লিখেছেন : মনোবর
আচ্ছা এই পৃথিবীর ভবিষ্যত কি ?
আচ্ছা এই পৃথিবীর ভবিষ্যত কি ?
হারুদা সন্দিগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়। হঠাৎ গোটা পৃথিবী ধরে
টান মারলে- কি ব্যপার?
জানতে ইচ্ছা হল।
আমার কাছে তোমার জানতে ইচ্ছা হল? হারুদা গ্লাসে ছো্ট
একটা চুমুক দিয়ে উদাসীন হয়ে যায়। তারপর ধীরে সুস্থে মন্তব্য করে, ধরো আমি যদি একটা
মত দিয়েই দি তুমি তাকে গুরুত্ব দেবে? কিংবা অন্যরা কি সেটা বিশ্বাস করবে? করবার মত
হলে কেন করবে না? আমি হারুদা কে উৎসাহিত করি। করবার মত বলতে তুমি কি
বোঝাচ্ছো? আমি গম্ভীরভাবে বলি,
যুক্তিসংগত, বিজ্ঞান্সম্মত হলে তবেই না বিশ্বাস। তাহলে কোন দার্শনিক বা বিজ্ঞানীর
কাছে প্রশ্নটা রাখো। আমি ওরকম কেউ নয়। আর তাছাড়া আমার বয়স হচ্ছে। এটা ওটা খাচ্ছি। খুব
বেশীদিন টিঁকব বলে মনে হয়না। কাজেই অতসব ভেবে আমার লাভ কি ?
এই হচ্ছে মুষ্কিল ব্যবসায়ীদের নিয়ে। ওরা দুটো জিনিষ কে
গুরুত্ব দেয়, লাভ আর লোকসান। প্রশ্নটা করা আমার উচিত হয়নি ভাবছি এমন সময় হারুদা
আবার সরব হয়। তোমরা যা ভাবো তা হবেনা। আমরা কি ভাবি? আমি আবার প্রশ্ন করি। পৃথিবী
ধ্বংসের কথা ভাবো, নক্ষত্রের মৃত্যু, হিমযুগ, পরমাণু যুদ্ধের কথা ভাবো। মুখে
বিজ্ঞানের গল্প মারো আর সারাদিন পৃথিবীর কূ গেয়ে চিন্তায় শান দাও। আসলে তো তোমরা
নৈরাশ্যবাদী। হারুদার জাগরণ ঘটেছে দেখে আমি উৎসাহিত হয়ে বলি, বিজ্ঞানী আর
চিন্তাবিদরা না থাকলে পৃথিবীর বারোটা কবেই বেজে যেত! এরা বুঝি সব পৃথিবীর বাইরে?
হারুদা আবার এক ঢোঁক মারে। এবং বোঝা যায় যে হারুদার নেশা হচ্ছে। এত যে সব মহা মহা
লোক এল গেল তার কি অর্থ করেছ তোমরা? হারুদা এবার আয়েশ করে চেয়ারে হেলান দেয়। কাদের
কথা বলছ? কেন, ঐ যে ক্রাইষ্ট, বুদ্ধদেব, মহানবী আর আমাদের ঐ অতসব মহাপুরুষ ওরা কি
সব ঘুমোচ্ছে ভাব? ওদের আসার অর্থই হল খেলা সুদীর্ঘকাল চলবে নয়ত ওদের আসার কি কোন
মানে হবে? তুমি কি ভাবো ওরা অন্তরীক্ষে কোথাও লুকিয়ে আছে? সেখান থেকে সব লক্ষ্য
করছে। কেউ না কেউ রয়েছে আড়ালে। এমনি এমনি কি আর জগৎ চলছে! দেখো বাপূ, আমি বিল্ডিং
কনস্ট্রাকটর কত কাঠ খড় পোড়ালে একটা ইমারত গড়ে ওঠে সে আমি জানি। এমনি এমনি কিছুই
হয়না। তার মানে তুমি অনুমান করছ যে কেউ একজন এইসব ঘটাচ্ছে। কিন্তু যে ঘটাচ্ছে তাকে
দেখাও যায়না, চেনাও যায়না অতএব সত্যি যে কেউ আছে এটা মানাও যায়না। কেউ কাউকে বাধ্য
করেনি মানতে তবে কোথায় যেন পড়লাম বিজ্ঞানীরা ঈশ্বরকণার খোঁজ করছে। প্রচুর দামী এক
মেশিন বসিয়েছে সেটা ধরবার জন্য। সেটা ধরতে পারলেই নাকি কেল্লা ফতে? আমি অবাক হয়ে
বলি, তুমি তো তলায় তলায় সব খবরই রাখো দেখছি। কিন্তু যেটা আসলে নেই তার কণা
খোঁজাটার নাম কি বিজ্ঞান রেখেছো তোমরা, মানে বিজ্ঞানীরা?
মরেছে! ব্যাটা হারু খুব সেয়ানা। ভাল একটা উইক পয়েন্ট বার
করেছে তো! আমি গলা খাকারি দিয়ে বলি, নাম একটা দিতে হয় দিয়েছে। মানুষের কাছে যাতে
বিষয়টা সহজবোধ্য হয় তাই হয়ত ঐ নাম দিয়েছে। বুঝেছি, হারদা অমনি মন্তব্য করে এই
বিজ্ঞানটার নাম খুশী বিজ্ঞান। তা পাওয়া গেল কিছু? না, এখনও যায়নি। বুড়ি ছোঁয়া কি
অতই সোজা! খেলা চলবে। পৃথিবী দীর্ঘদিন থাকবে না হলে খেলাটা হবে কি নিয়ে! তুমি আমার
মতে আস্থা রাখো, আর গ্লাসে আর একটু ঢালো। এই বলে হারুদা দাঁত বার করে একটা নিঃশব্দ
হাসি দেয়। ওর এই পেঁচোর মত হাসিটা দেখলে আমার সর্ব শরীর জ্বালা করে কিন্তু উপশমের
জন্য এখন অপেক্ষা ছাড়া উপায় কি!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন