সম্মোহন আর
হিপ্নোটিজম বিষয়টি পুরোপুরি একই না-হলেও অনেকটাই কাছাকাছি বিষয়। গ্রিক Hupnoo শব্দটি থেকে হিপ্নোটিজম শব্দটির উৎপত্তি। Hupnoo মানে
ঘুম(to
make sleep)। Oxford Dictionary বলছে, “an
unconscious state in which somebody can still see and hear and can be
influenced to follow commands or answer questions.”।এ
বিষয়ে বিস্তারিত পরে আসছি।
অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে ফ্রাঞ্জ অ্যান্তন মেসমার এটির উদ্ভাবন করেন। তখন “মেসমেরিজম” নামে সবাই জানত। এরপর ডাঃ ব্রেইড এই বিষয়টি নিয়ে আরও উন্নততর গবেষণা করে নাম দেন “হিপ্নোটিজম”।
হিপ্নোটিজমের সঙ্গে সম্মোহনের যে পার্থক্য সেটা বুঝে নেওয়া দরকার। আমরা যখন ভাবতে থাকি যোদ্ধার বেশে নেতাজি সুভাসচন্দ্র বসু আবার ভারতে ফিরে আসবেন, আমরা যখন ভাবতে থাকি মুজিবর রহমান রমনা ময়দানে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছেন, “আমি এই বাংলাদেশ চাই নাই। আমি সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ বানাইতে চাই”। আমরা যখন ভাবতে থাকি মহাত্মা গান্ধি সবরমতী আশ্রমে দাঁড়িয়ে বলছেন, “আমি চেয়েছিলাম জাতপাতহীন এক ভারতবর্ষ। এ কোন্ ভারতবর্ষ! এখানে জাতে-জাতে এতো অসহিষ্ণুতা কেন, এতো ঘৃণা কেন”। এক অস্বাভাবিক, অবাস্তব স্বপ্নে বিভোরতা। এটাই হিপ্নোটিজম। অন্যদিকে সম্মোহন হল পৃথিবী সৃষ্টির আদি থেকেই, অর্থাৎ প্রাণ সঞ্চারের সময় থেকেই শুরু।
আমরা প্রতিদিনই প্রতিনিয়ত সম্মোহিত হচ্ছি কারো না কারোর অঙ্গুলি হেলনে। আমরা বুঝতে পারছি না, বুঝতে পারলেও এড়াতে পারছি না। যার আত্মবিশ্বাস এবং প্রমা যত কম সে তত আগে সম্মোহিত হয়ে থাকে। ছোটোবেলায় ছেলেমেয়েরা কোনো-না-কোনো নেগেটিভ অথবা পজেটিভ (তোমার দ্বারা কিস্যু হবে না, তোমার ভবিষ্যত অন্ধকার, তুমি বড়ো হয়ে দেশের নাম রোশন করবে ইত্যাদি) কথা শুনতে শুনতে বিশ্বাস করতে করতে আমরা সাবালক হয়ে উঠি এবং সেই বিশ্বাসগুলিকে আঁকড়ে জীবন অতিবাহিত হয়। অপরদিকে, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা বা ধর্মীয় নেতারা যখন ম্যারাপ খাটিয়ে সুদিন এনে দেওয়ার কথা রং মিশিয়ে বলতে থাকেন তখন আমরা লক্ষ লক্ষ মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকি, বেদবাক্যের মতো বিশ্বাস করেও ফেলি। আমরা প্রতিবাদ তো করিই না, উলটে প্রতিবাসী-বন্ধুবান্ধবদের বিশ্বাস করাতে আসরে নেমে পড়ি।
কয়েকটি হাতেকলমে উদাহরণ দিই : (১)পশ্চিমবঙ্গে টানা ৩৪ বছর একসাথে ৯ কোটি মানুষকে সম্মোহিত করে রাখতে পেরেছিল। কম্যুনিস্ট নেতারা বাংলার মানুষদের ভাবাতে পেরেছিল কমিউনিজম ছাড়া আর কোনো বিকল্প হয় না। সম্প্রতি ২০১১ সালে সেই সম্মোহনের শেষ ঘণ্টা বাজিয়ে দিল। কমিউনিজম শাসনের সমাধি হল আর-এক দোর্দণ্ড রাজৈনতিক নেত্রীর সম্মোহনী দাপটে। মানুষ আবার সম্মোহিত হল। তবে এবার সম্মোহিত হল কোনো রাজনৈতিক মতার্দশে নয়,
(২) একটি বিশাল বপু হাতিকে তুলনামূলক এক ক্ষুদ্র মানুষ(মাহূত) পোষ(বশ পড়ুন) মানিয়ে পায়ে শিকল বেঁধে গাধার মতো খাটিয়ে নেয়। কীভাবে ? কারণ হাতি জানে না সে কত বড়ো শক্তিধর। সম্মোহিত হয়ে থাকার জন্য সে বুঝতে পারে না কী করছে। শক্তিধর হয়েও কেন এই দাসত্ব ! (৩) স্পার্টাকাসরা অনেক দেরিতে হলেও সে কথা একদিন বুঝেছিল। স্পার্টাকাস পেরেছিল হাজার হাজার ক্রীতদাসদের নিজের মতাদর্শের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে। স্পার্টাকাসের এক শক্তিশালী সম্মোহনী ক্ষমতাতেই সেটা সম্ভব হয়েছিল। পরের ইতিহাসটুকু সবাই জানেন। (৪) এবার আমি আমার কলেজ জীবনের একটা অভিজ্ঞতা জানাতে পারি। INDIAN HISTORY এবং WORLD HISTORY আলাদা আলাদা ভাবে দুই অধ্যাপক পড়াতেন। মজার ব্যাপার হল, INDIAN HISTORY যিনি পড়াতেন তাঁর ক্লাসে ছাত্রছাত্রী উপছে পড়ত। আমরা যে যেখানে থাকতাম সবাই ছুটে চলে আসতাম যাতে ক্লাসটি মিস না-হয়ে যায়। বসার জায়গার অভাবে অনেকে মেঝেতে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে পড়া শুনত। অপরদিকে যিনি WORLD HISTORY পড়াতেন তিনি ক্লাসে ঢোকার মুহূর্তে ক্লাস থেকে সমস্ত ছেলেমেয়েরা বাইরে বেরিয়ে যেত। যে দু-একজন ক্লাসে থেকে যেত তারা লাস্ট বেঞ্চে বসে গুলতানি করত এবং মেয়েদের কণ্ঠ নকল করে উপস্থিতি জানাত। তাহলে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, INDIAN HISTORY-র অধ্যাপকের সম্মোহনী ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী, অন্যদিকে WORLD HISTORY-র অধ্যাপকের সম্মোহনী শক্তি ছিল জিরো। (৫) পুলিশ তথা গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারদেরও বেশ ভালো সম্মোহনী শক্তি। সে যত বড়ো ধুরন্ধর অপরাধী হোক-না-কেন জেরা মুখে সব কথা পেটের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসবে। এই জেরাটি কী ? পুলিশ তথা গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারেরা অপরাধীর মানসিক গঠন বিশ্লেষণ করে একটা-একটা করে অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধীর জন্য বিভিন্ন ধরনের পথ। যেমন অপরাধীকে তোল্লাই দেওয়া, অর্থাৎ অপরাধীর অপরাধটাকে সরিয়ে রেখে তার ভালো দিকটা খুঁজে সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া। বলা হয়, নিজেকে অপরাধী ভাববেন না। বলা হয়, তোমার ব্যাপারটা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি। বলা হতে পারে, পুলিশ আইনের রক্ষক বটে, আইনের নির্দেশ পালন করে মাত্র। কিন্তু পুলিশও মানুষ, তাই মানুষই পুলিশের বন্ধু। বন্ধুকে সাহায্য করাই তার কাজ। যদি বন্ধু পুলিশকে সাহায্য করে। তাহলে পুলিশ চেষ্টা করবে যাতে শাস্তি কম করা যায় ইত্যাদি। (চলবে)
অষ্টাদশ শতকের শেষার্ধে ফ্রাঞ্জ অ্যান্তন মেসমার এটির উদ্ভাবন করেন। তখন “মেসমেরিজম” নামে সবাই জানত। এরপর ডাঃ ব্রেইড এই বিষয়টি নিয়ে আরও উন্নততর গবেষণা করে নাম দেন “হিপ্নোটিজম”।
হিপ্নোটিজমের সঙ্গে সম্মোহনের যে পার্থক্য সেটা বুঝে নেওয়া দরকার। আমরা যখন ভাবতে থাকি যোদ্ধার বেশে নেতাজি সুভাসচন্দ্র বসু আবার ভারতে ফিরে আসবেন, আমরা যখন ভাবতে থাকি মুজিবর রহমান রমনা ময়দানে মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলছেন, “আমি এই বাংলাদেশ চাই নাই। আমি সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ বানাইতে চাই”। আমরা যখন ভাবতে থাকি মহাত্মা গান্ধি সবরমতী আশ্রমে দাঁড়িয়ে বলছেন, “আমি চেয়েছিলাম জাতপাতহীন এক ভারতবর্ষ। এ কোন্ ভারতবর্ষ! এখানে জাতে-জাতে এতো অসহিষ্ণুতা কেন, এতো ঘৃণা কেন”। এক অস্বাভাবিক, অবাস্তব স্বপ্নে বিভোরতা। এটাই হিপ্নোটিজম। অন্যদিকে সম্মোহন হল পৃথিবী সৃষ্টির আদি থেকেই, অর্থাৎ প্রাণ সঞ্চারের সময় থেকেই শুরু।
আমরা প্রতিদিনই প্রতিনিয়ত সম্মোহিত হচ্ছি কারো না কারোর অঙ্গুলি হেলনে। আমরা বুঝতে পারছি না, বুঝতে পারলেও এড়াতে পারছি না। যার আত্মবিশ্বাস এবং প্রমা যত কম সে তত আগে সম্মোহিত হয়ে থাকে। ছোটোবেলায় ছেলেমেয়েরা কোনো-না-কোনো নেগেটিভ অথবা পজেটিভ (তোমার দ্বারা কিস্যু হবে না, তোমার ভবিষ্যত অন্ধকার, তুমি বড়ো হয়ে দেশের নাম রোশন করবে ইত্যাদি) কথা শুনতে শুনতে বিশ্বাস করতে করতে আমরা সাবালক হয়ে উঠি এবং সেই বিশ্বাসগুলিকে আঁকড়ে জীবন অতিবাহিত হয়। অপরদিকে, বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক নেতারা বা ধর্মীয় নেতারা যখন ম্যারাপ খাটিয়ে সুদিন এনে দেওয়ার কথা রং মিশিয়ে বলতে থাকেন তখন আমরা লক্ষ লক্ষ মানুষ মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে থাকি, বেদবাক্যের মতো বিশ্বাস করেও ফেলি। আমরা প্রতিবাদ তো করিই না, উলটে প্রতিবাসী-বন্ধুবান্ধবদের বিশ্বাস করাতে আসরে নেমে পড়ি।
কয়েকটি হাতেকলমে উদাহরণ দিই : (১)পশ্চিমবঙ্গে টানা ৩৪ বছর একসাথে ৯ কোটি মানুষকে সম্মোহিত করে রাখতে পেরেছিল। কম্যুনিস্ট নেতারা বাংলার মানুষদের ভাবাতে পেরেছিল কমিউনিজম ছাড়া আর কোনো বিকল্প হয় না। সম্প্রতি ২০১১ সালে সেই সম্মোহনের শেষ ঘণ্টা বাজিয়ে দিল। কমিউনিজম শাসনের সমাধি হল আর-এক দোর্দণ্ড রাজৈনতিক নেত্রীর সম্মোহনী দাপটে। মানুষ আবার সম্মোহিত হল। তবে এবার সম্মোহিত হল কোনো রাজনৈতিক মতার্দশে নয়,
(২) একটি বিশাল বপু হাতিকে তুলনামূলক এক ক্ষুদ্র মানুষ(মাহূত) পোষ(বশ পড়ুন) মানিয়ে পায়ে শিকল বেঁধে গাধার মতো খাটিয়ে নেয়। কীভাবে ? কারণ হাতি জানে না সে কত বড়ো শক্তিধর। সম্মোহিত হয়ে থাকার জন্য সে বুঝতে পারে না কী করছে। শক্তিধর হয়েও কেন এই দাসত্ব ! (৩) স্পার্টাকাসরা অনেক দেরিতে হলেও সে কথা একদিন বুঝেছিল। স্পার্টাকাস পেরেছিল হাজার হাজার ক্রীতদাসদের নিজের মতাদর্শের এক ছাতার তলায় নিয়ে আসতে। স্পার্টাকাসের এক শক্তিশালী সম্মোহনী ক্ষমতাতেই সেটা সম্ভব হয়েছিল। পরের ইতিহাসটুকু সবাই জানেন। (৪) এবার আমি আমার কলেজ জীবনের একটা অভিজ্ঞতা জানাতে পারি। INDIAN HISTORY এবং WORLD HISTORY আলাদা আলাদা ভাবে দুই অধ্যাপক পড়াতেন। মজার ব্যাপার হল, INDIAN HISTORY যিনি পড়াতেন তাঁর ক্লাসে ছাত্রছাত্রী উপছে পড়ত। আমরা যে যেখানে থাকতাম সবাই ছুটে চলে আসতাম যাতে ক্লাসটি মিস না-হয়ে যায়। বসার জায়গার অভাবে অনেকে মেঝেতে বসে কিংবা দাঁড়িয়ে পড়া শুনত। অপরদিকে যিনি WORLD HISTORY পড়াতেন তিনি ক্লাসে ঢোকার মুহূর্তে ক্লাস থেকে সমস্ত ছেলেমেয়েরা বাইরে বেরিয়ে যেত। যে দু-একজন ক্লাসে থেকে যেত তারা লাস্ট বেঞ্চে বসে গুলতানি করত এবং মেয়েদের কণ্ঠ নকল করে উপস্থিতি জানাত। তাহলে এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, INDIAN HISTORY-র অধ্যাপকের সম্মোহনী ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী, অন্যদিকে WORLD HISTORY-র অধ্যাপকের সম্মোহনী শক্তি ছিল জিরো। (৫) পুলিশ তথা গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারদেরও বেশ ভালো সম্মোহনী শক্তি। সে যত বড়ো ধুরন্ধর অপরাধী হোক-না-কেন জেরা মুখে সব কথা পেটের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসবে। এই জেরাটি কী ? পুলিশ তথা গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারেরা অপরাধীর মানসিক গঠন বিশ্লেষণ করে একটা-একটা করে অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। বিভিন্ন ধরনের অপরাধীর জন্য বিভিন্ন ধরনের পথ। যেমন অপরাধীকে তোল্লাই দেওয়া, অর্থাৎ অপরাধীর অপরাধটাকে সরিয়ে রেখে তার ভালো দিকটা খুঁজে সেটিকে গুরুত্ব দেওয়া। বলা হয়, নিজেকে অপরাধী ভাববেন না। বলা হয়, তোমার ব্যাপারটা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি। বলা হতে পারে, পুলিশ আইনের রক্ষক বটে, আইনের নির্দেশ পালন করে মাত্র। কিন্তু পুলিশও মানুষ, তাই মানুষই পুলিশের বন্ধু। বন্ধুকে সাহায্য করাই তার কাজ। যদি বন্ধু পুলিশকে সাহায্য করে। তাহলে পুলিশ চেষ্টা করবে যাতে শাস্তি কম করা যায় ইত্যাদি। (চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন