সোমবার, নভেম্বর ১১, ২০১৩

জীবন মঞ্চের দু একটি কথা / পর্ব ২

                      লিখেছেন : মনোবর
কেউ কি বুঝতে পারে দূর থেকে কতগুলো মানুষ সাঁটান যায় একটা ট্রেনে? বিকেলের ট্রেনে এমনকি শনিবারেও নিখরচায় গেরিলা ট্রেনিং এর ব্যবস্থা থাকে। আমেরিকা এসব জানেনা। জানা মাত্রই একটা যৌথ মহড়ার আবেদন প্লেস করবে। একদল নামবে, একদল উঠবে। দুটো কাজই একসঙ্গে চলবে। সংঘাত, ধাক্কাধাক্কি, কনুই মারা, মেয়েদের চমকে দেওয়া পারলে একেবারে কাঁদিয়ে দেওয়া এই বিশেষ মুহূর্তে সব অনুমোদিত। সারভাইভ্যাল অব দ্য ফিটেস্ট। কোন কথা হবেনা, কোন বিচারের আবেদন অ্যাকসেপ্ট করা হবেনা। কেন সামান্য একটু সুবিধার জন্য মানুষ এত বর্বর হবে এই সব আলতু ফালতু প্রশ্ন উত্থাপন করে সময় নষ্ট করার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ প্রশ্ন উত্থাপনকারীরাই চমৎকার গেরিলা হয়। কে বলছে? প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছে। এগিয়ে যাবার পথে, ছোটখাট আঘাত বেদনার প্রতি উপেক্ষা দেখাতে দেখাতে যতই মলির কাছাকাছি হচ্ছি আতংক অবসৃত হচ্ছে। আকাশ থেকে, বাতাস থেকে, নিয়ন আলোর ফাঁকে ফোকরে দেখতে পাওয়া ঢলে পড়া শেষ বিকেলের রোদ থেকে  নেমে আসা স্বপ্ন আবার ছুঁয়ে দিচ্ছে, নিরাময় করে দিচ্ছে অবসাদ। উদ্বিগ্ন মলির চোখ আমাকে দেখা মাত্রই কেমন খুশীর চোখ হয়ে যাচ্ছে! আমারও কি নিজেকে অন্যদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে না? হচ্ছে। এইবার কষ্ট সার্থক হচ্ছে। বলিনা, তোমায় বলিনা তোমার ঐ চোখের কোণ দিয়ে ছোট্ট ছোট্ট চেয়েদেখা, কখনও হঠাৎ হেসে ফেলা, নীরব অভিমান আর নিত্য নূতন বাহানায় বাড়ীতে বিয়ের দেখাশোনার প্রস্তাব বাতিল করা এই ভিত্তির উপর পুরো স্বপ্নকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছি মলি। আস্থা রেখেছি। তুমিও তো তাই করেছ। তবু একটু উদ্বেগ থাকে না কি! চারিদিকে সাদা পোষাকে কালোমানুষদের ঘাপটি মারার কথা শুনতে শুনতে, গেরিলাকান্ড দেখতে দেখতে, আর এই যে সামনেটা কেমন অনিশ্চিত, কেমন কুয়াশাঢাকা ওই কারণেও কখন যেন উদ্বেগের শিকার হয়ে পড়েছি।
‘শোননা, রাগ করবেনা কিন্তু! আজ তাড়াতাড়ি ফিরতে হবে’।
‘কেন? আগে তো বলনি’।
‘বললে তুমি হয়ত আসতেনা তাই বলিনি’।
‘কারণটা কি?’
‘মায়ের শরীরটা ভাল নেই’।
কি হ’ল হঠাৎ?’
‘প্রেসার বেড়ে মাথা ঘুরছে। আমায় ফিরে রান্না করতে হবে’।
‘তোমার পরের জন তো আছে। ও ম্যানেজ করতে পারেনা?’

মলি মাথা নাড়ে। এবং ওর মাথা নাড়ানো দেখতে ভাল লাগে। স্বপ্ন তখন ইচ্ছা হয়। ঐ ইচ্ছাকে আবার রুমালের মত ভাঁজ করে পকেটে রেখে দিতে হয়। ভিক্টোরিয়া যাওয়া আর হল না। বাংলা সিনেমা দেখা যেতে পারত। কিন্তু প্রেম তো স্বার্থপরদের জন্য নয়, আত্মত্যাগীদের জন্য। বেশী সময় দেওয়া যাবেনা বলে মলি কি নিজেকে সাজায়নি? সাজিয়েছে। সুন্দর টিপ পরেছে, সেই ইয়ার রিংটাই পরেছে প্রথম দেখার দিন যেটা ও পরেছিল। আমরা যখন হাঁটি কত চোখ মলির উপর দিয়ে পিছলে যায়। মলি কি জানে না? অবশ্যই জানে। এই রঙ্গমঞ্চে যতদূর যা করা যায় আমরা করছি। কিন্ত আমরাই তো সব নয়। ডিরেক্টর কে সবার কথা ভাবতে হয়, ওভার অল প্রোডাকশানটার কথা ভাবতে হয়। হয়ত এক শিল্পসম্মত মোচড় দেবার জন্যেই তিনি মলিকে তাড়ার মধ্যে রেখেছেন। ‘কি করব বল? তুমি রাগ করলে নাতো?’ কে মহাপাতক আছে এই  দুনিয়ায় যে ঐ মুখের দিকে তাকিয়ে এই কথা শোনার পরেও রাগ করতে পারে? কই মলি তো আমার উপর রাগ করে না! খামোকা সন্দেহ করেনা! এভাবে বেশীদিন থাকা সম্ভব নয় বলে বিরক্তি প্রকাশ করে না! শুধু মাঝে মাঝে ফোনে বলে ওঠে ‘আর কিছু বলবে?’ আর আমি স্তম্ভিত হয়ে ভাবি! অভিনেতা কি কলের পুতুল? সে কি একটা পছন্দসই সংলাপ দাবী করতে পারেনা ওই ভুবনমোহন, সপ্ত না অষ্টলোকের অধীশ্বর, পরম করুণাময়, দীনদুনিয়ার ওই চেয়ারম্যানের কাছে আমাকে অন্ততঃ একবার বুক ফুলিয়ে বলবার সুযোগ দিন মহাশয় ‘তোমাকে আজ একটা সুখবর দেব মলি!’

কোন মন্তব্য নেই: