শুক্রবার, অক্টোবর ১০, ২০১৪

মৃত্যু, জীবনের শেষ স্টেশন এবং তারপর….. (প্রথম পর্ব)

--- অনির্বাণ বন্দ্যোপাধ্যায়

"মরণ রে,/তুঁহুঁ মম শ্যামসমান/মেঘবরণ তুঝ, মেঘজটাজুট,/রক্ত কমলকর, রক্ত অধরপুট,/তাপবিমোচন করুণ কোর তব/মৃত্যু-অমৃত করে দান।/তুঁহুঁ মম শ্যামসমান।।/মরণ রে,/শ্যাম তোঁহারই নাম।........" -- রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত এই মৃত্যু বিষয়ক কবিতা দিয়েই শুরু করি “মৃত্যু, মৃত্যুকালীন ব্যবচ্ছেদ এবং আমরা মানুষ নাম প্রাণীকুল” প্রবন্ধটি।
মৃত্যু ! ছোট্ট একটি শব্দ। এই সেই শব্দ, যা আমাদের নিয়ে যায় অজানা কোনো রাজ্যে, যার সম্পর্কে আমরা প্রায় কিছুই জানি না। সুন্দর এই পৃথিবী ছেড়ে যেতে কত না কষ্ট! যখন মৃত্যুর ডাক এসে যায়, প্রিয়তমা স্ত্রী, আদরের সন্তানেরা,  বাবা-মা কেউ তাদের বন্ধন দিয়ে ধরে রাখতে পারে না আমাদের। ক্ষণিকের জীবন, তা সত্ত্বেও কত সুন্দর করে আমরা সাজাতে চেয়েছি আমাদের জীবন, কত পরিকল্পনা ছিল -- সব মিলিয়ে যায় মাত্র দুটি অক্ষরের এই শব্দের দ্বারা। আমরা প্রতিদিন এই মৃত্যুকে কত আপনভাবে নিজের সঙ্গে বয়ে বেড়াই আমরা নিজেরাও জানি না।জীবদ্দশায় মৃত্যু কী আমাদের যারপরনাই বিব্রত করে না ! আমরা এই প্রবন্ধের মধ্য দিয়ে জেনে নেওয়ার চেষ্টা করব মৃত্যু কী ? মৃত্যু কীভাবে ? মৃত্যু কেন ? মৃত্যুর পরে কী ? মৃত্যুর পরে কী কিছু আছে ? নাকি মৃত্যুই শেষ ? আবার শুধু মৃত্যুতেই শেষ নয়, মৃত্যুর সঙ্গে জড়িয়ে আছে – স্বর্গ, নরক, পাপ, পুণ্য, কর্মফল, জন্মান্তরবাদ, জাতিস্মর ইত্যাদি বিষয়। স্মতর্ব্য, মানুষ ব্যতীত পৃথিবীর অন্যান্য মানবেতর প্রাণীরা জন্ম-মৃত্যু নিয়ে মোটেই ভাবিত নয়। মৃত্যু যেভাবে মানুষকে বিব্রত করে তেমন অন্য প্রাণীর হয় না। কারণ মানবেতর প্রাণীরা মানুষের মতো বিচক্ষণ নয়।তাই মৃত্যুকে ঘিরে মানুষের সমাজে অনেক মিথ এবং সংস্কার প্রচলিত আছে, যা সমগ্র মানবজাতিকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।


মৃত্যু কী ? মৃত্যু (Death) বলতে জীবনের সমাপ্তি বুঝায়। জীববিজ্ঞানের ভাষায় প্রাণ আছে এমন কোনো জৈব পদার্থের (বা জীবের) জীবনের সমাপ্তিকে মৃত্যু বলে। অন্য কথায়, মৃত্যু হচ্ছে এমন একটি অবস্থা (state, condition) যখন সকল শারিরীক কর্মকাণ্ড যেমন শ্বসন, খাদ্যগ্রহণ, পরিচলন, ইত্যাদি থেমে যায়। কোনো জীবের মৃত্যু হলে তাকে মৃত বলা হয়। মৃত্যু বিভিন্ন স্তরে ঘটে থাকে। সোমাটিক মৃত্যু হল সামগ্রিকভাবে কোনো জীবের মৃত্যু। নির্দিষ্ট অঙ্গ, কোশ বা কোশাংশের মৃত্যুর আগেই এটি ঘটে। এতে হৃৎস্পন্দন, শ্বসন, চলন, নড়াচড়া, প্রতিবর্ত ক্রিয়া ও মস্তিষ্কের কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। সোমাটিক মৃত্যু ঠিক কখন ঘটে তা নির্ণয় করা দুরূহ, কেন-না কোমা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, এবং ঘোর বা ট্রান্সের মধ্যে থাকা ব্যক্তিও একই ধরনের বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে থাকেন। সোমাটিক মৃত্যুর পর অনেকগুলি পরিবর্তন ঘটে যা থেকে মৃত্যুর সময় ও কারণ নির্ণয় করা যায়। মারা যাওয়ার পরপরই পার্শ্ববর্তী পরিবেশের প্রভাবে দেহ ঠান্ডা হয়ে যায়, যাকে বলে Algor mortis। মারা যাওয়ার পাঁচ থেকে দশ ঘণ্টা পরে কংকালের পেশিগুলি শক্ত হয়ে যায়, যাকে বলে Rigor mortis এবং এটি তিন-চার দিন পরে শেষ হয়ে যায়। রেখে দেওয়া দেহের নীচের অংশে যে লাল-নীল রং দেখা যায়, তাকে বলে Livor mortis; রক্ত জমা হওয়ার কারণে এমন হয়। মৃত্যুর খানিক বাদেই রক্ত জমাট বাঁধতে শুরু করে। আর তারপরে দেহের যে পচন শুরু হয়, তার জন্য দায়ী এনজাইম ও ব্যাক্টেরিয়া। দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিভিন্ন হারে মারা যায়। সোমাটিক মৃত্যুর ৫ মিনিটের মধ্যেই মস্তিষ্কের কোশগুলির মৃত্যু ঘটে। অন্যদিকে হৃৎপিণ্ডের কোশগুলি ১৫ মিনিট এবং বৃক্কেরগুলি প্রায় ৩০ মিনিট বেঁচে থাকতে পারে। এই কারণে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সদ্যমৃত দেহ থেকে সরিয়ে নিয়ে জীবিত ব্যক্তির দেহে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব।

এতদিন মৃত্যু বলতে হৃৎক্রিয়া স্তব্ধ হয়ে যাওয়াকেই বোঝাত। কিন্তু “অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইন ১৯৯৪” কার্যকর হওয়ায় বদলে গেছে মৃত্যুর ধারণা। “Brain Death” বা “মস্তিষ্কের মৃত্যু”-তেই এখন কেবল কোনো মানুষকে মৃত বলা যাবে। কোনো মানুষের ব্রেন ডেথ হয়েছে কী হয়নি, তা ঠিক করতে দুজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের লিখিত অভিমত বাঞ্ছনীয়। এরপর যন্ত্রাদি দ্বারা পরীক্ষিত নথিভুক্ত ফলাফলও যদি ওই অভিমতের পক্ষে যায়, তাহলেই কেবলমাত্র “ব্রেন ডেথ” হয়েছে বলে ধরা হবে। তবে ওই দুই চিকিৎসক কোনোভাবেই সংস্থাপক দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারবেন না। “মস্তিষ্ক মৃত্যু” ঘোষণা করার আগে দেখে নিতে হবে রোগী যেন কোনোরকম নিস্তেজক বা ঘুমের ওষুধের প্রতিক্রিয়ার বশবর্তী না হন।
“ব্রেন ডেথ” বা “মস্তিষ্ক মৃত্যু” বলতে আসলে ব্রেনস্টেমের মৃত্যুকে বোঝায়। “প্রকৃত মৃত্যু” ও “মস্তিষ্ক মৃত্যুর মধ্যে কিছু পার্থক্য আছে। প্রকৃত মৃতদেহে ধমনীপ্রবাহ থাকে না। শ্বাস-প্রশ্বাসের লক্ষণ থাকবে না, হৃদস্পন্দনের আওয়াজ থাকবে না এবং বাইরের উদ্দীপনায় প্রতিক্রিয়া থাকবে না। এই ধরনের মৃত্যুকে বলা হয় “কার্ডিওরেসপিরেটরি ডেথ”। “মস্তিষ্ক মৃত্যু” এর থেকে আলাদা। আমাদের চেতনা, শ্বাস-প্রশ্বাস ও অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় কার্যের কেন্দ্রবিন্দু হল মস্তিষ্ক। মস্তিষ্কের যে বিশেষ অংশ দ্বারা এই জরুরি কাজগুলি নিয়ন্ত্রিত হয় তাকেই বলে “ব্রেন স্টেম” বা “মস্তিষ্ক কাণ্ড”। এই অংশের মৃত্যু হলে মানুষকে আর বাঁচানো যায় না। অনেক রোগী দেখা গেছে, যাঁরা অজ্ঞান হয়ে আছেন, শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে গেছে – কিন্তু তাঁদের হৃৎপিণ্ড কাজ করে যাচ্ছে। এই অবস্থায় যদি কৃত্রিমভাবে শ্বাসকার্য ও হৃৎপিণ্ডকে সচল রাখা যায় তাহলে একসময় দেখা যাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালানোর যন্ত্র ছাড়া হাজার চেষ্টা করলেও শ্বাস-প্রশ্বাস আর ফিরবে না এবং মস্তিষ্কের কেন্দ্রবিন্দু আর সজাগ হবে না। হৃৎপিণ্ডের নিজস্ব সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা থাকার ফলে এমন ক্ষেত্রেও হৃৎপিণ্ড তার কাজ চালিয়ে যেতে পারে এবং ধমনীপ্রবাহ সচল থাকতে পারে। এই অবস্থাকেই আমেরিকায় “ব্রেন ডেথ” এবং ইংল্যান্ডে “ব্রেনস্টেম ডেথ” বলে।

মৃত্যু, কিন্তু মৃত্যু নয়। এক অনন্তকালের ফিরে আসার অপেক্ষা। দু-একজন ফিরলেও, অনেকেই ফেরে না। এমন দুর্বিষহ এবং ব্যয়বহুল অপেক্ষার অবসান হয় একদিন। সেই অবস্থার নাম কোমা, কোমাচ্ছন্ন এবং কোমাচ্ছন্নতা।
কোমা কী ? কোমা মৃত্যুর কোন্ অবস্থাকে বোঝায় ? Wikipedia বলছে, “In medicine, a coma is a state of unconsciousness lasting more than six hours in which a person: cannot be awakened; fails to respond normally to painful stimuli, light, or sound; lacks a normal sleep-wake cycle; and, does not initiate voluntary actions. A person in a state of coma is described as being comatose.
A comatose person exhibits a complete absence of wakefulness and is unable to consciously feel, speak, hear, or move. For a patient to maintain consciousness, two important neurological components must function. The first is the cerebral cortex—the gray matter that covers the outer layer of the brain. The other is a structure located in the brainstem, called reticular activating system (RAS). Injury to either or both of these components is sufficient to cause a patient to experience a coma. The cerebral cortex is a group of tight, dense, "gray matter" composed of the nuclei of the neurons whose axons then form the "white matter", and is responsible for perception, relay of the sensory input (sensation) via the thalamic pathway, and many other neurological functions, including complex thinking.

RAS, on the other hand, is a more primitive structure in the brainstem that is tightly in connection with reticular formation (RF). The RAS area of the brain has two tracts, the ascending and descending tract. Made up of a system of acetylcholine-producing neurons, the ascending track, or ascending reticular activating system (ARAS), works to arouse and wake up the brain, from the RF, through the thalamus, and then finally to the cerebral cortex. A failure in ARAS functioning may then lead to a coma.”

যুক্তরাষ্ট্রের সান্তাক্রুজ শহরের ৩৯ বছর বয়স্ক এক মহিলা কোমাচ্ছন্ন অবস্থায় একটি সুস্থ শিশুর জন্ম দিয়েছিলেন। মহিলাটি প্রায় ৭০ দিন যাবৎ কোমায় আচ্ছন্ন হয়ে আছেন।সেই অবস্থাতেই সিজার করে শিশুটিকে প্রসব করানো হয়। মেলিসা স্কারলেট নামের এই ৩৯ বছর বয়সি মহিলাটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সেমিকোমাটেজ অবস্থায় আছেন।
কোমা থেকে ফিরে এসে বিদেশি ভাষায় অনর্গল কথা বলে যাওয়া ! বাস্তবে সম্ভব ? বাস্তব ঘটনাগুলি নিরীক্ষণ করা যাক -- তার নাম বেন মেকমাহন। বয়স যখন ২২ তখন সে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় কোমায় চলে যায়। অন্তত এক সপ্তাহ লেগেছিল তার ওই স্থবির অচলায়তন পরিধি থেকে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার জন্য। আর যখন তার জ্ঞান ফিরল তখন ঘটল এক অদ্ভুত ঘটনা। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন নিবাসী এই তরুণ পুরোপুরি ভুলে গেছে নিজের মাতৃভাষা  ইংরেজি। সবাই অবাক হয়ে শুনতে থাকল তার মুখে ইংরেজির পরিবর্তে চৈনিক ভাষা। জানা গেছে, বেন কেবল তার স্কুলেই অল্পবিস্তর চিনের মান্দারিন ভাষা শিখেছিল। কিন্তু সেটা বলা কিংবা লেখার জন্য যথেষ্ট নয়। অথচ কোমা থেকে জ্ঞান ফিরে পাওয়ার পর বেন চিনা ভাষায় স্বাভাবিকভাবেই কথা বলতে শুরু করে। তার চিকিৎসকরা জানান, সে যে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল সেখান থেকে তার বেঁচে ফিরে আসাটা অনেক বড়ো ব্যাপার।বেন তার কোমা থেকে জেগে উঠার মুহূর্তটি স্মরণ করতে পারে। সে সময় সে দেখেছিল এশীয়দের মতো একজন সেবিকা (নার্স) তার বিছানার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সে নার্সকে ডেকে চিনা ভাষায় জানালো, ক্ষমা করবেন, আমি এখানে সুস্থবোধ করছি না।এরপর সে নার্সকে একটা কলম এবং কাগজ আনতে বলে। নার্স এনে দিলে বেন তাতে মান্দারিন হরফে লিখে, ‘আমি মাকে ভালোবাসি, বাবাকে ভালোবাসি, আমি সুস্থ হয়ে উঠব।’ বেনের বাবা-মা তখন ছেলে বেঁচে গেছে তাতেই খুশি। মজার ব্যাপার হল পরবর্তী সে চিনের সাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ে বাণিজ্য বিভাগে পড়ছে।

এ ধরনের ঘটনা কেবল তার ক্ষেত্রেই ঘটেনি। রয়েছে আরও নজির। ২০১০ সালের কথা। সে বছর এ রকম কোমায় থাকার পর ১৩ বছরের ক্রোশিয়ান এক বালিকা যখন জেগে উঠল তখন সে পুরোপুরি জার্মানি ভুলে গিয়ে নিজের গ্রামীণ ভাষা বলা শুরু করল। আবার খুব বেশি দিন আগের কথা নয়, গেল বছর ২০১৩ সালে এক আমেরিকান নেভিকে তার মোটেল রুম থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। সাময়িক কোমা বা চেতন ফেরত পাওয়ার পর দেখা গেল সে আর নিজেকে চিনতে পারছে না। এমনকি সে সুইডিশ ভাষায় কথা বলা শুরু করেছে।

বিদেশি জার্মান ভাষাশিক্ষায় সবে হাতেখড়ি। থেমে থেমে পড়া, কিছু কিছু লেখা আর আধো আধো বুলি পর্যন্তই দৌড়। এরই মধ্যে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে কোমায় চলে যাওয়া। তবে অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, এই কোমাই যেন তাকে রাতারাতি জার্মান ভাষা শিখিয়ে দিয়েছে। এখন সে জার্মান ভাষা এতটাই অনর্গল বলা শুরু করেছে যে নিজের ভাষাই ভুলে গেছে সে। ক্রোয়েশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় কেনিন শহরের ১৩ বছর বয়সি এক মেয়ের জীবনে ঘটে গেছে এমন অবিশ্বাস্য ঘটনা। শিশুটির অভিভাবকেরা জানান, শিশুটি সবে একটি বিদ্যালয়ে জার্মান ভাষা নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছে। তবে অনর্গল কথা বলা দূরে থাক, ভাষাটি এখনও খুব একটা শেখা হয়ে ওঠেনি তার। শিশুটির পরিবার জানায়, সম্প্রতি আকস্মিক অসুস্থ হয়ে সে কোমায় চলে যায়। প্রায় ২৪ ঘণ্টা সে কোমায় ছিল। তবে কোমা থেকে ফেরার পর সে মাতৃভাষা ভুলে যায়। আর শুদ্ধ জার্মানিতে কথা বলা শুরু করে। কেবি হাসপাতালের চিকিৎসকেরা দাবি করেন, ঘটনাটি একেবারেই ব্যতিক্রম। বিষয়টি নিয়ে বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করেছেন। হাসপাতালের পরিচালক দুজোমির মারাসোভিক বলেন, “এভাবে স্নায়ুরোগ (ট্রমা) থেকে সেরে উঠে মস্তিষ্ক কী প্রতিক্রিয়া দেখাবে, আপনি কখনোই তা জানবেন না। তবে ওই ঘটনায় অবশ্যই আমাদের কিছু তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা আছে”। মনস্তত্ত্ববিশেষজ্ঞ মিজো মিলাস বলেন, “আগে এ ধরনের ঘটনাকে অলৌকিক আখ্যা দেওয়া হত। তবে আমরা মনে করি, এর অবশ্যই যৌক্তিক ব্যাখ্যা আছে। যদিও আমরা এখনও তা খুঁজে পাইনি”।

কোন ধর্মের মানুষ কেমনভাবে মৃতদেহের সৎকারে বিশ্বাস করেন, সেটা দেখা যাক। মিশরীয়রা : প্রাচীনকালে মিশরীয়রা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করত, মৃত্যুর পরও তাদের আত্মা বেঁচে থাকে। কাজেই পরবর্তী জীবনে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, জীবনটাকে যাতে উপভোগ করা যায়, সে চিন্তায় মিশরীয়রা অস্থির থাকত। ব্যক্তির গুরুত্বের উপর নির্ভর করে গুরুত্ব আরোপ করা হত এ ব্যাপারে। ব্যক্তি যত গুরুত্বপূর্ণ হত এ কাজে গুরুত্ব তত বেশি বেড়ে যেত। পরবর্তী জীবনের আরাম-আয়েশের জন্য স্বভাবতই ফারাওদের ব্যাপারেই পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছিল। ক্ষমতায় আসা নতুন ফারাওয়ের প্রথম কাজ সম্পন্ন করা। প্রত্যেকেই চাইতেন বিশাল আয়তনের হোক তার সমাধিক্ষেত্র। অনেকেই মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত সমাধিক্ষেত্র তৈরির কাজ চালিয়ে যেত। এসব সমাধিক্ষেত্র আসলে মৃতের আত্মার ঘর। মিশরীয়রা মনে করত, লাশ বা মৃতদেহ টিকে থাকার উপরই নির্ভর করে আত্মার বেঁচে থাকা বা ফিরে আসা। এ কারণেই মৃতদেহ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে মমি করত তারা। আত্মার বেঁচে থাকার জন্য চাই প্রয়োজনীয় নানা জিনিস। তাই নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্র, বিশেষ করে খাবার-দাবার মৃতদেহের সঙ্গে দিয়ে দিত তারা। সমাধি-স্তম্ভ প্রধানের দায়িত্ব ছিল দস্যুদের হাত থেকে মৃতদেহ আর তার ব্যবহার্য জিনিসপত্র রক্ষা করার। কিন্তু কবরে সমাধিত ব্যক্তিটি কত বিপুল পরিমাণ বিত্ত আর ক্ষমতাবান ছিল তা জাহিরের উদ্দেশ্যেও নির্মাণ করা হত পিরামিড। তাই ফারাওদের মৃতদেহের সঙ্গে কবরস্থ করা হত বিপুল ধন-সম্পদ। সমাজের বিত্তশালীদের কবরেও মূল্যবানসামগ্রী দেয়া হত। এমনকি, নিন্মশ্রেণীর মানুষদের কবরেও সামান্য পরিমাণ হলেও কিছু খাবার রেখে দেয়া হত।

খ্রিস্টান ধর্মে সৎকার : খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা মৃতদেহকে কবর দিয়ে থাকেন। এটাই রীতি। প্রাচীন যুগে পোপগণ মৃতের সুখের জন্য স্বর্গের জায়গা বিক্রি করতেন। জমি কিনলে যেমন দলিল থাকে, তেমনই পোপগণও একটা দলিল লিখে দিতেন – যাকে Indulgence বা পাপক্ষয়পত্র বলা হত।যখন কোনো ধনী ব্যক্তি স্বর্গে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করে পোপকে প্রচুর ধনদৌলত দিত। এবং পোপ জিশুর ও মেরির মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে একপ্রকারের হুন্ডি লিখতেন। কী লেখা থাকত তাতে ? –- “হে ঈশ্বরের বান্দা জিশুখ্রিস্ট ! অমুক ব্যক্তি স্বর্গে যাওয়ার জন্য তোমার নামে আমার কাছে লক্ষ মুদ্রা জমা করে দিয়েছে। সে স্বর্গে উপস্থিত হলে তুমি তোমার পিতার স্বর্গরাজ্যে পঞ্চবিংশ সহস্র মুদ্রা মূল্যের ভোজ্য পানীয় ও বস্ত্রাদি, পঞ্চবিংশ সহস্র মুদ্রা মূল্যের বাগানবাড়ি, পঞ্চবিংশ সহস্র মুদ্রা মূল্যের যান-বাহন-ভৃত্য এবং পঞ্চবিংশ সহস্র মুদ্রা আত্মীয়স্বজন-ভাই-বন্ধু প্রভৃতির নিমন্ত্রণের জন্য প্রদান করা হবে”। যাঁরা যত বেশি টাকা পুরোহিত বা পোপদের কাছে জমা দিতে পারবেন তাঁদের পিতা-মাতা-আত্মীয়স্বজন ততবেশি স্বর্গে জমি বা জায়গা পাবেন। তবে প্রোটেস্ট্যান্ট খ্রিস্টানরা এমন ব্যবস্থাপত্রে রাখেন না, বিশ্বাস রাখেন ক্যাথলিক খ্রিস্টানরা।

ইসলাম ধর্মে সৎকার : মৃতদেহকে কবর দেওয়া হয় এবং আত্মীয়রা জামাজার নমাজ পাঠ করেন।আত্মীয়-পরিজনদের মৃত্যুর খবর পেলেই মুসলিমগণ মৃতের উদ্দেশ্যে – ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্নালিল্লাহে রাজেউন – বলে থাকেন। “ইন্নালিল্লাহে ওয়া ইন্নালিল্লাহে রাজেউন”, অর্থাৎ -- নিশ্চয় আমরা আল্লাহরই জন্য এবং নিশ্চয় আমরা তাঁরই দিকে ফিরে যাব। এরপর সম্মিলিতভাবে মৃতদেহটিকে মাটি (কবর) দেওয়ার পর ৪০ (চল্লিশ) দিনের মিলাদ দেওয়া হয়। এবং “লা ইলাহা ইল্লাহ মহম্মদু রসুলাল্লাহ”(আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, মোহম্মদ তাঁর প্রেরিত পুরুষ)-- আয়াতটি বারে বারে পাঠ করা হয়। পুরোহিত নিয়োগে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। তাই মৌলভি বা মাওলানা বা যে-কোনো মুসলিম ব্যক্তি যিনি আয়াতটি জানেন তিনিই পাঠ করতে পারেন। যে ব্যক্তির পিতা বা মাতা বা আত্মীয়ের মৃত্যু হয়েছে তিনি স্বাভাবিক পোশাকই পরবেন, স্বাভাবিক খাদ্যদ্রব্যই গ্রহণ করবেন এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করবেন আর পাঁচজনের মতো।মুসলিম সম্প্রদায়গণের মধ্যে দুটি শ্রেণি আছে। যেমন – (১) মোহম্মদী এবং (২) হানাফি। পিতা-মাতার মৃত্যু হলে মোহম্মদী সম্প্রদায়গণ লোকজন নেমন্তন্ন করে ভোজ দেন না। এঁদের মত – মৃত মানুষের জন্যে আবার ভাত রান্না কেন ? এটা তাঁর কোন্ কাজে লাগবে ? অপরদিকে হানাফি সম্প্রদায়গণ আত্মীয়-বন্ধুবান্ধব ডেকে ভোজের ব্যবস্থা করবেন।
ইহুদি ধর্মে সৎকার : ইহুদিরা আত্মায় বিশ্বাস করেন না বলে আত্মার শান্তির উদ্দেশ্যে কোনো যাগযজ্ঞ-অনুষ্ঠানাদিও নেই।এঁদের পরলোকবাদেও কোনো বিশ্বাস নেই। মোট কথা, ইহুদিরা ঈশ্বর, অবতার, পুনর্জন্ম, বর্ণভেদ ইত্যাদিতে বিশ্বাস করে না – মৃত্যু এবং মৃতদেহকে কেন্দ্র করে যাগযজ্ঞাদিও করে না।

বৌদ্ধধর্মে সৎকার : বৌদ্ধধর্মে মৃতের সৎকারাদি বৌদ্ধভিক্ষুই করে থাকেন(যে-কোনো বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ধর্মশাস্ত্রে পণ্ডিত হলে তাকে ভিক্ষু পদে উন্নীত করা হয়)। বৌদ্ধরা আত্মাকে নিত্য স্বীকার করে না এবং ঈশ্বরেও বিশ্বাস করেন না।তবে বৌদ্ধরা মনে করেন, মানুষ মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই ব্যক্তির চিত্তপ্রবাহের সংস্কাররাশি যা চুম্বকের মতো গুণসম্পন্ন তা নিকটতম গর্ভের সন্তানের মধ্যে চলে যায়। এইভাবেই তাঁর পুনর্জন্ম হয়। সে কারণে তাঁরা মৃতের কল্যাণে উদ্দেশ্যে কিছু করেন না।

বৈষ্ণবধর্মে সৎকার : বৈষ্ণব মতে মৃতদেহকে সমাধি (কবর) দেওয়াই নিয়ম। একটা গর্ত খুঁড়ে তার মধ্যে মৃতব্যক্তিকে যোগাসনে বসিয়ে দেওয়া হয়। এরপর মৃতদেহের মাথায় এক মালসা লবণ বা নুন ঢেলে দেওয়া হয়। বৈষ্ণব সম্প্রদায়গণ সাধারণত ১১ দিনের দিন মৃতের আত্মাকে মন্ত্রপুত করে বিষ্ণুলোকে পাঠান। 

সাঁওতালি সৎকার : সাঁওতালদের সৎকারে তাদের কেউ মারা গেলে মৃতদেহকে দাহ করে বাড়িতে ফেরার সময় একখণ্ড অস্থি নিয়ে এসে কোনো এক রাস্তার মোড়ে পুঁতে রাখে।এরপর তিন দিনের দিন নির্দিষ্ট অস্থিখণ্ডটি তুলে কেন্দুগাছের তিনটি ডালের মাথায় সরা বসিয়ে সেটার উপর রাখে।গ্রামের মোড়ল বা অভিজ্ঞ ব্যক্তির নির্দেশমতো মৃতের পুত্র ওই খুঁটির গোড়ায় ফুল, জল প্রভৃতি দিয়ে মৃতককে শ্রদ্ধা জানায়। ওই দিনেই ওখান থেকে অস্থি তুলে নিয়ে যে-কোনো নদীতে দিয়ে দিলেই মৃতের সৎকার শেষ হয়ে যায়। এরপর যে-কোনোদিন সুবিধামতো আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধবদের নিমন্ত্রণ করে ভোজের ব্যবস্থা করা। 

বৈদিক মতে সনাতন সৎকার : প্রাচীনকালে সমস্ত সনাতনপন্থীরা বেদের নিয়মেই মৃতের শেষকৃত্য সম্পন্ন করতেন। এখনও অনেকে বৈদিক নিয়মেই মৃতকের শেষকৃত্য করে থাকেন। বৈদিক ক্রিয়া মতে “শ্রাদ্ধ” হল শ্রদ্ধা সহকারে যেটা করা হয়(সেই শ্রাদ্ধ করতে হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে যে মৃত হতেই হবে এমন কোনো কথা নেই, কোনো ব্যক্তির জীবদ্দশাতেই তা করা হয়।জীবিত পিতামাতার সেবা-শুশ্রূষা করার নামই শ্রাদ্ধ।)।বৈদিক নিয়মানুসারে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে দুই থেকে তিনদিন সময় লাগে।কী সেই নিয়ম ? কোনো ব্যক্তি মারা গেলে তাঁকে দাহ করার সময়ে মন্ত্রের মাধ্যমে অগ্নির এবং মৃতদেহের গুণগান করা হয়। মৃতদেহকে শ্মশানে চন্দন, ঘি, অগুরু, তগর, কস্তুরী, মাসা ইত্যাদি সহযোগে কাষ্ঠ দ্বারা দাহ করা হয়। তৃতীয় দিনে মৃতকের কোনো আত্মীয় শ্মশানে গিয়ে চিতা থেকে অস্থি উঠিয়ে সেই শ্মশানের ভূমির কোথাও সেগুলি আলাদাভাবে রেখে দেয়। মৃতকের জন্য আর কোনো কর্ম করা কর্তব্য নয়। কেন-না “ভস্মান্তম্ শরীরম্” এই যজুর্বেদ মন্ত্রের প্রমাণে স্পষ্ট হয় যে দাহ ও অস্থি সঞ্চয়ণ ব্যতীত মৃতকের জন্য কোনো কর্ম করা কর্তব্য নয়। 

“অন্ত্যেষ্টি” শব্দটি শব্দটি স্বয়ং ঘোষণা করছে – মৃতদেহ দাহ করাই পুণ্যকর্ম। অন্ত্যা অর্থে অন্তিম, চরম বা সর্বশেষ এবং ইষ্টি অর্থে যজ্ঞ, শুভকর্ম বা সংস্কার বোঝায়। মৃত্যুর পর বিধিপূর্বক শবদাহ করাই অন্ত্যেষ্টি কর্ম।

পৌরাণিক মতে হিন্দুদের মৃতদেহ সৎকার : পৌরাণিক শাস্ত্রমতে (আসলে গরুড়পুরাণ মতে) হিন্দু সম্প্রদায়গণ শবদাহ এবং শবদাহান্তে অস্থি গঙ্গায় অস্থি প্রদান। তদুপরি বর্ণ অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদ যেমন – ১০, ১১, ১৫ বা ৩০ দিন পর পুরোহিত ডেকে আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধবকে নিমন্ত্রণ করে শ্রাদ্ধাদি ক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।এরপর মৃতদেহটি যাতে স্বর্গে যান তার জন্য যথাসম্ভব উপায় প্রয়োগ করা হয়। মৃতব্যক্তিকে স্বর্গে যেভাবে পাঠানো যায় তার কয়েকটা বন্দোবস্ত এখানে উল্লেখ করার চেষ্টা করছি।যেমন – (১) মৃত্যুপথযাত্রী ব্যক্তির কানের সামনে জোরে জোরে গীতা পাঠ করা, (২) সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু সম্পন্ন হলে বুকের উপর নামাবলি অথবা গীতা অথবা উভয়ই রাখা হয়, (৩) মৃতদেহ শ্মশান নিয়ে যাওয়ার পথে “হরি বলো” ধ্বনি তোলা, (৪) মৃতদেহ ভস্মীভূত হওয়ার পর অস্থি তুলে গঙ্গায় নিক্ষেপ করা, (৫) ব্রাহ্মণকে সবৎসা গোরু দান, (৬) মৃতের দোষ কাটানো, (৭) নানাবিধ কারণে প্রায়শ্চিত্ত করা, (৮) যোড়শ দান (শ্রাদ্ধের সময় ব্রাহ্মণকে ১৬টি দ্রব্য দান করলে মৃতব্যক্তি ৯৬০ হাজার বছর স্বর্গে সুখে কাল কাটাতে পারবেন। যতগুলি পুত্র এই অনুষ্ঠান করবেন মৃতব্যক্তি ততগুণ স্বর্গলাভ করবেন। একজন পুত্র হলে ৯৬০ হাজার বছর, ১০ জন পুত্র হলে অবশ্যই ৯৬০০ হাজার বছর), (৯) হেম গর্ভ তিল দান। (১০) বিলক্ষণা শয্যা দান, (১১) মৃত ব্যক্তির নামে ষাঁড় ছেড়ে দেওয়া, (১২) অতিথি ভোজন, (১৩) ব্রাহ্মনভোজন, (১৪) বাড়িতে কীর্তন বা রামগানের আয়োজন করা, (১৫) গয়ায় পিণ্ডদান, (১৬) সাংবাৎসরিক শ্রাদ্ধ, (১৭) পিতৃতর্পণ ইত্যাদি।

মৃতের সৎকার তো হল, সৎকারের মাধ্যমে মৃত ব্যক্তিকে স্বর্গে পাঠিয়েই কী সব শেষ ! মৃত্যুর পরে কী কিছু নেই ? মৃত্যুতেই কী একটা জীবনের শেষ ? আত্মা বলে কী কিছু আছে ? তবে আত্মা কী ? আত্মার স্বরূপ কী ? আত্মাই পুনর্জন্ম ঘটাতে পারে ? পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে আমরা খুঁজতে চেষ্টা করব মৃতব্যক্তির পরিণতি এবং আত্মার ব্যাখ্যার উত্তর।

অবশেষে মানুষ একদিন মৃত্যুকে স্পর্শ করে কিংবা মৃত্যু মানুষকে স্পর্শ করে। জীবনের প্রথমবার এবং শেষবারের মতো চরম সত্যের মুখোমুখি হয় মানুষ।নানাভাবে মানুষের মৃত্যু আসতে পারে। যদিও সব মৃত্যুই মৃত্যু হলেও, সব মৃত্যু একরকম হয় না। মৃত্যু যেরূপে মানুষকে আলিঙ্গন করে – (১) বার্ধক্যজনিত মৃত্যু, (২) প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যু (বন্যা, সাইক্লোন, বজ্রপাত, ভূমিকম্প, দাবানল ইত্যাদি), (৩) দুর্ঘটনাজনিত মৃত্যু, (৪) অসুখে-বিসুখে মৃত্যু, (৫) যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যু, (৬) রাজনৈতিক কারণে মৃত্যু, (৭) আত্মহত্যায় মৃত্যু, (৮) অনুমতি সাপেক্ষে মৃত্যু (ইচ্ছামৃত্যু), (৯) রাষ্ট্র দ্বারা মৃত্যু (আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ড), (১০) ধর্মীয় কারণে মৃত্যু (সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা), (১১) শত্রুতার কারণে মৃত্যু, (১২) আততায়ীর হাতে মৃত্যু (ইন্দিরা গান্ধি, রাজীব গান্ধি, মুজিবর রহমান, জন কেনেডি প্রমুখ), (১৩) সামাজিক অশিক্ষার কারণে মৃত্যু (ডাইনি হত্যা ইত্যাদি), (১৪) না খেতে পেয়ে বা অনাহারে মৃত্যু, (১৫) রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে অনশনে মৃত্যু (চেট্টি) (১৬) পুলিশী হেফাজতে মৃত্যু ইত্যাদি। মানুষ ছাড়া এত প্রকারের মৃত্যু পৃথিবীর আর কোনো প্রাণীর হয় না। তা মৃত্যু যেভাবেই হোক --  মৃত্যুর পর কী, তা নিয়ে আমাদের অপার কৌতূহল। নানা জনের নানা মত।সত্যটা কী ? সবটাই ধোঁয়াশা !
জীবের মৃত্যুর কথা জানার আগে ‘জীবন’ কী সেটা জেনে নেওয়া প্রয়োজন। যদিও বিজ্ঞানীরা আজও জীবন বা প্রাণের কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা দিতে পারেননি, তবু বিভিন্ন বিজ্ঞানীদের ভাষায় জীবন হল – (১) জীবন বা প্রাণ এমন এক সত্তা যার থেকে অনুরূপ সত্তার জন্ম হতে পারে। পরিবেশের প্রভাবে যার আকস্মিক পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটলে তার থেকে উন্নততর জীবন-সৃষ্টির পথ সুগম হতে পারে। (২) প্রতিনিয়ত পরিবর্তনোন্মুখ পরিবেশে মানিয়ে নিতে ইচ্ছুক জটিল সুসংবদ্ধ প্রোটোপ্লাজমের সুনির্দিষ্ট শক্তির বহিঃপ্রকাশই হল জীবন। (৩) বৃদ্ধি, জনন, পরিব্যক্তি ও বিবর্তন বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সজীব, জটিল, কোষীয় জৈব যৌগকে জীবন বা প্রাণ বলে। (৪) পরিবেশ ও সজীব বস্তুর আন্তঃবিক্রিয়ার বহিঃপ্রকাশই হল জীবন।

জীবের মৃত্যু অনেকাংশেই প্রোটোপ্লাজমের উপস্থিতির উপর নির্ভর করে। প্রোটোপ্লাজম বিশেষ এক প্রকার জটিল যৌগ।উদ্ভিদ বা প্রাণী যে-কোনো জীবদেহ এক বা একাধিক কোশের সমন্বয়ে গঠিত। সাধারণত কোশের প্রকোষ্ঠে আবদ্ধ থেকে এই প্রোটোপ্লাজম সবরকম শারীরবৃত্তীয় কাজ সম্পন্ন করে। সে জন্য প্রোটোপ্লাজমকে “প্রাণের ভৌত ভিত্তি” বা “Physical basis of life” বলা হয়। প্রতিটি জীবদেহে প্রোটোপ্লাজম বর্তমান, অর্থাৎ যেখানেই প্রাণ সেখানেই জীবন্ত প্রোটোপ্লাজম। প্রোটোপ্লাজম গঠনের ৭৫% জল। তাই জীবদেহের জলের অভাব হলে প্রোটোপ্লাজমের ক্রিয়া ব্যাহত হয়।ফলে জীব বাঁচতে পারে না। তাই জীবকোশে প্রোটোপ্লাজমের মৃত্যু হলে জীব জড়বস্তুতে পরিণত হয়।
জন্মের পর অধিকাংশ জীবদেহ নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। বাল্য, কৈশোর, যৌবন এবং পৌঢ়ত্বের পর প্রাকৃতিক নিয়মে জীবদেহে বার্ধক্যের লক্ষণ ফুটে ওঠে। দেহের কর্মক্ষমতা কমে আসে এবং জরার লক্ষণ প্রকাশ পায়৳ কর্মক্ষমতা কমে আসার ফলে দেহের বিভিন্ন বিপাকীয় কাজে কোশ আর ঠিকমতো অংশগ্রহণ করতে পারে না। ফলে কোশস্থিত অঙ্গাণুগুলি ধীরে ধীরে অক্ষম হয়ে পড়ে এবং জীব একসময় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে, নশ্বর শরীর নিথর হয়।
বর্তমানে বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানবদেহের হৃৎপিণ্ডের ছন্দোবদ্ধতা স্তব্ধ হওয়া মানেই মৃত্যু নয়, যতক্ষণ-না মস্তিষ্কের মৃত্যু  ঘটছে ততক্ষণ মানুষের মৃত্যু বিলম্বিত হয়। অতএব মৃত্যু জীবের অবধারিত এবং স্বাভাবিক পরিণতি।

মৃত্যুর কোনো দিনক্ষণ হয় নাকি ? হয় না। কারণ রোগীর মৃত্যুর ‘সঠিক’ সময় নির্ধারণ করাটাও অনেকক্ষেত্রে অসুবিধাজনক, কারণ দেখা গেছে বিভিন্ন অংগপ্রত্যংগ দেহের মৃত্যুর পরও বেঁচে থাকে, যেমন মস্তিষ্ক ৫ মিনিট, হৃৎপিণ্ড ১৫ মিনিট, কিডনি ৩০ মিনিট, কঙ্কাল পেশি ৬ ঘণ্টাঅঙ্গ বেঁচে থাকার অর্থ হল তার কোশগুলি বেঁচে থাকাকোশ বেঁচে থাকে ততক্ষণই যতক্ষণ এর মধ্যে শক্তির জোগান থাকেশক্তি উৎপন্ন হয় কোশের অভ্যন্তরস্থ মাইটোকন্ড্রিয়া থেকেমাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যকারিতা ক্ষুণ্ণ হলে কোশেরও মৃত্যু হয়কাজেই বোঝা যাচ্ছে যে, মৃত্যু কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং একটি প্রক্রিয়াদেহের মৃত্যু দিয়ে এর প্রক্রিয়া শুরু হয়, শরীরের শেষ কোশটির মৃত্যু পর্যন্ত এ প্রক্রিয়া চলতে থাকে

মৃত্যু তো হল, কিন্তু মৃত্যুর ওপারে কী সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই উপনিষদের কথা মনে পড়ে গেল। কঠ উপনিষদের প্রথম অধ্যায়ে যম ও নচিকেতার উপাখ্যানে আমরা জানতে পারছি, বাজশ্রবস নামক মুনি যজ্ঞফল কামনা করে পুরাকালে বিশ্বজিৎ যজ্ঞ সম্পাদন করে সেই যজ্ঞে তাঁর সর্বস্ব দান করেছিলেন।বাজশ্রবসের পুত্র নচিকেতা পিতাকে বারবার “আপনি আমাকে কোন্ ঋত্বিকের উদ্দেশ্যে দান করিবেন ?” বলে বিরক্ত করলে পিতা ক্রুদ্ধ হয়ে পুত্রকে বললেন, “তোমাকে যমের উদ্দেশ্যে দান করিলাম”। অতঃপর নচিকেতা যমের গৃহে উপস্থিত হলেন এবং তিন রাত্রি অনাহারে থাকলেন। গৃহস্থের বাড়িতে সমাগত ব্রাহ্মণ-অতিথি অনাদৃত হয়ে অনাহারে থাকলে গৃহস্থের অমঙ্গল হয়, সেই কারণে যম নচিকেতাকে বললেন, “হে ব্রাহ্মণ, তুমি আমার অতিথি এবং ব্রাহ্মণ, কাজেই আমার নমস্কারের যোগ্য।যেহেতু তুমি আমার গৃহে তিন রাত্রি অনাহারে যাপন করিয়াছ, সেই কারণে প্রতি রাত্রির জন্য একটি করিয়া মোট তিনটি বর প্রার্থনা কর”।
যমের শুনে নচিকেতা বললেন, “হে যম, আমাকে যমালয়ে পাঠাইয়া পিতার যে দুশ্চিন্তা হইয়াছে তাহা প্রশমিত হউক।… তোমার দ্বারা প্রেরিত হইয়া আমি গৃহে প্রত্যাগমন করিলে তাঁহার পূর্বস্মৃতি যেন জাগিয়া ওঠে এবং আমাকে চিনিতে পারিয়া যেন সাদর সম্ভাষণ করেন। বরত্রয়ের মধ্যে ইহাই প্রথম বর প্রার্থনা করিতেছি”।
প্রথম বরপ্রাপ্তির পর দ্বিতীয় বর প্রার্থনার উদ্দেশ্যে নচিকেতা বললেন, “হে মৃত্যু, স্বর্গলোকে কিছুমাত্র ভয় নাই, আপনারও সেখানে কোনো অধিকার নাই, বার্ধক্যজনিত জরার ভয়ও সেখানে নাই। সেখানে যাঁহারা গমন করেন, তাঁহারা ক্ষুধা-তৃষ্ণার কোনো কষ্ট পান না, সমস্ত শোক ও মানসিক দুঃখ অতিক্রম করিয়া তাঁহারা আনন্দ ভোগ করেন। হে মৃত্যু, যে অগ্নির চয়ন দ্বারা মানুষ স্বর্গে করে, সেই অগ্নির বিষয় আপনি সম্যক্ অবগত আছেন। শ্রদ্ধাবান আমাকে তাহা সবিস্তারে বলুন। যাঁহারা মৃত্যুর পরে স্বর্গলোকে গমন করেন তাঁহাদের অমৃতত্ত্ব লাভ হয়, এই কারণে স্বর্গলাভের অভিলাষী হইয়া আমি দ্বিতীয় বরে স্বর্গলাভের সাধনভূত অগ্নিবিদ্যা আপনার নিকট প্রার্থনা করিতেছি”।
যম বললেন, “তুমি তৃতীয় বর প্রার্থনা করো”।
যমরাজের কথা শুনে নচিকেতা বললেন, “কেহ কেহ বলেন মৃত্যুর পর আত্মা থাকে, কেহ কেহ বলেন আত্মা থাকে না। পরলোক সম্বন্ধে মানুষের মনে এই যে সন্দেহ বিদ্যমান আপনার উপদেশে সেই আত্মার তত্ত্ব আমি সম্যক্ জানিতে ইচ্ছা করি। বরসমূহের মধ্যে ইহাই আমার প্রার্থনীয় তৃতীয় বর।
যম বললেন, “নচিকেতা, তুমি যে বিষয়ে বর প্রার্থনা করিয়াছ সে বিষয়ে দেবতারাও পূর্বে সংশয় প্রকাশ করেছেন।প্রাকৃত লোকে সহজে ইহা জানিতে পারে না, কারণ এ আত্মতত্ত্ব অতি সূক্ষ্ম।তুমি অন্য বর প্রার্থনা করো। আমাকে এ বিষয়ে আর উপরোধ করিয়ো না, আমার নিকটে এই বর প্রার্থনা ত্যাগ করো।
যে বিষয়ে দেবতারাও পূর্বে সংশয় প্রকাশ করেছেন, সে বিষয়ে সাধারণ মানুষ জানবে কীভাবে ! তবে কঠ উপনিষদ বলছে, “ন প্রাণেন নাপানেন মর্ত্যো জীবতি কশ্চন।/ইতরেণ তু জীবন্তি যস্মিন্নেতাবুপাশ্রিতৌ”।।অর্থাৎ “কোনো মরণশীল মানুষই প্রাণবায়ু, অপানবায়ু বা অন্য কোনো বায়ু দ্বারাই জীবন ধারণ করে না, পরন্তু এই প্রাণ ও অপান যাকে আশ্রয় করে আছে দেহ থেকে পৃথক সেই আত্মা দ্বারাই জীবন ধারণ করে”।

মহর্ষি কৃষ্ণদ্বৈপায়ন বেদব্যাস প্রণীত “মহাভারত”-এর অষ্টাদশ পর্ব স্বর্গারোহণপর্বে বকরূপী ধর্ম যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করেছিলেন, “এ জগতে আশ্চর্য কী ?” ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির উত্তরে বলেছিলেন, “মৃত্যু অবধারিত জেনেও মানুষ বেঁচে থাকে – এটাই আশ্চর্য।“
আসলে এই বেঁচে থাকা এবং ক্রিয়মান জীবনের পরিসমাপ্তি-রেখা  -- যার অপর নাম মৃত্যু – আশ্চর্য দুই-ই। জন্মলাভের মধ্য দিয়ে যে জীবনের শুরু এবং ক্রম-অভিব্যক্তি যার প্রকৃতি – এ যেমন নিশ্চিত, তেমন নিশ্চিত মৃত্যুতে তার শেষ পরিণতি।
“বাসাংসি জীর্ণানি যথা বিহায় নবানি গৃহ্ণাতি নরোঽপরাণি।/তথা শরীরাণি বিহায় জীর্ণান্যান্যানি সংযাতি নবানি দেহী”।। -- অর্থাৎ “মানুষ যেমন জীর্ণ পোশাক ত্যাগ করে নতুন পোশাক গ্রহণ করে, তেমনই আত্মা জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে অন্য নতুন শরীর গ্রহণ করে”। “জীর্ণ পোশাক” কী, কখন, কীভাবে তা তো আমরা সবাই বিলক্ষণ জানি। কিন্তু “জীর্ণ শরীর” বলতে কী বোঝায় তার ব্যাখ্যা কিন্তু বক্তা কোথাও দেননি। অতএব “জীর্ণ শরীর” বলতে আমি বার্ধক্য বয়সকেই বুঝব, তাই নয় কি ? বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যখন এই শরীরটির নানা প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করার সক্ষমতা লোপ পায় এবং বার্ধক্যজনিত রোগগুলি শরীরে বাসা বাঁধতে শুরু করে তখনই ধরে নিতে হবে আমরা বার্ধক্যে পৌছে গেছি। তাই বার্ধক্যে পৌছোনোর বয়স ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন হতেই পারে। প্রতিটি মানবকোশে অজস্র (নির্দিষ্ট সংখ্যক) ডিএনএ (DNA) আছে, আর তারই একটা ছোট্ট অংশকে বলা হয় জিন (Gene)এই জিনগুলিই আমাদের বংশগতির ধারক ও বাহক। আর এই জিনজনিত কারণকেই এখনও বৃদ্ধ হওয়ার প্রধান কারণ হিসাবে তাত্ত্বিকভাবে ধরে নেওয়া হয়।
 
পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হতে তৈরি হয় প্রচুর বিষাক্ত উপাদান, যাদের বলা হয় রি-অ্যাকটিভ অক্সিজেন স্পিশিস (Reactive oxygen species), যার সংক্ষিপ্ত ভিন্ন একটি নাম ফ্রি র‌্যাডিকেল (Free radical)তবে আনন্দের বিষয় এই যে, আমাদের শরীরে এন্টি-অক্সিডেন্ট (antioxidant) নামক এমন কিছু উপাদান আছে যা সহজেই এইসব ফ্রি র‌্যাডিকেলকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। আর যখন এদের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় এবং ফ্রি র‌্যাডিকেল প্রাধান্য বিস্তার করে তখন এরা আমাদের বিভিন্ন জিন তথা ডিএনএকে ধ্বংস অথবা ক্ষতিগ্রস্ত করে তোলে। আরো মজার একটি ব্যপার হল আমাদের শরীরে এমন কিছু জিন আছে যারা সেই ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএগুলিকে সারিয়ে তুলতে পারে। ফ্রি র‌্যাডিকেল যখন সেইসব সারিয়ে তোলার মতো জিনকেও ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত করে, তখন কিন্ত সত্যি সত্যিই আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গগুলি ব্যাপকভাবে তাদের কর্মক্ষমতা হারাতে শুরু করে। মস্তিস্ক, হৃদপিন্ড, ফুসফুস, বৃক্ক, অগ্নাশয়, পেশি, ত্বকসহ সকল অঙ্গগুলি এমনিভাবে প্রতিকুলতার সঙ্গে লড়াই করার শক্তি হারিয়ে ফেলে এবং সহজেই বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হতে শুরু করে। এভাবেই একটি মানুষ একসময় বার্ধক্যে উপনীত হয়। অর্থাৎ শরীর জীর্ণ হয়। গীতার বয়ান অনুসারে এই শরীর যদি জীর্ণই, তবে সেই জীর্ণ শরীর ছেড়ে আত্মা নতুন শরীরের খোঁজে ত্যাগ করতেই পারে। কিন্তু শূন্য (zero) বয়স থেকে যুবক বয়সে যাদের হঠাৎ মৃত্যু হয় তাদের শরীর তো জীর্ণ নয়, তাহলে শরীর থেকে আত্মা বেরিয়ে কোন্ শরীরের সন্ধানে ?  সে কথা গীতার বক্তা বলেননি। শুধু গীতার বক্তা শ্রীকৃষ্ণ কেন, কোনো ধর্মবেত্তাই এর জবাব দেয়নি।

প্রশ্ন হল, মৃত্যুই কী শেষ ? অনেকে মনে করেন মৃত্যুই শেষ নয়। আছে আত্মা, আছে জন্মান্তর, আছে বিচার – বিচারে কারোর স্বর্গে (বেহেস্ত বা জন্নত), কারোর-বা নরকে (জাহান্নাম বা দোজখ) গমন ইত্যাদি। আবাল্য যাকে পাশে নিয়ে বেড়ে উঠলেন, জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলিতে যার আন্তরিক সাহচর্য, কিংবা স্নেহ-ভালোবাসা লাভ করে তৃপ্ত হয়েছেন, প্রেরণা পেয়েছেন, কিংবা জীবনের পথে চলতে গিয়ে যাদের পাশাপাশি দেখেছেন-পেয়েছেন – তারপর একদিন হঠাৎ করে স্তব্ধ বিস্ময়ে দেখতে হল মৃত্যু তাদের ছিনিয়ে নিয়ে গেল বিনা কৈফিয়তে। চিরতরে হারিয়ে গেল পরম প্রিয়জন। কোনোদিন আর সে ফিরবে না। জন্মমুহূর্তে যেমন একা এসেছিলাম, তেমনই একাই যেতে হয়। মর-জগতের কোনো বস্তুই সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া চলে না, নিয়ম নেই যে ! নিয়ে যাওয়া যায় না কারোকেই। যে যায় সে একা শূন্য হাতেই যায়। যায় কি? কোথায় যায় ? কেন যায় ? কে যায় ? আত্মা ?  (চলবে)

কোন মন্তব্য নেই: