লেখকঃ সিরাজাম
মুনির শ্রাবণ
জিহাদ সিফাত
দুই ভাই, সারাদিন শুধু
কারণ খুঁজে বেড়ায়। কাছে কাওকে বোঝের মানুষ পেলে জিজ্ঞেস করে কেন
এমন হল? কেন এটা কাজ করে? কেন এটা ঘুরে? এমন সব প্রশ্ন। ...... একবার জিজ্ঞাসা করে ও
মামা, বাংলাদেশে যত
গাড়ি আছে তার সবগুলোর নাম আমি বলে দিতে পারবো এখানে বসে এক মুহূর্তেই।
বল কি কিভাবে বলবে? আচ্ছা বল দেখি। শুনি!
বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, রিকশা, সাইকেল, হোন্ডা, মাইক্রো, বিয়ারিং ইত্যাদি ইত্যাদি!
বল কি! শেষ? এখানে তো হল মাত্র কয়েকটা আরও তো রয়েছে শত শত।
ও মামা, তোমার বুঝি আর বুদ্ধি হবে না! আমি শেষে ইত্যাদি ইত্যাদি বলি নি? ইত্যাদির ভেতরেই তো সব আছে। হি হি হি।
মাঝে মাঝে বিজ্ঞানের নানা প্রশ্ন করে আমাকে ফেলে বিপদে-বেকায়দায়।
"ও মামা, মানুষ মরে গেলে রক্তগুলো কি হয়? শেষ হয়ে যায় নাকি পানি হয়ে যায়? নাকি রক্তই থেকে যায়?"
ও মামা চুলগুলো কি হয়, মাথায় লেগে থাকে নাকি ঝরে পড়ে যায়? বল কি কিভাবে বলবে? আচ্ছা বল দেখি। শুনি!
বাস, ট্রাক, প্রাইভেট কার, রিকশা, সাইকেল, হোন্ডা, মাইক্রো, বিয়ারিং ইত্যাদি ইত্যাদি!
বল কি! শেষ? এখানে তো হল মাত্র কয়েকটা আরও তো রয়েছে শত শত।
ও মামা, তোমার বুঝি আর বুদ্ধি হবে না! আমি শেষে ইত্যাদি ইত্যাদি বলি নি? ইত্যাদির ভেতরেই তো সব আছে। হি হি হি।
মাঝে মাঝে বিজ্ঞানের নানা প্রশ্ন করে আমাকে ফেলে বিপদে-বেকায়দায়।
"ও মামা, মানুষ মরে গেলে রক্তগুলো কি হয়? শেষ হয়ে যায় নাকি পানি হয়ে যায়? নাকি রক্তই থেকে যায়?"
ও মামা মানুষ মরে গেলে মরে যাওয়া দেহটি অত ঠাণ্ডা হয়ে যায় কেন?
শেষের উত্তরটি যেভাবে দিয়েছিলাম সেটি এমন...
মানুষ একটি প্রাণী, বৈশিষ্ট্যে যা অনন্য। মানুষের বেঁচে থাকতে হলে প্রথমেই দরকার পড়ে অক্সিজেনের। আরও সঠিক করে বললে একটি "আদর্শ বায়ুমণ্ডলের"।. আরও দরকার খাবার দাবার। বেঁচে থাকতে, দেহটিকে সম্পূর্ণ সচল রাখতে, সর্বদা কর্মক্ষম রাখতে নুন্যতম খাবার-দাবার তো লাগবেই! (পেটুকদের হিসাব আবার আলাদা!)
এই এত যে খাবার দাবার মানুষ খায় তার সবগুলোই থাকে জটিল জৈব যৌগ আঁকারে। পেটের ভিতরে গিয়ে সবগুলো ভেঙ্গে জটিল যৌগ থেকে সরল যৌগে পরিণত হয়। এই যে খাবার খাই তার সবগুলো পাকস্থলীতে গিয়ে ভাঙ্গে। হয় সরল যৌগ। সরল যৌগ হতে হয়, সরল যৌগের দরকার আছে।
দেহটি আমাদের অসংখ্য কোষ নিয়ে গঠিত। প্রত্যেকটা কোষে পৌছাতে হয় "খাবার"।. খাবার হিসেবে কোষ পর্যায়ে বড় কোনো অণু যেতে পারে না। তাকে অবশ্যই হতে হবে সরল অণু। আর এই সরল অণুকে কোষে কোষে বয়ে নেবার দায়িত্ব পালন করে রক্ত। রক্ত আবার চলাচল করে হৃৎপিণ্ডের সংকোচন প্রসারণ দ্বারা। হৃৎপিণ্ডের সংকোচন প্রসারণই রক্তকে চলার বেগ দান করে।
সাথে সাথে আনাদের শরীরে প্রতিনিয়ত ঘটে চলছে হাজার হাজার লক্ষ লক্ষ রাসায়নিক বিক্রিয়া। এত জটিল আর অসাধারণ মানুষের গঠন! পুরো মানুষ তো পরের কথা একটা কোষের গঠনই কত অসাধারণ!
বিক্রিয়ার অনেকটা এই কোষের ভিতরেই হয়। আর এই সব বিক্রিয়ায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অংশগ্রহণ করে অক্সিজেন। বড় অণু ভেঙ্গে উপযুক্ত খাদ্যে পরিণত হবার যে বিক্রিয়া তাতে অক্সিজেন লাগবেই। অক্সিজেন ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। আমরা পেটুক হয়ে পেট পুরে টনকে টন খাবার খেয়ে নিলাম একসাথে কিন্তু অক্সিজেন নিলাম না তবে সে খাবার কোনো কাজে আসবে না। এক বিন্দু পরিমাণও শক্তি পাব না। হজমই হবে না।
এমন সকল বিক্রিয়াতে দরকার হয় অক্সিজেন। আর আমাদের সকলে তো ভাল করেই জানে অক্সিজেনের বিক্রিয়া মানে দহন। দহন মানেই তাপ, দহন মানেই আগুন। অক্সিজেনের বিক্রিয়া মানেই আগুন। প্রতিনিয়ত অক্সিজেনের বিক্রিয়ার কারণেই আমাদের শরীর গরম থাকে। শরীরের সকল শিরা উপশিরায় রক্ত চলাচল করে, সেখান থেকে উৎপন্ন হয় তাপ। প্রত্যেকটা কোষে কোষে অক্সিজেনকে বয়ে নিয়ে যায় রক্ত। রক্ত চলাচল যদি কোনোক্রমে বন্ধ হয়ে যায় তবে অক্সিজেনের সরবারহও হয়ে যাবে বন্ধ। একদিকে বয়ে নিয়ে যাবার কাজ করে রক্ত অন্যদিকে এই রক্তকে চালায় হৃৎপিণ্ড। মানুষ যখন মারা যায় তখন হৃৎপিণ্ড নিশ্চল হয়ে পড়ে। তাতে করে রক্ত করেনা চলাচল। অক্সিজেন হতে পারে না সরবারহ। অন্যদিকে মৃত্যুর পরে দেহ কোনো অক্সিজেন নেয় না। তার ফলে সকল বিক্রিয়া হয়ে যায় বন্ধ। স্থির। বিক্রিয়া বন্ধ তাই উৎপন্ন হয় না তাপ। তাপ উৎপন্ন হয় না তাই দেহও হয়ে যায় ঠাণ্ডা।
পাদটীকা: ১
মানুষের শরীরের তাপমাত্রার আরও একটি বৈশিষ্ট্য মানুষ উষ্ণ রক্ত বিশিষ্ট প্রাণী। মানুষ যদি এমনকি ঘণ্টার পর ঘণ্টাও বরফের তাপমাত্রার কাছাকাছি তাপমাত্রায় থাকে তবে তাতেও শরীরের রক্তের তাপমাত্রা কমে যায় না। মাছ প্রক্রিয়াজাত বা চিংড়ি প্রক্রিয়াজাত করতে শ্রমিককে শূন্যেরও নিচে মাইনাস পাঁচ থেকে দশ ডিগ্রী তাপমাত্রায় কাজ করতে হয়। এই কাজ করে একদম সাধারণ কিছু পোশাক পড়েই।
মানুষের তাপমাত্রা কিন্তু তাতে তেমন একটা কমে যায় না। সাধারণ হিসেবে তাপের আদান প্রদানে শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যাবার কথা। মানুষ শীতল রক্তবিশিষ্ট প্রাণী ব্যাঙের মত নয়।
পরিবেশের তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে মানুষের শরীরের তাপমাত্রা কমে যায় না। আর যদি কোনো কারণে কমতে দেখা যায় তবে ধরে নিতে হবে তার শরীরের ভিতরে ওই বিক্রিয়াগুলো সঠিকভাবে হচ্ছে না। তার অবস্থা আসন্ন। এমন অবস্থায় যত দ্রুত সম্ভব তাকে বের করে আনা হয়।
পাদটীকা: ২
এখানে দেখা তো গেল অক্সিজেনের বিক্রিয়া হয়। অক্সিজেনের বিক্রিয়া মানেই তাপ বা আগুন। তবে আমাদের শরীরটা পুড়ে যায় না কেন?
হ্যাঁ। অক্সিজেনের যে বিক্রিয়া তাতে আমাদের শরীর পুড়ে যাবার কথা। হয়ে যাবার কথা একদম ছাই। অক্সিজেন যে হারে যত দ্রুত বিক্রিয়া করে তাতে না আমাদের শরীর কি হত! কিন্তু এক আশ্চর্য সুন্দর নিয়মের উপস্থিতির ফলে আমাদের শরীর বেঁচে যায় পুড়ে যাবার হাত থেকে।
বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের সাথে সাথে আছে নাইট্রোজেন। অন্যান্য গ্যাসও আছে। তবে সবচে বেশি আছে নাইট্রোজেন। নাইট্রোজেন আছে ৭৮ ভাগ। আর অক্সিজেন আছে ২১ ভাগ। নিশ্বাসের সময় অক্সিজেনের সাথে সাথে নাইট্রোজেনও চলে যায় দেহের ভিতরে। আর নাইট্রোজেনের এক অসামান্য বৈশিষ্ট্য হল তার নিষ্ক্রিয়তা। নাইট্রোজেন তার নিষ্ক্রিয়তার গুনে অক্সিজেনের বিক্রিয়ার প্রবল বেগকে দমিয়ে রাখে। এতে করে ধীরে ধীরে বিক্রিয়া করে অক্সিজেন। তাপ উৎপন্ন হয় কম কম। নিষ্ক্রিয়তার দিক থেকে ৮ম গ্রুপের নিষ্ক্রিয় গ্যাসের পরেই নাইট্রোজেনের স্থান। পেটের ভিতর আগুন জ্বলা থেকে বাছিয়ে রাখে সেই।
কি অপূর্ব সুন্দর নিয়মের ভিতরেই না আমরা বসবাস করি। মায়াময় এক হাতে গড়ে দেয়া নিয়মের গুনে আমরা কত শান্তিতেই না জীবন কাটাই!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন