সোমবার, জানুয়ারী ২৭, ২০১৪

প্রবীর ঘোষের ছোটগল্প বিষয়ে


                 লিখেছেন : মনোবর
সম্প্রতি চরৈবতি ব্লগে প্রবীর ঘোষের লেখা ছোটগল্পটি পড়লাম। এ পর্যন্ত ২২ জন গল্পটি পাঠ করেছেন কিন্তু কেউ কোন মন্তব্য করেন নি। আমার মতামত আলাদা ভাবে এখানে লিখছি কারণ এটি আকারে একটু বড় হবে।
প্রবীর বাবু নিজের দেখা একটি ঘটনা বর্ণনা করে ঐ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত বিষয়ে নিজের অনুমান ব্যক্ত করেছেন। এটি ছোটগল্প কেন বলা হল বুঝলাম না। এটি প্রকৃত সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখিত কিনা সে বিষয়ে লেখকের কোন মন্তব্য নেই। এই বর্ণনার মধ্যে বেশ কিছু ফাঁক ফোঁকর আছে বলে আমার মনে হয়েছে। কোন ঘটনা যখন আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ছাপিয়ে যায় তখন আমাদের তরফ থেকে দু রকমের প্রতিক্রিয়া হতে পারে। হয় বক্তা একজন বিশ্বাসভাজন হিসেবে বর্ণিত বিষয় অসম্ভব কিছু হলেও আমরা সেটা বিশ্বাস করি কিংবা বক্তার বিশ্বাসযোগ্যতার অভাব হেতু আমরা সেটা অবিশ্বাস করি। পরে হয়ত মন্তব্য করি এটা নিছক গুল ছাড়া কিছু নয়। বহুক্ষেত্রেই সব কিছু বাজিয়ে দেখা সম্ভব হয়না বলে বিশ্বাস বা অবিশ্বাস এই দুটোর যে কোন একটা প্রতিক্রিয়ার উপর দাঁড়িয়ে থেকেই আমরা কর্তব্য শেষ করি।

একজন বধিরের মন্ত্র শুনতে পাওয়া এবং আপাততুচ্ছ কারণে এক মহিলার তাৎক্ষণিক আরোগ্যলাভ সাজান হতে পারে বা সত্যিও হতে পারে। এখানে কোনটা সত্য তা কেবল অনুমানের উপর ভরসা করে উপলদ্ধি করা সম্ভব নয়। বালক ব্রহ্মচারী প্রবীর ঘোষ আগের দিন কোথায় ছিলেন তা বলতে গিয়ে একটি কৌশলের আশ্রয় নিয়ে ছিলেন এবং উওর ভুল দিয়েছিলেন এই বিবরন আমরা প্রবীর ঘোষের মুখে শুনছি। এই ঘটনা নিভৃত কক্ষে ঘটেছিল সুতরাং প্রকৃতই ঘটেছিল কিনা তা একমুখ দিয়েই শুনে আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বালক ব্রহ্মচারীর অলৌকিক ক্ষমতার বিষয়ে বহু গল্প শুনতে পাওয়া যায়। এইসব বিষয়ে যারা সাক্ষ্যপ্রদান করেন বা কোন পুস্তকে লিখিত ভাবে মন্তব্য করে গেছেন তারা সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য কিনা এ বিষয়ে বিতর্ক থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু প্রবীরবাবু নাস্তিক হিসাব সুপরিচিত। তার লেখা বই আছে এবং একটি সংগঠনও আছে যার দ্বারা ভূত, ভগবান, প্রেতাত্মা, ঝাড়ফুক, টোটকা মোটকা ইত্যাদির বিরুদ্ধে জনমত গড়ে মানুষকে সুস্থ সচেতন করা তার উদ্দেশ্য। যেহেতু তিনি বিশেষ একটি মতবাদে বিশ্বাসী তাই তার গল্পটিও বানানো হতে পারে। বিবেকানন্দর বানী ও রচনায় একটি ঘটনার উল্লেখ আছে যেখানে এক ব্যক্তির অলৌকিক ক্ষমতা দেখে তিনি অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তিনি নিজেও একবার ধ্যানে রামকৃষ্ণদেব ও তার পারিষদবর্গের আসবার দৃশ্য আগেভেগেই দেখে ফেলেছিলেন। সে কথা শুনে রামকৃষ্ণদেব তাকে কিছুদিন ধ্যান করা বন্ধ রাখতে বলে বলেছিলেন ওসব হচ্ছে সিদ্ধাই ওসব থেকে দূরে থাকতে হয়। প্রবীরবাবুর মতে রামকৃষ্ণ একজন মস্তিষ্ক বিকারগ্রস্ত ছাড়া আর কিছু নন। শ্রী রামকৃষ্ণ বলেছিলেন অলৌকিক ক্ষমতা দ্বারা ঈশ্বরলাভ করা যায়না, ওগুলি বিষ্ঠার মত পরিত্যাজ্য। তার এই মত আমাদের অবাক করে। প্রবীরবাবু যাদের বুজরুকি তার সুদীর্ঘ কর্মজীবনে হাতে নাতে ধরেছেন তারা ঐ ক্ষমতা প্রদর্শন করে পয়সা কামাতে চেয়েছিল। প্রবীরবাবু মুড়ি এনং মিছরির জন্য একদর হেঁকে সবাইকে সমগোত্রীয় করে দেখাতে চেয়েছেন।
তিনি তার রচনায় বিবেকানন্দকেও বিদ্রূপ করেছেন। সুতরাং তার মতামতের খুব একটা গুরুত্ব নেই। তিনি যাদের চোখে দেখেননি, ব্যক্তিগতভাবে যাদের সংস্পর্শে আসেন নি তাদের মুখে বলা কথার জায়গা বিশেষ উদ্ধৃত করে তাদের বুজরুক বলে নিজের জ্ঞান জাহির করেছেন। অথচ এইসব মানুষ তাদের সারা জীবনের কর্ম দ্বারা নিজেদের অসাধারণত্ব প্রমাণ করেই লোকের শ্রদ্ধা অর্জন করেছেন। সাধারণ ভদ্রতাবোধ বলেও একটা কথা আছে। তিনি নিজের কৃতিত্ব জাহির করতে গিয়ে সেই সীমা বার বার অতিক্রম করেছেন। এমন কি আমাদের বিচার ব্যবস্থাও ঘোষণা করে যে বহু অপরাধী যদি সাজা না পায় সেও ভাল কিন্তু একজন নিরপরাধ যেন সাজা না পায়। আর তিনি এসব করতে গিয়ে নিজেকে বিজ্ঞানবাদী বলে জাহির করে বিজ্ঞানের সাধারণ নিয়মকেই পদদলিত করেছেন। তারকথা যে সত্য তার প্রমাণ কি? ঐ ঘরে কোন নিরপেক্ষ তৃতীয় ব্যক্তি তো ছিলেন না। ঐ মহিলা যে সাজান ব্যক্তি আর ঐ বধির যে অভিনেতা তার স্বপক্ষে কি যুক্তি তিনি উপস্থাপিত করেছেন? তাহলে তার বর্ণনা সত্য বলে কি করে মানা যাবে?
সিদ্ধান্ত নেবার আগে পর্যবেক্ষন এবং পরীক্ষনের পদ্ধতি কতদূর মানা হয়েছে? এসব পাঠকরাই বিচার করুন। বালক ব্রহ্মচারীকে আমিও বেশ কয়েকবার সাক্ষাৎ দেখেছি। এবং তার অসাধারণত্ব বিষয়ে আমার নিজের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা আছে। তিনি ফন্দী করে পয়সা রোজগারের জন্য অলৌকিক ক্ষমতা জাহির করতেন এমন কিছুই আমি দেখিনি। মন্দিরে কেহ পয়সা দিবেন না – এমন কথা সুখচরে বড় বড় করে লেখা ছিল। তিনি ধর্ম বিষয়ে কোন উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত ব্যবসাও পরবর্তী অনুসারীদের জন্য রেখে যাননি। আর বেশ কয়েকবছর আগে তিনি দেহ রেখেছেন। এতদিন পর তিনি যে একজন নিছক প্রতারক ছিলেন এই গল্পটা ঝুলি থেকে বার করার আবশ্যক কি যখন আমরা জানি বহুমানুষ তাকে শ্রদ্ধাভক্তি করে থাকে।

সত্যনুসন্ধানের অন্যান্য বহুক্ষেত্র যখন রয়েছে তখন ছোটগল্পের নামে বহুজনশ্রদ্ধেয় ব্যক্তিকে বহুকাল পরে হেয় করার এই প্রচেষ্টা না করাই শ্রেয়। আমার অভিজ্ঞতা এখানে উল্লেখ করলাম না কারণ সেটা প্রমাণ করা সম্ভব নয় তাই।

কোন মন্তব্য নেই: