বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০১৩

একদিন সম্রাট (পর্ব ২)

                      লিখেছেন : মনোবর
বিজ্ঞাপন চলাকালীন আরো বহু বন্ধু আসিয়া উপস্থিত হইলেন তন্মধ্যে মারভিন মুলতানা, অতিধীর চাকি, কর্শিকা বসু, দিব্যানন্দ সেন, কবি ওংকার মুখারজী, আপা সরকার, নাবিল হাসান, দৃষ্টি বৃষ্টি শর্মী,উদ্দীপ্তা ভৌমিক, অব্লিভিয়ন আসিরিয়া, উদ্দীপন চক্রবর্তী, বিজলী মেঘ মেঘান্তিকা, আমি আঙুর লতা, মৈথিলী পাল, ঝুমা বসু, ভয়ংকর বড়ুয়া, প্রবল আলো, সসীম রায়, বাপ্পাদিত্য চ্যাটার্জী এবং সাংবাদিক বোধিসত্ব প্রভৃতিগণ সভাস্থ সকল সভ্যগণের মনোযোগ লুন্ঠন করিতে সমর্থ হওয়ায় সম্রাট যারপরনাই আনন্দিত হইলেন এত্রাদৃশ নক্ষত্র সমাবেশ সম্রাট হর্ষবর্ধনের পরে আর কোন রাজাধিরাজ ঘটাইতে পারিয়াছেন বলিয়া জানা নাই বলিয়া সভাস্থ সকলেই উছ্বাস প্রকাশকরিতে লাগিলেন

অতঃপর প্রধান সেনাপতি সম্রাটের নিকটবর্তী হইয়া খবর দিলেন যে আরো দুইজন সম্মানীয় অতিথিকে সম্রাটের আদেশ বলে লইয়া আসা হইয়াছে এবং তাহারা সভায় প্রবেশের জন্য দ্বারদেশে অপেক্ষা করিতেছে
সম্রাট, নরশ্রেষ্ঠ, রাজকুলতিলক মনোবর তাহা শ্রবন করতঃ চঞ্চল হইয়া স্বয়ং উত্থিত হইয়া অত্যন্ত সম্মান পূর্বক তাহাদের আপ্যায়ন করিয়া আপন সিংহাসন প্বার্শে তাহাদিগকে উপবেশন করাইলেন ইহারা হইলেন দিগন্ত বিস্তৃত খ্যাতির অধিকারী নৃত্যপটিয়সী আহিতি সিনহা এবং ভূগোল বিশেষজ্ঞা শ্রীমতী মলি তাহাদের রূপ লাবণ্য এবং সমাদর দেখিয়া ঝুম্পা নভঃমন্ডল ক্রোধে অগ্নিবর্ণ ধারণ করিলেন, আমি আঙুরলতা ওষ্ঠস্থল বক্র করিয়া ব্যাঙ্গ করিলেন এবং কর্শিকা, আলো প্রভৃতি মহাকবিগণ গম্ভীর রূপ ধারণ করতঃ উদাসীন রহিলেন 

অতঃপর সম্রাট দন্ডায়মান হইয়া অতিথিগণ কে প্রভূত শ্রদ্ধা সম্মান ব্যক্ত করতঃ সুমধুর বচনে তাহাদিগকে সন্তুষ্ট করিবার প্রয়াস লইলেন
হে মহামান্য প্রতিভাবান এবং প্রতিভাময়ী বন্ধু-বান্ধবীগণ, আপনাদের প্রেমময় সাহচর্য্যে আমি নিজেকে ধন্য মনে করিতেছি, এই সভায় উপস্থিত হইবার জন্য আপনাদের প্রত্যেকের কাছে গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করিবার সুযোগ লাভ করিয়া নিজেকে এই মর জগতের সর্বাপেক্ষা সৌভাগ্যশালী মানুষ বলিয়া উপলদ্ধি করিতেছি এবং আপনাদের অবগতির জন্য জ্ঞাপন করিতেছি যে বিদূষী মহিলারা এইমাত্র আমার প্বার্শে উপবেশন করিয়া বিপদাশঙ্কায় উদ্বিগ্ন ভাবে কালক্ষেপ করিতেছে তাহারা জুকারবার্গের নিয়মানুযায়ী আমার বন্ধু না হইলেও পরম বান্ধবী বিবেচনায় বলপূর্বক এই মহাসভায় তাহাদিগকে উপস্থিত করিবার জন্য আমি তাহাদের নিকট মার্জনা ভিক্ষা করিতেছি এইরূপ শ্রবণ করা মাত্রই প্রধান সেনাপতি ক্রুদ্ধ হইয়া তরবারি নিষ্কাশন করিলে সম্রাট তাহাকে ভৎসনা পূর্বক উপবেশন করিতে আজ্ঞা করিলেন এবং বলিলেন, ‘ হে মহাবীর, সম্রাটের সন্মুখে ক্রোধ প্রকাশ করা তোমার পক্ষে সমীচীন নহে তদুপরি এই মহিলাগণ আমাকে মার্জনা ভিক্ষায় বাধ্য করিতে অসমর্থ তবে তুমি কোন হেতু অতিথিগণের হৃদয়ে ভীতির সঞ্চার করিতেছ? যাও, আমার আদেশে ইহাদিগের উত্তম পান ভোজনের পূর্ণ ব্যাবস্থাদি সম্পন্ন করিয়া আমার শান্তি নিশ্চিত করইহা শ্রবণ করা মাত্রই সেনাপতি সসম্ভ্রমে মহারাজের প্বার্শে উপবিষ্ট মহিলাযুগলের কাছে মার্জনাভিক্ষা করিয়া তাহাদিগকে প্রসন্ন করিলেন অমনি তাহাদিগের রূপলাবণ্য শতগুণে বর্ধিত হইয়া দেবগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করিল
অতঃপর অতীব সুন্দরী ষোড়শ হইতে অষ্টাদশ বর্ষ বয়ঃপ্রাপ্ত প্রশিক্ষিত যুবতীগণ নানাবিধ উপাদেয় খাদ্যসকল লইয়া সভাস্থলে উপস্থিত হইলে তাহার সুরভিতে অতিথিগণের রসনা সিক্ত হইয়া উঠিল
রৌপ্য এবং স্বর্ণ নির্মিত পাত্রে ঘৃতসিক্ত অতিশয় কোমল ও স্থূল কলেবর বিশিষ্ট তন্দুরি রুটি, বাসমতি চাউলের মিহি অন্ন এবং তৎসহ মোগ্লাই ও ইউরোপিয়ান ঘরানার মাংসের নানাবিধ পদ,একাদশ প্রকার মৎসের পদ সকল সহ নানাবিধ কারি, কালিয়া, ভাজা, সুক্তো,দধি, সন্দেশ, রাজভোগ, পায়েস প্রভৃতি খাদ্য বস্তু অবলোকন করিয়া সপ্তলোক চঞ্চল হইয়া পড়িল হাপুস-হুপুস, কচর মচর শব্দে দশদিক মুখরিত হইল অতিথিগণ প্রায় সকলেই খাদ্যগ্রহণ তথা পরিবেশন কারী যুবতীগনের রূপ লাবণ্যের মাত্রাবিচারে ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন

কেবল দুইজন মহিলা তদবধি খাদ্যগ্রহণে ইতস্ততঃ করিতে লাগিলেন
ইহা অবলোকন করিয়া নবনিযুক্ত প্রধানমন্ত্রী উড়ুমন পাগল দাড়িমধ্যে অঙ্গুলি সঞ্চালন করিয়া উপায় বাহির করিতে ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন তাহার অস্থিরাবস্থা লক্ষ্যপূর্বক বুদ্ধিমতী আহিতি তাহার কর্ণদেশে মৃদুস্বরে কহিলেন, ‘মন্ত্রীমহোদয়, আপনি কি আমাদিগকে এইস্থান হইতে নিষ্ক্রান্ত হইবার কোন উপায় করিতে পারিবেন?’ কর্ণের এত নিকটে উর্বশীর ওষ্ঠ সঞ্চালনে উড়ুমন অতিশয় চঞ্চল হইয়া উঠিলেন তাহার দৃষ্টি কেবলই ঘুরিতে লাগিল কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ যেইমাত্র দৃষ্টিখানি সেনাপতির প্রশস্ত তরবারির উপর পতিত হইল অমনই তার ক্ষণকালস্থায়ী রোমাঞ্চ অন্তর্হিত হইয়া হৃদয়ে প্রবল ভীতির প্রাবল্য উপস্থিত হইল তিনি তাহার সাইবাবাসদৃশ চুলগুলি আন্দোলিত করিতে করিতে বারংবার কহিতে লাগিলেন এইরূপ দুঃসাহসিক কর্ম তাহার দ্বারা সম্ভব নহে ইহা শ্রবণ করিয়া আহিতি ও মলি নামক রমণীদ্বয় প্রমাদ গুনিলেন এইসময় পুর্বতন বৃদ্ধ মন্ত্রী তাহাদের কর্ণে আশ্বাস দিয়া কহিলেন, ‘আপনারা ব্যস্ত হইবেন না মহারাজ যেমন আপনাদের শত্রু তদরূপ আমারও শত্রু অদ্যনিশি সমাপ্ত হইবার পুর্বেই বিষপ্রয়োগে তাহাকে হত্যা করা হইবেদুর্ভাগা মন্ত্রী লক্ষ্য করিলেন না যে আমি আঙুরলতা সকলের অগোচরে তাহাদের বাক্যালাপ শ্রবণ করিতেছে

যে কোন কারনেই হউক আমি আঙুরলতা প্রবেশাবধি এই দুই মহিলার উপর নজরদারি করিতেছিল
এক্ষনে ভয়ংকর ষড়যন্ত্রের সন্ধান লাভ করিয়া সে সম্রাটের নিকটবর্তী হইবার প্রয়াস করিতে লাগিল মহারাজ এতদসময় ভয়ংকর বড়ুয়ার সহিত আলাপে ব্যস্ত ছিলেন অন্যদিকে বহুরঙ্গ দে নানা বিষয়ের খুঁত ধরতঃ সেগুলি নিখুঁত করিবার উপায়সকল বর্ণনা করিবার একজন উপযুক্ত শ্রোতার সন্ধানে ছিলেন সাংবাদিক বন্ধু ভোজনান্তে ছবিতুলিতে ব্যস্ত ছিলেন অর্ণব শাসমল হামাগুড়ি অবস্থায় উপনীত হইয়া প্রাসাদের দরজা জানালা প্রভৃতির কারুকাজগুলি বুঝিবার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন মেঘ মেঘান্তিকা মেঘের দিকে উদাসীনভাবে দৃষ্টি স্থির করিয়া বসিয়া ছিলেন বাপ্পাদিত্য একটি কাগজে একটি অভিমানের কবিতা লিখিতে ছিলেন পানশালার কবি পরিচারিকাদের উপর কেন অত্যাচার হইতেছে এই বিষয় লইয়া আলোচনার একজন উপযুক্ত লোকের সন্ধান করিতে ছিলেন নবিল হাসান অবাক হইয়া এই বিপুল বৈভব নিরীক্ষণ করিতেছিলেন
মারভিন ঝুম্পাদেবীর সঙ্গে আলাপে ব্যস্ত ছিলেন
নিউ ইয়র্ক হইতে আগত ঝুমা বসু তাহার সুদৃশ্য ডায়েরীতে নানা বিষয়ের উপর সংগৃহীত তথ্যগুলি লিখিয়া রাখিতে ব্যস্ত ছিলেন তাহার কেতাদূরস্ত চালচলন অনেকের চোখে ঈর্ষনীয় বোধ হইতেছিল এবং এ বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল ছিলেনএইরূপ যখন সকলেই হৃষ্টচিত্তে আপন আপন কর্মে ব্যস্ত ছিলেন সেই সময় প্রাসাদের অভ্যন্তরে এবং বাহিরে সম্রাট নিধনের প্রস্তুতি জোর কদমে আপন লক্ষ্যে অগ্রসর হইতেছিল কেবল আমি আঙ্গুরলতা, আহিতি ও মলি ভিন্ন তাহা বাকি সকলের কাছেই তদবধি অজ্ঞাত ছিল (ক্রমশঃ)

কোন মন্তব্য নেই: