লিখেছেন : নুসরত
জাহান চ্যাম্প
আপনার শিশুটি যেমন আপনার কাছে জীবন্ত খেলনা, তেমনি আপনার
শিশুরও প্রয়োজন খেলনার। কারণ শিশুরা খেলতে খেলতেই শেখে, খেলতে খেলতেই বড় হয়। খেলনা এবং খেলা শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশেরই একটি মাধ্যম। একজন মানুষ ছোটবেলায় কী ধরনের
খেলনা দিয়ে খেলেছে, তার প্রভাব
পড়ে মানুষটির ব্যক্তিত্বের ওপর। শিশুর জন্য খেলনা বাছাইয়ে তাই হতে হবে সচেতন। কিছু বিশেষ বিষয়ের প্রতি খেয়াল রেখে
শিশুর খেলনা বাছাই করা উচিত। কেননা আপনার নির্বাচনটি সঠিক না হলে তার কুফল ভোগ করবে আপনার কোমলমতি শিশুটিই!
শিশুর বয়স :
শিশুর বয়স অনুযায়ী খেলনা কিনুন। অনেক খেলনার বাক্সের গায়ে বয়সসীমা লেখা থাকে। আপনার শিশুর বয়স ৩ হলে ২ থেকে ৪ বছরের বাচ্চাদের
খেলনাই তার উপযুক্ত। বয়সের তুলনায়
বড়দের খেলনা দিয়ে খেললে শিশুর মানসিক বিকাশ বাধা পড়ে ও ব্যক্তিত্ব গঠনে চাপের সৃষ্টি হয়।
পছন্দ :
খেলনার ব্যাপারে শিশুর পছন্দকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত। খেলনা আপনার পছন্দের থেকেও যেন আপনার শিশুর পছন্দ বেশি হয়। আপনার
পছন্দ হয়েছে বলেই কিনে ফেলবেন অথচ আপনার শিশু সেভাবে আনন্দ পেল না এমনটা যেন কখনোই না হয়। এমন খেলনা নির্বাচন করুন যেটা আপনার বাচ্চাকে আনন্দ দেবে।
স্বতঃস্ফূর্তভাবে সে যেন সেই খেলনা
নিয়ে খেলতে পারে। পড়াশোনা বা অন্যান্য কাজের মতো খেলাধুলাও যদি শিশুর ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়, তাহলে তা শিশুর জন্য ক্ষতির কারণ বয়ে আনবে। শিশুর মানসিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পছন্দসই খেলনা দিয়ে
খেলতে পারলে শিশু উদার
ব্যক্তিত্বের অধিকারী হয় এবং মিশুক প্রকৃতির হয়।
রং :
বাচ্চারা রঙের প্রতি খুব সহজেই আকৃষ্ট হয়। একদম ছোটদের রং, আকার চেনাতে বিভিন্ন রঙিন খেলনা, ব্লক কিনে
দিতে পারেন। এতে ওরা খেলতে খেলতে শিখে যাবে নানা রং, বিভিন্ন আকার। তবে খেলনার রঙের ক্ষেত্রে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক রঙের প্রতি জোর দেয়া উচিত। কারণ ছোট শিশুদের চোখের ওপর এসব রং
কম চাপ ফেলে। রঙিন খেলনা
শিশুর ব্যক্তিত্বে নিয়ে আসে প্রাণোচ্ছ্বলতা। রঙিন খেলনা সেই সাথে মানসিক বিকাশেও সহায়ক।
টক্সিসিটি :
ছোট শিশুরা জিনিস হাতে পেলেই মুখে দেয়। তাদের এই প্রবণতার কথা মনে রেখেই এমন খেলনা নির্বাচন করবেন তা যেন অবশ্যই নন-টক্সিক হয়।
ছোটদের বিভিন্ন খেলনার গায়ে
লেখাও থাকে নন-টক্সিক। শিশুর খেলনা যাতে টক্সিন ফ্রি হয় তা খেয়াল রাখা আপনার দায়িত্ব।
সৃজনশীলতা :
শিশুর জন্য এমন খেলনা নির্বাচন করুন যা আপনার শিশুর সৃজনশীলতা বাড়াতে সাহায্য করে। কিনতে পারেন স্ট্রাকচার মেকিং বা ব্লকস
জাতীয় খেলনা যার সাহায্যে নানা
ডিজাইন বা ছবি তৈরি করা যায়। মনের আনন্দে খেলতে খেলতে নতুন কোনো কিছু তৈরি করতে পারলে ওদের উত্সাাহ আরো বাড়বে। এ
ধরনের খেলনা শিশুকে নিজের প্রতি
আত্মবিশ্বাস গড়তে সহায়তা করে। শিশু নিজের গুণাবলিকে গুরুত্ব দিতে শেখে এবং নেতৃত্বের লক্ষণও প্রস্ফুটিত হয়।
নিরাপত্তা :
শিশুর জন্য এমন খেলনা নির্বাচন করুন যা থেকে আপনার শিশুর কোনো বিপদ বা ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে। ধারালো বা তীক্ষ্ম খেলনা, গানস অ্যান্ড ফলস বুলেটস, মেকানিক্সের জিনিসপত্র জাতীয় খেলনা শিশুদের থেকে দূরে রাখাই ভালো। এ ধরনের খেলনা আপনার শিশুর যদি একান্তই পছন্দ হয় তাহলে খেলার সময়
বড় কেউ যেন সামনে থাকে। এতে
শিশু নিজের নিরাপত্তার প্রতি সচেতন হয়ে গড়ে ওঠে।
খেলতে খেলতে শেখা :
পছন্দ, ভালো লাগা বুঝে নিয়ে খেলার
মাধ্যমে কী করে তার জ্ঞানের পরিধি আরো বাড়ানো যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। বিভিন্ন পাজল গেম, কনস্ট্রাকটিভ সেটিংস, অ্যাক্টিভিট কিউবস, ব্লকস - এসব কিছুই হতে পারে এডুকেশনাল গেম। চাপিয়ে দিয়ে নয় বরং খেলতে খেলতে শিখলেই শিশুর তা মনে
থাকবে বেশি। এভাবে শিক্ষা পেলে
শিশু স্বাধীনচেতা হিসেবে গড়ে ওঠে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন