মঙ্গলবার, অক্টোবর ২২, ২০১৩

সেকি , ১০০ বিলিয়ন পৃথিবীসদৃশ গ্রহ থাকতে পারে মহাবিশ্বে !!!



            লেখক : জিরো টু ইনফিনিটি


অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক পৃথিবীসদৃশ গ্রহ খুঁজে বের করতে নতুন একটি পদ্ধতি প্রস্তাব করেছেন এবং তারা আন্দাজ করছেন গোটা মহাবিশ্বে অন্তত ১০০ বিলিয়ন পৃথিবীসদৃশ গ্রহ রয়েছে। এই পদ্ধতিটি একটি মাইক্রোল্যান্সিংনামক একটি ট্যাকনিকের উপর নির্ভরশীল, যেটি এই মুহূর্তে নিউজিল্যাণ্ডের জন অবসারভেটরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাদের এই গবেষণার ফল অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেসের “Monthly Notices of the Royal Astronomical Society” তে প্রকাশিত হবে।

এই গবেষক দলের প্রধান অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডঃ ফিল ইয়ক জানান এই পুরো প্রক্রিয়াটির সফলতা এবং ব্যর্থতা নির্ভর করে মাইক্রোল্যান্সিং এবং নাসার কেপলার স্পেস টেলিস্কোপের দেয়া ডাটার সামঞ্জস্যের উপর।

তিনি বলেন, “কেপলার কেবল এইরকম পৃথিবীর আকারের গ্রহকে চিহ্নিত করে, যেটি তার অরবিটিং স্টারের বেশ পাশে অবস্থান করে। আর সেই হিসেবে এক আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতেই প্রায় ১৭ মিলিয়ন এমন গ্রহ আছে। কিন্তু এই গ্রহগুলো সাধারণত পৃথিবীর চেয়ে বেশ গরম হয়ে থাকে, তবে ঠাণ্ডা লাল বামনকে কেন্দ্র করে ঘুরা সাপেক্ষে কিছু কিছু গ্রহ ঠাণ্ডা হতে পারে(এবং সেজন্যেই বসবাস উপযোগীও হতে পারে)

তিনি আরো বলেন, “আমাদের মূল প্রস্তাবনাটা হল পৃথিবীর ভরের কাছাকাছি ভরসম্পন্ন এমন গ্রহের সংখ্যা নিরূপণ করা যেগুলো সূর্য এবং পৃথিবীর মধ্যকার দূরত্বের দ্বিগুণ দূরত্ব দিয়ে তাদের অরবিটিং স্টারটিকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। কাজেই আমাদের খুঁজে পাওয়া গ্রহগুলো পৃথিবীর চেয়েও ঠাণ্ডা হবে। এবং আমরা আন্দাজ করছি সংখ্যাটা ১০০ বিলিয়নের কাছাকাছি হবে। স্বীকার করছি এত কিছুর পরেও ঠিক পৃথিবীর মত বাসযোগ্য আরেকটি গ্রহ খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন হবে, কিন্তু এটাও মানতে হবে যে আমাদের এই গবেষণা একটি বড় পদক্ষেপ।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পরেও ১৯৯৫ সালের আগে সূর্যের মত তারাকে প্রদক্ষিণরত কোন গ্রহের সন্ধান পাওয়া যায় নি। ডঃ ইয়ক ব্যাখ্যা করেন যে সূর্যের মত এত বেশি উজ্জ্বল একটি নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণরত পৃথিবীর মত অনুজ্জ্বল গ্রহকে খুঁজে পাওয়া যথেষ্ট কষ্টকর। গ্রহটা আসলে তীব্র ঔজ্জ্বল্যের মাঝে হারিয়ে যায়। কাজেই গ্রহটিকে এরকম অবস্থায় খুঁজে পেতে গতানুগতিক পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে আসা বাঞ্ছনীয়।

কেপলার স্পেস টেলিস্কোপ পরিমাপ করে আমাদের কাংখিত গ্রহটি তার অরবিটিং স্টার এবং পৃথিবীর মধ্যবর্তী অবস্থানে থাকার সময় কতটুকু ঔজ্জ্বল্য হারায়। কিন্তু মাইক্রোল্যান্সিং পরিমাপ করে দূরবর্তী কোন তারা থেকে পৃথিবীর দিকে আসা আলোর বিক্ষেপণকে(যে ধারণাটা আইনস্টাইন দিয়েছিলেন ১৯৩৬ সালে!!!)

সম্প্রতি মাইক্রোল্যান্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে নেপচুন এবং জুপিটারের মত বিশাল বিশাল কিছু গ্রহ আবিষ্কার করা হয়েছে। অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এবং বর্তমান ছাত্র, গবেষক ও শিক্ষক এবং ফ্রান্সের কিছু ছাত্রের সমন্বয়ে গঠিত এই গবেষক দল বলছে পৃথিবীসদৃশ গ্রহগুলোকে পর্যবেক্ষণ করার জন্যে যদি পুরো পৃথিবী জুড়ে রোবোটিক টেলিস্কোপের একটা নেটওয়ার্ক গড়ে তুলা যেত তাহলে তাদের কাজটা অপেক্ষাকৃত সহজ হয়ে যেত।

কাকতালীয়ভাবে এই মুহূর্তে SUPA/St Andrews (Scottish Universities Physics Alliance)” এর সাহায্যে “Las Cumbres Observatory Global Telescope Network (LCOGT)” নামক ১ ও ২ মিলিমিটার টেলিস্কোপের একটা নেটওয়ার্ক গড়ে উঠছে। এই প্রজেক্টের আওতায় চিলি, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং অস্ট্রেলিয়ায় তিনটি করে এবং হাওয়াই ও টেক্সাসে একটি করে টেলিস্কোপ বসানো হচ্ছে।
                                             তথ্যসূত্রঃ পপুলার সায়েন্স

কোন মন্তব্য নেই: