শ্রদ্ধেয় শ্রীঅমুক কবি মহাশয়, আমি একজন
সাধারণ পাঠক। সাধারণ
বলার কারণ মোটামুটিভাবে আমার যা ভালো লাগে তা আরও পাঁচজনেরো ভালোই লাগে। যেমন
সুচিত্রাদেবীকে আমি সুন্দরী বলেই জ্ঞান করি,
আইসক্রিম খেতে
ভালোবাসি, গোলাপের গন্ধ আর
সুনীলবাবুর নীরাও আমার
বেশ প্রিয়।আচ্ছা ওসব ছাড়ুন, এই যে আমি ছুটে যাচ্ছি সন্ধে হলেই অ্যাকাডেমি চত্বরে আপনার কবিতা পাঠ শুনব বলে, যাতায়ারে খসে যাচ্ছে সাত-সাত চোদ্দো টাকা, তার ওপর চা-সিগারেট আছে বাস না পেলে সাট্লের ভাড়া
এখন কুড়ি টাকা, সে খবর রাখেন কি?
এই যে আমি প্রত্যেক মাসে মাইনে পেয়েই চলে যাচ্ছি কলেজ স্ট্রিট আর বই কিনে-কিনে টেবিল-ট্রাঙ্ক ভর্তি করে ফেলছি, ফলে এখন আমার জামাগুলো ট্রাঙ্কের বাইরে, পোকাদের লঙ্গরখানায় পরিণত হয়েছে তাও আপনি জানেন না।
এরপর আপনার বই বেস্ট সেলার হবে, কিন্তু তার মধ্যে সাড়ে ছত্রিশ টাকা আমার ইনভেস্টমেন্ট আছে সে খবর আপনার কাছে পৌঁছুবে না। আপনি পাবেন তমুক স্মৃতি পুরষ্কার, শ্রেষ্ঠ কবির শিরোপা ! আর আমি ? আমার জন্যে আসবে না কোনো এসি কার, কোনো মালা অথবা আকর্ণবিস্তৃত হাসির ঝুমকোলতা। দৈবাৎ সামনে এসে দাঁড়ালেও কি চিনতে পারবেন এই লোকটাই আমার কবিতা শুনবে বলে ব্যান্ডেল লোকাল ধরে, বাসে গুঁতো খায়,কবিতা পড়বে বলে এমজি রোডের জ্যামে ঝুলে থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা?
বলি, আমাকে নিয়েও লিখুন না একটা কবিতা, যে কবিতায় বিশ্বায়ন নেই, পলিটিক্যাল অ্যাস্পেক্ট নেই, শুধু আমি আছি আমার মতো হাজারহাজার পাঠক আছে, যাদের দৌড় ঘোলা থেকে টালিনালা অব্দি! যাদের জীবনে নীরা তো দূরের কথা বুঁচির বাপও মাইনে শুনলে নাক কুঁচকোয়, যাদের গোলাপ নেই শুধু পেট আছে, জালার মতো মস্ত একটা পেট, শালা! খালি খিদে পায়!! যাদের জীবনে প্রেম নেই, পলিটিক্স নেই, ধর্ষণের প্রতিবাদ নেই, প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাড়ির টালিচালা ঠিক থাকলেই আর কোনো মাথাব্যাথা নেই! আছে বাপের প্রেসক্রিপশন, মায়ের ফুরিয়ে যাওয়া কাফ্ সিরাপের শিশি, আর নিজের একটা আধময়লা হাফশার্ট, যেটা রোববারেই কেচে শুকিয়ে যাওয়া বাধ্যতামূলক, না হলে সোমবার কী পরবো ঠিক নেই !
এরকম কিছু লিখুন না, নিজেকে পড়তে যে বড়ো ইচ্ছে হয় হে কবি !!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন