লিখেছেন : বিজ্ঞানরসিক
ঘাবড়ে যাবেন না যেন, যখন আপনার সামনে মল কিংবা পায়খানা থেকে তৈরি পিল খেতে দেয়া হবে। এতে সবই থাকবে, শুধু দুর্গন্ধ ছাড়া! হ্যাঁ, কথা সত্যি। গবেষকরা মলের উপর ভিত্তি করে নতুন এক ধরণের চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ব্যাপারটি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন না হলেও, শুনতে খুব ভালো হয়তো শোনাবে না সবার কাছে!
ঘাবড়ে যাবেন না যেন, যখন আপনার সামনে মল কিংবা পায়খানা থেকে তৈরি পিল খেতে দেয়া হবে। এতে সবই থাকবে, শুধু দুর্গন্ধ ছাড়া! হ্যাঁ, কথা সত্যি। গবেষকরা মলের উপর ভিত্তি করে নতুন এক ধরণের চিকিৎসাপদ্ধতি উদ্ভাবনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। ব্যাপারটি বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে নতুন না হলেও, শুনতে খুব ভালো হয়তো শোনাবে না সবার কাছে!
মানুষের অন্ত্রে সংক্রমণকারী ব্যাকটেরিয়ার মধ্যে Clostridium difficile দ্বারা সৃষ্ট সংক্রমণ সবচেয়ে ভয়াবহ। অবস্থা মাঝে মাঝে এতোটাই মারাত্মক আকার ধারণ করে যে, রোগীর জীবন নিয়ে টানাটানি পড়ে যায়। প্রতি বছর প্রায় অর্ধ-মিলিয়ন আমেরিকান এতে আক্রান্ত হয়, যার মাঝে ১৪ হাজার রোগী মারা যান। এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার এই সংক্রমণ কিছুটা কমাতে পারে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে এন্টিবায়োটিকের অতিরিক্ত ব্যবহার ব্যাকটেরিয়াকে এন্টিবায়োটিক-প্রতিরোধী করে তুলে এবং অন্য সংক্রমণ প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে রোগীর দেহকে আরো দুর্বল করে দেয়।
আবার কিছু ব্যক্তির ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা Clostridium difficile সংক্রমণের শিকার হলেও তাদের অন্ত্রে উপস্থিত উপকারী ব্যক্টেরিয়ার কারণে রোগ খুব গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে নি। ধীরে ধীরে তারা সুস্থ হয়ে উঠে। Clostridium difficile সংক্রমণের চূড়ান্ত পর্যায়ে রোগীর প্রচণ্ড ডায়রিয়া ও বমি হয়। তাই চিকিৎসকরা চেষ্টা করছেন যাতে আক্রান্ত রোগীর অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিমাণ বাড়ানো যায়, যেটা Clostridium difficile সংক্রমণের ঝুঁকি কমিয়ে নিয়ে আসবে। আর এক্ষেত্রে আক্রান্ত রোগীর পেটে এমন সুস্থ ব্যক্তির মল ঢুকানো হবে, যিনি কিনা Clostridium difficile সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম। এরা নাম দেয়া হয়েছে fecal transplants বা মল প্রতিস্থাপন!
অবশ্যই এই ধরণের পদ্ধতি অবলম্বনে নানা রকম সমস্যা আছে। যেসব রোগীরা ইতোমধ্যেই Clostridium difficile সংক্রমণে অসুস্থ হয়ে গিয়েছেন, তাদের জীবনরক্ষার শেষ উপায় হিসেবে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হতে পারে। তবে তার আগে চিকিৎসকরা রোগীর পুরো অন্ত্রের অবস্থা Colonoscopyর মাধ্যমে পরীক্ষা করে নেন। ডক্টর জসবার্ট কেলার একটি বিশেষ ধরণের পিল তৈরি করেছেন, যেটা নাকের ভেতরে টিউব ঢুকিয়ে রোগীকে খাওয়ানো হয়। আর এই পিলে সবই আছে- মানুষের মল, উপকারী ব্যক্টেরিয়া ও আরো অনেক কিছু! রোগী এই পিল খাওয়ার সময় কোন দুর্গন্ধ অনুভব করে না, কারণ পিলটি চকোলেট মিল্কের সাথে মিশিয়ে একটি টিউবের মাধ্যবে রোগীকে খেতে দেয়া হয়। নেদারল্যান্ডের ডক্টর জসবার্ট কেলার প্রথম এই পরীক্ষাটি সম্পাদন করেন। তার তৈরি করা এই মলের পিল মেশানো চকোলেট মিল্ক যেসব রোগাক্রান্ত ব্যক্তিকে খেতে দেয়া হয়েছে তাদের মাঝে ৮১% পরবর্তীতে আর Clostridium difficile ব্যক্টেরিয়া দ্বারা আক্রান্ত হন নি। তার গবেষণার ফলাফল New England Journal of Medicineএ প্রকাশিত হয়।
এদিকে University of Calgaryর সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. থমাস লুই একটি জেলের মতো পিল উদ্ভাবন করেছেন, যেটি কিনা রোগী খুব সহজেই গিলে ফেলতে পারবে। এতে থাকবে শুধু মলে উপস্থিত উপকারী ব্যাকটেরিয়া, কিছু খাদ্য উপদান ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান। আক্রান্ত রোগীরা ৩৪ টি ক্যাপসুল খাবার পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে ওঠেন। মল থেকে পিল তৈরির বিষয়টি অনেকের ভালো না লাগলেও গবেষকরা এটিকে আগামী প্রজন্মের চিকিৎসাপদ্ধতি হিসেবে গণ্য করছেন, যেটি দিয়ে স্থূলতা থেকে শরীরের জ্বালাপোড়া-সবই প্রতিরোধ করা যাবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন