লিখেছেন : এস বড়–য়
হিজরি সাল থেকে
বঙ্গাব্দের জন্ম হলে , হিন্দুরাজনীতি
ইসলামিক হিজরি সালকে বিকৃত এবং অপমানিত করে চন্দ্র বা সূর্য ক্যালেন্ডারের নামের দোহাই দিয়ে , চর্যাপদের বুদ্ধাব্দ এবং ইসলামের হিজরি সালকে পরিহার করে
হিন্দুমার্কা বঙ্গাব্দ রচনা
করেছেন। সম্রাট আকবরের আমলে রচিত আল্লাহ উপনিষদ না মেনে বাবরি মসজিদ ধ্বংস এবং বঙ্গাব্দের বিকৃতির জন্য হিন্দুরাজনীতিই দায়ী। আরবীয় সভ্যতার হাজার বছর পূর্বে প্রাচীন বাংলার
মহারথী বঙ্গবীর বিজয় সিংহ শ্রীলঙ্কা অধিকার করে ‘সিংহল’ নামকরণ করায় ‘মহাবংস’ নামক শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে ‘বুদ্ধাব্দ’ সংযোজন আজ ও
বিরাজমান। নাট্টসম্রাট দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের লেখা ‘সিংহল অভিযান’ শীর্ষক
ঐতিহাসিক নাটকে বাঙালির বীরত্বের কাহিনী লিপিবদ্ধ থাকলে ও পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু রাজনীতিতে আজ ও বুদ্ধপূর্নিমায় কোন সরকারি ছুটি নাই। হিন্দুরাজনীতি
হিজরি সালকে বিকৃত করে বঙ্গাব্দ করেছে। প্রসঙ্গত : চর্যাপদের অন্যতম কবি ভুসুকু পাদ ‘ বাঙ্গালি ’ শব্দের আবিষ্কারক হলে হিজরি সাল থেকে বঙ্গাব্দের জন্ম হয় কি করে ? বৌদ্ধ দশরথ জাতক অনুসরন করে হিন্দু রামায়ন রচিত হয়েছে (আনন্দ বাজার পত্রিকা, সম্পাদকীয়, আগষ্ট ২২, ১৯৯৩ ) এবং
ভারতে তিরুপতি বালাজি ও পুরীর জগন্নাথ মন্দির সহ রাশি রাশি বৌদ্ধ বিহার ভেঙে হিন্দু মন্দিরে পরিনত করেছে। আল্লাহ উপনিষদ রচনা করে বাবরি মসজিদ ধ্বংস করলে ও হিন্দু
পন্ডিতগণ রামায়নের অযোধ্যা
অধ্যায় (কান্ড ) এর ৩২ নম্বর শ্লোকে বুদ্ধ কে চোর এবং বৌদ্ধদেরকে নাস্তিক বলে গালগাল করেছেন। সিন্ধু সভ্যতার মহেঞ্জোদারো
ও হরপ্পায় বৈদিক রাজা ঈন্দ্র
কাশ্যপ বুদ্ধের বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস কওে ভারতে বৈদিক সভ্যতা প্রতিষ্ঠা সহ জাতিভেদ প্রথা দিয়ে মানবতাকে খন্ড বিখন্ড
করেছে।
কোলকাতার বাজারে বাংলা ডাইরেক্টরি পঞ্জিকার রমরমা ব্যবসা করতে বাবরি মসজিদের মতো বাংলায় হিন্দুরাজনীতি ১৪৩৪ ইসলামি হিজরি
সালকে ভেঙে ১৪২০ বঙ্গাব্দ
করেছে কি ? চট্টগ্রামের ভাষায়, “ সাত পাঁচ চৌদ্দ , দুই টাকা নদ্য ” নিয়ে
বঙ্গাব্দে হিন্দুরাজনীতির গভীর ষড়যন্ত্র হলো , বুদ্ধাব্দ কে (চর্যাপদের
বঙ্গাব্দ) ভারতীয় মানচিত্র থেকে চির নির্বাসন দিতে। বাবু অমর্ত্য সেন বঙ্গাব্দের উৎপত্তির ইতিহাস রচনায় হিজরি
সাল নিয়ে মক্কা ও মদিনার কথা
তাঁর ঢাকার ভাষনে উল্লেখ করে ও ১৪৩৪ ইসলামিক হিজরি সাল আজ ১৪২০ বঙ্গাব্দ করার যথার্থ ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট অনুপস্থিত ছিল
। অন্যায় কাজ মেনে নিয়ে
নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেনের ভাষনে তিনি সত্যি ঘটনা স্বীকার করে বলেছেন, “অন্যরা করুক
না করুক,
সেটা করতে আমরা রাজি হয়েছি, চেষ্ঠা করেছি, সচেষ্ঠ হয়েছি এবং এক্ষেত্রে সফল ও হয়েছি। বাংলা সন সম্বন্ধে তো সবাই জানেন।” বুদ্ধাব্দকে
বাদ দিয়ে হিজরির অনুকরনে বঙ্গাব্দ লেখা যে সম্রাট আকবরের আদেশ ছিল, তা সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রসঙ্গ নিয়ে বাঙলাদেশের মহাবীর ঈশা খাঁ সম্রাটের সেনাপতি মানসিংহের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন
কি?
বীর বাঙালি অন্যায় সহ্য করে না । আমরা কি হিন্দু রাজনীতির আল্লাহ
উপনিষদ এবং ঈশা খাঁর উক্ত যুদ্ধের
কথা ভুলে যাবো?
জাতীয় পঞ্জিকা নিয়ে বঙ্গাব্দের মতো এমনতরো হিন্দুরাজনীতির ঐতিহাসিক ষড়যন্ত্র ভারতে আর কোথাও হল না কেন ? হিন্দুরাজনীতি ইচ্ছা করে ইসলামিক হিজরি সালকে বিকৃত করে মনগড়া মিথ্যা বঙ্গাব্দ রচনা
করেছে। বুদ্ধাব্দকে ধ্বংস করে
বঙ্গাব্দে হিন্দুরাজনীতি প্রসঙ্গ এবং বঙ্গাব্দে ২৬০০ বছর পূর্বের বঙ্গবীর বিজয় সিংহ কোথায় হারিয়ে গেল? বাংলা বর্ণমালার হাতধরেই বাঙালি জাতির সভ্যতার যাত্রা এবং প্রথম বাংলা বইয়ের নাম “চর্যাপদ। আটচলিশ সাল থেকে বায়ান্নোর আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্র“য়ারী আমি কি ভুলিতে পারি? অমর একুশের
রক্তাক্ত ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” আলোকিত বিশ্বের গৌরবোজ্জ্বল প্রতিশ্র“তি। জ্ঞান
বিজ্ঞানের আলোকের ঝর্ণাধারায় সমৃদ্ধ আজ বাংলাভাষা, স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ঠ্রের ‘রাষ্ঠ্রভাষা।
বাংলার বৌদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে বাংলা ভাষা জড়িত কেন ?
বঙ্গাব্দের ইতিকথার পাঁচালী নিয়ে নোবেল বিজয়ী অমর্ত্য সেন, বাংলা একাডেমীর অমর একুশে বইমেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সন্মানিত অতিথি হিসেবে “ভাষা চেতনা বাঙালির গর্বের বিষয়” শীর্ষক (ঢাকার জাতীয় পত্রিকা সমূহ ২০১১ এবং ২০১২) ভাষণে (২৬০০ বছর পূর্রে বঙ্গাব্দের জনক বাঙালি
বিজয় সিংহের কথা ভূলে গিয়ে )
বলেন,
“অনেকেই মাঝে মধ্যেই প্রশ্ন করে যে ১৪০০ সাল
হলো কী ভাবে। এখন
১৪১৭ তে কী ভাবে এলো, ১৪১৭ হচ্ছে
মক্কা থেকে মদীনায় মোহাম্মদের (সা.) যাওয়ার
দিন থেকে গণনার স্মারক। প্রথম দিকে লুনার এবং তারপরে সোলার ক্যালেন্ডার এই দুটি মিলিয়ে করা। আকবর সোলার
ক্যালেন্ডারে বিশ্বাস করতেন। এটি কিন্তু বাংলা ছাড়া সাব কন্টিনেন্টের কোনো অঞ্চলে আর থাকেনি।” বাবু অমর্ত্য সেন ইসলামের হিজরি সাল ভেঙে হিন্দুরাজনীতি যে বঙ্গাব্দ করেছে এই সহজ কথাটা স্বীকার করেন নি। পাড়া পড়শী কয় না কি
বঙ্গাব্দকে ভূতে ধরেছে। বঙ্গাব্দের উৎপত্তি হিজরি সাল থেকে হলে ২০১২ খৃষ্ঠাব্দ সবদেশে সমান, কিন্তু আরবদেশের ১৪৩৩ হিজরি বাংলায় ১৪১৯ হিজরি করে বঙ্গাব্দ করার ষড়যন্ত্র কেন?
আসল কথা হিন্দুদের বৈদিক রাজা ঈন্দ্র মহেঞ্জোদারোয় কাশ্যপবুদ্ধের (গৌতমবুদ্ধের পূর্বে) বৌদ্ধধর্ম ধ্বংস করে ভারতে বৈদিক
আর্য্য সভ্যতায় জাতিভেদ প্রথা
প্রতিষ্ঠা করেন এবং বৌদ্ধধর্মই সর্বদা বৈদিক ব্রাহ্মণ্যবাদের দুশমন। সবচেয়ে পুরানো বৈদিক ইতিহাসের মতানুসারে (নৃসিংহ
প্রসাদ ভাদুড়ী, দেশ, কোলকাতা, নভেম্বর ১, ১৯৯৭) ভগবান
শ্রীকৃষ্ণ এবং তাঁর পূর্ব পুরুষ (আর্যরা)
দূরদেশ থেকে ভারতে আসেন ( ঋগে¦দ,
১/ ৩৬/ ৮)। হিন্দুধর্মের পবিত্র গ্রন্থ গীতায় মানবাধিকার বিরোধী (৮ম অধ্যায়ের ১৩ নং
শ্লোক সহ ১৮ অধ্যায়ের
শ্লোক ৪১ থেকে ৪৪ শ্লোকসমূহ) জাতিভেদ প্রথার উংসসমূহ বিরাজমান এবং দীপংকর রায় “মগজ দোলাই” শীর্ষক
প্রবন্ধ লিখে দেশ পত্রিকায় অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন (দেশ, ২২ জুন ১৯৯১)। বাংলা ভাষা ও সভ্যতার জনক গৌতমবুদ্ধের বুদ্ধাব্দ এবং চার শত বছরের বৌদ্ধ পালরাজত্বের উপর কবর রচনার পর কর্ণাটকের হিন্দুরাজনীতি ধর্মপ্রাণ বাঙালি মুসলমানদের
চোখে ফাঁকি দিয়ে ১৪৩৩ হিজরিকে
আজকের ১৪১৯ বঙ্গাব্দ করেছেন। ধর্ম ব্যবসায়ী ব্রাহ্মণগণ (হিন্দুমার্কা তালেবান) ধর্মের অপব্যবহার করে লেখাকে
নরকের দ্বার স্বরূপ ফতোয়া জারি
করে বৈদিক ব্রাহ্মণগণ বিধান দিলেন, “স্বরস্বতী বাগদেবী, লিপির দেবী নয়। দেবভাষায় কোন লিপি নেই (দেশ. ১৪ পৃষ্ঠা, কলকাতা, ১ ফেব্র“য়ারী ১৯৯২)।” গৌতমবুদ্ধ দক্ষিন এশিয়ার এই সামাজিক বিকৃতির হাত থেকে জনতাকে রক্ষা করেন।
মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করেছেন এবং আজ ৪২ মুক্তিসন জাতির জাতীয় ক্যালেন্ডারে বিরাজমান।
বঙ্গাব্দের মিথ্যা ইতিহাস থেকে মুক্তি পেতে জনতা মুক্তিসন (স্বাধীনতাব্দ) লিখতে আগ্রহী এবং স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ঠ্রের স্বাধীন পঞ্জিকায় সংযোজিত হল
বাঙালীর এক সাগর রক্তের বিনিময়ে প্রাপ্ত মুক্তিসন ৪২ (স্বাধীনতাব্দ)। বাংলাদেশে জনতার বঙ্গাব্দ সম্বন্ধে সন্দেহের কারন ২০১৩ খৃষ্ঠাব্দ সকল দেশে একই হলে
আরবের ১৪৩৩ হিজরি বাংলাদেশে
বঙ্গাব্দ করে ১৪১৯ হিজরি কেন ? গৌরবদৃপ্ত
অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহসের ভাষা আন্দোলনের অমর অবদান রাষ্ঠ্রভাষা বাংলা , বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং জয় বাংলার মুক্তিসন ৪২ বিদ্যমান। ধর্মীয় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রে উক্ত ১৪১৯ হিজরিকে বঙ্গাব্দ করার
গুরুত্বপূর্ণ ভাষন দিয়েছেন বাবু অমর্ত্য সেন।
অমর্ত্য সেন তাঁর উক্ত ভাষনের সর্বপ্রথমে বলেন, “যেমন একাদশ শতাব্দীতে চর্যাপদ। এটি বৌদ্ধ ধর্মীয় লেখা। এর মধ্যে ভুসুকু বলে
একজন কবি ছিলেন। তিনি পদ্মা
দিয়ে যাচ্ছিলেন নৌকাতে। পথে তার যাবতীয় সম্পত্তি ডাকাতরা নিয়ে যায়, তাকে মারধর করে। তারপর তিনি লিখছেন, নিজেকে নিয়েই যে, ভুসুকু তোমার সব সম্পত্তি ডাকাত নিয়ে গেছে। আমি (অর্মত্য সেন)
সে যুগের বাংলা থেকে এ যুগের
বাংলা করছি। তিনি (ভুসুকু)বলছেন তোমার সব সম্পত্তি নিয়ে গিয়ে তোমাকে ডাকাতরা মুক্তি দিয়েছে। তুমি এখানেই থেকে
জাত বিচার বাদ দিয়ে একটি
চন্ডাল মেয়ে বিয়ে করে পরিবার প্রতিষ্ঠা করো। তুমি সব হারিয়ে সত্যি বাঙালি হলে।” রামকৃষ্ণ পরমহংসের (ঠাকুর গদাধর) চেয়ে ও মহাজ্ঞানী ভুসুকু কে অমর্ত্য সেন শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন নি।
ছিঃ! ছিঃ অমর্ত্য সেন ছিঃ! চর্যাপদের ৪৯ নম্বর কবিতার অর্থ ছিল, “ভুসুকু সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী বা সব ত্যাগ করে আলোকপ্রাপ্ত সিদ্ধপুরুষ হয়েছিলেন।” চর্যাপদের অপাপবিদ্ধ সিদ্ধপুরুষ কবি ভুসুকু ‘বাঙালি’ শব্দের
আবিষ্কারক ছিলেন। পাল
রাজত্বের চারশত বছরকে (৮ম শতাব্দী থেকে ১১ শতাব্দী) বাঙালি জাতির এনলাইটেনমেন্ট যুগ বলা হয় এবং সেই যুগে
বুদ্ধাব্দই (গৌতমবুদ্ধের জয়ন্তি সাল) বঙ্গাব্দ ছিল । ‘আজি ভুসুকু বঙ্গালী ভইলী (ভুসুকু আজ আলোকপ্রাপ্ত সিদ্ধপুরুষ বা বাঙালি হলেন)” থেকে ঐতিহাসিক ‘বাঙালি’ শব্দের অভূতপূর্ব সংযোজন হয়েছিল এবং (দি বুক অব এনলাইটেনমেন্ট)
৪৯ নম্বর কবিতায় সর্বপ্রথম ‘বাঙালি শব্দ’ মহাকবি ভুসুকু কর্তৃক আবি®কৃত হল। পূজনীয় ব্যক্তির প্রতি সন্মান প্রদর্শন বাঞ্ছনীয়।
তদানিন্তন ব্রাহ্মণ শাসিত সমাজে চর্যাপদের মহাকবি ভুসুকু অসংকোচ প্রকাশের দুরন্ত সাহস নিয়ে বলেছিলেন, “আমি আজ বাঙালি হয়ে ‘অহং’ কে জয় করে সিদ্ধপুরুষ হয়েছি।” বৌদ্ধ পালি
ভাষায় যার নাম ‘সউপাধিশেষ
নির্বান লাভ’ বা রক্ত মাংসের শরীর নিয়ে পরমার্থ জীবন যাপন। ধর্ম বা
ব্রাহ্মণ নিয়ন্ত্রিত
সমাজে মানবাধিকার রক্ষা ও প্রচার করার মানসে বৌদ্ধধর্মের প্রয়োজন আজ ও বিরাজমান। চর্যাপদ এবং বঙ্গাব্দ প্রসঙ্গ
নিয়ে সন্মানিত অতিথি অমর্ত্য
সেন ঢাকায় একুশের বইমেলা অনুষ্ঠানে আলোচনা করেছেন। আমরা মনযোগ দিয়ে তাঁর লেখা পড়েছি। উক্ত বিষয়ে তথ্য জানা ও
পাওয়া বাংলা ভাষাভাষী
জনতার মৌলিক অধিকার আছে বলে আমরা মনে করি। দুর্ভাগ্যবশত: চর্যাপদের ৪৯ নম্বর কবিতায় জিতেন্দ্রীয় সিদ্ধপুরুষ কবি
ভুসুকু সম্বন্ধে অমর্ত্য সেনের
আলোচ্যমান গল্পের সাথে আকাশ পাতাল তফাৎ পরিলক্ষিত হয়। চন্ডাল মেয়ে বিয়ে করে বা সব হারিয়ে নয়, ভুসুকু ষড়রিপু সব জয় করে মহাজ্ঞানী ও মহামানব হয়েছিলেন।
চারশত বর্ষের পাল রাজত্বে চর্যাপদের বুদ্ধাব্দকে বাদ দিয়ে হিজরি সালের বঙ্গাব্দে হিজরি সাল অদৃশ্য হয়ে গেল। আরবদেশের ১৪৩৩
হিজরি সাল পশ্চিমবঙ্গ সহ বাংলাদেশে
১৪১৯ হিজরি বলার কথা অমর্ত্য সেন বিশ্লেষন করে বঙ্গাব্দ করার ইতিহাস বলেছেন। লেখক শৈলেন্দ্র ঘোষের মতে, “এই জটিলতা নিরসনের জন্য পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষভাগে গৌড়েশ্বর হোসেন শাহ তাঁর উজির পুরন্দর
খাঁ,
মুকুন্দ দাস, এবং মালাধর বসু প্রভৃতি সভাসদদের পরামশক্রমে বঙ্গাব্দের প্রবর্তন করেন।” গায়ের জোরে রাতারাতি ইতিহাস তৈরি হয় না। বাঙালিত্বের
ঐতিহ্য বিহীন সম্রাট আকবরের দেওয়া
বঙ্গাব্দে ইসলামিক হিজরি সাল অদৃশ্য এবং আল্লাহ উপনিষদের আলোকে বাবরি মসজিদ ভাঙা হল কেন? আজকের ১৪৩৩ হিজরি কে চাঁদ ও সূর্য্য ক্যালেন্ডারের দোহাই দিয়ে ভেঙে ১৪১৯ বঙ্গাব্দ করলে ও
অজন্তা গুহায় ২৬০০ বছর পূর্বে
বঙ্গাব্দের বঙ্গবীর বিজয় সিংহের সচিত্র উপস্থিতি বিরাজমান। রামায়নের রাম, হনুমান ও রাবনের কোন অস্তিত্ব শ্রীলঙ্কায় নেই। হৃদয় বাংলাদেশ নিয়ে বিজয় সিংহের শ্রীলঙ্কা (তাম্রপর্ণীর
সিংহল) জয়ের তিনশত বছর পরে
সম্রাট অশোকের পুত্র বৌদ্ধভিক্ষু মহিন্দা সহ কন্যা ভিক্ষুনী সংঘমিত্রা শ্রীলঙ্কায় অশোকের ধর্মরাজ্য স্থাপন করেন।
প্রতœতাত্বিক, ভূতাত্বিক, পুরাতত্ত্ব, নৃতত্ব ও
ভাষাতত্বের আলোকে বাংলাভাষা
পালিভাষার বিবর্তিত রূপ এবং পালরাজত্বকালে বৌদ্ধদের অবদানে চর্যাপদের বঙ্গাব্দ ছিল ২৫৫৫ বঙ্গাব্দ (১৪১৯ নয়)। হিন্দুরাজনীতি বৌদ্ধরাজ্য জয়ের পর ভারতের শাসক হয়ে বিদেশি শাসকগণের
সাথে ষড়যন্ত্র করেন। সম্রাট
আকবর দিল্লীর সিংহাসনে বসে বঙ্গাব্দের নব সংস্করন প্রবর্তন করেন এবং উক্ত আইনের পরিনামফল আজকের ১৪১৯ বঙ্গাব্দই
বাঙালি ইতিহাসের ট্রাজেডি কেন? বর্তমানে নয়া দিল্লিস্থ ভারতের রাষ্ঠ্রপতি ভবনের দরবার প্রাঙ্গনে এখন সুদীর্ঘ ধ্যানমগ্ন বুদ্ধ বিরাজমান, যিনি ভারতের জনগন ও শাসকবৃন্দকে আশির্বাদ করছেন। এর পাশে আছে সম্রাট অশোক হল, এখানে ভারতীয মন্ত্রীরা শপথ নেন এবং বিদেশী রাষ্ঠ্রদূতগণ মাননীয় রাষ্ঠ্রপতির নিকট তাঁদের পরিচয় পত্র পেশ করেন। কবি শঙ্খ ঘোষের ভাষায়, “সমস্ত মাঠের বিন্দু আমারই ধর্মের ধান বোনা / সুচ্যগ্র মাটি ও আমি অন্য কোনো
শরিকে দেব না।” হিন্দুরাজনীতি নৈতিক
ভ্রষ্ঠাচার পালন করে দিনকে রাত (বুদ্ধাব্দকে) এবং রাতকে (বঙ্গাব্দ) দিন করে বৌদ্ধধর্ম এবং বাবরি মসজিদ
ধ্বংস করেছে। গৌতমবুদ্ধের
পূর্ব পুরুষ সবাই ভূমিপুত্র ছিলেন এবং একদা বুদ্ধাব্দই চর্যাপদের বঙ্গাব্দ ছিল।
বাঙালি জাতির অস্তিত্বের স্বাক্ষর বঙ্গাব্দকে নিয়ে হিজরির কথা তো আমাদের ভাষা আন্দোলন সমর্থকগণ আজ ও ভেবে দেখার অবকাশ বা
গবেষণার সূচনা হয়নি। কারন
হিন্দুরাজনীতি আমাদের বাংলাদেশে নদীর জল থেকে জীবন নিয়স্ত্রন করার স্বপ্নে বিভোর। রাতারাতি ইতিহাস তৈরী হয় না এবং
আমাদের বগুড়ার ঐতিহাসিক
অশোকস্তম্ভ কোলকাতায় যাদুঘরে রেখে অমর্ত্য সেন ঢাকায় এসে তাঁর ভাষনে ইতিহাসের নামে ছেলে ভুলানো ছড়া বলেছেন।
লেখক শওকত আলী তিনি তাঁর লেখা “প্রদোষে প্রাকৃতজন” গ্রন্থে
বখতিয়ার খিলজির
বাংলাদেশ আক্রমনের সময় ১২০২ সালে মহামস্ত্রী হলায়ুধ মিশ্র ও হিন্দুমন্ত্রী হরিসেন কর্তৃক “বৌদ্ধহত্যা যজ্ঞের” ভয়াবহ বর্ণনার মাধ্যমে তিনি তাঁর উপন্যাসে বিচার বিশেষন করেছেন। বুদ্ধগয়ার ‘মহাবোধি মন্দির’ দখল করে
(টেলিগ্রাফ, মে ১০, ২০০৮ কলকাতা এবং দেশ, মার্চ ১৭, ২০০৫) বৌদ্ধ ঐতিহ্যবাহী ভারতের রাষ্ঠ্রপতি ভবনের “অশোক কক্ষ” এবং ভারতের জাতীয় পতাকায় বৌদ্ধধর্ম সঞ্জাত “অশোকচক্র” ব্রাহ্মণ্যবাদী হিন্দু শাসকগণ ঐতিহাসিক কারনে সগৌরবে ব্যবহার করছেন। বঙ্গাব্দের ইতিহাস চুরির পূর্বে
সম্রাট আকবরের রাজত্বকালে
হিন্দু পন্ডিতগণ “আল্লাহ উপনিষদ” রচনা করে সদাশয় সম্রাটের কৃপাদৃষ্ঠি লাভ করেন।
অগ্নি পুরান, বায়ু পুরান ও
বিষ্ণু পুরান সহ ইতিহাসের অপব্যাখ্যা, মনগড়া ইতিহাস তৈরীর ব্যাপারে পুরানো শাসকদের (সেনাপতি পুষ্যমিত্র, রাজা শশাংক ও পুরোহিত শংকারাচার্য্যরে বৌদ্ধ হত্যাযজ্ঞ) রাশি রাশি বৌদ্ধ মন্দির ধ্বংসের প্রতিবেদন (সম্পাদকীয়, আগষ্ট ২২, ১৯৯৩ আনন্দবাজার), এবং জঘন্য চাতুরীর ইতিহাস লিখতে গেলে একটি মহাভারত লিখতে হয়।
সম্রাট আকবরের আমলে সর্বপ্রথম
বঙ্গাব্দ দিয়ে সরকারী কর্ম শুরু হলে ও কিন্তু বাংলাদেশে সোনার গাঁ এর শাসক ঈশা খাঁ বিভিন্ন কারনে সেনাপতি মানসিংহের
সাথে সম্মুখযুদ্ধে অবতীর্ন
হয়েছিলেন।
সন্মানিত প্রবক্তা অমর্ত্য সেনের ভাষনে কোথায় ভুল ছিল তা আমরা জানতে পারি চর্যাপদের উক্ত ৪৯ নম্বর কবিতায় এবং পরম শ্রদ্ধেয়
কবি ভুসুকু লিখেছিলেন, “বজ্রনৌকা পাড়ি দিয়ে পদ্মানদীতে গেলাম। নির্দয় দস্যু
দেশ লুট করে নিয়ে
গেল। নিজের গৃহিনীকে (কামতৃষ্ণাকে) চন্ডালে নিয়ে যাবার পর ভুসুকু আজ তুমি বাঙালি হলে। পঞ্চপাটন (৫ উপাদান স্কন্ধ)
দগ্ধ,
ইন্দ্রিয়ের বিষয় বিনষ্ঠ। জানি না আমার চিত্ত কোথায় গিয়া প্রবেশ
করলো। আমার সোনা রুপা কিছুই
থাকলো না,
নিজের পরিবারে মহাসুখে থাকলুম। আমার চৌকোটি
ভান্ডার নিঃশেষ হলো, জীবনে মরণে আর ভেদ নেই।”
আলোচ্যমান চর্যায় কবি ভুসুকু কামতৃষ্ণা বা বিয়ে করার ইচ্ছাকে গৃহিনী বলেছেন, “আজি ভুসুকু
বঙ্গালী ভইলী (আজ বাঙালির ইতিহাসে ভুসুকু কামতৃষ্ণাকে জয় করে সিদ্ধপুরুষ বা বাঙালি হল), নিঅ (নিজ) ঘরিনী (কাম তৃষ্ণার লোভ লালশা বা গৃহিনী) চন্ডাল লেলী (চন্ডালে নিয়ে গেল)।” কবি ভূসুকুই
সর্বপ্রথম “ বাঙালি ” শব্দের আবিষ্কারক এবং পাল সম্রাটগণের ৮ম শতাব্দী থেকে ১১
শতাব্দী ৪০০ বছর
পর্যন্ত চর্যাপদে বুদ্ধাব্দকে (২৫৫৫ বুদ্ধাব্দ) বঙ্গাব্দ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত ছিল। আলোকিত বাঙালি বা সিদ্ধপুরুষকে অর্মত্য
সেন বিকৃত করেছেন। হাইকোর্টের
রায়,
বাংলা বা বঙ্গাব্দের বিকৃত করা চলবে না।
জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু। জয় মুক্তিসন।
------------------------------------------------------------
লেখক এস বড়–য়া, সাবেক সভাপতি, বাংলা সাহিত্য পরিষদ, টরন্টো, খ্যাতিমান ঐতিহাসিক, কথাশিল্পী, বিবিধগ্রন্থ প্রনেতা প্রবাসী কলামিষ্ঠ, লাইব্রেরীয়ান, বিশ্ববৌদ্ধ সৌভ্রতৃত্ব পত্রিকার সহ সম্পাদক এবং জাতিসংঘে বিশ্ববৌদ্ধ প্রতিনিধি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন