লিখেছেন টেকনোমাস্টার
আমার পোস্টটি সবার
কেমন লাগলো সেটি মন্তব্য দিয়ে জানাতে ভুলবেন না কিন্তু। তাহলে আমি উৎসাহীত বোধ
করব। এবার কাজের কথায় আসি।
কম্পিউটার যুগ চলছে, চলবে। আজকের সময়ে দাঁড়িয়ে কম্পিউটারহীন একজন শিক্ষিত মানুষ ভাবাই যায় না। আপনার একটা কম্পিউটার আছে মানেই আপনার হাতের মুঠোয় সমগ্র বিশ্ব আত্মসমর্পণ করেছে। কিন্তু শুধু কম্পিউটার থাকলেই তো হবে না, তাকে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে সেটাকে বহুদিন সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখার জন্য। তাই কম্পিউটারকে ভালো রাখার জন্যে একটু যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। জেনে নিন ২১ দফা নিয়মকানুন।
(১) যখনি কম্পিউটার কিনবেন (তা অ্যাসেম্বেল্ড হোক কিম্বা ব্র্যান্ডেড) সেটাকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় সেটিং করে নিন। অকারণে কম্পিউটারটিকে ধাক্কাধাক্কি বা নাড়াচাড়া করবেন না। এ ছাড়া অত্যাবশ্যক না-হলে কম্পিউটারটিকে নিয়ে ঘনঘন এঘর-ওঘর করবেন না। একান্ত যদি এঘর-ওঘর করতেই হয় তবে তা খুব সতর্কতার সঙ্গে সম্পন্ন করতে হবে। ভালো করে বুঝে-বুঝে পুনঃসংযোগ (Re-connection) করতে হবে।
(২) কম্পিউটারের বৈদ্যুতিক সংযোগ
অভিজ্ঞ ইলেকট্রিশিয়ানকে দিয়ে করাতে হবে। বাড়ির মেন লাইন থেকে
কোনো যদি সরাসরি কম্পিউটারের জন্যে টেনে আনা হয় কিম্বা যে
ইলেকট্রিক বোর্ড থেকে কম্পিউটারের কারেন্ট নেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে সেখানকার সুইচ
বোর্ড, প্লাগ, সকেট, সুইচ যেন ভালো মানের হয়। কোনো কারণে যেন লুজ কন্টাক্ট হয়ে
যাওয়ার সম্ভাবনা না-থাকে। মোট কথা ইলেকট্রিক বোর্ড যেমন
হাই কোয়ালিটির হতে হবে, তেমনি বোর্ডের ভিতরের
তারের কোয়ালিটিও হাই হওয়া জরুরি। মনে রাখবেন, মিনিয়েচার সার্কিট ব্রেকার (MCB) বা ভালো ফিউজ যেন অবশ্যই ব্যবহার করা হয়।
(৩) কোনো ড্যাম্প বা স্যাঁতসেঁতে জায়গায় কম্পিউটার রাখা চলবে না। জানালার
ধারেকাছে যেখানে বৃষ্টির জল (পানি) এসে কম্পিউটারের গায়ে এসে পড়তে পারে কিম্বা
সরাসরি রোদ্দুর এসে পড়তে পারে এমন জায়গায় কম্পিউটার রাখবেন না।
(৪) বাড়ির দেয়াল থেকে আপনার প্রিয় কম্পিউটারটিকে অন্ততপক্ষে ১ ফুট থেকে দেড়
ফুট দূরে রাখুন। দেয়ালে ড্যাম্প থাকলে সর্বনাশ!
(৫) বর্ষার সময় কম্পিউটারের ভিতর বা বাইরের দিক থেকে বা পাশে যে উইন্ডোগুলি
আছে সেখানে সিলিকা জেলের প্যাকেট টাঙিয়ে দিন।
(৬) কম্পিউটার যে ঘরে রাখবেন সেই ঘর যেন
চুনের রং করা দেয়াল না-হয়, ডিসটেম্পার বা প্লাস্টিক হওয়া ভালো। কেন-না চুনের গুড়ো
ঝরে ঝরে পড়তে পারে, যা কিনা কুলার ফ্যানের টানে কম্পিউটারের ভিতর চুনের গুড়ো ঢুকে স্পেয়ার পার্টসের প্রভূত ক্ষতি করে দেবে।
(৭) কম্পিউটারের পিছন দিকে অনেক সময় অতিরিক্ত কিছু ছিদ্র থাকে,যে ছিদ্র দিয়ে
যখন-তখন ইঁদুর-আরশোলা ইত্যাদি ঢুকে পড়তে পারে এবং ঢুকে কম্পিউটার তছনছ করে দিতে
পারে। ছিদ্র তো বন্ধ যাবে না, করা উচিতও নয়। তবে যেটা করা উচিত তা হল নিয়মিত ইঁদুর-আরশোলা মারার ওষুধ
ব্যবহার করতে হবে।
(৮) প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি-বজ্রপাত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে কম্পিউটার একদম চালানো চলবে না। কম্পিউটার চালাতে চালাতে যদি এ ধরনের দুর্যোগ এসে পড়ে তাহলে কম্পিউটারের
ইন্টারনেটের তার থেকে শুরু করে মেন প্লাগের তার সমস্ত খুলে রাখতে হবে, কম্পিউটারও বন্ধ রাখতে হবে।
(৯) প্রতিদিন নিয়ম করে কম্পিউটার ব্যবহার হয়ে যাওয়ার পর প্লাগ, সকেট কানেকশান,
ইন্টারনেট কানেকশান খুলে রাখবেন।
(১০) কম্পিউটারের পাওয়ার সাপ্লাই হিসাবে অবশ্যই ইউ.পি.এস.(আনইন্টাররাপটেড
পাওয়ার সাপ্লাই ) ব্যবহার করতে হবে। কেন-না হঠাৎ লোডশেডিং হলে কম্পিউটারের
মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে, বিশেষ করে হার্ডডিস্ক। কম্পিউটার আনপ্রোপার সাট ডাউন হয়ে গেলে এই ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়।
ইউ.পি.এস. ব্যবহার করলে যন্ত্রটি ২০-২৫ মিনিট ব্যাক-আপ দেয়, সে সময়টুকু কাজে
লাগিয়ে আপনার কম্পিউটারটিকে প্রোপারলি সাট
ডাউন করে নিতে পারবেন।
(১১) আপনার কম্পিউটার রাখার ঘরটিকে “ডাস্ট ফ্রি জোন” করে রাখুন। কম্পিউটার ঘরে
সিগারেট-বিড়ি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
(১২) কম্পিউটারে যখন কাজ করবেন না তখন মনিটর, সিস্টেম ইউনিট, কী বোর্ড, মাউস,
স্ক্যানার, প্রিন্টার সমস্ত কিছু পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে ঢেকে রাখুন।
(১৩) কম্পিউটারে ব্যবহৃত সিডি বা ডিভিডি পরিষ্কার আধারে রাখবেন, যেন বালুকণার
ঘর্ষণে ক্র্যাচ না-পড়ে যায়। সেক্ষেত্রে প্রত্যেকটি সিডি বা ডিভিডি আলাদা আলাদা করে
প্লাস্টিকের বক্সে বা জুয়েল বক্সে রাখুন।
(১৪) সিডি বা ডিভিডি যখন সিডি ড্রাইভ বা ডিভিডি ড্রাইভে প্রবেশ করাবেন তখন
ড্রাইভটি ভালো করে দেখে নিন সেখানে ধুলোময়লার আস্তরণ পড়ে আছে কি না। নিয়মিত
স্বয়ংক্রিয় ডিস্ক ক্লিনার দিয়ে ড্রাইভটি পরিষ্কার করুন।
(১৫) কম্পিউটার দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখা যাবে না। অন্ততপক্ষে
দু-চারদিন অন্তর এক ঘণ্টার জন্য হলেও কম্পিউটারকে চালু করুন। দীর্ঘদিন কম্পিউটার
ফেলে রাখলে মাদারবোর্ডের ভিতরে থাকা ব্যাটারি ডিসচার্জ হয়ে যায়, সেইসঙ্গে নানা
ধরনের সিস্টেম এরর দেখা দেবে।
(১৬) যাদের কম্পিউটার সারাদিন-সারারাত চালিয়ে রাখতে হয়, তাদের কম্পিউটারকে
ঠান্ডা হতে দিতে হবে। ১ থেকে ২ ঘণ্টা অন্তর কম্পিউটার বন্ধ করে দিন এবং আধ ঘণ্টা
রেস্ট দিয়ে আবার কম্পিউটার চালু করুন। সম্ভব হলে কম্পিউটারের ঘরে এয়ার কন্ডিশন
করুন।
(১৭) আপনার প্রিয় কম্পিউটারটিকে দুমদাম আপগ্রেডেশন করাবেন না। যদি একান্তই
প্রয়োজন হয় তাহলে ঠিকমতো ম্যাচিং করে সিপিইউ, মাদারবোর্ড, র্যাম, অতিরিক্ত
হার্ডডিস্ক রিপ্লেস করাতে পারেন।
(১৮)
কম্পিউটারে মাঝে মাঝে স্ক্যানডিস্ক চালানো উচিত। এতে
হার্ডডিস্ক ভালো থাকে।
(১৯) কম্পিউটারকে প্রতিদিন ভাইরাসমুক্ত রাখুন। সেক্ষেত্রে আপগ্রেডেড অ্যান্টি-ভাইরাস
ইনস্টল করুন।
(২০) আপনার কম্পিউটারে (ক) PC
Performer Software ইনস্টল করে রাখুন। এটি কম্পিউটারের গতি বাড়াতে ওস্তাদ। আপনার কম্পিউটারে যেখানে যত এরর থাকবে সব ফিনিশ করে
দিয়ে মেরামত করে দেবে কয়েক মিনিটের মধ্যে। তবে এই সফটওয়্যারটি ফ্রিতে মিলবে না,
ভালো রেস্তো গুণতে হবে। (খ) আপনার কম্পিউটারকে
নিয়মিত ডিফ্রাগ করবেন। কম্পিউটারে যে
Defragment থাকে মোটেই কাজের নয়। ভালো হয় যদি Auslogics Disk Defrag নামে
সফটওয়্যারটি ইনস্টল করতে পারেন। সফটওয়্যারটি বিনামূল্যে পাওয়া যায়। দারুণ কার্যকরী
সফটওয়্যার। অল্প কিছু সময়ের মধ্যে সমস্ত
ড্রাইভ একসঙ্গে ডিফ্রাগ করে দেবে সুন্দরভাবে। (গ) আপনার
কম্পিউটারকে নিয়মিত Disk Clean Up করুন। Start > All Programs > Accessories
> System Tools > Disk CleanUp।
(২১) কম্পিউটারে কোনো সমস্যা দেখা দিলে নিজে কেরামতি না-করে অভিজ্ঞ টেকনিশিয়ানকে
দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নেওয়াটা হবে বুদ্ধিমানের মতো কাজ।
আমার প্রিয় পাঠকবৃন্দ, যদি কিছুমাত্র ভুল হয়ে থাকে, সেটি আমারই অজ্ঞানতার
ফল। আপনারা নিশ্চয় নিজগুণে ক্ষমা করবেন এবং ভুল শুধরে দেবেন। আজ চলি ভাই। আবার দেখা হবে অন্য কোনোদিন, অবশ্যই এইখানে।
সবাই ভালো থাকুন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন