ে থাকে অরবিন্দ, রক্তে তার কারণের ঢেউ খেলে। মেঝে মানে মাটি ধরলেও ধরা যায়, আর বেদীতে ঐ মা!
বলুক না পাবলিক বুকে হাত রেখে অরবিন্দ মানুষ কি না!

কোন মন্তব্য নেই: