বুধবার, অক্টোবর ১৬, ২০১৩

ঘামের গন্ধের কারণে অন্য মানুষ হারায় আপনার প্রতি বিশ্বাস !



                    লিখেছেন : বিজ্ঞানরসিক
ঘামের গন্ধ এড়ানোর জন্য কত কিছুই না করি আমরা! সুগন্ধি পাউডার, পারফিউম, বডি-স্প্রে আরও কত কি! ঘামের গন্ধে অন্যরা বিরক্ত হবে এই চিন্তা থেকেই আমাদের ঘামের দুর্গন্ধ ঠেকানোর এই প্রয়াস। কিন্তু শুধু বিরক্তি বা আমাদের সম্পর্কে খারাপ ধারণা নয়, ঘামের দুর্গন্ধের ফলে আরও একটি সমস্যা হতে পারে আর তা হলো, আমাদের প্রতি বিশ্বাস হারাতে পারে মানুষ! বিশেষত নারীদের ক্ষেত্রে গবেষণায় এটি জানা গেছে।
নিজের শরীরে ঘামের দুর্গন্ধ হচ্ছে এটা বুঝতে পারলে আমাদের নিজেদেরই আত্মবিশ্বাসের মাত্রা তলানিতে গিয়ে ঠেকে। আর PLOS ONE জার্নালে প্রকাশিত সাম্প্রতিক এক গবেষণা থেকে জানা যায়, মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতাও নির্ভর করে এর ওপরে। Monell Chemical Senses Center এর গবেষকরা বের করেছেন এই অদ্ভুতুড়ে তথ্য।

সবসময়ে যে ঘামে গন্ধ হয় তা কিন্তু নয়। বিজ্ঞানীদের ভাষায় ঘামের তিনটি প্রকরণ আছে! ব্যায়ামের কারণে ঘাম, গরমে ঘাম এবং মানসিক চাপের ফলে ঘাম। ব্যায়াম এবং গরমের কারণে যে ঘাম হয় তাতে দুর্গন্ধ তুলনামুলকভাবে কম হয়। কিন্তু দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপে যে ঘাম হয় তা চর্বিযুক্ত এবং আসে শরীরের বেশি লোমশ এলাকা থেকে। এর ফলে ব্যাকটেরিয়া সেগুলোকে খেয়ে বাজে গন্ধ ছড়ায়। আর এই প্রতিষ্ঠানের গবেষকদের মতে, এই ঘামের গন্ধ যার শরীর থেকে আসে তার ব্যাপারে মানুষের চিন্তাভাবনা প্রভাবিত হয় গন্ধের কারণে। আর তাদেরকে মানুষ কতটুকু বিশ্বাস করে সেটাও প্রভাবিত হয়।
গবেষকরা ৪৪ জন নারীর ওপর এই পরীক্ষাটি করেন। পরীক্ষার শুরুতেই তাদের ঘামের নমুনা নেওয়া হয়। তিনটি আলাদা অবস্থায় এই নমুনা নেওয়া হয়। ১৫ মিনিট সাইকেল চালানোর পর একটা নমুনা, দুশ্চিন্তা তৈরি করে এমন ঘটনার পর একটি নমুনা, আর দুশ্চিন্তা তৈরির পরে কিন্তু অ্যান্টি-পার্সপির্যালন্ট অর্থাৎ ঘাম-রোধী পদার্থ প্রয়োগ করে আরেকটি নমুনা নেওয়া হয়। দুশ্চিন্তা বা মানসিক চাপ সৃষ্টি করার জন্য যেসব কাজ করা হয়ে ছিল তা হল পাঁচ মিনিট লম্বা একটি বক্তব্য তৈরি, পাঁচ মিনিট ধরে মনে মনে অঙ্ক কষা আর পাঁচ মিনিট ধরে জনতার সামনে বক্তৃতা দেওয়া।
এর পর গবেষকরা ১২০ জন মূল্যায়নকারী নারী ও পুরুষদের এই নমুনা শুঁকতে দেওয়া হয়। শোঁকার সময়েই যে মহিলার ঘামের নমুনা তার দৈনন্দিন জীবনের ছবি ভিডিওতে দেখানো হয়। মূল্যায়নকারী এর পর মতামত দেন সেই নারীকে কতটা আত্মবিশ্বাসী বা চিন্তিত লাগছে। দেখা যায়, যখন দুশ্চিন্তা থেকে হওয়া ঘামের নমুনা শোঁকানো হয় তখন বেশিরভাগ মানুষ মত দেন, যে ওই মহিলাকে দেখতে কম আত্মবিশ্বাসী এবং চিন্তিত মনে হচ্ছে। আর শুধু তাই নয়, পুরুষেরা এসব নারীর ব্যাপারে বলেন, যে তাদেরকে কম আত্মবিশ্বাসী, কম কর্মক্ষম এবং কম নির্ভরযোগ্য বলে মনে হয়েছে তাদের।
যদিও শুধুমাত্র নারীদের ওপরে এই গবেষণা চালানো হয়েছে কিন্তু গবেষকরা বলেন, পূর্বের গবেষণায় দেখা গেছে মানসিক চাপে থাকা পুরুষের ঘামের গন্ধেও মূল্যায়নকারীদের মনোভাব একই রকম হয়।
এই গবেষণার বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, ঘামের গন্ধের সাথে সামাজিক মনোভাবের সম্পর্ক স্থাপনে প্রথম গবেষণা এটি। তাই সকল সমাজে একই রকমের প্রভাব পড়বে এটা মনে করে নেওয়া ঠিক হবে না। তবে এই গবেষণার ফলে সবারই একটা দিক দিয়ে সতর্ক হয়ে যাওয়া উচিৎ। তা হল, নিজের ঘামের দুর্গন্ধ কমান। তাহলে অন্যেরা আপনার সম্পর্কে যে মনোভাব পোষণ করে তার একটু হলেও উন্নতি হবে!
- See more at: http://www.priyo.com/2013/10/10/35432.html#sthash.0Navcz74.dpuf

কোন মন্তব্য নেই: