মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ২৪, ২০১৩

মাদ্রাসা : ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার প্রবেশ, অনেক আগেই প্রয়োজন ছিল

  লিখেছেন : অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়  
নদিয়া জেলার চাপড়া এলাকার প্রত্যন্ত গ্রাম পানিনালায় আমাদের রাজ্যে এই প্রথম হাই-মাদ্রাসায় ইংরাজি মাধ্যমে শিক্ষার প্রচলন হতে যাচ্ছে । নতুন সরকারের এই সাধু প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাতে আমার কোনো কুণ্ঠা নেই। যদিও যেটা উল্লেখ না করলে অন্যায় হবে, সেটা হল বিগত বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই রাজ্যের সব ক-টি জেলাতে অন্তত একটি করে ইংরেজি মাধ্যমের হাই-মাদ্রাসা চালু করার সিদ্ধান্ত হয়। শুধু সিদ্ধান্ত নিলেই হল না, তা রূপায়ণ করতে হবে –- না-হলে হিমঘরের সিদ্ধান্ত সাধারণ মানুষের কোনো কাজে লাগবে না।
সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার কৃতিত্বটি অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল সরকারের। প্লিজ, আমাকে আবার তৃণমূলি ভেবে বসবেন না। তাই বলে বামপন্থীও নই। সে যাই হোক। প্রসঙ্গত মুসলিম সমাজ উপলব্ধি করতে পেরেছে একদা ব্রিটিশ-ভারতে ইংরেজ ও ইংরেজি ভাষা বর্জন করা সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল না। যার ফলে মুসলিম সমাজ অনেক অনেক দূর পিছিয়ে পড়ল। এখন দেরিতে হলেও তারা বুঝেছেন, ইংরেজি ভাষাকে পশ্চিমের ভাষা বলে দূরে সরিয়ে দেওয়া নয়, কারণ ভাষার পূর্ব-পশ্চিম হয় না। ইংরেজি না জানলে কাজের জগতে, চাকুরির বাজারে কিছু করার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে পড়ে। এই ইতিবাচক চিন্তাই অগ্রগতির সহায়ক হবে এ বিশ্বাস আমার।
মাদ্রাসা শিক্ষা সম্পর্কে আমাদের বিস্তর ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। অনেকে মনে করেন, মাদ্রাসায় কেবল সংখ্যালঘু ছাত্ররাই পড়ে এবং সেখানে কেবল ধর্মশিক্ষাই দেওয়া হয়। কিন্তু যেটা জানি না, জানার চেষ্টা করি না – তা হল, সংখ্যালঘু ছাত্রছাত্রীর মাত্র ৪ শতাংশই মাদ্রাসায় পড়ে, অন্য সকলে রাজ্যের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্কুলেই পড়াশোনা করে। গ্রাম-বাংলার মাদ্রাসাগুলিতে নিম্নবর্গীয় পড়ুয়াদের ভিড়ই বেশি। এ ছাড়া ১০০ নম্বরের আরবি পাঠ্যক্রম ছাড়া মাদ্রাসার আর সব শিক্ষাক্রমই রাজ্যের মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্কুলেরই অনুরূপ।
আমি রাজ্য সরকারকে বিনম্র অনুরোধ করব, যত দ্রুত সম্ভব প্রতি জেলায় একাধিক ইংরেজি মাধ্যম মাদ্রাসা চালু করা প্রয়োজন। সমগ্র রাজ্যে যে ৫০০-র বেশি হাই-মাদ্রাসা আছে, ধীরে ধীরে সেগুলির অধিকাংশতেই ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষা প্রবর্তন করতে হবে। সংখ্যালঘুদের প্রকৃত উন্নয়নের চাবিকাঠি নিহিত আছে আধুনিক এবং বিজ্ঞানসম্মত শিক্ষায় শিক্ষিত করে প্রতিযোগিতার বাজারে লড়াই করার যোগ্যতায় মণ্ডিত করার প্রয়াসের মধ্যে। সেই সঙ্গে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার প্রচলন বৃত্তিশিক্ষার ব্যাপক আয়োজন, বিজ্ঞানমনস্কতা ও অন্ধ কুসংস্কারবিরোধী চেতনার বিকাশ ঘটানো বিজ্ঞানশিক্ষার উপর জোর দেওয়া, আবাসিক শিক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি করাও কাম্য। দেশে একটি মানুষও যদি অশিক্ষিত, কুসংস্কারাচ্ছন্ন, পিছিয়ে-পড়া হয়, তবে সমগ্র দেশ পিছিয়ে পড়ে।

কোন মন্তব্য নেই: